লেখাটা পইড়া ভাল্লাগসে।
এক্কেরে মনের কতা কইসে।
মুল লেখা
বিস্তারিত:
লেখার বিষয় যখন ব্লগ তখন আমি কিঞ্চিত বিব্রত হয়ে পড়ি। লিখতে গিয়ে যদি লেখা ব্লগারদের বিপক্ষে চলে যায় তখন আমাকে পড়তে হবে বিপাকে। এমনকি সমালোচনা চলে যেতে পারে গালি পর্যন্ত; সেই সঙ্গে যুক্তি তর্কের বালাই না রেখে আমার (মুক্ত) মতকে রুখে দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই শুরুতেই বলে নিলাম, ‘ব্লগ নিয়ে লিখতে বসে আমি কিঞ্চিত বিব্রত।’
বেশ কিছুদিন ধরে ব্লগে একধরণের চর্চা দেখা যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে অনেকটা এমন, ‘এই যে ভাই আমি ব্লগার। তাই সাবধানে কথা বলেন।’ এই সাবধান করার ক্ষমতাটা জিইয়ে রাখাটাকে বলা হচ্ছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতার কোনো লিমিট নেই। এমনই হয়তো তারা মনে করেন।
স্বাধীনভাবে আমরা একজনকে গালি দেব। ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করব। অন্যকে হেয় করব। মা-বাপ- বোন-বউ কেউই এই গালি থেকে রক্ষা পাবেন না। এটাই স্বাধীনতা! মুক্তমত! যা খুশি বলতে পারাটাই স্বাধীনতা! ব্লগাররা যা বলবে সেটার সঙ্গে ‘হ্যাঁ’ মেলাতে হবে। সেখানে ‘না’ বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি হয়ে পড়বো সরকারের লোক। ব্লগের এমনসব ধারণা আমাকে বরাবরই হতাশ করে। শুধু হতাশই না, বিরক্তও করে। কারণ আমি নিজেও ব্লগার। আমি গালি দিতে ব্লগিং করতে আসিনি। কিংবা অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হওয়ার প্রতিযোগিতা করতেও আসিনি।
ব্লগিং শুরু করেছিলাম লিখতে ভালো লাগে বলে। নিজের মতামত বলা যায় বলে। ইন্টারেকটিভ মাধ্যম বলা হয় ব্লগকে। সেজন্যই ব্লগিং শুরু করেছিলাম। কিন্তু নিজের মতামত যদি নোংরামির পর্যায়ে চলে যায় তবে সেটা কি ব্লগিং পর্যায়ে পড়ে কিনা সে বিষয়ে আমার তেমন জ্ঞান নেই।
সে যাই হোক, ব্লগ তো এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সেখানে ‘দিবস’ হয়ে গেছে দু’টি। ফেসবুকসহ ব্লগগুলোতে বিভিন্ন ব্লগাররা এ নিয়ে কথা বলছেন। কেউ পক্ষে কিংবা কেউ বিপক্ষে। মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগের দুই পক্ষ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক না। স্বাভাবিক ঘটনা। যেখানে এই দেশটাই মতের প্রশ্নে বিভক্ত। সেখানে ব্লগতো কিছুই না। যে দেশে স্বাধীনতার ঘোষক কে; তা নিয়ে সংসদে ঝগড়া হয়; সে দেশে ব্লগ দিবস নিয়ে ঝগড়া হবে না (!) সে তো হতে পারে না।
আমি ভাবতাম হয়তো একদিন ব্লগাররাই নির্ধারণ করবে ব্লগ দিবস কবে হওয়া উচিত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ব্লগ ‘পলিটিক্স’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এক পক্ষ ১৯ ডিসেম্বর। আরেক পক্ষ ১ ফেব্রুয়ারি।
এতসব কিছু দেখে মনে কয়েকটি প্রশ্ন জাগে, ১) ব্লগ কেন? ২) এসব নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য? ৩) ব্লগ দিবস, কর্পোরেট ব্লগ নিয়ে একে অন্যকে খাটো করার জন্য? ৪)এজন্যই কী ব্লগিং?
ব্লগ নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শুধু কি প্রতিযোগিতা! কার ঝোলায় কয়টা ব্লগ আছে সেটা নিয়েও চলছে আয়োজন। অথচ রাজনীতির অঙ্গনে ঝোলায় দল বাড়ানো নিয়েই আমরা সমালোচনা করি। যা এখন ব্লগে শুরু হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বরের ঝোলায় ১৩টি ব্লগ। ১ ফেব্রুয়ারির ঝোলায় আছে ৮টি ব্লগ।
১৯ ডিসেম্বর ব্লগ দিবসে প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘গণজাগরণে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার আইন।’ এই সাইবার আইন নিয়ে হয়েছে আপত্তি। ব্লগারদের একদল সাইবার আইন নিয়ে হামলে পড়লেন। সাইবার আইনকে নিয়ে বানালেন ব্লগ আইন। দুঃখজনক বিষয়টি হলো, ব্লগাররা সাইবার জগতে শুধুমাত্র ব্লগই খুঁজে পেলেন। সাইবার জগতটা যে কত বৃহৎ তা তারা একবারো ভাবলেন না। বরং বলতে পারতেন, নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি তারা মানেন। কিন্তু সাইবার আইন যদি ব্লগের মতামত বন্ধ করার জন্যে হয় তবে সেখানে আমাদের আপত্তি।
ব্যক্তিগতভাবে আমারও আপত্তি সেখানে। ব্লগের জন্য কোনো আইনের দরকার নেই। ব্লগ চলবে ব্লগের গতিতে। প্রতিটি ব্লগে মডারেশন আছে। কোথাও পোস্ট আসার পর মডারেট হয়; কোথাও পোস্ট আসার আগেই মডারেট হয়ে যায়। যেখানে প্রতিটি ব্লগের নীতিমালা আছে সেখানে আইনের কোনই ভিত্তি নেই।
তবে আমার ব্যক্তিগত ছবি যদি আপনার ফেসবুক প্রফাইলে শেয়ার দেন তখন আমি কার কাছে যাবো? কার কাছে গিয়ে বলবো? নাকি এখানেও সুস্পষ্ট কোনো আইনের দরকার নেই? তাহলে আমার ব্যক্তিগত ছবি আপনি আপলোড করবেন। আমি নিরুপায় হয়ে দেখতে থাকবো। কারণ আমার ছবি আপনার ফেসবুকে থাকাটা আপনার মুক্তমতের সমান। বাধা দিলেই লাফিয়ে উঠবেন। হুংকার দিয়ে বলবেন, ‘আমি ব্লগার। খবরদার।’
যাইহোক। ব্লগ দিবস নিয়ে এক পক্ষ বলছেন, ‘ড. আনিসুজ্জামান ঘোষণা দিয়েছেন ১৯ ডিসেম্বর বাংলা ব্লগ দিবস।’ আরেক পক্ষ বলছেন, ‘ড. জাফর ইকবাল ঘোষণা দিয়েছেন ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ব্লগ দিবস।’ এসব কিছু হাস্যরসের উদ্রেক ঘটায়। সত্যি কথা হলো, এ দু’জন সম্মানিত মানুষ সম্ভবত জানেনই না ব্লগের ভেতর এই নোংরা খেলাধুলার কথা।
তা না হলে তারাই বলতেন, যে ব্লগাররা দিবস নিয়ে মারামারি করে, দিবস নিয়ে একে অন্যকে ছোট করে তারা আবার সমাজে কী জাগরণ ঘটাবে?
জাগরণ কোথায়? আমি তো দেখছি উল্টো রাজনীতিবিদদের হাতেই ব্লগকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন পর রাজনীতিবিদদেরকে বলবেন, ‘আপনারাই বলেন বাংলা ব্লগ দিবস কবে হবে।’ তখন তারা যে বিদ্রুপের হাসি দেবেন তা আমি বেশ বুঝতে পারছি।
ব্লগ নিয়ে এতো হাউকাউয়ে একটি প্রজন্ম জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি যেটাকে বলবো মিসগাইড হয়ে পড়ছে। তারা ব্লগে এসেই দেখছে, এখানে ব্লগ দিবস নিয়ে ঝগড়া হয়, প্রতিযোগিতা হয়, গালি দেওয়া যায়। সুতরাং এটাই ব্লগ কালচার। সো, শুরু করো পুরোদমে।
আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন সমাজ বইতে পড়লাম স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। আবার যখন অষ্টম শ্রেণীতে যাই তখন দেখলাম স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিবর রহমান। তার মানে কী? ইতিহাস নিয়ে মারামারি কাটাকাটি দেখেই আমি বড় হয়েছি। পাঁচ বছর ইতিহাস লেখা হবে একভাবে। পাঁচ বছর পর ইতিহাস লেখা হবে অন্যভাবে!
বড় আজব এ দেশ। সেখানে ব্লগ তো ছোট্ট দেশের ছোট্ট মাধ্যম। দুঃখিত! ব্লগ ছোট্ট নয়; অনেক বড় মাধ্যম। এতই বড় মাধ্যম যে সেখানে দিবস হবে দু’টি। একদল সুবিধা না করতে পেরে বলবে, ‘কর্পোরেট ব্লগ।’
অন্যপক্ষ নিজেকেই পাইওনিয়ার বলতে চায়। মোটে তো বিজয় দিবসের দিনই ব্লগ দিবস বানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। পরে ব্লগারদের তোপের মুখে পড়ে সেটাকে ১৯ তারিখ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বিষয়টির মীমাংসা হতে পারতো। কিন্তু তখন অন্যপক্ষ বলতে শুরু করলো, ভাষার মাসই হবে ব্লগ দিবস।
যতকিছুই হোক না কেন, বাংলা ব্লগ আত্মপ্রকাশ করেছে ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে। তাহলে সেখানে আপত্তির জায়গাটা কোথায়? জায়গা একটাই থাকছে। সেটা হলো ‘ইগো’। ব্লগে ইগো তৈরি হয়েছে। ইগোটা কিন্তু এক পক্ষের নয়। দুই পক্ষেরই ইগো। মানুষে মানুষে প্রতিযোগিতা আক্রমণাত্মক পর্যায়ে যায় যখন মানুষের মনে ইগো অনুভূতি গড়ে ওঠে। এটা আমার মা বলতেন।
তাহলে বলে দেওয়া যায়, ব্লগে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। চলুক প্রতিযোগিতা। যাবে কতদূর? বিজয়ের মাস এবং ভাষার মাসে আমরা একজন আরেকজনকে গালি দেব। প্রত্যেকে নিজের ইগোকে প্রতিষ্ঠা করতে নেমে পড়বো মানসিক হিংস্র উন্মত্ততায়! এভাবে চলুক তাহলে!
শুধু অভাগা আমার দেশের ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারদের জন্য একটু খারাপ লাগবে। মন গুমরে গুমরে কাঁদবে। দু’টি অর্জনকে আমরা ভাসিয়ে দেব ব্লগের ‘হানাহানির’ জগতে? যাক তবে হারিয়ে যাক আমাদের মন-মননের সব সুকুমারবৃত্তি! বিসষ্ময় জাগে ভেবে যখন আবার আমরাই বলবো বা বলি, ব্লগে আমরা গণজাগরণ করবো।
আমি জানি আপনারা ব্লগার। তবে আমিও তো ব্লগার। তাই সাবধানতার আশ্রয় নিলাম। লেখক হিসেবে নাম দিলাম গোপনের আবরণে। ছদ্ম নামে নিশ্চই আপনাদের আপত্তি নেই? কারণ, আপনারাতো মুক্তমতে বিশ্বাসী। নাম কি হবে তা দিয়ে লাভ কী? আসল হলো মতামত। সেটাই মুক্ত করলাম। আর তাছাড়া আপনারাই শুধু ব্লগার! আমাদের মতো চুপচাপ ব্লগারদের মূল্য আপনারা হয়তো দেবেন না। আপনাদের সম্পর্কে নিজের মত বলতে গিয়ে কোন বিপদে পড়ি! তাই সাবধানে বেনামে লিখলাম দু’টি কথা।
শেষটা শুরুর লাইন দিয়েই শেষ করি। আমি ব্লগ নিয়ে লিখতে গিয়ে খুবই বিব্রতবোধ করছি। কারণ আমিও সে জগতের একজন বাসিন্দা। আমার সে জগতের ভার্চুয়াল চরিত্রগুলো বাস্তবে ব্লগ দিবস নিয়ে যা শুরু করেছেন তা সত্যিই আমাকে আহত করছে। তাই ব্লগার বললে সে কলংক আমার কাঁধেও এসে পড়ে। আমি বা আমার মত হাজারো ব্লগার কেন তাদের জন্য কলংকিত হবেন? এ প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নিচ্ছেন তারাই এর দায়ভার নিক। ব্লগার না বলে বলতে হবে, ইগোইস্টিক ব্লগার। আপনি ব্লগার, তাই আমি সাবধান হলাম। কিন্তু ভাই আমিও ব্লগার। আমার থেকে আপনার সাবধান হওয়ার প্রয়োজন নেই
(সুত্র: বাংলানিউজ ২৪ ডট কম)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:০৪