সময়টা ছিল অনেক আগের, স্কুলে মাত্র পা রাখলাম । আমার আর আপুর তখন পছন্দের কাজ ছিল সকাল হলেই জানালার পাশে এসে দাঁড়ানো । আমাদের জানালা বরাবর ছিল সুমি আপুদের জানালা । সুমি আপু কেন জানি জানালার পাশে গান করতেন । এ যেন রোজকার রুটিন ছিল । সকাল হলেই শুরু হতো ওনার বেসুরা সুরের গান । ছোট ছিলাম বলে ওনার গান আমাদের মাঝে বিনোদন হিসেবে যুক্ত হল । সকাল মানেই আপুর গান শোনা তারপর স্কুলে যাওয়া । এভাবেই বেশ কিছু সময় কেটে গেল । আমরা অন্য বাসায় চলে আসি । আপুকে সামনাসামনি কখনো দেখেছি কিনা বলা দুষ্কর । আপুর স্বাস্থ্য একটু বেশি ভালো ছিল বলে বের হতেন কম ।
এতো বছর পর গত বছর আপুর খোঁজ মিলল । আপুর পড়াশোনা শেষ হয়েছে অনেক দিন হল । ওনার আম্মু মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে, দুই ভাই আলাদা বাসায় থাকেন । সেই হিসেবে বাবার দায়িত্ব ওনার উপর । এখন মূলত ঘরের কাজ আর বাসায় সারাদিন থাকেন । জীবনের গতি বাসা পর্যন্ত আটকে গেছে ওনার ।
একবার দুই দিনের জন্য আত্মীয়ের বাসায় গেলেন বেড়াতে । বাসায় ফিরে দেখলেন ,ভাই,ভাবী, বাবা সবাই মিলে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন । কয়েক দফা ঝগড়া চলল ।
একা হওয়াতে মনের দুঃখ গুলো যেন নিজেকে আরো নিঃস্ব করে ফেলছে । রাগে ক্ষোভে নিজের হাত নিজেই কাটতে লাগলেন । রাগ হলেই হাতে ব্লেড চালান । নিজেকে রক্তাক্ত দেখে রাগ কোথায় যেন হারিয়ে যায় ।
কাজ করার খালা যখোন ওনাকে মুটকি বলে সম্বোধন করেন ,আমার খুব ইচ্ছে করে খালার মুখটা চেপে ধরে রাখতে । খালারা হয়তো এটা বলেই মজা পান ,একবার খুব বুঝালাম, কোন কথা কানে নিলেন না ।
এভাবেই সময় চলছে, জীবন গতি আটকে নেই । অপেক্ষা কিংবা কিছুর আশা করাও যেন কিছু মানুষের জন্য অর্থহীন ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪৬