somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ ইভটিজিং : রোধ-প্রতিরোধের এপিঠ ওপিঠ

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Eve teasing এরশাব্দিক বিশ্লেষণ

Eve teasing এটি একটি মিশ্র শব্দ। Eve এবং teasing দুটি শব্দ যোগে গঠিত হয়েছে শব্দটি।
Eve এর শাব্দিক অর্থ প্রাক্কাল, চার্চ-উৎসবের আগের দিন অথবা সন্ধ্যা; খ্রিষ্ট মাস ইভ।
নাম অর্থে সৃষ্টির বিবরণে বাইবেল ও কোরআন বর্ণিত প্রথম নারী বিবি হাওয়া; ইভ আ.।
the first women according to the bible
teasing অর্থ, ঠাট্টা করা; বিরক্ত করা; প্রশ্ন করে বিব্রত করা; খেদানো।The husband teased the wife about her short hair.
Bangla academy english-bangali dictionary তে এভাবেই অর্থ করা হয়েছে।
দুটি শব্দ মিলে এর শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায়, প্রথম ললনা আদি মাতা হাওয়া আ. কে বিদ্রূপ করা। শাব্দিক অর্থে যদি শব্দটির ব্যবহার করা হয় তবে তা হবে চরম ভুল, মিথ্য ব্যবহার এবং অমার্জনীয় অপরাধ। সুতরাং সঙ্গত কারণেই শব্দটির শাব্দিক অর্থ প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।

Eve teasing শব্দের ব্যকরণিক বিশ্লেষণ

Eve teasing এটি একটি সম্বন্ধযুক্ত শব্দ। Eve শব্দটিকে teasing শব্দের সাথে সম্বন্ধ করা হয়েছে। ব্যকরণিক দৃষ্টি কোণ থেকে ঊাবশব্দটির দুটি অবস্থান হতে পারে। ১.nominative case তথা কর্তৃকারক। তখন মিশ্র শব্দটির অর্থ হবে, নারী কর্তৃক অন্য কারো উত্তক্ত হওয়া। অথবা নারী নিজেই নিজের অঙ্গ ভঙ্গি ও পোষাক আসাকের মাধ্যমে বখাটেদের সহায়তায় নিজেকে উত্তক্ত করে। মোদ্দা কথা নারী উত্তক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সুতরাং গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এ অর্থ গ্রহণে তেমন সমস্য নেই।
২। objectivecase তথা কর্মকারক। তখন অর্থ হবে, বখাটে তরণ কর্তৃক নারী উত্তক্ত হওয়, যৌন ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করা বা শিষ দেয়া। হালে এ অর্থেই ইভটিজিং শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
বস্তুত দ্বিপাক্ষিক যে কোন কাজে দুটি দিক থাকে। যেমন নিহত করা, নিহত হওয়া। কেউ কাউকে কোন ভাবে হত্যা করে ফেললে আমরা বলি, আহা! কত বড় জালেম; লোকটাকে হত্যা করে ফেলল। এখানে আমরা শুধু হত্যা করাটাকেই দেখি, নিহত হওয়াটাকে দেখি না। দুটি দিককেই আমাদেরকে সমভাবে দেখতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হত্যা কারী এবং হত্যা কৃত উভয়ই জাহান্নামী। সহীহ মুসলিম ৮/১৮৩/৭৪৮৮

সাধারণ জ্ঞানে হাদিসটির অর্থ বুঝতে খুব কষ্ট হবে। কারণ আমরা সাধারণ অর্থে হত্যার যাবতীয় দায় ভার হত্যাকারীর উপরই ন্যস্ত করে থাকি। কিন্তু ব্যাপারটাকে যদি একটু গভীর ভাবে দেখি তবে দেখতে পাব, যে ব্যক্তি নিহত হলেন তিনি সুযোগ পেলে কিংবা সশস্ত্র হলে হত্যাকারীকে ছেড়ে দিতেন না। বরং তাকে বধ করেই ছাড়তেন।
তাছাড়া একজন আরেজনকে হত্যার জন্য কখন উদ্যত হয়? নিশ্চয় পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলেই হত্যার মত ভয়ংকর কাজে হাত বাড়ায়। কিন্তু জালেমের গায়ে বন্ধুক ঠেকিয়ে দিলেই জালেমের সব পাপ মাফ হয়ে যায়। মানুষ তখন জালেমকে মাজলুমকে আর মাজলুমকে জালেম ভাবতে শুরু করে। তবে সমাজে নিরীহ মানুষ যে নিহত হন না তা কিন্তু নয়। বলতে চাচ্ছি এজাতীয় বিষয়ে দুটি দিককেই সমভাবে দেখতে হবে। হত্যাকারী কেন হত্যার মত ভয়ংকর পথ বেছে নিতে বাধ্য হল- এদিকটিও দেখতে হবে।
সুতরাং ইভটিজিং এর দ্বিতীয় অর্থে যদিও ছেলেরা উত্তক্ত করার দোষে দুষ্টু সাব্যস্ত; কিন্তু এর যাবতীয় দায় ভার এক তরফা ভাবে ছেলেদের উপর অর্পণ করা যাবে না। উত্তক্ত হওয়ার মত উপযুক্ত কোন উপসর্গ নারীদের মাঝে আছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। এবং সে উপসর্গ দূরীভূত করার জন্য কার্যকরি ব্যবস্থা ও নিতে হবে। শুধু একটি পক্ষকে দ- দিয়ে এসমস্যার নিরাময় হবে না আদৌ।
যখন কোন তরুণ কোন মেয়েকে টিপ্পনী দিবে তখন তরুণ ছেলেটি বখাটে অভিধায় ধীকৃত হবে। কিন্তু তরুণটির এটিপ্পনী দেয়ার পেছনে যদি মেয়েটির মাথা ঘুরানো অঙ্গভঙ্গি কিংবা উন্মুক্ত দেহ প্রদর্শনী মূল কলকাঠী হিসেবে কাজ করে থাকে তবে এঅযাচিত কর্মের দায় ভার ষোল আনা না হলেও আট আনা তাকে নিতেই হবে। সাথে সাথে তাকে একটি অভিধা ও গ্রহণ করতে হবে।

Eve teasing শব্দের ব্যবহার বৈধতা

Eve এটা আদি মাতা হযরত হাওয়া আ. এর ইংরেজি নাম। মহীয়সী এ পবিত্র সত্তার সাথে পৃথিবীর সব মানুষের রক্তের ধারা মিশে আছে। হাওয়া নামটিকে ইংলিশ-আমেরিকানরা কেন আপাদ মস্তক বিকৃত করে ইভ বানিয়ে নিয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তর আমি উদ্ধার করতে পারি নি। আদম আ. এর নামটিকে পুরো বিকৃত না করলেও আংশিক বিকৃত করতে তারা পিছপা হয় নি। আদম আ. কে অ্যাডম নামেই তারা চিনে, উচ্চারণ করে। এ বিবর্তনটা যদি ভাষাগত কিংব উচ্চারণগত ব্যবধানের কারণে হয়ে থাকে তবে সেটা মেনে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু পবিত্র এ নামগুলোর বিবর্তনের পেছনে তাদের অন্য কোন দুর্ভিসন্ধি আছে কি না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কথা হল, ইভ নামের মত পবিত্র একটি নাম শব্দকে যৌন হয়রানীমূলক ঘৃণিত একটি শব্দের জন্য ব্যবহার করাটা কতটুকু বিবেকসম্মত ? ব্যাপারটি নিয়ে গণমাধ্যমেও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক নারীবাদী সংগঠনও শব্দটিকে আরো উপযুক্ত শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়েছে। অনলাইন তথ্য মতে অনেক নারীবাদী সংগঠন আরো উপযুক্ত শব্দ দিয়ে ইভটিজিংকে প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে ইভ শব্দের ব্যবহার নারীর আবেদনময়তাকে নির্দেশ করে। যে কারণে উত্ত্যক্ত হওয়ার দোষ নারীর উপর বর্তায়। আর পুরুষের আচরণ আগ্রাসনের পরিবর্তে স্বাভাবিক হিসেবে ছাড় পেয়ে যায়।
নারীবাদী সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে এক মত না হলেও তাদের প্রতিস্থাপন দাবির সাথে আমরা একমত। তবে এখানে লক্ষণীয় হল নারীবাদী সংগঠনগুলোও পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করে নিয়েছে যে ইভটিজিং এর মাধ্যমে উত্ত্যক্ত হওয়ার দায়ভার নারীর উপরও বর্তায়। তবে এর যে কারণ তারা উল্লেখ করেছেন তা বিশুদ্ধ নয়। ইভ শব্দের ব্যবহার নারীর আবেদনময়তাকে নির্দেশ করে বলেই উত্ত‌্যক্ত হয়ার দোষ তাদের উপর বর্তায় না; রবং তাদের অঙ্গভঙ্গি, শর্ট ড্রেস এবং chest এর কাপড় গলায় চলে যায় বলেই এর দায় ভার তাদের উপর অর্পিত হয়।
মোদ্দা কথা যৌন ইঙ্গিতবাহী মন্তব্যের জন্য ইভ শব্দটিকে প্রয়োগ করা কোন ভাবেই সমীচীন নয়। এশব্দের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন।

ইভটিজিং শব্দের জন্মকাল

সচরচর প্রচলিত ইংলিস ডিকশনারিগুলোতে Eve teasing শব্দটি এভাবে মিশ্রাকারে পাওয়া যায় না। নতুন কোন ভার্সনে পাওয়া যেতেও পারে। কারণ শব্দটি লন্ডন আমেরিকায় এভাবে ব্যবহৃত হয় না। শব্দটি উদ্ভাবন হয়েছে বেশি দিন হয় নি। ইন্টারনেট তথ্য মতে Eve teasing এটি একটি কাব্যিক শব্দ, যা মূলত ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ ও নেপালে ব্যবহৃত হয়। যদিও বিষয়টা ষাটের দশকে এসে বেশি মনোযোগ পায় গণমাধ্যমে। কিন্তু বিপদজনক হারে বৃদ্ধি লাভ করে পরবর্তী দশকে এসে; যখন অধিক সংখ্যক মেয়েরা বিদ্যালয় ও কর্ম ক্ষেত্রে যেতে শুরু করে ঐতিহ্য পরিপন্থী হয়ে পুরুষের সহচার্য ছাড়া।
Eve teasing শব্দটিকে কে কখন কোন কবিতায় প্রথম উদ্ভাবন করেছেন তা উদঘাটন করা সম্ভব হয় নি। সেকেন্ড মিনিট দিন তারিখ নির্দেশ করে কোন শব্দের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। কোন ভাষাবিদ এভাবে কোন শব্দেতিহাস লিখেছেন বলে আমাদের জানা নেই।

শতকরা কত জন নারী ইভটিজিং এর শিকার ?

২০১০ সালের ২৫ মে ঢাকা প্রেস ক্লাবে Bangladesh national women lawyers association আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষক নাজমুন নাহার Eve teasingmenace letout the offenders go unpunished শীর্ষক গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। তাতে দেখা যায় নারীদের ৯১% ইভটিজিং এর শিকার। অন্য দিকে একশন এইডের গবেষণায় দেখা যায়, ছাত্রীদের ১১% স্কুলকে নিরাপদ মনে করে না। এমন কি ১৬.৭% ছাত্রী শিক্ষক দ্বারা উত্তক্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

পরিসংখ্যানের দাড়িপাল্লায় ইভটিজিার

পরিসংখ্যান তথ্য মতে ৩৫% ইভটিজার এন্টি সোসাল,৩২% স্কুল কলেজ পড়ুয়া। আর ৩৩% ইভটিজার হল মধ্য বয়সী।
আমার এক বন্ধু বলল, মাদরাসা পড়ুয়ারা সব অন্যায় করতে পারে তো এ অন্যায়টির খাতা তাদের শূন্য থাকবে কেন? পরিসংখ্যানকারীরা হয়ত কারচুপি করেছেন ! শতকরা ০.১% ভাগ ছাত্রও পেলেন না যারা ইভটিজিং করবেন এটা কেমন কথা ! বন্ধু আমার কথাটা রসিকতার ছলে বললেও এর অন্তরালে অনেক শিক্ষা রয়ে গেছে আমাদের অতি আধুনিক ভাইদের জন্য।

রক্তাক্ত ইভটিজিং

২০১০ এর মার্চ হতে অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭ জন যুবতী আত্ম হননের পথ বেছে নিয়েছে।
শুধু নারীরাই নয়; ইভটিজিং প্রতিরোধ কারীরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। এ বছরের (২০১০) অক্টোবর পর্যন্ত ৫ জন ইভটিজিং প্রতিরোধ কারী ইভটিজারের হাতে নিহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ পরিসংখ্যানগুলোর সবি ২০১০ এর করা। এর আগে পরের বছরগুলো মিলিয়ে যদি একটি পরিসংখ্যান করা হয় তবে তাতে নিহতের ফিরিস্তি বেড়ে অনেক দীর্ঘ হবে। তাছাড়া সবকিছুতে উন্নয়ন হচ্ছে। সবকিছুতে উন্নতির ছোঁয়া লাগছে। সে হিসেবে ইভটিজিং এ উন্নতি ও প্রগতির ছোঁয়া লাগবে না তা কেমন করে হয় ? পত্রিকায় প্রকাশ, এখন অভিনব কৌশলে ইভটিজিং হচ্ছে। তো দেখা যাচ্ছে ইভটিজিং এ ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। এ ডিজিটালাইজেশন ও উন্নতি পরিসংখ্যানে এসেও পড়বে নিশ্চয়ই ! সুতরাং এখনকার পরিসংখ্যানের হার গেল বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে।

দেশীয় আইন এবং ইভটিজিং

দেশের প্রচলিত আইনে ইভটিজিং এর শাস্তি হল এক বছর কারা দণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভই। কিন্তু বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে Eve teasing কিংবা Sexual harassment জাতীয় কোন শব্দ নেই। তবে আইন কমিশন দণ্ডবিধির ৫০৯ (এ) ধারায় সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট শব্দ যোগ করার প্রস্তাব পেশ করেছে। প্রস্তাব গৃহীত হলে ইভটিজিং বা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছর কারা দণ্ড।

ইভটিজিং এর নেপথ্যে

ইভটিজিং শব্দটি সাম্প্রতিক কালের হলেও এর অর্থ কিন্তু আধুনিক নয়। সব যুগেই কম বেশ এধরণের যৌন হয়রানী মূলক পাপাচারের উপস্থিতি ছিল। সত্য মিথ্যা ভাল মন্দ সহ হাজারো ইতিবাচক নেতিবাচক দিকগুলোর সমন্বিত রূপ হতে কোন কালই মুক্ত ছিল না। কারণ ভালোর সাথে মন্দের চেহারা সর্বকালেই উন্মুক্ত ছিল।
কথা হল, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর যে হার আমরা আজ লক্ষ করছি এহারাধিক্যের পিছনে কোন উপসর্গগুলোকে দায়ী করা যেতে পারে ? ইন্টারনেটে ইভটিজিং শিরোনামে এসম্বন্ধে একটি চকমপ্রদ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেখানে কোন রূপ কৃত্রিমতা ছাড়াই সহজ সরল ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইভটিজিং নামের এ পাপাচারটি সত্তর দশকে এসে বিপদ জনক হারে বৃদ্ধি লাভ করেছে যখন অধিক সংখ্যক মেয়েরা বিদ্যালয় ও কর্ম ক্ষেত্রে যেতে থাকে ঐতিহ্য পরিপন্থী হয়ে পুরুষের সাহচর্য ছাড়া।
এটা কোন ইসলামী সাইডের মন্তব্য নয়। বরং জেনারেল এডুকেটেড পার্সন আশ্রিত একটি সাইডের হাত ধরেই মহা সত্য এবং মৌলিক কারণটি বেরিয়ে এসেছে।
বিশেষ কোন ধর্মের নারীরাই শুধু ইভটিজিং শিকার হয় না; বরং সব ধর্মের নারীরাই তাদের বখাটে তরুণ সমাজ কর্তৃক যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
নেট তথ্যটিতে একটি শব্দ এসেছে ঐতিহ্য পরিপন্থী। মুসলমানের ঐতিহ্য কি তা আর কারো অজনা নয়। ইসলামী আইন মতে এক জন নারী তার ঘর সামলাবে। এছাড়া বাহিরে তার কোন দায়িত¦ নেই। দায়িত্বের এসীমা রেখা তাদের শিক্ষা দীক্ষা অর্জনের পথে অন্তরায় নয়। তাদের পরিবেশ এবং গ-ির ভিতরে থেকে শিক্ষা দীক্ষা অর্জনের পূর্ণাঙ্গ অধিকার ইসলাম তদেরকে প্রদান করেছে।
ইসলম বলে, একান্ত প্রয়োজন ব্যতিরেকে তারা ঘরের বাইরে বেরুবে না। বিশেষ প্রয়োজনে বের হতে হলে মানুষের কুপ্রবৃত্তির লোলুপ দৃষ্টি হতে নিজেকে রক্ষার জন্যে আপাদ মস্তক আবৃত করে বেরুবে। দূরত্ব বেড়ে গেলে সাথে একজন বৈধ বডিগার্ড রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে ইসলাম। এটাই ছিল মুসলমানের ঐতিহ্য। এধারাতেই শত শত বছর ধরে চলে আসছিল মুসলমানের জীবন ধারা। যত দিন এঐতিহ্য বহাল ছিল তত দিন যৌন হয়রানী মূলক সমাজ ব্যধি হতে ইসলামী সমাজ ছিল চির মুক্ত।
পাশাপাশি ইয়াহুদী খ্রীষ্টান, হিন্দু বৌদ্ধ সহ অন্যান্য ধর্মেও নারীর ঐতিহ্য এতটা খোলামেলা ও নির্লজ্জতায় পূর্ণ ছিল না। তাদের জীবন ধারায়ও রক্ষণশীলতার ছাপ ফুটে উঠত। ফলে কালে ভদ্রে এক দুটি ছাড়া যৌন হয়রানী মূলক ঘটনা তেমন একটা ঘটত না। কিন্তু যখনই মানুষ তাদের সীমা রেখা অতিক্রম করতে শুরু করল যৌন হয়রানী মূলক সমাজ ব্যধিও হুহু করে বেড়ে চলল। এখন শত আইন প্রতিবাদ করে ও এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
হালে নারী অধিকার, নারী স্বাধিনতা প্রভৃতি শ্লোগানের নামে যেসব দাবি উঠে আসছে সবি ঐতিহ্য বিরোধী। এসব অনৈতিক দাবি আদায়ের হাত ধরেই ইভটিজিং আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। যত দিন এ ঐতিহ্যও মূল সংস্কৃতির উজ্জীবন না হবে তত দিন এ রোগের নিরাময় কামনা করা আকাশ কুসুম ভাবনা বলেই গণ্য হবে।

ইভটিজিং সৃষ্টির সহযোগী কারণ

ইভটিজিং এর প্রাদুর্ভাবের জন্য মূলত কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দায়ী। পেছনে আমরা আলোচনা করে এসেছি যে এর জন্য মৌলিক ভাবে দায়ী হল অবিচ্ছিন্ন ভাবে চলে আসা আমাদের ঐতিহ্যের ধারাকে ভেঙ্গে দেয়া। কিন্তু এ ঐতিহ্য ভাঙ্গার পেছনে কোন বিষয়গুলো অবিরাম গতিতে কাজ করে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমরা যদি গভীরভাবে লক্ষ করি তবে বুঝতে বেগ পেতে হবে না যে এই ইভটিজিং সৃষ্টির পেছনে মূলত বিনোদনের নামে প্রচারিত দেশী বিদেশী অশ্লীল নাটক সিনেমাও বিজ্ঞাপনই দায়। এই মাধ্যমগুলোই ইসলামের আদর্শ ঐতিহ্যর সুমহান মিনারকে গুড়িয়ে দিচ্ছে।
কারণ আমাদের দেশের যাবতীয় বিনোদন প্রক্রিয়াগুলো মূলত বিদেশী নগ্ন টিভি সিনেমার স্টাইলে সম্পন্ন হচ্ছে। তা দেখে দেশের আলট্রা মডার্ন যুবুতীরা নিজেদের দেহ প্রদর্শনীর নামে অশালীন খেলায় মেতে উঠেছে। ফলে যুব সমাজ বখাটে মাতালে অভিনয় করে নিজেদের ভিতরকার লোলুপ আকাংখ্যার স্ফুরণ ঘটাচ্ছে। তো দেখা যাচ্ছে, মিডিয়াগুলোই দিনের পর দিন কামোদ্দীপক সিনেমা নাটক আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইভটিজিং সৃষ্টির পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। অন্য দিকে পাশ্চাত্য কালচার আর আধুনিক ফ্যাশনের নামে অশ্লীল পোষাকে নারীদে অবাধ বিচরণ ইভটিজিংকে আরো মহিমান্বিত করে তুলছে।
ভারতের মত হিন্দু প্রধান দেশে পোষাক পরিচ্ছদের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেখানে স্কুল ড্রেস পরে শপিংমল, সিনেমা হলগুলোতে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে। অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমত বাড়ছে।
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদে ধর্মগুরু পোপ ষোড়ষ বোনডিক্ট বিনোদন গণমাধ্যমগুলোর যৌনতা ও সহিংসতা উসকে দেয়ার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রথম আলো- ১০.২.১০
এমন কি ভারতের কোন কোন কলেজ ভার্সিটিতে মেয়েদের শালীন পোষাক পরিধান করে আসতে নির্দেশ ও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নারীর অবগুণ্ঠন প্রসঙ্গ

একজন মুসলিম রমনীর ঐতিহ্য হল, সে তার সতীত্ব রক্ষার্থে নিজেকে আবৃত করে বাহিরে বেরুবে। এঐতিহ্যের ব্যতিক্রম করলেই তার সতীত্ব কামুক পুরুষের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়ে ঝুকিপূর্ণ হবে। বাস্তবে দেখা গেছে, যখনই নারী তার সতীত্ব রক্ষাকবচ অবগুণ্ঠনকে গা থেকে নামিয়ে দিয়েছ তখন থেকেই সে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ইভটিজিং এর মত ঘৃণিত পাপাচার।
ইসলামী অনুশাসন পর্দা বিধান লঙ্ঘনের আরেকটি বিষফল হল পরকিয়া প্রেম। ২০১০ এর জুন মাসে মায়ের পরকীয়ার বলি হয় ছয় বছরের শিশু সামিউল হক। আরীফের সঙ্গে আয়শা হুমায়রার অনৈতিক কাজ সামিউল দেখে ফেলে তার বাবাকে এসব কথা বলে দেবে বলে জানালে অবুঝ শিশুটিকে নির্মম ভাবে হত্যা করে তার নিজেরই মা ও মায়ের অনৈতিক কাজের সঙ্গী আরিফ।
সুতরাং পর্দা বিধান লঙ্ঘন ইভটিজিংসহ যাবতীয় যৌনঘটিত অনাচার সৃষ্টির অন্যতম একটি উপসর্গ। বৃটিশ পরিবেশ মন্ত্রী কারেলিন মনে করেন, বোরকা নারীর ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। পাশ্চাত্যের কিছু দেশ ইসলামের সাথে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করে যেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করছে সেখানে যুক্ত রাষ্ট্র বোরকা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এক্ষেত্রে আমাদের বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। তারা নিজেদের অতি আধুনি প্রমাণে ফ্রান্সের অন্ধ অনুকরণে বোরকা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।

ইভটিজিং এর প্রতিবিধান

ইভটিজিং এর ধারা রুদ্ধ করার জন্য মিটিং মিছিল, সেমিনার সেম্পোজিয়াম মিডিয়া বিজ্ঞাপন মোবাইল এস এম এস সহ চলছে নানা আয়োজন। ইভটিজিং প্রতিরোধে যতগুলো কারণ চিনহিত করা হয় তাতে মূল কারণটি প্রাধান্য পায় না। সেটা অধরাই থেকে যায়।
একবার ও ভেবে দেখা হয় না, কেন বখাটেরা ছাত্রীদের উত্তক্ত করেই চলছে। বখাটেদের নিয়ে গবেষণা করা হয় না কেন তারা নারীদের উত্তক্ত করে। কোন কোন নারীদের বেশি উত্তক্ত করে। কি কি বিষয় তাদের উত্তক্ত করণে উৎসাহিত করে।
হ্যা অনেকে বলবেন এটা বয়সের দোষ। আরো পরিস্কার করে বলতে গেলে বলতে হয় নারীর প্রতি পুরুষের পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণ একটি চিরন্তন বিষয়। এক্ষেত্রে প্রকৃতিগত ভাবেই মেয়েরা রক্ষণশীল হওয়ায় তারা সাধারণত পুরুষদের উত্তক্ত করে না। তবে পুরুষেরা স্বাভাবিক ভাবেই সবসময় যৌনতাড়িত থাকে। স্বভাবতাড়িত এসত্য বাস্তবতার সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করে না। তবে বয়সের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তো সমস্যার সমাধান হবে না। পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় অপরাধ স্বভাব দোষেই ঘটে থাকে। এটা সত্য হলেও এর যথাযথ প্রতিবিধান জরুরী।
যে কোন বিষয়ের মূল উৎস যদি সন্ধান না করা যায় তবে সে বিষয়ের সমাধান আদৌ সম্ভব নয়। যে সরিষার মাঝে ভুত বাসা বাধে সে সরিষা দিয়ে কখনো ভুত তাড়ানো যায় না। ভিতরে পয়জন রেখে উপরে যত কার্যকরি প্রলেপই দেয়া হোক তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং সেটা একসময় ক্যান্সারে রূপ নিবে। এজন্য প্রয়োজন মূল উপসর্গ চিনহিত করণ। এতে অতি সহজেই সমস্যার সমাধান হবে।
বিভিন্ন সাইড ও ব্লগে অতি আধুনিক ভাইদের কলম হতে একটি অতি কার্যকরি পদক্ষেপের কথা বেরিয়ে আসছে। যেটা ইভটিজিং সৃষ্টির মূল উপসর্গের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। তারা ইভটিজিং হতে রেহাই পেতে নারীদের রক্ষণশীল পোষাক আসাক পড়তে উৎসাহিত করেন। আবার কেউ কেউ ধর্মীয় মূল্যবোধ লালন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনেক সাংবাদিক ভাই ইভটিজিং রোধে জনাকীর্ণ স্থানে শালীন পোষাক পরার অনুরোধ জানিয়েছেন। এসব কলামিষ্ট ভাইদের সাধুবাদ জানাই যে তারা কিছুটা হলেও ইভটিজিং সৃষ্টির মূল উপসর্গটি আঁচ করতে পেরেছেন।

অদ্ভুতুড়ে প্রতিরোধেচ্ছা

২০১০ এর একটি জাতীয় দৈনিকে অদ্ভুত একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়। তাতে বল হয় ইভটিজিং প্রতিরোধে মেয়েদেরকে করাতে শেখানো হচ্ছে। শাবির কেন্দ্রীয় জিমনেশিয়ামে মেয়েরা কেরাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
এখন আর ইভটিজিং হবে না সরাসরি যুদ্ধ হবে। আর এযুদ্ধে ছেলেরা স্বভাবতই আগ্রহী হয়ে উঠবে। কারণ এমন একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্যই তো ছেলেদের ইভটিজিং ইভটিজিং খেলা। ভাবুক মনে কত আইডিয়াই না উদয় হয়।

ইভটিজিং প্রতিরোধে বাল্য বিয়ে

ইভটিজিং নারীর জন্য একটি বিভিষিকাময় অভিজ্ঞতা। এঅনাচার নারীকে মানষিক ভাবে দুর্বল করে দেয়। কিন্তু কোমলমতি মেয়েরা মানষিক ভাবে এতটাই ভেঙ্গে পড়ে যে তারা আত্মহুতি দিতেও পিছপা হয় না। এসব কারণে সমাজে বাল্য বিয়ের হার বেড়ে যাচ্ছে। মা বাবা ভাবেন তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলেই তারা বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
অন্যদিকে মা বাবা বাধ্য হয়ে মেয়ের স্কুল কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। তো দেখা যাচ্ছে বাবা মারা ইভটিজিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বাল্য বিবাহ ও শিক্ষা বন্ধের মত বেআইনী (?) ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
মা বাবার জন্য ইভটিজিং এর শিকার মেয়ের আত্মহনন দেখা সুখকর না কি আনন্দ উৎসব করে বধু বেশে মেয়েকে বরের হাতে তুলে দেয়া সুখকর? সন্তানের প্রতি দরদী কে বেশি বাবা মা না আইন প্রণেতারা? আইন প্রণেতারা তো বাল্য বিয়ের আইন করে টিভির পর্দায় ইভটিজিং এর লাশ এবং মা বাবার বুক ফাটা আর্তচিৎকারের দৃশ্য দেখে আনন্দের ঢেকুর তোলেন। ঢালাও ভাবে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ করে স্কাফ বোরকার উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে সহশিক্ষা ও কর্ম সংস্থানের নামে নারীদের মাঠে নামিয়ে আমাদে সরকার প্রধানরা নারী নির্যাতনের যে উন্মত্য খেলায় মেতে উঠেছেন –ইসলামী আইনের কথা না হয় বাদই দিলাম- এব্যাপারে বিবেকের আইন কি বলে?
মূলত আত্ম হত্যা শিক্ষা বন্ধ অনুপযোক্ত বয়সে পাত্রস্থ করা কেরাতে শেখা এসব ইভটিজিং প্রতিরোধের কোন স্বীকৃত মাধ্যম নয়। ইসলামী অনুশাসন মেনে চলাই এর এক মাত্র প্রতিকার ব্যাবস্থা। এব্যবস্থামত জীবন পরিচালিত হলে ইভটিজিং সহ এর যাবতীয় উপসর্গ সমূলে উৎপাটিত হয়ে যাবে।

উপসংহার

এছিল বিভিন্ন মাধ্যম হতে নেয়া নানা তথ্যের সুবিন্যস্ত পরিবেশনা। সাথে ছিল কিছু ঈমান বিধৌত যুক্তিনির্ভর মন্তব্য রচনা। মূলত ইসলাম হল একটি মানবাধীকার নির্ভর মতাদর্শ। আদর্শিক এঅনুশাসনে ছোট্ট একটি প্রাণী হতে শুরু করে সর্ব শ্রেষ্ঠ মানব জাতির সব রকমের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করে থাকে। সে হিসেবে নারী জাতির মান সম্মান ইজ্জত আবরু সহ যাবতীয় অধিকার রক্ষায় ইসলাম সদা কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে। আইয়ামে জাহিলিয়াতের অগ্নি লাভা হতে উদ্ধার করে নারী জাতিকে মর্যাদার সুমহান আসনে সমাসীন করেছে একমাত্র ইসলাম। নারীর এতটুকু সম্মান হানি হোক ইসলাম তা কখনো মেনে নেয় না। সুতরাং নারীর অঙ্গ ভঙ্গি পোষাক আসাক যেমনি হোক হাল যামানার ইভটিজিং ত্রাসে নারীকে তটস্ত করা ইসলামী আইনে কোন ক্রমেই অনুমোদিত নয়। এযৌন হয়রানী কটুক্তি কিংবা মান হানির জন্য ইভটিজারকে ইসলামী আদালতে শাস্তি পেতেই হবে। তদ্রƒপ এ ইভটিজিং নামের এদুরারোগ্য সৃষ্টির পেছনে যে সব উপসর্গগুলো সক্রিয় ভাবে কাজ করে সে সব উপসর্গ সৃষ্টিকারীরাও ইসলামী আদালতে দায় মুক্ত নয়। উভয় পক্ষকেই সমভাবে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বস্তুত মাঠে কৃষি কাজ করা কোন অশিক্ষিত মূর্খ ও মাঠকে অরক্ষিত রাখে না। সে জানে বলদের আহারে পরিণত হতে পারে তার ফসল। এমন বেপরোয়া দোকানী পাওয়া যাবে না যে লোভনীয় মিষ্টি থরে থরে সাজিয়ে দোকান অরক্ষিত রেখে বাড়ি চলে যাবে। সে জানে চোর ছ্যাচরের আহারে পরিণত হবে তার সাধের মিষ্টি।
সত্য বলতে কি সব মানুষের মাঝেই চৌর্যবৃত্তির মানষিকতা রয়েছে। আকসার লোকই তাকে দমিয়ে রাখতে সক্ষম। যারা ভদ্র তারা অরক্ষিত দোকানের রসালো ফল ফলাদি দেখেও হাত বাড়ায় না। প্রয়োজনে বৈধভাবে ক্রয় করে নিয়ে তবে আহার করে। কিন্তু শুধু ভদ্র লোকদের নিয়ে তো আর সমাজ নয়। অধিকাংশ মানুষই তো শান্তিপ্রিয়। তবুও তো দেশে আইন আছে,আদালত আছে,থানা পুলিশ সবই আছে। হাজারে হয়তো একজন চুরি করে। কিন্তু তার জন্যই পুলিশ প্রশাসন পুষতে হয়। তাই সবাই ভদ্র হলেও অভদ্রদের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এমন কিছু করা উচিৎ নয় যাতে চোর চুরি করার সাহস পায়। শেয়াল কুকুর রান্না ঘরে হানা দেয়।
তবে সমাজের অতি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা একরণটিকে প্রাধান্য দিতে নারাজ। যদি প্রাধান্য দেন তবে তো দেড় হাজার বছরের প্রাচীন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শকেই মেনে নেয়া হয়। মেনে নেয়া হয় পবিত্র কুরআনের নির্দেশিত নীতিমালা
যারা নিজেদের সভ্য ভাবেন। পাশ্চাত্যের অনুকরণে উন্নত সমাজ গঠণের স্বপ্ন দেখেন তারা এর বিপরীতে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে বড় ধরণের বাধা বলেই মনে করেন। তাই ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় যদি ইভটিজিং বন্ধও করা যায় তবুও তাকে মেনে নেয়া যায় না; নিছক আত্ম অহংকারের কারণে। অথচ যে পশ্চিমাদের আমরা সভ্যতার মানদন্ড বলে মনে করি তারা নারীদের নিরাপত্তার কতটুকু গ্যারান্টি দেয় তা কি কখনো খতিয়ে দেখেছি।
Exclusive: Rape in America: Justice Denied শীর্ষক সংবাদে সিবিএন নিউজ রিপোর্ট করে যে ২০০৮ সালে নব্বই হাজার নানী ধর্ষণের দায়ে মামলা করেছেন এবং আরো ৭৫ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় মামলা থেকে বিরত থাকেন। তাহলে যে সমাজে এক বছরে দেড় লাখের বেশি নারী ধর্ষিত হয় সে সমাজকে আদর্শ মেনে নিয়ে কি করে আমরা আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা ভাবি?
আমরা পাশ্চাত্য ধ্যানধারণায় সন্তানদের বড় করে তুলি, পাশ্চাত্যর অনুকরণে পরিবার গঠন করি ফলে পাশ্চাত্য প্রভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে পরিবার প্রথা। আর বিবাহ বিচ্ছেদ তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করছি তাদের কি সময় হয় নি আল্লাহর সে বাণী স্মরণ করার? হে নবী! আপনি আপনার পতœীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিন স্ত্রীগণকে বলুন তারা যেন চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্তক্ত করা হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল এবং দয়ালু। আল আহযাব ৫৯
আশার কথা, ইদানিং ইভটিজিং প্রতিরোধে নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব দিচ্ছেন কেউ কেউ। হ্যা, আদরের সন্তানদের সন্তানদেরকে নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদেরকে কুরআন সুন্নাহর আলোয় আলোকিত করে তুলতে হবে। তাদের জানাতে হবে আল্লাহ তাআলার অমোঘ বাণীÑ মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখেএবং তাদের লজ্জাস্থানকে নিরাপদ রাখে। এটা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র পদ্ধতি। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত আছেন।
মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া যেন তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। এবং তারা যেন তাদের মাথার উড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী পিতা শ্বশুর পুত্র স্বামীর পুত্র ভ্রাতা ভ্রাতুষ্পুত্র ভগ্নিপুত্র স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী যৌনকামনা মুক্ত পুরুষও বালক যারা নারীর গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞÑ এদের ব্যতীত অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন নিজেদের গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। আননূর ৩০-৩১
আমরা যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করি তাদের জন্য উচিৎ নয়, নারী স্বাধীনতার নামে নিছক জেদের বশবর্তি হয়ে নিজেদের কন্যাদেরকে হায়েনার আহারে পরিণত করা। আসুন আমরা তওবা করি। পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এক আল্লাহর আনুগত্য করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শে আমাদের সন্তানদে শিক্ষিত করে তুলি। আল্লাহ আমাদেকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×