somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরূপ সুন্দর বন বনানি...!

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাত বিনিময় শেষে কুশল বিনিময়,
: ভালো আছেন ?
: হ্যাঁ, ভালো আছি।
: সুন্দর বন দেখতে এলাম।
: মুখে নির্মল হাসির দ্যুতি ছড়িয়ে, ও আচ্ছা। মুড়ি এনেছেন তো !
: জি, এনেছি।
: মুড়ি ছিটালে বানর পাল খুব কাছে চলে আসে। তবে হাতে রেখে মুড়ি খাওয়াবেন। ওরা হাত থেকে মুড়ি খাবে। এখন জোয়ার চলছে তো। ভাটার সময় হলে বানরের সংখ্যা বেশি হতো। জল ডিঙ্গিয়ে ওরা আসতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে না। শিশু বানরগুলো তো জলে নামেই না।
আমাদের ভ্রমণ গাইড রুহুল আমিন ভাই ও হড্ডা ফরেস্ট ক্যাম্প প্রধানের মাঝে বাক বিনিময় হচ্ছিল। আমরা তন্ময় হয়ে নীরব শ্রোতার দায়িত্ব পালন করছিলাম।...

সুন্দরবনের সুন্দর পথে

সুন্দবরবন কেন সুন্দরবন হলো এ নিয়ে বিস্তর মত অভিমত রয়েছে। আমার প্রচণ্ড বিশ্বাস, সুন্দরবন সুন্দর বলেই সুন্দরবন হয়েছে। ঢাকা টু সুন্দরবন কিংবা মাদারীপুর টু সুন্দরবন বেশ কষ্টসাধ্য দূরত্বের পথ। অন্যদিকে যশোর টু সুন্দরবন কিংবা পাইকগাছা টু সুন্দরবনে ডিসটেন্স বেশ কমে আসবে। হাতের নাগালের দূরত্বই বলা চলে। খুলনা পাইকগাছার সুহৃদ মাহমুদ ভাইয়ের সুন্দরবন কেন্দ্রিক সুন্দর নিমন্তন্ন বেশ পুরনো। পুরনো সে সুন্দর জিনিসটাই আরো সতেজ ও আরো গভীর হয়ে উঠে এসেছে। সুযোগ হাতের নাগালে এলে এমন মধুর আহ্বান মিস কেউ করে না। তাই মিসটেক হলো না। শারদীয় ছুটিটাকেই এর জন্য উপযোগী মনে হলো। যশোরকে মূল কেন্দ্র ও পাইকগাছাকে শাখা কেন্দ্র করে প্রস্তুত হলাম। যশোর কেশবপুরে বেশ বিরতি দিয়ে একদিন মুগ্ধ বিহানে বেরিয়ে পড়ি সুন্দরবনের পথে। প্রথম ভ্রমণ সঙ্গী তিনজন। ইলিয়াস ভাই। ইউনুস ভাই। আমি। অতি প্রত্যুষে গাড়ি সংকটের ফলে পদব্রজেই অতিক্রম হলো খানিকটা পথ। এরপর মোটর সাইকেল থেকে হানিফ পরিবহন হয়ে সোজা পাইকগাছা। পাইকগাছা জিরো পয়েন্টে সামান্য পানি বিরতি দিয়ে সবুজের বুক চিড়ে ছুটে চললাম কমলাপুরের পথে। সদ্য পীচঢালা সুউন্নত মহাসড়ক। দু ধারের বাবলা বীথিকার অনিন্দ্য ছায়াছবি নয়া মহাসড়কটির দেহ সৌষ্ঠবকে আরো কমনীয় করে তুলেছে। যথা সময় পৌঁছে কমলাপুর মাদরাসার শান বাধানো পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে মৃদু প্রতীক্ষার হাওয়া উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ পুকুর ঘেষে বয়ে চলা সড়কটির ধারে একটি পরিচিত মুখের আভা ভেসে উঠে। দূর থেকে হাতের ইশারায় পরিচয় বিনিময় হলো। কিছুটা অবাক হয়েই এগিয়ে এলেন মনির ভাই। হাসি বিনিময় ও কথা বিনিময় হলো বেশ কিছুক্ষণ। নিমন্ত্রণ হলো কিন্তু বিনিময় হলো না সময়ের হিসাব কষে। যাত্রাপথ ও যাত্রা পদ্ধতি নিয়ে বেশ কজনের সাথে শলা পরামর্শ হলো। ওসব বোঝার সাধ্য ছিলো না আমার। সব শেষে একটি তিন চাকার উন্মুক্ত ভ্যানে চড়ে বসি আমরা পাঁচ অভিযাত্রী। গ্রামীণ ভ্যানটি গ্রামীণ পাকা সড়ক মাড়িয়ে ছুটে চলে। কোলাহলমুক্ত পাখি ডাকা ছায়া ঢাকা সবুজ সরল গ্রামীণ জীবন আহ কতই না মনোরম ! আহম কতই না কান্তিময় !! তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকি সবুজের বুক পানে। ধুধু প্রান্তর জুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। শরতের মৃদুমন্দ বাতাস আর নাতিশীতোষ্ণ রোদেলা আলোয় অভিষিক্ত হচ্ছি মন উতলা আয়োজনে। মধ্য গগণে সূর্য উঠে আসার আগেই আমরা পৌঁছে যাই সুন্দরবন ঘেষা শান্তা এলাকায়। এখানে এসে নাস্তা বিরতি হলো গাইড প্রধান রুহুল আমীন ভাইয়ের বিদ্যানিকেতনে। ওখান থেকে শিবসা নদীর তীরে এসে দাঁড়ালাম। ওমা ! এ তো নদী নয়; মহা সাগর !! দৈর্ঘ প্রস্থে পদ্মা যমুনাকেও যেন হার মানায়। এত বড় নদী, অথচ এর সাথে আমাদের পরিচয়ই নেই। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনে চড়ে বসলাম ইঞ্জিন চালিত নৌযানে। মাল্লা মাঝির আসনে গিয়ে বসলেন ভ্রমণ যাত্রার অন্যতম আয়োজন ও আহ্বায়ক সুহৃদ মাহমুদ ভাই। ট্রলার চালনায় বেশ হাত আছে বলে মনে নয়; বিশ্বাস হলো। সব্যসাচীরা তো সব কিছুই পারে। টলটলে জল রাশির বুক চিরে জল তরঙ্গের সফেদ উর্মিমালা তৈরি করে এগিয়ে চলছে আমাদের নৌযান। দু ধারে শ্যামল অরণ্যের নন্দিত ছায়াছবি। ধীরে ধীরে আমরা সুন্দরবনের রেঞ্জের ভিতরে ঢুকে পড়ি। বড় সড় একটি খাল এঁকে বেঁকে চলে গেছে সুন্দরবনের সুদূর গহীনে। দু ধারে সুন্দরবনের সুন্দর বৃক্ষরাজি। অচিন বৃক্ষের মেলা বসেছে সুন্দরবনের দেহ জুড়ে। এক সময় আমাদের নৌযানটি এসে নোঙ্গর করে হড্ডা কোস্টগার্ড ক্যাম্পের অরণ্য বন্দরে।

হড্ডা বন্দরে ক্ষুদে কাফেলা

...সংলাপ শেষে ছায়া ঢাকা পুকুর তীর বেয়ে আমাদের সাত আট জনের ছোট্ট মিছিলটি এগিয়ে চলে। কোস্ট গার্ড প্রধানের নির্দেশনা মতে আমরা পুকুরের পূর্ব পাড় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের আগমন টের পেয়ে হেমেলিনের বাঁশিওয়ালার ইঁদুরের পালের মত বানরের পাল হুড়মুড় করে ছুটে এলো। ওদের পরিপক্ব অভিজ্ঞতা আছে, এখানে যারাই আসে কিছু নিয়ে আসে। শূন্য হাতে কেউ আসে না। আর সে কিছুটা খাদ্য জাতীয় কিছুই হয়। যেন কুটুম বাড়ি। তাই আমাদের দেখে ওদের আনন্দ যেন চাঁদের আলোর ন্যায় ঠিকরে পড়ছে। শারদীয় রোদেলা আলোয় ওদের চোখ মুখগুলো চিক চিক করে উঠছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট গাইড মাহমুদ ভাই মুড়ির প্যাকেট ছিড়ে মুড়ি হাতে বসে পড়লেন। আর বানরগুলো আলতো থাবা মেরে মেরে মুড়ি আহার করছে। ওদের মুড়ি ভোজন আমরা বেশ মুগ্ধতার সাথে উপভোগ করছি। ইলিয়াস ভাই, ইউনুস ভাই ও মাহফুজসহ আরো অনেকেই ব্যুহ রচনা করে বসে বানর পালকে মুড়ি আহার করাচ্ছে। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে বানর পালের মুড়ি ভোজনের সচল ছবি ধারণ করছে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু উপভোগ করছি। মুড়ি খাওয়ানোর আনন্দঘন আয়োজনে অংশগ্রহণ করেত আগ্রহ হলো না আমার। কারণ বানর ভোজন বিষয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। দুরন্ত শৈশবের সে ভীতিকর অভিজ্ঞতাটা আমাকে ভীতু করে তুলতে চাচ্ছে। ভয় পাবার অভ্যাস যদিও তেমন আমার নেই। তবু যেন ভয় পেয়ে যাচ্ছি। বানরময় উপস্থিত দৃশ্যের সাথে যেন অতীতের সে ভয়ঙ্কর স্মৃতিটা একাকার হয়ে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি পিলে চমকানো ভেংচি মেরে বৃহদাকার বানরটি আমার দিকে ধেয়ে আসছে ! সুহৃদ মাহমুদ ভাইয়ের আহ্বানে সম্বিত ফিরে পাই। আনমনা ভেঙ্গে প্রকৃতিস্থ হতে চেষ্টা করি। মাহমুদ ভাইয়ের মৃদু পীড়াপীড়িতে এক মুঠো মুড়ি হাতে আমিও বসে পড়লাম মুক্ত বানর সমীপে। মুড়িপূর্ণ হস্তটি বাড়িয়ে ধরেছি। আমার হাতের দিকে কোনো বানরই দৃষ্টি দিচ্ছে না। ওরা কি বুঝে ফেলেছে আমার মনের সুপ্ত অনাগ্রহের কথা ! নাকি ওরা জেনে ফেলেছে আজ থেকে বহু বছর আগে ওদের সজাতির সাথে মাত্রাহীন দুষ্টুমি করে বিরাগভাজনে পরিণত হয়েছিলাম ! কিছু সময় পর একটি বানর এসে আমার মুড়িপূর্ণ আঁজলা থেকে কিছু মুড়ি নিয়ে যেন আমার উপর অনুগ্রহ করে গেলো।

বানরগুলো কেন পালিয়ে গেলো ?

আয়েশি ভঙ্গিতে চলছে বানরদের মুড়ি ভোজনের মহা উৎসব। হঠাৎ বানরগুলো হুড়মুড় করে পালিয়ে গেলো। কি হলো ? আমাদের কেউ তো কিছু করে নি ! তবে কেন পালিয়ে গেলো ? পেছনে ফিরে দেখা গেলো একজন কোস্টগার্ড সদস্য নিজ প্রয়োজনে অতি সিভিল বেশে এ দিকে এগিয়ে আসছেন। এতেই বানরগুলোর আত্মারাম বের হবার উপক্রম হলো। কথায় কথায় জানা গেলো, এরা মাঝে মধ্যে বানর ধরে বিক্রি করে। তাই বানরগুলো এদের ভয়ে তটস্থ থাকে। চোরেরও শ্রেণীভাগ আছে। শিক্ষিত চোর, অশিক্ষিত চোর, সরকারী চোর, বেসরকারী চোর। অশিক্ষা বা নিরক্ষরতা নাকি উন্নতির অন্তরায়। এখন দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাই দেশ ও জাতির উন্নতির পথে চরম বাধা। শিক্ষিত চোরগুলো দেশ ও জাতির যতোটা ক্ষতি করে অশিক্ষিত চোরগুলো ততোটা ক্ষতি করতে পারে না। সরকারী চোরগুলো যতোটা ক্ষতিকর বেসরকারী চোরগুলো ততোটা ক্ষতিকর নয়। এখন আর শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড নেই। বরং শিক্ষা এখন জাতির মেরুভঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে। কথাগুলো বলতেও ভালো লাগে না, শুনতেও ভালো লাগে না। তবুও কথাগুলো চরম সত্য ও পরম বাস্তবতা।

পঁচে গলে শেষ হলো....

ইঞ্জিন চালিত নৌকা থেকে নামার সময় ডাঙ্গায় তোলা বেশ কিছু নৌকা চোখে পড়লো। নৌকাগুলো পঁচে গলে শেষ হওয়ার পথে। ভেবেছিলাম, এগুলো কোস্টগার্ডের ব্যবহৃত পুরনো নৌকা। কিছুটা সামনে গিয়ে দেখা গেলো সুন্দরবনের অসংখ্য বৃক্ষ গুড়ি চরম অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। তখন ভাবনায় ছেদ পড়লো। নিশ্চিত হলাম, এগুলো জব্দ করা অবৈধ নৌকা বৃক্ষ। বেআইনিভাবে সুন্দরবনে কাঠ কাটতে এসে কাঠদস্যুরা কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়েছে। ব্যস, নৌকা সমেত কাঠের স্তুপ ক্রোক হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এ সম্পদ নষ্টের পেছনে দায়টা কার ? এগুলো আর যাইহোক দেশের সম্পদ তো বটে ! বাংলাদেশের থানাগুলোতে এভাবে অসংখ্য জব্দ করা গাড়ি পঁচে গলে নিঃশেষ হচ্ছে। আইনের কোনো ধারায় কি আছে এভাবে দেশের সম্পদ নষ্ট করার কথা ? এটা কি আইনসম্মত ? আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে এ কেমন বেআইনী কাজ ? এগুলো বিক্রি করে যদি অভাবী মানুষগুলোর মুখে অন্ন তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হতো তবে সম্পদ নষ্ট করার দায় থেকে তো অন্তত মুক্ত থাকা যেতো। ইসলামী আইনে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারা আছে। কেউ অন্যায় করলে তার দণ্ড হবে দৈহিক; আর্থিক নয়। ইসলামিক আইন তো আমাদের সরকার প্রধানদের জন্য চক্ষুশূল। তাদের বিবেচনায় ইসলামিক ল এ যুগে অচল, সেকেলে; সচল, একেলে নয়। শুনেছি, উন্নত কোনো কোনো দেশে কায়িক আর্থিক কোনো দণ্ড নেই। একটি দুর্ঘটনা হলো। তো ড্রাইভিং লাইসেন্সে একটি লাল দাগ পড়ে যাবে। দুর্ঘটনায় দ্বিত্ব ঘটলে দুটি দাগ পড়ে যাবে। এবার চির জীবনের জন্য ড্রাইভিং করার সাধ মিটে গেলো। জীবনে আর কোনো দিন সে কার ব্রেকে হাত দেয়ার সাহস পাবে না। কোনো কোম্পানীর পণ্যে এক দুবার ভেজাল প্রমাণিত হলো। তো চির জীবনের জন্য কোম্পানিটিকে বসিয়ে দেয়া হলো। একটি কোম্পানীকে বসিয়ে দিয়ে সকল কোম্পানীকে ঠাণ্ডা করে দেয়া হলো। এ ভালো আইনগুলো আমরা দেখি না। দেখবো কি করে ? আমাদের দেশে শর্ষের মাঝেই তো ভূত বাসা বাধে !

সুন্দরবনে কিসের ভয় !?

ক্যাম্প থেকে ফেরার পথে সুন্দরবনের আরো ভিতরে প্রবেশের ইচ্ছে হলো। কোস্টগার্ড প্রধানকে এ অভিব্যক্তি জানানো হলো। তিনি এরিয়া বেধে দিলেন। বললেন, আমাদের এ রেঞ্জের বাহিরে যাবেন না। কারণ হিসেবে বললেন, বনদস্যুর ভয় আছে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জানা গেলো, ভয়ঙ্কর বনদস্যুগুলো সুন্দরবনে অহর্ণিশ উৎ পেতে থাকে। হাতের নাগালে পর্যটক পেলে তুলে নিয়ে যায়। পরিবারের কাছে লাখ লাখ টাকা দাবি করে। টাকার হিসেবে হেরফের হলে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে দ্বিখণ্ডিত লাশ নিয়ে যেতে বলে দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেলো, বনদস্যুদের সাথে কোস্টগার্ডদেরও সাথে লেনদেন চলে। স্থানীয় গাইডদের সাথেও থাকে বনদস্যুদের নিবিড় সংযোগ। কোনো কোনো ক্যাম্প সদস্যদেরকে বনদস্যুদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে থাকতে হয়। বস্তুত অপরাধ জগতের প্রতিটি চক্রের সাথেই থাকে স্থানীয় প্রশাসনের নিবিড় সম্পর্ক। নতুবা ওরা এতোটা বেপরওয়া হয়ে উঠতে পারে না। সুন্দরবনে প্রাণী বাঘের তুলনায় বানবরূপী বাঘের ভয়ই বেশি। আর এদেরকে সেল্টার দেয় স্থানীয় প্রশাসন কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।’

বিদায় পথে প্রীতি ভোজন

নিমন্ত্রণ মানে একটু ভালোমন্দ পানাহারের আহ্বান। এখানে নিমন্ত্রিতের গ্রহণ বর্জনের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু বিদায় পথে একটি নিমন্ত্রণ পেলাম, যাতে গ্রহণের স্বাধীনতা আছে বর্জনের স্বাধীনতা নেই। মজলুম অতিথি যাকে বলে !
ভ্রমণ কালে মানুষকে দয়াময় প্রভু সালাত সংকোচনের সুবিধা দিয়েছেন। এ সুবিধা গ্রহণ না করে উপায় নেই। স্রষ্টার সৃষ্টিও তবে অবর্জনীয় সুবিধা দেয় !
যাক, আতিথেয়তার হ্যান্ডকাপ পরে মোটর সাইকেলে ধেয়ে চললাম মৌখালী কাটাবনিয়া পানে। কাঁচা সবুজের বুক চিড়ে ছুটে চলছি দুর্বার গতিতে। এক সময় মাহমুদ ভাইয়ের শশুরালয়ের সম্মুখস্থ মেঠো পথে এসে পা রাখি। কবি বন্দে আলি মিয়া বোধ হয় ছোট্ট এ গ্রাম খানি দেখেই আবহমান বাংলার কালোত্তীর্ণ কবিতা ‘আমাদের ছোট গায়ে ছোট ছোট ঘর’ রচনা করেছিলেন। ছোট্ট সুন্দর ঘরটি ঘেষে বয়ে গেছে বর্ণিল মেঠো পথ। পাশেই ছোট্ট পুকুর। খল্লা মাছগুলো দল বেধে তর তর করে সাতরে চলছে। কত ছিমছাম ! অথচ কত সুন্দর !! কত সাধারণ ! অথচ কত চমৎকার !! আবহমান বাংলার মধুময় এ মনকাড়া দৃশ্য আজো সগর্বে দাড়িয়ে আছে !!....
ছোট্ট ঘরের ছোট্ট বারান্দা। মাটির উপর পাতা ছোট্ট চকি। মাথা নিচু করে উঠে বসলাম। এক অনন্য ভালো লাগায় আপ্লুত হলাম। ডিস ভরা আতপ চালের ঝরঝরে ভাত উপস্থিত হলো। সাথে টক ডাল। এটা আমাদের নিকট নতুন পরিভাষা। তবে স্বাদ বিস্ময়কর। আরো ছিলো স্বাদে ভরা পাইশ্যা মাছের ভাজি। খুব অদূরে কাঁচা মরিচের সবুজ বাগান শোভা পাচ্ছিলো। কাঁচা মরিচের ক্ষুদে বাগিচা থেকে তরতাজা পুষ্ট মরিচও চলে এলো আমাদের সমুখে। বেশ আয়েশি বেশে মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন হলো। রসনা তৃপ্তির সবটুকুই কুঁড়িয়ে নিয়েছি। রসনা মুগ্ধ অন্য রকম ভালোলাগার এ আয়োজনটি হয়তো সুখময় স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্ত কাল।

শান বাধানো পুকুর ধারে

সূর্যটা ধীরে ধীরে পূর্ব দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। ফিরে যাবার তাড়া হচ্ছিলো। বিদায় পথে সৃহৃদ মাহমুদ ভাইয়ের নয়া আহ্বান সৃষ্টি হলো, আমাদের বাড়িটা দেখে যান। ছুটির দিন। তাবৎ ব্যস্ততাকে শিকেয় তুলে রেখে এসেছি। রাত পোহায়ে ভোর নেমে এলেও তেমন কিছু হবার নেই। আচ্ছা, চলুন।
স্নিগ্ধ বিকেল। মেঠো পথ বেয়ে পথ চলার স্বাদই আলাদা। আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে প্রীত করলেন শ্রদ্ধান্বিত আবুল হাশেম ভাই। সবুজের ছায়া ঢাকা আঁকা বাঁকা কাঁচা সড়ক মাড়িয়ে গ্রাম্য আদলে গড়ে তোলা একটি বাগান বাড়িতে গিয়ে আমাদের যাত্রা বিরতি হলো। নীরব নিঝুম ছিমছাম বাড়ি। এ যেন আবহমান বাংলার সচিত্র আয়োজন। বাড়ির সদস্য সকল নিমন্তন্নে গিয়েছে। তাই স্বাধীনভাবেই আমাদের পদ চারণা ও দৃষ্টি চালনা হলো। ছোট্ট বাগান বাড়ির শেষ প্রান্তে শান বাধানো ছোট্ট পুকুর। আমরা দল বেধে শান বাধানো পুকুর পাড়ের ছোট্ট বেঞ্চিতে গিয়ে বসি। সূর্যটা বেশ পাটে নেমে গেছে। সবুজের বুক চিরে এক আধটু পীত বর্ণিল আলো আমাদের গায়ে সুখের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। খুলনা নারকেল খ্যাত সমৃদ্ধ অঞ্চল। তাই নারকেল শূন্য বাড়ি মেলা বেশ কষ্ট সাধ্য। দু চোখের সীমানায় মাহমুদ ভাইদের ছোট্ট এ বাগান বাড়িতেও এক দুটো নারকেল গাছের দেখা মিললো। গৃহকর্তা নারকেল আপ্যায়নের জন্য ইশপিশ করছে। কিন্তু বৃক্ষচারী কোনো ছোকরা ছেলের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। যে ছেলেটাকে দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হতো সে ছেলেটা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার মত মাথায় ব্যান্ডেজ বেধে হেঁটে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ গৃহকর্তার ক্ষুদে সহোদর মাহফুজ এসে উপস্থিত। সাথে সুহৃদ কন্যা ছোট্ট মাইমুনা। মাইমুনাটি হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে দেখে ওর বিস্ময় যেন ঠিকরে পড়ছে, ঢাকার এ মানুষটা এখানে এলো কি করে ? মাহফুজ দক্ষ বৃক্ষচারীর পরিচয় দিয়ে হুটহাট করে গোটা কয়েক ডাব ফেলে দিলো। আমরা শান বাধানো পুকুর ধারে বসে গল্পে গল্পে ডাব ভোজনের সুখময় আয়োজনটা সেরে নিলাম। নন্দিত ভ্রমণই বটে। নন্দিত স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাক অনন্তকাল। কত ছোট্ট লেখা। তবুও কিস্তি করে লিখতে হলো। যখন শুরু ২৬/১০/১৮ ইং। যখন শেষ ৫/১১/১৮।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×