সকাল ৯.০০টায় ঘুম থেকে উঠতেই রহিম মিয়ার মন খারাপ হয়ে যায়। আজও মন ভরিয়ে ঘুম যেতে না পারায়,বিছানায় গড়াগড়ি করার সময় দিতে না পারায়। অফিসের বসের ঝাঁজ ওয়ালা কথা মনে করে বিছানা থেকে ধপ করে উঠে বসেন রহিম মিয়া। অফিসে দেরি হলেই সকালটা শুরু হবে বসের ঝাড়ি খেয়ে। কপালের সাথে জুড়ে থাকা দু’চোখে ডলাডলি করতে করতে রহিম মিয়া বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে ভাবেন কখন যে একটা ভালো চাকুরি হবে। অফিসের বস হয়ে নিজের ইচ্ছে মত ঘুমিয়ে,কয়েক বালতি পানি দিয়ে আরামচে গোসল করে ধীরস্থির হয়ে প্রাতঃরাশ সেরে অফিসে যাবে। আহহ ভাবতেই রহিম মিয়ার ঘুমকাতুরতা চলে যায়। হঠাত দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রহিম মিয়া তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান। প্রতি দিনের মত টুথপেষ্ট খোঁজাখুঁজি করে ব্রাশে লাগিয়ে এক দৌড়ে বাথরুমে চলে যান। ধুপধাপ গোসল সেরে ভেজা লুঙ্গি পেঁচিয়ে রুমে এসে প্যান্ট পড়েন রহিম মিয়া।
এরপর রহিম মিয়া হয়ে যান সুপারম্যান। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই ভদ্রস্থ ভাবে প্যান্টের নিচে ইন করে শার্ট পরেন,সকালের হালকা নাস্তা,জুতায় ব্রাশ করার কাজ সারেন। বাসা থেকে নিচে নেমে সিনা টানটান করে বাস স্ট্যান্ডের দিকে দ্রুতলয়ে হাটেন। সময় মত না পৌঁছলে বাস মিস হয়ে যেতে পারে। বাস আসার কিছুক্ষণ আগে স্ট্যান্ডে এসে উপস্থিত হতে পেরে আপন মনেই ফিক করে হাসেন রহিম মিয়া। জনাত্রিশেক পাবলিকের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠে রহিম মিয়া এভারেস্ট জয় করার অনুভূতি নেন।
চলন্ত বাসে ঝোলানো রড ধরে ঝুলন্ত রহিম মিয়া ধাক্কাধাক্কিতে নষ্ট হওয়া পরিপাটি ইন করা শার্টের কলার,আর কোমরে হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে নেন। অফিসের রিসিপসনিষ্ট ম্যাডামটা আজকাল খুব বেড়েছে,হুদাই স্মার্টনেস নিয়ে ফালাফালি করে। ম্যাডামের জ্বালায় ছুটির দিনে শার্ট আর প্যান্ট ধুতে ধুতে নিজেকেই অনেক দিন ভালো করে ধোয়া হয় না।
সারাদিন অফিসে কলুর বলদের মত খাটাখাটনি করে বিকেলে যেই অফিস থেকে বের হবে তখনি বস ডেকে পাঠিয়ে এটা-ওটা নিয়ে রুটিন বকা-ঝকা করে দিলেন। বসের রুম থেকে বের হয়ে ভারাক্রান্ত মনে রহিম মিয়ার মনে কষ্টের অনুভূতিগুলো প্রচন্ড রকম ভাবে তাকে ঝাকুনি দিয়ে ধিক্কার জানায়,এই তোর জীবন ......
রহিম মিয়া কষ্ট পায়,কষ্ট চেপে নিজেকে বোঝায় এটাই মধ্যবিত্তের যাপিত জীবন।
অফিস থেকে বের হয়ে রহিম মিয়া আনমনে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা শুরু করেন। ফেরার পথে রহিম মিয়ার কোন তাড়া থাকে না, তখন অফিসে দেরি হওয়ার ভয় থাকে না।
সন্ধ্যার অনেক পরে রহিম মিয়া বাসায় এসে জামা-কাপড় ছেড়ে বিছানায় বসে উদাসীন ভাবতে থাকে আর কত দিন এভাবে চলবে??? ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে বসের ঝাড়ি খেতে খেতেই কি জীবন পার হয়ে যাবে??
ভেবে কোন কুল-কিনারা পায় না। রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় গা-এলিয়ে দিয়ে রহিম মিয়া ভাবে আল্লাহ কখন তার দিকে মুখ ফিরাবে,কখন তার ছোট্ট জীবনের ছোট্ট আশাগুলো পুরন হবে। ভাবতে থাকা রহিম মিয়ার ভাবনায় ঠাই করে নেয় মা-বাবা ও তাদের সুস্থ থাকা,তাদের সুখী করা,আদরের ছোট ভাই ও তার ভবিষ্যৎ,একমাত্র ছোট বোনকে পাত্রস্থ করা। রাত গভীর হয়, রহিম মিয়ার চোখে ঘুম আসে না, অনিশ্চিত তমসাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ তার ঘুম কেড়ে নিচ্ছে।সেকেন্ড,মিনিট আর ঘন্টার কাঁটা সময় পেরিয়ে যায় রহিম মিয়ার আর ঘুম আসে না।
চিন্তায়,কষ্টে আর অগোছালো এলোমেলো লক্ষ্যহীন জীবন তার কাছে দুর্বিষহ মনে হচ্ছে।
মোচড় দিয়ে উঠে বিছানায় বসে পড়েন রহিম মিয়া। তারপর বারান্দায় গিয়ে গোন্ডলিপের নিকোটিনে আগুন দিয়ে ভাবতে থাকেন রহিম মিয়া......
শুধু ভাবতেই আছেন...... উত্তরহীন প্রশ্নের পর প্রশ্নে রহিম মিয়ার ভাবনাগুলো শুধু বাড়তেই থাকে......