somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞাপন বিনির্মাণ ও প্রচার : ইসলামিক নীতিমালা -২

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. নিষিদ্ধ ছবির আপত্তিকর ব্যবহার

যুগ চাহিদার মিষ্ট শ্লোগানে যদিও ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইদানিং বেশ শিথিলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিন্তু ছবি সম্পর্কিত ইসলামী আইনের মূল ছত্রগুলো এখনো অশিথিল, এখনো আপোসহীন। তাতে সামান্যতম চিড়ও এ যাবত দৃষ্টিগোচর হয়নি। ছবি ব্যাখ্যার দীর্ঘ সূত্রতায় খানিকটা ভিন্নমত লক্ষ্য করা গেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমন্বিত বক্তব্য হলো, ইসলামী আইন মতে প্রাণির চিত্র নিষিদ্ধ এবং অবিধানিক। তাতে কাল চাহিদার ঠুনকো যুক্তি দেখিয়ে শিথিলতা প্রদর্শনের সামান্যতম অবকাশ নেই। আর অপারগতা, অক্ষমতা ইসলামী আইনে একটি স্বীকৃত বিষয়। ওজরগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য শুধু জীবচিত্র কেন কুরআন হাদীসের অকাট্য নিষিদ্ধ ‘মরদেহ’ ভক্ষণও বিধিসম্মত। ওজর এবং প্রয়োজনীয়তার একটি সীমানা প্রাচীর রয়েছে। যার বিস্তৃত বিবরণ ইসলামী আইনের পত্রপল্লবে বিবৃত হয়েছে। তাই প্রয়োজনীয়তার অবাঞ্ছিত রেখাকে দীর্ঘায়িত করে জীবচিত্রের বৈধতা অন্বেষণ কোনো ক্রমেই অনুমোদিত নয়। এখানে আমরা বিষয়ের আবশ্যিক প্রাসঙ্গিকতায় জীবচিত্র সম্পর্কিত দু’টি হাদীস উল্লেখ করবো।

১. আবূ তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ঘরে কুকুর অথবা জীবচিত্র থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৪৯
হাদীসটির ভাষ্যকে সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। জীবচিত্র ব্যবহারের নিষিদ্ধতা ঘরের চৌহদ্দির মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর পরিধি ব্যাপক। সর্বত্রই এর নিষিদ্ধতা প্রযোজ্য। খ্যাতিমান হাদীস বিশারদ ইবনে আব্দুল বার রাহ. বলেন, হাদীসটির দৃশ্যত বক্তব্যের দাবি হলো, জীবচিত্র ব্যবহারের নিষিদ্ধতা স্থান কাল পাত্র নির্বিশেষে সর্বক্ষেত্রকে ব্যাপৃত করবে।Ñআত্ তামহীদ লিমা ফিল মুয়াত্তা মিনাল মা‘আনী ওয়াল আসানীদ ১/১০১। তাছাড়া হাদীসটির মধ্যকার (بَيْت) বাইত বা গৃহকে হাদীসের ভাষ্যগ্রন্থগুলোতে স্থান বা মানুষের আবাসভূমি বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সুতরাং ‘বিজ্ঞাপন যেহেতু ঘরোয়া কোনো বিষয় নয়; বাইরের বিষয় তাই তাতে জীবচিত্রের ব্যবহারে কোনো বিধি নিষেধ নেই এবং সেখানে ফেরেশতাকুলের যাতায়াতেও কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’ এ জাতীয় বাতিক প্রসূত বিরল চেতনা বিকাশের কোনোই সুযোগ নেই। হাদীসটিতে বেশ স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, জীবচিত্ররক্ষিত জায়গাগুলোতে দয়া ও অনুগ্রহ বিভাগের দায়িত্বশীল ফেরেশতাকুলের আগমন ঘটে না। অথচ আজ আমাদের দেশটাই বিজ্ঞাপন চিত্র ছবিময় এক রঙিন ভুবনে পরিণত হয়েছে। কোথায় নেই বিজ্ঞাপনচিত্রের উন্মাতাল ব্যবহার। নাগরিক জীবনের কথা না হয় বাদই দিলাম। নীরব নিস্তব্ধ আবহমান বাংলার গ্রামীণ পরিবেশও বিজ্ঞাপন চিত্রের ভয়াল দুষণ থেকে মুক্ত নয়। এভাবে বিজ্ঞাপন চিত্র দিয়ে যদি দয়া অনুগ্রহ আনাগোনার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয় তাহলে এ দেশে অশান্তি বিশৃঙ্খলা, বিবাদ বিসম্বাদ, হানাহানি, খুনোখুনি ইত্যকার অনাচার কি করে রুদ্ধ হবে? যে পথ্যে এসব দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময় হবে সে পথ্য সেবনের যাবতীয় উপায় অবলম্বনই যদি বন্ধ করে দেই তাহলে তো এ সব ব্যাধির প্রাদুর্ভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে পেতে পুরো দেশটারই একদিন অপমৃত্যু ঘটবে। দেশপ্রেম আর উন্নতি অগ্রগতির যত বুলিই আওড়ানো হোক জীবচিত্রের প্রাদুর্ভাবের এ ছিদ্রপথ বন্ধ না হলে দেশপ্রেম আর উন্নয়নের স্বার্থকতা চিরকাল সোনার হরিণের মত অধরাই থেকে যাবে।
এ তো গেল নিছক জীবচিত্র সম্বলিত বিজ্ঞাপন চিত্রের ভয়াল দিকের কথা। এরপর আসে বিজ্ঞাপনে নারী চিত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গ। হিসাব করলে দেখা যাবে বিজ্ঞাপনচিত্রগুলোর প্রায় আশি কিংবা নব্বই পার্সেন্টই নারী চিত্র সম্বলিত। নারী চিত্রের এ অবাধ এবং বাহুল্য ব্যবহার সত্যিই অনাগত এক ভয়াবহ দুর্যোগের ঘনঘটা। এখানে দু’টি নিষিদ্ধ বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে। এক জীবচিত্র। দুই নারীচিত্র। নারী দেহ দর্শন বাহ্যিক জগতে যেমন নিষিদ্ধ তদ্রূপ চিত্রজগতেও নিষিদ্ধ। বরং চিত্রজগতের নিষিদ্ধতার ব্যাপারটি আরো ভীষণ আরো কঠোর। কারণ এখানে দ্বিমুখী অপরাধের সমন্বয় ঘটেছে। আর নারী দেহের সম্পূর্ণটাই হলো ‘হিজাব’ বিধানের পর্যায়ভুক্ত। এক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের বক্তব্যগুলো বেশ স্পষ্ট। তাই এব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। তৃতীয় যে বিষয়টি তা হলো নারী দেহের বিবস্ত্র পরিবেশনা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ এবং নীতি নৈতিকতার বিবেচনায় এ বিষয়টিই বিজ্ঞাপন জগতের সবচাইতে আপত্তিকর বিষয়। যৌনতা এবং আদিরসাত্মক এসব বিজ্ঞাপনের ক্ষতিকর দিকগুলো বর্ণনার জন্য ধর্মীয় বিধি-নিষেধের প্রয়োজন পড়ে না। মানুষের বিবেক আর সুস্থ রুচিবোধই এসব বিজ্ঞাপনের জাজমেন্ট করার জন্য যথেষ্ট। মুক্ত মন আর জরায়ূর স্বাধীনতা সৃষ্টির পেছনে এসব আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচারণা এন্টি ইসলাম গ্রুপের নিবিড় এবং গভীর ষড়যন্ত্রের বার্তা বহন করে। কিন্তু স্বকীয়তা বোধহীন এ দেশের মুসলিম সন্তানেরা ‘ওদের’ রসালো শ্লোগানে মুগ্ধ হয়ে যৌন স্বাধীনতার প্রাদুর্ভাব ঘটাতে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে আত্মহুতি দিচ্ছে। বিবসনা নারী দেহের চিত্র সম্বলিত বিজ্ঞাপন চিত্রটি যে কোম্পানী নির্মাণ করে দিলো সে কোম্পানীটি কি পরিমাণ পাপাচারের রসদ এবং উপাদান সমাজে সরবরাহ করল তা কি তারা কখনো ভেবে দেখেছে? এতে সেকেন্ডে সেকেন্ডে কি পরিমাণ মানুষের পাপের পাল্লা ভারি হচ্ছে তা সত্যিই পিলে চমকে যাবার মত মর্মন্তুদ ব্যাপার। আল্লাহ আমাদের এসব পাপাচারের ডামাডোল থেকে পরিত্রাণ দান করুন।

২. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যারা এ জাতীয় জীবচিত্র তৈরি করে কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি প্রদান করা হবে। তাদের বলা হবে, যাদের তোমরা তৈরি করেছিলে তাদের জীবন দান করো। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৫১। অন্য একটি বর্ণনায় ছবি প্রস্তুতকারী, চিত্রকর, ফটোগ্রাফার, আলোকচিত্রি- শাব্দিক বৈচিত্রে যে নামেই অভিহিত করা হোক- এদের শাস্তির ভয়াবহতার ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট করেই বিবৃত হয়েছে। সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন চিত্রশিল্পীরা গুরুতর শাস্তিতে নিপতিত হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৫০) যারা বিজ্ঞাপন শিল্পে অর্থলগ্নি করেন এবং যারা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তৈরি করিয়ে নিজেদের কোম্পানীর প্রডাক্টের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করতে প্রবৃত্ত হন তারা চিত্রশিল্পকে রমরমা ব্যবসায় পরিণত করে জাহান্নামগামী মানুষের মিছিলকে প্রলম্বিত করছেন। কারণ বিজ্ঞাপন উদ্যোক্তাদের কারণেই চিত্রশিল্পের প্রতি মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদা সৃষ্টির ফলেই মানুষ চিত্রশিল্পের মত নিষিদ্ধ কর্মে আত্মনিয়োগ করছেন। তারা নিজেরা জীবচিত্র ব্যবহার করে পাপের পঙ্কিলতায় নিজেদের জীবনকে কলঙ্কিত করেছেন, সাথে সাথে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে জীবচিত্র সৃষ্টিতে আগ্রহী করে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন করছেন।

২. ভিনদেশী অপসংস্কৃতির উন্মাতাল আয়োজন

সাংস্কৃতিক দিক থেকে যদি আমরা হালের বিজ্ঞাপনকে জাস্টিফাই করি তবে দেখতে পাবো তাতে বেশ ঘটা করেই ভিনদেশী সংস্কৃতির অনুশীলন হচ্ছে এবং পণ্য প্রচারের আবরণে বিজাতীয় এ সাংস্কৃতিক প্রাদুর্ভাব পরিকল্পনা করেই ঘটানো হচ্ছে। ইসলামফোবিয়া সৃষ্টিকারী বিধর্মীচক্রের যুগপরম্পরাগত লালিত স্বপ্ন হলো, মুসলিম সম্প্রদায়কে হৃৎপি-হীন শৃগালে পরিণত করা। তারা তাদের ‘ড্রিম আইডিয়া’কে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এক দিকে তারা পণ্যসেবার অন্তরালে মুসলিম সমাজের কাড়ি কাড়ি অর্থ লুটে নিচ্ছে। অন্য দিকে পণ্য প্রচারের সুমিষ্ট শ্লোগানে ইসলামী সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটিয়ে ভিনদেশী কালচারকে মুসলিম জাতির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে তাদেরকে হৃৎপি-হীন শৃগালে পরিণত করছে। আজ আমরা ব্যবহারিক জীবনে যেসব পণ্যসেবা গ্রহণ করি তার সিংহভাগই ভিনদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর প্রোডাক্ট। তারা বিজ্ঞাপনের জাদুর কাঠিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বাজার ব্যবস্থাকেও নিজেদের করায়ত্ব করে নিয়েছে। ফলে তারা খুব সহজেই বিজ্ঞাপনী ডামাডোলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে ষোলকলায় পূর্ণতা দিতে সক্ষম হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিম মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো মুক্তবাজার অর্থব্যবস্থায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় ভিনদেশী বিজ্ঞাপনের মডেলে নিজেরা বিজ্ঞাপন তৈরি করে পণ্য প্রচারণায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ফলে তারা ভিনদেশী সাংস্কৃতিক প্রচারণায় বিজাতিদের সহযোগিতে পরিণত হয়েছে। ভিনদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চরিত্র হলো, তারা সিংহভাগ বিজ্ঞাপন একটি দেশের জন্য নির্মাণ করে। এরপর সেগুলোকে বিভিন্ন রাষ্ট্রে নানা ভাষায় ডাবিং করে প্রচার করে। এতে অন্য দেশের জন্য উপযোগী বিজ্ঞাপন আমাদের এ মুসলিম দেশে কি করে উপযোগী হতে পারে? এসব সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের প্রশাসনের কেউ মাথা ঘামানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। কৃষ্টি-কালচার, পোশাক-পরিচ্ছদ, দেশজ রীতি-নীতিসহ নানা বৈসাদৃশ্যের এ দেশে এ জাতীয় বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কি করে অনুমোদন লাভ করতে পারে? বৈষয়িক বিবেচনায়ই তো এ ধরনের ভিনজাতীয় কালচারাল বিজ্ঞাপনতো বেখাপ্পা ও ভাঁড়ামি বলে গণ্য হয়। সুস্থ রুচিবোধ ও জাত্যাভিমান এ জাতীয় বিজ্ঞাপনকে আদৌ সমর্থন করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দান করেছেন তাই তোমরা গ্রহণ করো। এবং যেসব ব্যাপারে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। (সূরা হাশর-৭) অন্য দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের শ্রেণীভুক্ত গণ্য হবে। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪০৩৩) আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতি দান করে গেছেন তা নিয়েই আমাদের তুষ্টি লাভ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা খোদাপ্রদত্ত সে সভ্যতা-সংস্কৃতিকে শিকেয় তুলে পরসংস্কৃতির আয়োজনে উন্মাতাল হয়ে আছি। শুধু এতটুকুতেই আমরা তৃপ্ত নই; বরং এ অপসংস্কৃতিকে প্রতিটি মুসলিমের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে বিধর্মীদের পিঠচাপড়ানি লাভ করছি। আচার-আচরণ, সভ্যতা-সংস্কৃতি-সহ যাপিত জীবনের যাবতীয় কর্মকা-ে বিজাতিদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে তাদের দলভুক্তির সার্টিফিকেট গ্রহণ করে নিচ্ছি।

৩. বাকশিল্পের চতুর আয়োজনে ‘সত্যিকার’ মিথ্যা প্রলাপ

হালের বিজ্ঞাপনগুলোতে পণ্য প্রসারের প্রতিযোগিতায় যে পরিমাণ মিথ্যার পরিবেশনা হচ্ছে তাতে মানুষের পিলে চমকে যাবার কথা। বস্তুত বিজ্ঞাপন মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ প্রচার হবে এটাই স্বীকৃত বাস্তবতা। কিন্তু পণ্যের গুণ-মান প্রচারে সিংহভাগ বিজ্ঞাপনই মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। মিথ্যাই যেন তাদের ব্যবসার মূলধন। মিথ্যার করুণা না হলে যেন তাদের ব্যবসাই নিশ্চল। বহুজাতিক এমনো কোম্পানি রয়েছে যাদের বিজ্ঞাপন উন্নত দেশে মিথ্যাচারের অভিযোগে নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের মুসলিমপ্রধান দেশে সে বিজ্ঞাপন এখনো প্রচারিত, এমন কি সর্বাধিক প্রচারিত। ‘হরলিক্স’ বিজ্ঞাপনে ভাষ্যকারের দাবী হল, এ পানীয় পান করলে শিশুরা Taller, Sharper and Stronger হবে। অর্থাৎ আরো লম্বা, আরো শক্তিশালী, আরো বুদ্ধিদীপ্ত হবে। পণ্যটির উৎপাদনকারী কোম্পানির এ দাবির কোনো ভিত্তি না থাকায় উন্নত দেশে বিজ্ঞাপনটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটা স্বীকার করে নিয়েছিল যে, বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ভুলক্রমে তা উন্নত দেশে (ব্রিটেনে) প্রচারিত হয়েছে। বিশ্বখ্যাত নেসলের ম্যাগি নুডলস-এর বিজ্ঞাপনও ব্রিটেনে একই কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিল। বিজ্ঞাপনটির ভাষ্য ছিল, এই নুডলস খেলে হাড় ও মাংসের গড়ন বৃদ্ধি পায়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বহুজাতিক তামাশার এ হলো রকমফের। আর দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা ও প্রতারণা তো ওপেন সিক্রেট। মিথ্যাই যেন মূল পণ্য।

প্রসঙ্গত প্রশ্ন হতে পারে, বিজ্ঞাপন নিয়ে আমরা কেন কথা বলছি? বিজ্ঞাপন নিয়ে ভাববার জায়গাটা কোথায়? হ্যাঁ বিজ্ঞাপন নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ একটি বিজ্ঞাপন একটি ধারণার নেতৃত্ব দেয়। বস্তুত প্রতিটি সত্তাই একেকটি নেতৃত্বের ধারক। এ নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় ক্ষমতার বলয়, যা আকৃষ্ট করে কোটি কোটি ভোক্তাকে। একজন বিজ্ঞাপন মডেল একটি স্টাইল প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা একটি ধারণা বিপুল জনগোষ্ঠির মনে গেঁথে দেয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিজ্ঞাপন এতটাই শক্তিশালী যে, একটি বিজ্ঞাপন দেখেই গানের প্রতিযোগিতার অডিশনে জমায়েত হয় লক্ষ মানুষ। একটি প্রজন্মের কথা বলার পুরো ভাষাই পরিবর্তন করে দিতে পারে একটি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন। এ কারণেই বিজ্ঞাপন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। একটি বিজ্ঞাপন একটি প্রজন্মের এবং একটি জাতির রুচিবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। অনেক সময় রুচিবোধের জায়গাটি তৈরি করে কিংবা বদলে দিতে পারে। সুতরাং একটি জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে একটি বিজ্ঞাপনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটি প্রজন্ম কিংবা জাতিকে বিপথগামী করতেও একটি বিজ্ঞাপনের জুড়ি নেই। এ কারণে বিজ্ঞাপনের এ জায়গাটিতে সুস্থ বিজ্ঞাপন চর্চার নিমিত্ত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই আপন আপন জায়গা থেকে কর্মনীতি গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×