somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধের রাজা (একটি ট্যাংক কথন)

০৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাচ্চাকালের খেলনাগুলোর মাঝে আমার সবচেয় প্রিয় ছিল একটা ট্যাংক, সেটার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় এবং সেটির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আজকে আমার এই ব্লগিয় প্রয়াস।

এ.এম.এক্স-৫৬ লেক্লারক (AMX-56 Leclerc)



প্রস্তুতকারক দেশঃ ফ্রান্স
ওজনঃ ৫৪.৫ টন
দৈর্ঘ্যঃ ৯.৮৭ মিটার, প্রস্থঃ ৩.৭১ মিটার, উচ্চতাঃ ২.৫৩ মিটার
ক্রু সংখ্যাঃ ৩ জন
প্রাথমিক অস্ত্রঃ ১২০ মি.মি. বোর গান(অটোলোডার)
অপারেশনাল রেঞ্জঃ ৫৫০ কি.মি.
গতিঃ ৭২ কি.মি প্রতি ঘণ্টা

বিশ্বের দ্রুতগতির ট্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লেক্লারক ট্যাংক। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়কার ফরাসী জেনারেল ফিলিপ লেক্লারকের নাম অনুসারে এই ট্যাংকের নামকরণ করা হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে এই ট্যাংক ফরাসী বাহিনীর সাথে যুক্ত আছে। এখন পর্যন্ত বড় কোন যুদ্ধে এর ব্যবহার হয়নি। তবে কসোভো এবং লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সাহায্যকারী হিসাবে এই ট্যাংক ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে ফ্রান্স এবং সংযুক্ত আরব-আমিরাতে সর্বমোট ৮৬২ টি লেক্লারক ট্যাংক রয়েছে। ৮ সিলিন্ডারের ডিজেল চালিত এই ট্যাংকে ১২.৭ মি.মি. মেশিন-গান ব্যবহার করা যায়। একবার রিফুয়েলিং করলে টানা ৫৫০ কি.মি. যেতে পারে। দ্রুত গতি এবং খুব সহজেই এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা যায় বলে বর্তমানে এর অনেক কদর রয়েছে। খুব শীঘ্রই কাতার এবং কলম্বিয়া তাদের বহরে এই ট্যাংক যুক্ত করতে যাচ্ছে। এইবার আসি দাম নিয়ে, বর্তমান বাজারদরে একটা লেক্লারক ট্যাংকের দাম পড়বে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা।


মেরকাভা মার্ক ৪ (Merkava Mark IV)



প্রস্তুতকারক দেশঃ ইসরায়েল
ওজনঃ ৬৫ টন
দৈর্ঘ্যঃ ৯.০৪ মিটার, প্রস্থঃ ৩.৭২ মিটার, উচ্চতাঃ ২.৬৬ মিটার
ক্রু সংখ্যাঃ ৪ জন
প্রাথমিক অস্ত্রঃ ১২০ মি.মি. স্মুথ বোর গান
অপারেশনাল রেঞ্জঃ ৫০০ কি.মি.
গতিঃ ৬৪ কি.মি প্রতি ঘণ্টা

১৯৭৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত মেরকাভা সিরিজের ৪টি ভার্সন তৈরি করা হয়েছে, এর মধ্যে মেরকাভা মার্ক -৪ হচ্ছে সর্বশেষ ভার্সন। ২০০৪ সালে মেরকাভা মার্ক -৪ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৩৬০টি ট্যাংক ফাংশনাল রয়েছে। গায়ে পড়ে যুদ্ধ করা যেহেতু ইসরায়েলিদের স্বভাব সেহেতু মেরকাভা মার্ক -৪ এর ব্যবহার হরহামেশাই হয়ে থাকে, তবে সবচেয় বড় ডেপ্লয়মেন্ট ছিল দ্বিতীয় ইন্তিফাদা, ২০০৬ এর লেবানন যুদ্ধ, গাজা যুদ্ধে । এছাড়াও নিয়মিত ভিত্তিতে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন ভূখণ্ডে এই ট্যাংকের ব্যবহার চলছেই। বহির্বিশ্বে এই ট্যাংকের একমাত্র খরিদ্দার হচ্ছে কলাম্বিয়া, ভেনিজুয়েলার টি-৭২ ট্যাংকের বিরুদ্ধে কৌশলগত ভাবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য কলাম্বিয়ান সেনাবাহিনী এই ট্যাংক কিনতে যাচ্ছে। শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, শক্ত খোলস এবং একাধিক সেকেন্ডারি ওয়েপন ব্যবহারের উপযোগিতার জন্য এই ট্যাংক বিশ্বের শক্তিশালী ট্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম। লেক্লারকের তুলনায় এর মূল্য অনেক কম, একেক ইউনিটের বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।


এম ১ আব্রামস (M 1A2 Abrams)



প্রস্তুতকারক দেশঃ যুক্তরাষ্ট্র
ওজনঃ ৬৬ টন
দৈর্ঘ্যঃ ৯.৮৩ মিটার, প্রস্থঃ ৩.৬৬ মিটার, উচ্চতাঃ ২.৪৪ মিটার
ক্রু সংখ্যাঃ ৪ জন
প্রাথমিক অস্ত্রঃ ১২০ মি.মি. স্মুথ বোর গান
অপারেশনাল রেঞ্জঃ ৪৬২ কি.মি.
গতিঃ ৬৭ কি.মি প্রতি ঘণ্টা

এম ১ আব্রামস ট্যাংক আমেরিকাকে যুদ্ধক্ষেত্রে করেছে সবচেয় ভয়ংকর। শক্তিশালী আর্মার এবং অত্যাধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই ট্যাংকে। প্রাথমিক অস্ত্রের পাশাপাশি ৩ টি মেশিন গান ব্যবহার করা যায় এম ১ আব্রামসে। জেনারেল ক্রেইটন আব্রামসের নাম অনুসারে এর নামকরণ হয়। সঠিক ভাবে লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত করার জন্য আব্রামসের রয়েছে ফায়ার কন্ট্রোল কম্পিউটার এবং লেজার রেঞ্জফাইন্ডার। শক্তিশালী ভারী ইস্পাতের আবরনের কারনে এই ট্যাংকের ওজন সমসাময়িক ট্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। যদিও এই ট্যাংকের গতি লেক্লারকের মতন নয় তারপরও বহুমুখী অস্ত্রের সংযোজন এবং প্রযুক্তির ব্যবহার এই ট্যাংকে প্রথম তিনটি ট্যাংকের তালিকায় অনায়েসে জায়গা দেয়া যেতে পারে। ১৯৮০ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ৯০০০ এর উপরে আব্রামস ট্যাংক তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, মিশর, ইরাক, কুয়েত এবং সৌদিআরবে এই ট্যাংক রয়েছে। আর এর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।


চেলেঞ্জার-২ (Challenger II)



প্রস্তুতকারক দেশঃ যুক্তরাজ্য (ইংল্যান্ড)
ওজনঃ ৬২.৫ টন
দৈর্ঘ্যঃ ৮.৩০ মিটার, প্রস্থঃ ৩.৫০ মিটার, উচ্চতাঃ ২.৫০ মিটার
ক্রু সংখ্যাঃ ৪ জন
প্রাথমিক অস্ত্রঃ ১২০ মি.মি. রাইফেল্ড গান
অপারেশনাল রেঞ্জঃ ৪৫০ কি.মি.
গতিঃ ৫৬ কি.মি প্রতি ঘণ্টা

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চেলেঞ্জার-২, পূর্ববর্তী চেলেঞ্জার-১ এর আপগ্রেডেড সংস্করণ। বর্তমানে ব্রিটিশ এবং ওমানি সেনাবাহিনীতে ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাংক। পরীক্ষিত রক্ষাবুহ্যের কারনে তালিকার উপরের দিকে এর অবস্থান। ২০০৩ সালে ইরাকে আক্রমনের সময় এই ট্যাংকের কার্যক্ষমতার নমুনা পাওয়া যায়, কথিত আছে এই ট্যাংক ১৪টি রকেট চালিত গ্রেনেড এবং একটি এন্টি ট্যাংক মিসাইলের আঘাত পাবার পরেও পুরোপুরি ঠিক ছিল। এছাড়াও এই ট্যাংক নিজেকে ডিরেক্ট-ফায়ার-ওয়েপন থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে। ১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে এর সংযোজন ঘটে, তার পর থেকে এর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪৪৬ টি। আব্রামসের মতন এই ট্যাংকেও নির্ভুল নিশানার জন্য রয়েছে লেজার রেঞ্জফাইন্ডার। সেকেন্ডারি আর্মার হিসাবে এতে আছে চেইন-গান এবং ৭.৬২ মি.মি. এর মেশিন গান। বর্তমানের এর একেকটির মুল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।


লেপার্ড ২ (Leopard 2)



প্রস্তুতকারক দেশঃ জার্মানি
ওজনঃ ৬২.৩ টন
দৈর্ঘ্যঃ ৯.৯৭ মিটার, প্রস্থঃ ৩.৭৫ মিটার, উচ্চতাঃ ৩.০০ মিটার
ক্রু সংখ্যাঃ ৪ জন
প্রাথমিক অস্ত্রঃ ১২০ মি.মি. স্মুথ বোর গান
অপারেশনাল রেঞ্জঃ ৫০০ কি.মি.
গতিঃ ৬৮ কি.মি প্রতি ঘণ্টা

বর্তমান ট্যাংকের জগতে সুপারস্টার লেপার্ড ২। নহুনডব্যবহৃত গতি, নিজেকে রক্ষা করা এবং বিধ্বংসী অস্ত্রের অপূর্ব সমন্বয় করা হয়েছে এই ট্যাংকে। লেপার্ড ১ এর পরবর্তী সংস্করণ হচ্ছে এই লেপার্ড ২। যুদ্ধ ক্ষেত্রে জার্মানৎ বসনিয়া-হার্জেগোভিনাতে ব্যবহার করা হয়েছে এই ট্যাংককে। খুব দ্রুত স্থান পরিবর্তন এবং নিখুঁত নিশানার জন্য এটি অন্যান্য ট্যাংক থেকে বেশ স্বতন্ত্র। সেকেন্ডারি ওয়েপন হিসাবে জার্মান জেনারেল পারপাস মেশিন গান তো আছেই পাশাপাশি স্মোক বম্বিংও করা যায়। বর্তমান বিশ্বে ১৪ টি দেশের সেনাবাহিনী এই ট্যাংক ব্যবহার করছে। মুল্য অন্যান্য ট্যাংকের তুলনায় কম, মাত্র ৪৫ কোটি টাকা পার-পিস!!


এইবার দেখি কার কত ট্যাংক (২০১২ সাল পর্যন্ত)ঃ

১. আমেরিকা – ৮,৩২৫
২. চীন - ৭,৯৫০
৩. উত্তর কোরিয়া – ৫,৪০০
৪. মিশর – ৪,৪৮৭
৫. তুরস্ক-৪,৪৬০
৬. সিরিয়া – ৪,১৫০
৭. ইউক্রেন – ৪,১৩০
৮. ইসরায়েল – ৩,৮৭০
৯. ইন্ডিয়া – ৩,৫৫৫
১০. পাকিস্তান – ৩,৪৯০

তথ্য সুত্রঃ ১. http://www.wikipedia.org
২. http://www.globalfirepower.com/

১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×