“ওরা এখন পার হতে চায় দুর্গম দীর্ঘ পথ,
শোন, ওরা বলে, রাত শেষ হয়ে এল”…….
বন্ধুরা, তোরা ছিলি একই বৃন্তে শতদল হয়ে। স্বপ্নগুলো তোরা দেখতি মুগ্ধ চোখে – একজন নয়, সবাই। স্বপ্নের দখিনা বাতাসে দোল খেত শতদলের প্রতিটি পাপড়ি, একসাথে।
আকুল চোখে তাকিয়ে থাকতি দিগন্ত পানে, চেয়ে চেয়ে দেখতি কেউ বুজি নিয়ে এল নতুন খবর। মায়াভরা চোখে পরস্পরকে দেখতি বন্ধুর বাৎসল্যে, ভাইয়ের স্নেহ ও বোনের মমতায়।
ঝগড়া যে হোতনা তা নয়। ঝগড়ায় যতটুকু না ক্ষোভ ঝরত, ঝগড়া শেষে যখন একলা হতি ততোধিক কষ্টে বুকটা মুচড়ে উঠত। ভাবতি, ইশ! কেন যে তার সাথে এত বেশি রেগে গেলাম?? সে কি খুব কষ্ট পেয়েছে??!!
“বাদল ধারা হল সারা, বাজে বিদায় সুর।
গানের আসর শেষ করে দে, শেষ করে দে…….”
সেই ফুলের পাপড়িগুলো আর বুজি এক থাকেনা। অনার্স শেষ, মাস্টার্স ও শেষ হওয়ার পথে। তোরা মেতে উঠলি জীবনকে আর একটু সুন্দর করার উদগ্র বাসনায়। ঝরে যেতে থাকে এক-একটা পাপড়ি। তোরা ছুটতে শুরু করলি দিগন্তপানে।
“কষ্টে আছে খেঁটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, আপামর জনগন, পরিশেষে দুখিনী বাংলা।
ভাবি, ইশ! যদি কিছু করতে পারতাম!!
এই, তুই কি ভাবিস?
আমি ভাবছি অন্য কিছু।
ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়াগুলো দিনদিন হয়ে উঠছে বেয়াড়া, ত্যাদঢ়।
রোগে ভুগিয়ে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে বেশ।
ভাবছি, এদের শায়েস্তা করা দরকার।
আর তুই?
ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা।
এদেশের কৃষিতে বিপ্লব আনা দরকার।
যাতে কেউ এই আর্তনাদ না তোলে
‘ভাত দে হারামজাদা, না হয় মানচিত্র চিবিয়ে খাবো’”।
হাঁ, তোদের স্বপ্নগুলো বিচিত্র। স্বপ্নগুলো নিজের মত করে লালন করিস তোরা। যেমনঃ
সবুরঃ
স্বপ্নিল পৃথিবীটাকে মাঝে মাঝে তোর বিরক্তিকর ই মনে হয়। অফুরন্ত মেধা আর সৃজনশীল মনের তোর মাজে ছন্নছাড়া ভাবটাই একটু বেশি। কোন কিছুকেই খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করিস না। তাই বলে সৃষ্টিশীলতার কোন সুযোগই হাতছাড়া করিস না। ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট ডিজাইন, নবীনবরনের ডকুমেন্টারি ও ট্যুরের আই ডি কার্ড তৈরি, বিভাগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ডিজিটাল দিকগুলো সামাল দিয়ে তুই তোর জাত চেনালি। অবশেষে গন্তব্য জার্মানি। আই টি ছিল তোর খেলার অনুষঙ্গ। তার সাথে বায়োলজি মিলিয়ে পড়ার সুযোগ পেলি ইনফর্মেশন বায়োলজিতে। স্বপ্নটাকে ছুঁয়ে ফেললি তো!! এবার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যা।
টুনটুনিঃ
তোমার চড়ুই এর মত ছোটাছুটি আর কিছির মিছির শব্দে দ্রুত বলা কথাগুলোর মতই উচ্ছ্বল তুমি, তোমার স্বপ্নগুলো। শব্দগুলো তোমার মুখ থেকে অতি সহজেই ফুড়ুৎ করে বেরিয়ে যায় যার মর্মোদ্ধার শ্রোতৃমণ্ডলীর জন্য প্রায়ই কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু তুমি সুন্দর তোমার সরলতায়, সততায়। ক্লাসে জার্নাল প্রেজেন্টেশান এ তোমার সুন্দর উপস্থাপনার মতই সুন্দর তোমার স্বপ্নগুলো। স্বপ্ন দেখো বাবা-মা, ভাইবোনের জন্য কিছু করার। তাইতো চোখ মেলে তাকাও সুদুরপানে। পেয়েও গেলে তুমি সহজেই! জাপানে এন আই পি এস স্কলারশিপ নিয়ে ইন্টার্ন করার সুযোগটি লুফে নিলে সহজেই! এইতো শুরু!! এবার এগিয়ে যাওয়ার পালা!!!
রিপনঃ
হা হা হা হা হা। মিস্টার বিন কে আমরা স্বচক্ষে দেখিনি কিন্তু তোর খ্যাতি ক্যাম্পাস জুড়ে। তুই হলি মাল্টিট্যালেন্ট। একই সাথে কমেডি, পড়াশোনা ও খেলা সব জায়গায়ই অপ্রতিদ্বন্ধী ! মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার সহজাত গুন তোকে অনেকদুর নিয়ে যাবে। বাবা নেই তোর। স্বপ্ন দেখিস মা ও তোর প্রিয় রানিকে নিয়ে সুখের নীড় রচনা করতে। জার্মানির বন ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেলি। এবার স্বপ্নসাধ বাস্তবায়ন করার পালা!
জামিলাঃ
বন্ধুমহলে তোমার বকা শুনেনি এমন কেউ নেই। তবে তোমার বকাগুলো সবাই উপভোগ করত, এতে যে কেউ কষ্ট পায়নি একথা হলফ করে বলতে পারি। খুবই সহজ সরল একটি মেয়ে তুমি। কিন্তু স্বপ্ন দেখো ঠিকই। আর একটু সচেতন হলেই তুমি অবলীলায় চড়তে পারো স্বপ্নচূড়ায়!!
আমিনুলঃ
কিরে, খুব দুশ্চিন্তা করিস বুজি? আরে তোর মত কয়জন আছে যে জাপান থেকে ইন্টার্ন করেছে আবার আই সি ডি ডি আর বি তে থিসিস করছে? জানি, তোর স্বপ্নটা হয়তো আর একটু বড়! আরে বড় বলেই তো একটু সময় লাগবে, তাই না? লেগে থাক, হয়ে যাবে!!
লিলিঃ
এই, তুই কোথায় যাবি রে? এন আই বি নাকি বিসিএস নাকি অন্য কিছু? তবে যেখানেই যাস একটু কষ্টসহিষ্ণু হলেই উপরে উঠে যাবি। তোর সে গুন আছে, এতটুকু বলতে পারি!!
নন্দদুলালঃ
বন্ধু তুই একটু স্মার্ট থাকতেই পছন্দ করিস। বিভিন্ন প্রোগ্রাম কিভাবে আর একটু সুন্দর করা যায় এই ব্যপারে সবসময় তোর একটি আলাদা নজর থাকে। স্বপ্নটা দেখিস একটু রাজকীয় স্টাইল এ। কিন্তু একটু পরিশ্রম করতে হবে যে!! স্বপ্নচূড়াতো বেশি দূরে না!! দেখিস খুব দ্রুতই পেয়ে যাবি!!
হুরমতিঃ
এ যে একটা ছাইচাপা আগুন! কখন যে জ্বলে উঠে তার ঠিক নাই!! বোঝা যায় না, কিন্তু ঠিকই ভালো রেজাল্ট করে ফেলে! চুপচাপ থেকেই এন এস টি স্কলারশিপ পেয়ে যাও, “হেকেপ” ওয়র্কশপ করে ফেল!! কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করে অবাক হয়ে যাই যে তুমি মারাত্মক চাপের মধ্যেও অত্যন্ত সহজ থাকতে পারো!! পড়াশুনাই সবাইকে সহযোগিতা কর নিঃশঙ্কোচে। চাপা স্বপ্নটা যথাসময়ে যথাযথভাবে আলোর মুখ দেখবে, এই আশাই করি।
ফুলবানুঃ
তোর কথা কি আর বলবো, তুই আসলেই একজন দৃঢ় মানুষ। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও তোর যা আবশ্যক তা করে ফেলতে পারিস। এই গুণটি তোকে অনেকদুর নিয়ে যাবে। অনেক বড় স্বপ্ন দেখিস!! দেখিস, একদিন ঠিকই পৌঁছে যাবি গন্তব্যে।
রোমানাঃ
তুই অনেক দক্ষ একজন মানুষ! সবকিছু ভালভাবেই সামাল দিতে পারিস- সংসার, পড়াশুনা, স্কলারশিপ!সবার আগেই জাপান থেকে ঘুরে আসলি। নতুন নতুন সুযোগের সন্ধানে স্বপ্নটাকে বাঁধছিস নিত্যনতুন সুতোই! কারন যেতে হবে বহুদুর……
বন্ধুরা, একটা অনুরোধ করবো। তোরা যে যেখানেই থাকিস না কেন, এই দেশটাকে, দেশের মানুষকে ভুলে যাবি না। স্বপ্নের একটি ডানা মেলে রাখিস এই দেশের উপর……