somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমীমাংসিত রহস্য সিরিজ - ০২: দ্যা ওয়াও সিগন্যাল (The Wow! signal)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(Wow! signal এর প্রিন্ট আউট)

১৯৭৭ সালের এক গ্রীষ্মের রাতে সালে জেরি এহম্যান বরাবরের মতই বসে ছিলেন ওহাইয়ো ইউনিভার্সিটির একটি মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষনাগারে। তাঁর কাজ হচ্ছে বেতার তরঙ্গ গ্রাহক যন্ত্রের সামনে বসে 'Deep Space'বা অতি দূরবর্তী মহাকাশ থেকে আসা রেডিও সিগন্যাল বা বেতার তরঙ্গ মনিটর করা। অবশ্য এখন পর্যন্ত কোন সংকেত তাকে মনিটর করতে হয়নি, কোন সংকেত আসলে তো! । জেরি SETI প্রজেক্টের একজন স্বেচ্ছাসেবক। ওহাইয়ো ইউনিভার্সিটির এই SETI (Search for Extraterrestrial Intelligence) প্রজেক্টের কাজ হচ্ছে এক্সট্রা টেরেসট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মহাজাগতিক বুদ্ধিমান প্রানীর অস্তিত্ব অনুসন্ধান করা। এজন্য অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে দূর মহাকাশে বেতার সংকেত পাঠানো হয় এই আশায় যে মহাজাগতিক কোন বুদ্ধিমান প্রানী এই সংকেত ধরতে পারলে তারাও পালটা সংকেত পাঠাবে। জেরির দায়িত্ব ছিল প্রতিরাতে এই সংকেতের জন্য অপেক্ষা করা। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রজেক্ট চললেও রিসিভারে টু শব্দটিও শোনা যায়নি। সেরাতেও একই ভাবে চলছিল সবকিছু। কিন্তু অকস্মাৎ রাতের নীরবতাকে ভেঙে দিল উচ্চ এবং তীক্ষ্ণ শব্দ! জেরি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে রেডিও রিসিভারের দিকে তাকাল! খরখর করে উঠেছে রেডিও! বেতার তরঙ্গ রিসিভ করা শুরু করেছে রিসিভার! অত্যন্ত তীক্ষ্ণ সংকেত, আসছে একটানা! হতভম্ব হয়ে রিসিভারের দিকে তাকিয়ে রইল জেরি!


(Wow! signal এর গ্রাফিক্যাল প্লটঃ সিগন্যাল স্ট্রেংথ বনাম সময়)

যদিও সে এরকম কোন সংকেতের জন্যই অপেক্ষা করত রাতের পর রাত তারপরও তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে সত্যি সত্যিই সংকেত আসছে, দূর মহাকাশ থেকে! পরবর্তী ৭২ সেকেন্ড একটানা সংকেত আসল। তারপর হঠাৎ করে নিশ্চুপ হয়ে গেল রিসিভার। যেভাবে হঠাৎ করে আসা শুরু হয়েছিল সেভাবেই বন্ধ হয়ে গেছে! জেরির হতভম্ব ভাব তখনও কাটেনি। রিসিভারের সাথে যুক্ত কম্পিউটার প্রিন্টারের প্রিন্ট হওয়ার শব্দে তার হুঁশ ফিরল। কাঁপাকাঁপা হাতে তিনি প্রিন্ট আউটটি হাতে নিলেন। প্রিন্ট আউট হাতে নেওয়ার পরও তার বিশ্বাস হচ্ছিলনা, তিনিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি সম্ভবত অন্য কোন নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা কোন সংকেত রিসিভ করেছেন! প্রিন্ট আউটে চোখ বুলিয়ে আরেক দফা হতভম্ব হয়ে গেলেন। এলোমেলো, দূর্বোধ্য কোড গুলোর কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি! হতভম্ব অবস্থায়ই প্রিন্ট আউটের এক কোনায় একটা মাত্র শব্দ লিখলেন, 'Wow!'। এরপর থেকেই এটি পরিচিতি পেল বিখ্যাত 'দ্যা ওয়াও সিগন্যাল' নামে।

এই সংবাদ চাউর হওয়ার সাথে সাথে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মাঝে তোলপার পরে গেল! শুরু হল এই মহাজাগতিক সংকেত নিয়ে গবেষনা। বেতার সংকেতটি ৭২ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল যার অর্থ ওই বেতার যন্ত্রের ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দূরবর্তী সীমা থেকে সংকেতটি এসেছে! সংকেতটি ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং এবং প্রেরন করা হয়েছিল 'স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্র পুঞ্জ' থেকে!


(Wow! signal এর উৎসস্থল। লাল রং দ্বারা চিহ্নিত দুইটি স্পটের যে কোন একটি)

স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্র পুঞ্জ হচ্ছে পৃথিবী থেকে ১২০ আলোক বর্ষ দূরবর্তী একটি তারা 'টাও স্যাগিট্টারি'র নিকটবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জ! বলাই বাহুল্য যে সেখানে কোন মানুষ ইতিপূর্বে কখনোই যায়নি!

তবে এই পর্যন্তই। শত চেষ্টা করেও সেই সংকেতের অর্থ কি সেটা বের করা যায়নি। ব্যার্থ হয়েছে এই সংকেতকে দ্বিতীয় বার লোকেট করার সব প্রচেষ্টাও! ওই একবারের পর আর কখনোই এই সংকেত শোনা যায়নি। যার ফলে 'The Wow Signal' আজও অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
আগ্রহীরা 'The Wow Signal' সম্বন্ধে আরও জানতে চাইলে এই লিংকটায় চলে যান।
http://en.wikipedia.org/wiki/Wow!_signal
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×