somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের মতো আপন কেউ নেই

০৫ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর
ত্রিভুবনে নাই।’
ছোট্ট বেলায় পড়া এ কবিতাটি বাস্তব জীবনে প্রত্যেক মানুষের মনের কথা। কারণ, আমরা সবাই কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। ‘মা’ শব্দটির মধ্যে যে সুধা লুকিয়ে আছে, কী জাদু জড়িয়ে আছে লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ‘মা’ ডাকের মধ্যে কী যে পরিতৃপ্তির সুখ, অনাবিল আনন্দ তা অন্য কিছুতেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। কত কষ্ট, কত না যন্ত্রণা সহ্য করে দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে মা তার সন্তানকে জন্ম দেন। প্রসব বেদনার তীব্র কষ্ট মা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। কত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে মা তার সন্তানকে নিজের শরীরের রক্তবিন্দু দিয়ে তিল তিল করে বড় করে তোলেন। শুধু তাই নয়, সন্তান জন্মের পর খেয়ে না খেয়ে নিজের বুকের দুধ পান করিয়ে বড় করে তোলেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে আছে—‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত্’। এ কথাটিই প্রমাণ করে মায়ের আসন কত উপরে। মায়ের ঋণ অপরিশোধ্য। কারণ, মা শুধু সন্তানের জন্মই দেন না, সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যে কোনো কিছু ত্যাগ করতে কেবল মা’ই পারেন। নিজের নাড়িছেঁড়া ধন সন্তানের সুখের জন্য, আরামের জন্য মা আহার-নিদ্রা ভুলে রাত জেগে খেয়াল করেন। সন্তানকে ঘিরেই বাবা-মা’র যত স্বপ্ন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তান জন্ম দিয়েই বাবারা মনে করেন তাদের দয়িত্ব শেষ। কিন্তু মায়েরা কখনও তা পারেন না। কোনো হতভাগা-দুর্ভাগা সন্তানের যদি ছোটবেলায় মা মারা যান তাহলে তো তাদের দুঃখের শেষ থাকে না। দেখা যায়, বউ মারা যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই সন্তানকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আবার নতুন বিয়ে করে নিজে খুশির আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকেন। সন্তানের ভালো-মন্দ দেখার সময়ও পান না, ভবিষ্যত্ নিয়ে ভাবার প্রয়োজনও বোধ করেন না। কিন্তু মা কখনোই তা করতে পারেন না। নিজের যত কষ্টই হোক, সব লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে, নিজের জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে মা তার সন্তানকে বড় করে তোলেন। মা কখনও নিজের সুখের চিন্তা করেন না। সন্তানের সুখই মায়ের বড় সুখ, সন্তান সুখে থাকলেই মা খুশি। মায়ের ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ নেই, কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা নেই। মা তার সন্তানকে বুকভরা ভালোবাসা, প্রাণঢালা আদর বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হন। মায়ের মমতার আঁচল সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। সন্তানের কোনো সমস্যা হলে মা নিজে থেকেই বুঝতে পারেন। সন্তানের কোনো অসুখ হলে মায়ের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তার বুকের ধন সুস্থ হয়ে না ওঠে।
মা সম্পর্কে লিখতে গেলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু এমন দরদী মাকেও আমরা বড় হয়ে কথায় কথায় কষ্ট দেই, খারাপ আচরণ করি। ছেলেরা বড় হয়ে বিয়েশাদি করে মায়ের অবদানের কথা বেমালুম ভুলে যায়। মায়ের ভালো-মন্দ খোঁজখবর নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। মেয়েরা যদিও মায়ের কষ্ট বোঝে, কিন্তু বিয়ের পর নিজের স্বামী-সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই অনেক সময় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মায়ের তেমন খোঁজখবর নিতে পারে না। অথচ মা সন্তানরে সুখের জন্য কী না করেন। সেই মাকে কষ্ট দিতে আমরা মোটেও কুণ্ঠিত হই না।
সন্তানের জন্য মায়ের অবদানের কথা লিখে ব্যক্ত করার মতো উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নেই। মা এমন এক মহত্ প্রাণ যিনি নিজের জীবনের বিনিময়েও সন্তানের জীবনে মঙ্গল কামনা করেন। নিজের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অক্ষত অবস্থায় বুকের ধনকে উদ্ধার করেন—এই কাহিনী পত্রিকার মাধ্যমে অনেকেই জানি। কারণ, এটা কোনো নাটক বা সিনেমার গল্প নয়। এটা বাস্তব ঘটনা। এরকম জীবনবাজি রেখে সন্তানকে রক্ষা করতে কেবল মা-ই পারেন।
আমি এমন এক মাকে জানি যে তার সন্তানের সুখের জন্য জীবনের চৌদ্দটি বছর ব্যয় করেছেন। যে মায়ের কথা লিখতে গেলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। বাল্যবয়সে বিয়ে হয় শহরের উচ্চশিক্ষিত চাকরিজীবী বরের সঙ্গে। তখন ওই মা নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সাংসারিক নিয়ম-কানুন অত বুঝে উঠতে পারেননি তখনও। তার ওপর শাশুড়ির কড়া মেজাজ। শাশুড়ি কারণে-অকারণে নানা কথা শোনায়, মানসিকভাবে নির্যাতন করে। ছেলের বউ গ্রামের মেয়ে—এটা তার অপরাধ। ছেলে মানে এই মায়ের বর ঢাকায় চাকরি করে। যে মহীয়সী মায়ের কথা বলছি তিনি তখন নববধূ। শাশুড়ির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। স্বামী অনেক দিন পরপর বাড়িতে যান। এরই মধ্যে তিনি সন্তানসম্ভবা হন। নানা অশান্তির মধ্যেই একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।
প্রথমদিকে স্বামী খুব ভালোবাসলেও পরে আর খোঁজখবর নেয় না, মা-মেয়ের ভরণ-পোষণও করে না। অনেক কষ্টে ওই মা মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতেই থাকেন। তিনি স্বামীর প্রতীক্ষায় থাকেন—একদিন সে তার ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু মাস যায়, বছর যায়—তার স্বামী আর ফিরে আসে না। স্বামীর সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। দীর্ঘ বারো বছর পর তার স্বামী আবার নতুন করে ঘর বাঁধে এবং তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠায়। তখন ওই মায়ের বুক ভেঙে নিমিষেই খানখান হয়ে যায়। তার দীর্ঘ বারো বছরের স্বপ্ন আর প্রত্যাশার মৃত্যু ঘটে। বাবা মা-মেয়ের ভবিষ্যত্ ভেবেই তাকে আবার বিয়ে দিতে চান। কারণ তারা (মায়ের বাবা-মা) মরে গেলে তাকে কে দেখবে। কিন্তু তিনি বিয়েতে সম্মতি দেন না। তার মেয়েকে যদি দ্বিতীয় স্বামী আদর না করেন—এই ভেবে। সন্তানের সুখের জন্য এই মা তার জীবনের সব সুখ-শান্তি, চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়েছেন। জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় মেয়ের জন্য নষ্ট করেছেন। এমন মাকে কি শ্রদ্ধা না করে পারা যায়? কথাগুলো বলল তার মেয়ে হৃদি। আসছে মা দিবসের এই বিশেষ দিনে মেয়ে হৃদি তার মায়ের প্রতি অশ্রুসজল নয়নে শ্রদ্ধা জানায়। হৃদি বলে—যে কথাটি মাকে জড়িয়ে বলতে পারিনি, কান্নায় কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে বলে। আমার দেশ পত্রিকার মাধ্যমে তাই আজ বলতে চাই—‘মা, তোমাকে ভালোবাসি, খুব বেশি ভালোবাসি।’ মায়ের ভালোবাসার বিকল্প কিছু হয় না। মায়ের ঋণ কখনও শোধ করা যাবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের মাকে ভালোবাসা উচিত যেমন ভালোবাসা দিয়ে তারা আমাদের মানুষ করেছেন। বৃদ্ধ বয়সে মাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এটা খুব দুঃখজনক এবং অন্যায়। সব সন্তানকেই মায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
যদি ফকির আলমগীরের সেই গানের ভাষায় বলি—
‘মায়ের এক ধার দুধের দাম
কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোস বানাইলেও ঋণের
শোধ হবে না।’
মায়ের দুধের ঋণ কোনো কিছুর বিনিময়েই শোধ করা সম্ভব নয়। তাই কোনো কারণে, কোনোভাবেই মায়ের মনে কষ্ট দেয়া উচিত নয়। মা সন্তান গর্ভে ধারণ করে কত কষ্টে দশ মাস কাটিয়েছেন, তা মনে করে তাকে যত্ন করা উচিত।
মায়ের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা প্রতিটি সন্তানের জন্য অত্যাবশ্যক। বৃদ্ধ অবস্থায় তাদের সেবা-যত্ন করা উচিত, যেমনটি যত্ন করে ছোটবেলায় তারা আমাদের বড় করেছেন। শেষ বয়সে বাবা-মা অসহায় হয়ে পড়েন। তাই সেই সময়টিতে সব সন্তানের উচিত যতটা সম্ভব তাদের সেবা-যত্ন করা, তাদের প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখা। যাতে কোনো অবস্থাতেই তারা নিজেদের অসহায় না ভাবেন, দুর্বল না ভাবেন। আজ যারা তরুণ-তরুণী, একদিন তারাও বৃদ্ধ হবে এবং এই সময়টি সবার সামনেই উপস্থিত হবে। তাই সব সন্তানের আন্তরিকভাবে বাবা-মায়ের সেবা-যত্ন করা উচিত। তারা কষ্ট পাবেন এমন কাজ, এমন কথা বলা কখনও উচিত নয়। রাজার রাজমহলের চেয়েও ‘মা’ অনেক দামি। এই অমূল্য সম্পদের যথাযোগ্য সম্মান করা সব সন্তানেরই উচিত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×