রিকি ফ্ল্যাটের নিচে এসে নিনিতকে কল দেয়, "এই আমি তোমার ফ্ল্যাটের নিচে চলে এসেছি। আমার সাথে আইসক্রিম নিয়ে আসছি। তুমি কি নামবে নাকি আমি উপরে উঠবো? " নিনিত বলে, "ঠিক আছে, উপরে চলে এসো"। লিফট বেয়ে রিকি উপরে উঠে যায়। সে আজ কনফিউজড যে কি হবে। আগের রাতে নিনিতের বারবার নিষেধ সত্বেও সে আজ আসলো। নিনিতের পাশে সোফায় বসলো। আজ সে নিজে থেকে কোনো কিছুতে জোর করতে চায়না। সোফায় বসে নিনিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবতে থাকে সে নিজে এক অদ্ভুত মানুষ, এক অদ্ভুত এক্সপারিমেন্ট করতে এসেছে আজ। সে আজ নিজেকে যাচাই করতে চায়। নিনিতকেও এই মুহূর্তে তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়। মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়। এই কয়েকদিনে মেয়েটা মনে হয় তাকে কিছুটা হলেও ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু রিকি এখনো নিনিতকে ভালোবাসতে পারেনি। বরং বলা যায় মেয়েটার প্রতি একটা শারীরিক আকর্ষণই অনুভব করে। কিন্তু নিনিতকে তার খারাপ কোনো মেয়ে মনে হয়নি মেয়েটার প্রতি মনে মনে সে রেসপেক্ট ফিল করে। শারীরিক ও মনের ভালোবাসা দুটোর প্রকাশের ক্ষেত্রেই মেয়েটা কোনোরকম ছলচাতুরী করেনা। একা ফ্ল্যাটে মেয়েটা রিকির হাত ধরে। রিকি নিনিতের হাত দুটি নিজের হাতে তুলে নেয়। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। একসময় ঠোঁটে ঠোঁট নামে। মেয়েটা পরম মমতায় রিকিকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে চায়। রিকিও ঠিক তাই। পরস্পর চুমু খায় চোখে , কপালে মুখে, চুলে। হারিয়ে যেতে যেতেও একসময় মেয়েটা কেঁদে ফেলে। থমকে যায় রিকি। আর এগোয় না সে। হাত ধরে পাসে বসায়। নিনিতের মাথাটা বুকের মধ্যে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার নিজের কথা বলে। নিনিতের কথা শোনে। একসময় কেঁদে ফেলে রিকি। নিজের কথা ভেবে, নিনিতের কথা ভেবে, তার কাছের মানুষদের কথা ভেবে, কষ্টে থাকা মানুষদের কথা ভেবে। নিনিত অবাক হয়। কিন্তু রিকি আসলে মেয়েটাকে ঠকাতে চায় না, কারন সে মেয়েটার সাথে কোনোরকম কমিটমেন্ট এ যেতে চায় না। তারপর সে মেয়েটার সাথে কিছুটা অনুভুতি বিনিময় করে, প্রাণের বিনিময় হয় কিছুটা। জীবন ও মানুষ নিয়ে মেয়েটার সুন্দর চাওয়া ও অনুভুতির কথা শোনে। শুনে রিকির মন আকুল করে চায় যে তাদের সম্পর্ক থাক কিংবা নাই থাক মেয়েটা যেন জীবনে একটা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। যদিও রিকি কোনো কমিটমেন্ট এ জড়াতে চায় না তবুও এই চাওয়ার মানে কি সে জানে না!!!
সৌরভ একটু লাজুক টাইপের ছেলে। স্কুল, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি লাইফেরও অর্ধেক চলে গেল কিন্তু কাউকে ভালোলাগার কথা বলা বা কারো কাছ থেকে শোনা হলনা। বন্ধু রিফাতকে একদিন বলেই ফেললো,
"আর কতকাল একা থাকব"?!!!!
রিফাত আস্বাস দেয় "দোস্ত, আমি তোর একাকিত্ব দূর করার ব্যাবস্থা করছি"।
দুইদিন পর সন্ধ্যায় অচেনা নাম্বার থেকে পরপর কয়েকটা মিসকল। ব্যাক করার পর অচেনা মানুষের প্রশ্ন "আপনি আমাকে কেন বারবার মিসকল দিচ্ছেন"?
সৌরভ অবাক। "আমি আপনাকে মিসকল দিচ্ছি মানে?!!"
মেয়েটা নিশ্চুপ। সৌরভ একটু ভেবেই কলটা কেটে দিলো। ফোন দিলো রিফাতকে। "তুই আমার নাম্বার কাউকে দিয়েছিস?"
রিফাত বললো হা।
"কাকে দিয়েছিস?"
"ও আমার ফ্রেন্ড পুষ্পিতা। খুব ভালো মেয়ে। তোর একাকিত্ব ঘুছে যাবে। হা হা।"
"কিন্তু আমার যে ভয় করে?"
"কোনো ভয় নেই। সে অনেক ভালো।"- রিফাত বলে।
দ্বিধাদ্বন্ধ মনে এবার পুষ্পিতাকে কল করে সৌরভ।
"হ্যালো"
"হা বলুন।"
"আপনি পুষ্পিতা?"
"হা।"
"রিফাতের কাছ থেকেই আমার নাম্বার পেয়েছেন?"
"হা, রিফাত আমাকে বললো যে আপনি ওর ফ্রেন্ড, ভালো ছেলে ইত্যাদি, ইত্যাদি।"
"আর কিছু বললো?"
"আর বলল যে আপনি একজন ভালো ফ্রেন্ড খুঁজছেন।" বলল পুষ্পিতা।
"তাহলে আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি ভালো ফ্রেন্ড হতে পারেন?"
"হা।"
"দেখুন, জীবন সম্পর্কে আমার ধারণা ও অভিজ্ঞতা দুটোই কম। তারপর ও বলি আমরা বন্ধুত্বের লিমিট ক্রস করবনা। আমি খুবই অগোচালো একটা ছেলে। তাই আমি জানিনা জীবনে আমি কতদুর যেতে পারবো, আমার ক্যারিয়ার কেমন হবে, আমি কতদিনে আমি প্রতিষ্ঠিত হব।"- বলল সৌরভ।
"এগুলোতো অনেক পরের কথা।"- পুষ্পিতা বলল।
"আমি অনিশ্চিত কোন কিছুতেই কমফোর্ট ফিল করিনা। তাই এসব কিছু আগেই ভেবে নিচ্ছি।"
"ওকে, তাহলে আমরা এরকম কোনোকিছুতে যাবনা। " বলল পুষ্পিতা।
"ওকে ঠিক আছে।"
এভাবেই শুরু হয়ে চলল তাদের বন্ধুতা। কিন্তু একসময় দুজনেই লক্ষ্য করল যে তারা দুজন দুজনকে একটু ভিন্নভাবে ফিল করতে শুরু করছে।
বরাবরের মত ভিতু সৌরভ একটু চিন্তিত হয়ে গেলো। ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলল সরাসরি পুষ্পিতার সাথে। পুষ্পিতারও কিছুটা তাই মনে হল। সৌরভ ভাবল যে আরও মায়া বাড়াতে গেলে নিজেও কষ্ট পাবে, মেয়েটাও। সাবধানি সৌরভ কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। বন্ধ হয়ে গেলো যোগাযোগ।
কিন্তু সৌরভের প্রার্থনায় পুষ্পিতা রয়ে গেলো অনেক দিন।