somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রানজিট এখন বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য! : নাকের সামনে মুলা

১১ ই এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্যরা মুখ বন্ধ করার পর এখন মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। মঙ্গলবার তিনি রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে কানেকটিভিটি বা ট্রানজিট নিয়ে নতুন কথা শুনিয়েছেন। এটা দরকষাকষির বিষয় নয়, বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য কালেকটিভিটি জরুরি। এমন কথা সজ্ঞানে বলা হচ্ছে কি-না সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
কারণ এর আগে সরকারের প্রভাবশালী মহল থেকে ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলার আয় করবে বলা হয়েছিল। কেউ কেউ আরও একধাপ বাড়িয়ে বলেছিলেন, ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কিন্তু এসব কথা হালে পানি পায়নি। সমালোচনার ঝড়ে সব কথা ভেসে যাওয়ায় এখন আর সেসব কথা শোনা যায় না। যদিও সরকার গঠিত কমিটি ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি বা চার্জ আদায় করার সুপারিশ করেছে। কিন্তু ভারত কানেকটিভিটির রুট বা ট্রানজিটের জন্য কোনো ফি দিতেই রাজি হয়নি। এ নিয়ে দরকষাকষিও শুরু হয়েছিল দু’দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরের মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ফি ও শুল্ক ছাড়াই ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাচলের সুযোগ দিতে হয়েছে। এখন নতুন যুক্তি উঠেছে ট্রানজিটের ফলে বাণিজ্য বাড়বে। বলা হচ্ছে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্যই ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে কানেকটিভিটি দরকার। অথচ ট্রানজিট ছাড়াই বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের বিশাল বাজারে পরিণত হলেও ভারতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানির পরিমাণ সামান্য। এখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ ঘাটতির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। বাস্তবে বাংলাদেশের বাজার ভারতের জন্য প্রায় উন্মুক্ত হলেও ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে হাজারো বাধা। ভারতের শুল্ক-অশুল্ক বাধার কারণেই দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। তারা বাংলাদেশে সব কিছু বিক্রি করবে অথচ বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ দেবে না—এটাই যেন ভারতীয় নীতি। তারা বাংলাদেশে বিদ্যুত্ বিক্রি করবে, কিন্তু ভারতের ভেতরে সীমান্ত পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন বসানোর খরচটাও বাংলাদেশকে দিতে হবে, এটাই ব্যবস্থা। এরপর সীমান্তে যে কাঁটাতার দেয়া হয়েছে তার খরচাও তারা আদায় করে নেয় কি-না সন্দেহ জাগে।
আর নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে খুব বেশি আশা না করাই ভালো। স্থলবেষ্টিত এ দুটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই ভারতের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এমনকি ভুটানের অবকাঠামোও তৈরি করে দেয় ভারত। এদের সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কৃতিরও খুবই মিল। নেপালের প্রধান মন্দিরে পুরোহিত নিযুক্ত হন ভারতীয়রাই। নেপালিরা ভারতে কাজ করতে গেলে ভিসা লাগে না। এমন অবস্থায় ভারতীয় বাধা ডিঙ্গিয়ে নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য কতটা বাড়বে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। তাছাড়া বাংলাদেশের কী এমন আছে, যা দিয়ে আমরা বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াব! ভারতের সঙ্গে বরাবরই সীমান্ত যোগাযোগ থাকার পরও আকাশছোঁয়া বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টির কারণ দূর না হলে ট্রানজিটে খুব একটা লাভ হবে না, জোর দিয়ে বলা যায়। তবে এর ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ভারতীয় পণ্যের অবাধ প্রবাহ, সেখান থেকে বাংলাদেশী পণ্যকে হটিয়ে দেবে এটা পরিষ্কার। অর্থাত্ ট্রানজিটের ফলে আমরা সেখানকার বাজার হারাব।
তাই ট্রানজিটে আমাদের লাভ না হলেও অন্যদের হবে। এর মধ্যেই শুল্ক ছাড়াই বিদ্যুত্ কেন্দ্রের নামে ৮৬ জাহাজ সরঞ্জাম পার করেছে ভারত। তারা ট্রানজিটের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের খরচও দিতে নারাজ। সম্প্রতি আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ৩২৬ টন ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে ১৩০ চাকার ৪টি ট্রেইলার ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশের মাধ্যমে সড়কপথে ভারতের জন্য ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হয়েছে। এই ট্রেইলারগুলো ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে চলার সময় বাংলাদেশী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল (ঠিক রাজধানীতে ভিআইপিদের চলার সময় যেমনটা করা হয়)। তাছাড়া ট্রেইলারের যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাশে এন্ডারসন খাল পার হওয়ার সময় রাস্তা মেরামতের কাজও করতে হয়েছে। এসব ক্ষতি পূরণের জন্য কিছুই খরচ করবে না ভারত।
অর্থাত্ ট্রানজিটে আয় বা বাণিজ্য বৃদ্ধির কথা যে নাকের সামনে ঝোলানো মুলা, সেটা পরিষ্কার। তাই মানুষকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না; বরং এতে ভবিষ্যতের বিপদই ডেকে আনা হবে।



আমার দেম সম্পাদকীয় থেকে


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×