কাঁধে ট্রাভেল ব্যাগটা ঝুলিয়ে বাসের জন্য অনিচ্ছাকৃত অপেক্ষায় আছি, কিছুক্ষণ পর পর একটা বাস আসে তবে বাড়ি অভিমুখী মানুষদের তুলনায় সেটা খুব কম সংখ্যকই বটে।একটা বাস আসার সাথে সাথে প্রিয়জন আলিঙ্গনে ব্যাকুল মানুষগণ খুব বাজে ভাবে ধস্তাধস্তি করে বাসে উঠার প্রতিযোগতায় নামেন, কেউ সফল হন আর কেউ উঠতে ব্যর্থ হয়ে আবার বাসের অপেক্ষায় অস্থির সময় পার করেন। #আমি দুর্বলদের একজন হওয়ায় এই বাসে উঠার প্রতিযোগিতায় নাম লিখার সাহস করিনি। অগত্যা সিএনজির শরনাপন্না হইলাম এবং মহাখালী টু সায়দাবাদের ভাড়া শুধুমাত্র ৫০০ টাকা(বকশিস সহ)বলায় সেখানেই আয়েশে ভ্রমণের কুচিন্তার কবর দিলাম। কি করবো বুঝতেছিলাম না, তারপর আবার সেই বিরক্তিকর অপেক্ষা করতে থাকলাম,
যদি #লন্ডনের লোকাল বাসগুলোর মত কোন ভাবে একটা বাসে লোকজন কম থাকে এই আশায় ।দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢাকার ট্র্যাফিক ব্যাবস্থার একটা সুরাহার কথাও চিন্তা করতে থাকলাম ইত্যবসরে বাড়ি অভিমুখী সব শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে একটা কাকতালীয় মিল আবিষ্কার করে ফেললাম।
#সেটা হল সবাই আমার মত কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়েই বাড়িতে যাচ্ছেন।
কারো হাতে একটা,কারো হাতে দুইটা আবার কারো কাছে ততোধিক ব্যাগ হস্তগত।
এ যেন শত শত ব্যাগের সমাহার।
খোলা চোখে দেখলে এগুলোকে ব্যাগ বলেই মনে হবে, তবে আমি এগুলোকে ব্যাগ হিসেবে দেখছিনা। আমি একেকটা ব্যাগকে দেখছি একেকটা আদরের বস্তা হিসেবে, প্রেয়সীর ভালবাসার উপহার আর বৃদ্ধ মা-বাবার শুকনো ঠোঁটে দিলখোলা সুন্দর হাসির অসামান্য নিদর্শন হিসেবে।
ছেলে-মেয়ের জন্য লাল টুকটুইক্কা জামা, বউয়ের জন্য পাঁড় দেয়া কাতান শাড়ি, মায়ের জন্য কারচুপির কাজ করা জামদানী শাড়ি, বাবার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবী,ছোট ভাইয়ের জন্য হাল-ফ্যাশনের জিন্স ও শার্ট আর ছোট বোনের জন্য তার বলে দেয়া প্রিয় জামা।
সারা দিনের কাজের ক্লান্তি শরীরের উপর স্পষ্ট দৃশ্যমান হলেও চোখে-মুখে তার খুশির সীমাহীন দীপ্তিমান আনন্দের ঝিলিক।প্রাত্যহিক সব নাগরিক ব্যাস্ততা,সুখ-দুঃখ,পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব একপাশে রেখে এখন শুধু একটি লক্ষ্যে সবার নিমগ্ন যাত্রা। এই যাত্রায় বাসে সিট না পাওয়া,স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি দামে টিকিট কেনা,বাসের সিট না পেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন ব্যাপারই না।
এই গুটিকয় সমস্যা ছাড়াও আরো নানান ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে আপনজনের সান্নিধ্যে সবাই একীভুত হন একটি মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। সীমাহীন খুশিকে সবার সাথে ভাগাভাগি করার মানসে কোটি জনতার এই অভীষ্ট যাত্রায় আমিও একজনা।
একেই বলে পারিবারিক বন্ধন,সাথে থাকার আনন্দ আর প্রিয়জনের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা।
এটাই শেকড়ের শক্তি যা বছরে দু’বার সব বাঁধা পেরিয়ে সবাইকে এক হয়ে সমস্বরে বলতে বাধ্য করে “ঈদ মোবারক”
সবাইকে ঈদের অনেক অনেকক শুভেচ্ছা,সুন্দর ও আনন্দগন একটা ঈদ কাটুক আপনাদের সবার। ঈদের অনাবিল আনন্দের বারতা বয়ে যাক সবার মাঝে।