somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহীদ আসাদ স্মৃতি আসাদ গেটের একি হাল?

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'৬৯-এর শহীদ আসাদের রক্তের নহর বেয়ে এসেছিল এ দেশের স্বাধীনতা। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে শহীদ আসাদ অন্যতম সংগ্রামী। যিনি পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গণমানুষের মুক্তির জন্য শহীদ হয়েছেন। জাতির পরবর্তী প্রজন্মকে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ১৯৯০ সালে মোহাম্মদপুরের আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট রাখা হয়েছে; কিন্তু আমরা কি সত্যিকার অর্থেই শহীদ আসাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পেরেছি, প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি আমাদের শহীদদের প্রকৃত মর্যাদা? এ প্রশ্নের উত্তর কেউ খুঁজে পাবেন না। আর এর জন্য আমরা তো শহীদদের অবমাননা করছিই, সেই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে। উত্তরাধিকার সূত্রেই শিখছে অবমাননা আর শ্রদ্ধাহীনতা। নগরীর মিরপুর সড়ক ধরে নিউমার্কেটের দিকে যেতে যে কারও চোখে পড়বে আসাদগেট, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর কথা; কিন্তু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া আসাদের স্মরণে উৎসর্গীকৃত গেটের বর্তমান অবস্থা দেখে কে বলবে এটিই আমাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ আসাদের প্রতি শ্রদ্ধায় নিবেদিত গেট? সত্যিই আসাদ গেটের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। পোস্টারে পোস্টারে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো গেট। ফলে যে কেউ প্রথম দর্শনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট দেয়াল ভেবে ভুল করবেন। জাতি হিসেবে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি ও আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস গর্ব করার মতো বলে বিশ্ববাসীর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; কিন্তু আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে ফেলছি শুধু আমাদের অবহেলার কারণে। জাতীয় বিষয়ে আমাদের মতো এত অসচেতন কোনো জাতি আছে_ এমন সংবাদ কোথাও পাওয়া যায় না। 'যে বা যারা আমাদের মুক্তির স্বাদ দিল, তাদের প্রতি বিশেষ দিনে লোক দেখানো শ্রদ্ধা আর নোংরা রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু উপহার দিতে পারি না।' আসাদগেটের দুরবস্থা সম্পর্কে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন একটি এনজিওতে কর্মরত সাজ্জাদ বিপ্লব। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আসাদগেটের তিনটি স্তম্ভেই বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন, লিফলেট সেঁটে ঢেকে দেওয়া হয়েছে_ যা আসাদগেটের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এতে একটি কথাই সচেতন নাগরিকদের মনে করিয়ে দেয়, শহীদ আসাদের প্রতি কী সত্যিই কোনো দায়দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে? আসাদগেটের স্তম্ভে যত বিজ্ঞাপনী পোস্টার ও লিফলেট সাঁটা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি স্কুল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গার্মেন্টের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, চর্ম-যৌন ও সেক্স রোগের বিভিন্ন হারবাল চিকিৎসার অশ্লীল পোস্টার, বিশ্বকাপের ছবি দিয়ে একটি কোমলপানীয়র বিজ্ঞাপন, বিসিএস কোচিংসহ অন্যান্য কোচিংয়ের বিজ্ঞাপন, পার্টটাইম চাকরির বিজ্ঞাপন, বইমেলায় প্রকাশিত হওয়া নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বিজ্ঞাপনী পোস্টার ও লিফলেট দিয়ে গেটের প্রতি স্পষ্ট অবমাননা করা হয়েছে। এ ছাড়া এতে গেটের সৌন্দর্যহানি হয়েছে মারাত্মকভাবে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ সম্পর্কে কারও কোনো মাথাব্যথাই নেই। কেননা আসাদগেটের সৌন্র্দযহানি ও অবমাননার বিরুদ্ধে কোনোরূপ কর্মতৎপরতাও গত সাত বছরে চোখে পড়ে না বলে জানালেন স্থানীয় চায়ের দোকানদার রাসেল। ১৯৬৯ সালে আইয়ুবগেট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর সংস্কার করা হয়নি। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে শহীদ হয় আসাদ। তার স্মরণেই আইয়ুবগেটের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আসাদগেট। ১৯৯০ সালের পর ২০০৮ সালে আসাদগেট সংস্কার করে নতুন রূপ দেওয়া হয়। কিন্তু ভাঙাচোরা ও পুরনো রূপ পরিবর্তন করে বর্তমান রূপ দেওয়ার পরও আসাদগেটের ওপর অবৈধভাবে পোস্টারিং করে সৌন্র্দয নষ্ট ও তার প্রতি অবমাননা করা থেমে থাকেনি। শুধু প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবসের আগে একবার ধোয়ামোছার কাজ হয়। তার পরই সারাবছর অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে, কেউ রাখে না আসাদগেটের খোঁজ।
আসাদগেটের এরূপ অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, 'ঢাকা সিটির মধ্যে কোনো স্থাপনায় অবৈধ পোস্টারিং করা আইনত নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয়। তার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×