somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবুলে শুরু আবুলেই শেষ

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পদ্মা নদীর বুকে ভাষাশহীদ বরকত ফেরিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি করে সরকার। সেই পদ্মা পাড়ি দিতে দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে আরো বেশ কয়েক বছর যে ফেরিতেই সওয়ার হতে হবে, তা একরকম নিশ্চিত। যদিও মন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রায়ই টেলিভিশনে হাসি হাসি মুখে এ সরকারের মেয়াদেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার কথা বলতেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এখন চার বছর পেরিয়ে সরকার তাদের মেয়াদে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ তো দূরে থাক, শুরু করার চেষ্টায় ঘাম ঝরিয়ে একসা। তাও প্রধান অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছাড়াই। এসব অঘটনের দায়ে যাঁর নাম সবার আগে তিনি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। চার বছরের ঘটনাপ্রবাহে তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় হারিয়েছেন, মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের জেরার মুখে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আসামি না করায় ঋণও ছাড় করেনি বিশ্বব্যাংক। তার পরও আবুল হোসেন নিজেকে দাবি করছেন একজন সৎ মানুষ। আকাশপথে না গেলে তাঁকেও নিজ এলাকায় যেতে হলে ফেরিতেই পদ্মা পাড়ি দিতে হবে আরো কয়েক বছর।
২৯০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক একাই দিতে চেয়েছিল ১২০ কোটি ডলার। কিন্তু সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করার পরও দুদক ও সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দেওয়া থেকে সরে যায়। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের আঙুল ছিল আবুল হোসেনের দিকেই। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়েরিতে কাজ পেতে যে ১০ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি লিখিত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার ৪ শতাংশ নাকি ছিল আবুল হোসেনের জন্য।
পদ্মা সেতু প্রকল্প তদারক করতে যে পাঁচটি সংস্থার তালিকা করা হয়েছিল, তার একটি ছিল এসএনসি-লাভালিন। তবে তাদের কাজ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল না। এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের ভেতরকার দ্বন্দ্বে ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনাটি ফাঁস হয়। বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ডিপার্টমেন্টের কানে পৌঁছে। বিশ্বব্যাংক বিষয়টি কানাডা সরকারকে জানালে তারা অভিযুক্ত এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেইন পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
বিশ্বব্যাংক দাবি করে, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর লাভালিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি টাকায় ৩৪৫ কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি স্থগিত করে। সেই সংক্রান্তে লাভালিনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইলকে কানাডা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে রমেশ সাহাকেও আটক করা হয়। তাঁরা দুজনেই মুচলেকা দিয়ে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে জানায়, পদ্মা সেতুর পরামর্শক হিসেবে তালিকায় স্থান দেওয়ার কথা বলে লাভালিনের কমিশন এজেন্ট হতে চেয়েছে আবুল হোসেনের প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল। তারা 'সুনির্দিষ্ট' দুর্নীতির অভিযোগের ব্যবস্থা চেয়ে সরকারকে চিঠিও দেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে তারা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঋণ চুক্তি বাতিল করে। এরপর সরকার নড়েচড়ে বসে। বিশ্বব্যাংকের চাপে আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অন্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়। তাতেও সন্তুষ্ট ছিল না বিশ্বব্যাংক। পরে আবুল হোসেন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। বিশ্বব্যাংক তাঁকে মামলায় আসামি হিসেবে দেখতে চায় বলে জানিয়ে দেয়।
১৭ ডিসেম্বর সাতজনের নাম উল্লেখ করে বনানী থানায় মামলা করে দুদক। তাতে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে সরাসরি আসামি করা হয়নি। এতে অসন্তুষ্ট হয় বিশ্বব্যাংক। দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করতে গঠন করা তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সমঝোতা না হওয়ায় ভেস্তে গেল ঋণ চুক্তি।
সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে মামলার এজাহারে বলা হয়, মোহাম্মদ মোস্তফা, রমেশ সাহা ও কেভিন ওয়ারেসের জন্য বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ মোস্তফা, রমেশ সাহা ও কেভিন ওয়ারেস ২০১১ সালের ২৯ মে ঢাকায় বৈঠক করেন। পরে ২০১১ সালের ১৯ জুন যথাযথভাবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এসএনসি-লাভালিনের অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়ার সুপারিশ করে।
দুদকের অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এসএনসি-লাভালিন এবং অনান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আর এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর সাক্ষাতের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, এসএনসি-লাভালিনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহার নোটবুকে কাজ পাওয়ার পর পদ্মা সেতু প্রকল্পের পিসিসি (প্রজেক্ট কমার্শিয়াল কস্ট) হিসেবে দরপত্র মূল্যের বিভিন্ন পারসেন্টেজ প্রদানের হিসাবে দুই আবুলের বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে আলোচ্য ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনে আবুল হাসান চৌধুরী ও সৈয়দ আবুল হোসেনের ভূমিকা রাখার বিষয়ে অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য বা পরিপূরক সাক্ষ্য এযাবৎ অনুসন্ধানকালে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে অপরাধ সংঘটনে আবুল হাসান চৌধুরী ও সৈয়দ আবুল হোসেনের অপরাধসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বিশ্বব্যাংক প্যানেলের দ্বিতীয় সফরে দুদকের সঙ্গে তাদের তিনবার বৈঠক হলেও অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও মামলায় কাদের আসামি করা হবে এসব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি। পরে সমঝোতা ছাড়াই দুদকের সঙ্গে প্যানেলের আলোচনার সমাপ্তি টেনে বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আবুল হোসেনকে আসামি করলে আবুল হাসানকেও আসামি করতে হবে। তিনি বিশ্বব্যাংককে জানুয়ারির মধ্যে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন। যদিও বিশ্বব্যাংক জানায়, তারা শর্ত পূরণ না হলে ঋণ দেবে না। এরপর সরকারই ঋণের আবেদন বাতিল করে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, তারা তদন্ত চালিয়ে যাবে।

সুত্র: কালের কন্ঠ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×