somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএমএর স্যালুট নেবেন ভারতীয় সেনাপ্রধান : ইহাও দেখিতে হইল

১৩ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মৃত্যুর আগে কোনো এক খ্যাতিমান মহাপুরুষ খেদোক্তি করেছিলেন, ‘মরিবার পূর্বে ইহাও দেখিতে হইল’। সেই খেদোক্তি জাতি হিসেবে এখন আমাদেরও। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে বার্ষিক পাসিং আউট প্যারেডে স্যালুট গ্রহণ করবেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয় কুমার সিং (ভি কে সিং)। আগামী ২১ জুন চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বিএমএর ৬৪তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স ও ৩৫তম স্পেশাল কোর্সের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সেনাপ্রধানও অনুষ্ঠানে থাকবেন। তবে চৌকস ক্যাডেটদের মধ্যে সনদ বিতরণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন ভারতীয় সেনাপ্রধান। আমাদের সেনাপ্রধানের কাজ হবে তাকে সঙ্গ দেয়া।
দেশের সচেতন মহল, দেশপ্রেমিক জনতা এই বিষয়টি নিয়ে যতই হতবাক হন না কেন, যত বিস্ময়ই তাদের সামনে স্তূপীকৃত হোক না কেন, প্রশিক্ষণ শেষে সরাসরি সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়া এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নেয়ার এই অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি সেনাপ্রধান স্যালুট গ্রহণ করবেন। এই উদ্বেগজনক ঘটনার স্রষ্টা আমাদের বর্তমান সরকার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এরপর আমাদের স্বাধীনতার পদক বিতরণ কিংবা মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও হয়তো প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন কোনো ভারতীয় সেনাপ্রধান কিংবা পশ্চিম বাংলার রাজ্যপাল।
পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নরুচির লোকটিও তার অপকর্ম জায়েজ করার জন্য কিছু অজুহাত নতিজা হিসেবে পেশ করে। আমাদের বর্তমান মহামহিম সরকারও এ ক্ষেত্রে একটি অজুহাত খুঁজে বের করেছে। অজুহাতটি হলো ভারতের বর্তমান সেনাপ্রধান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। এই অজুহাতকে খাড়া করে আমাদের সেনাবাহিনীর নৈতিক ও মানসিক শক্তিকে জলাশয়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে হয়তো ভূমিকা রেখেছিলেন। ভালো কথা। সেজন্য তাকে বিশেষ কোনো পুরস্কার কিংবা সনদ দিয়ে সম্মানীত করতে কে মানা করেছে। কিন্তু তা না করে বিএমএ পাসিং আউট প্যারেডে স্যালুট গ্রহণ করার জন্য তাকে আমদানি করা কেন? এসব কিসের আলামত। আমাদের সেনাবাহিনীর মানসম্মান, আত্মবিশ্বাস, নৈতিকতা, ধ্বংস করার জন্য আর কত নিচে নামবে এ সরকার জানি না।
‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিয়াছিল’ সে মরেনি। আর আমাদের সরকার ভারতের সেনাপ্রধানকে সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে ও স্যালুট গ্রহণের জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসিতে এনে প্রমাণ করল, তাদের কাছে বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল নয়, প্রধান ও একমাত্র নীতি ভারত তোষণ, ভারতপ্রীতি এবং ভারতের মুখাপেক্ষী করে সবকিছু গড়ে তোলা। এই পথ ধরেই তারা ধ্বংস করেছে বিডিআর, ভেঙে দিয়েছে সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড, ভারতের স্বার্থে উন্মুক্ত করে দিয়েছে করিডোর, ভারতীয় ফেনসিডিল ঢুকতে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ছুড়ে দিয়েছে ১ কোটি তরুণকে। প্রতিদিন ভারতের বিএসএফের হাতে নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষ। ফারাক্কা বাঁধ চুইয়ে এক ফোটা পানিও ঢুকতে পারেনি এদেশে। কল্লোলিনী মেঘনাকে হত্যার সব আয়োজন এখন টিপাইমুখে সম্পন্ন। সমুদ্র সীমার বিরাট অংশ ভারতের অবৈধ দাপটের নিচে। আকাশ উন্মুক্ত করে দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতিদিন কোনো না কোনো ঘর থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে। বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের বাজার বহুদিন হলো ভারতকে অলিখিত ইজারা দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট শিল্পে লাগিয়ে রাখা হয়েছে ভয়াল অস্থিরতা। নানা অজুহাতে মিল-ফ্যাক্টরি দেয়া হচ্ছে বন্ধ করে। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর অত্যাধুনিক মার্কেটের বিরাট অংশের মালিকানা নাকি বেনামে কিনে নিয়েছে ভারতীয়রা। তাতে শুধু ভারতীয় দ্রব্যাদিই বিক্রয় হবে। হাজার হাজার সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ঢালাও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে—বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির পাললিক প্রাণ ভোমরাটিকে হত্যা করার জন্য। সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয় চলে যাচ্ছে পাশ কাটিয়ে। লাখ লাখ ছেলেমেয়ে পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর ছুটে যাচ্ছে ভারতে। খ্যাতি, প্রতিপত্তি, পুরস্কার ও স্কলারশিপের লোভে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে দেশের সুশীল সমাজের সিংহভাগ অংশ। ধর্মের বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
বাকি ছিল শুধু সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীর নতুন অফিসারদের, নতুন কর্মকর্তাদের মনের মধ্যে যাতে ভারতের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা, ভক্তি জন্ম নেয়—হয়তো তারই জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানকে। ভারতের আগের সেনাপ্রধান দীপক কাপুর মইন উদ্দিন মিয়ার মাধ্যমে অশ্বমেধযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন। এখন দেখার বিষয়, বর্তমান ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিং সেই যজ্ঞের রক্ত ও অগ্নিতে আমাদের কতটুকু আহুতি দেন।
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×