১)
গল্প শুধু বইয়েই নয়, জীবনেরও অনেক গল্প থাকে। সে সব গল্পে শরৎ-হেমন্ত, শীত-বসন্তও থাকে। শরতের আকাশ থাকে পরিষ্কার। কখনো শ্রেত শুভ্র সাদা, আবার ধুসর-নীলও হয় কখনো কখনো। এমন সরল শরতেই সাদা কাশবনে ছেয়ে থাকে নদীর দু'পাড়। এমন শান্তভাব নদীর পাড় ধরে হেটে বেড়ানোতে অনেক আনন্দরূপ দেখি আমি। জীবনের গল্প খুঁজে ফিরি এমন আনন্দময় প্রকৃতিতেও। গল্প অবশ্য সব কিছুতেই আছে। গল্প আছে আমার জীবনেরও। আমার জীবনের গল্পটাও আবার অনেক ইন্টারেস্টিং। এমন মহামায়া শরতের মহীমায় মনের আদ্রতা বাতাসের আদ্রতায় গুলিয়ে যায়। শরতের সূয্যটা খুব তেজস্বী না হলেও মোটামুটি প্রখরই। এমনই এক শরতেরকালে আমিও হাটছিলাম মেঠোপথ ধরেই। হেটে চলার পথে নিজের থেকে নিজের ১০ গুন বড় ছায়া ধরে পথ হাটার মজাটাই আলাদা। মাঝে মাঝে কিছু দুষ্ট কাকও আমার মাথার উপরে উড়ে যেতো কখনো সারিবদ্ধ আর কখনো বিক্ষিপ্তভাবে। হয়তো অনেক ক্ষুধাতুর হয়েই তারা উড়ে বেড়াতো দিগন্তব্যাপী। আর সেসব পাখি খাওয়ানোর মতো মহাপুরুষ আমি ছিলাম না কোনদিনও।
এমনিই মনআবেশ করা পথ ধরেই একা একা হেটেই যেতাম এমন নিশ্চুপ নিরালায়। কখনো এমন কেউ ছিলোনা যে, যার জন্য খুব বেশী তাড়াছিলো আমার। কারো জন্যই কোনদিনও কোন তাড়াছিলোনা আমার, আমার জন্যও ছিলোনা কারো অধির আগ্রহের অপেক্ষা। তৃষ্ণার্ত চাতক হয়ে একদৃষ্টে কেউ ছিলো আমার অপেক্ষার পাণে, আমিও তাই দুরন্ত হেষ্রার ন্যায় ছুটে চলিনি ক্রোশমাইল পথ। তাইতো নিজের ছায়ার দৃশ্যটা দেখে দেখেই ধীরেসুস্থে হাটতাম। হাটতাম অবচেতন মনে, বিক্ষিপ্ত সব ভাবনায়
২)
জীবনের গল্পগুলোতে সম্পর্ক থাকে। সে সকল সম্পর্কে প্রেম থাকে, প্রেমের বিরহও থাকে। সম্পর্কহীনতায় কোন মানুষ বাঁচেনা। কিন্তু বাঁচার তাগিদেই আবার সে সকল সম্পর্কচ্ছেদ করে বেরিয়ে আসতে হয়। যে সকল বোকারা আবার সম্পর্কচ্ছেদ করতে পারেনা, তাদের কথা আলাদা। আর যারা পারেনা, তারাই চ্যাকা খায়। তবে এসব নিয়ে কখনো দুঃশ্চিন্তা করিনি আমি, কারণ দুশ্চিন্তা করার মতো আরও বিষয় ছিলো আমার। যেসব বিষয়ে ভেবে ভেবে নিজেই হেসে উঠতাম এই একাকি আমি। কোন চোখ ধাঁধানো সুন্দরীর প্রেম প্রত্যাশী ছিলাম না কোনকালেই। কারণ, তারা হয় অহংকারী হয়, নয়তো হয় বোকারাম । যে দুটোর কোনটাই আমার পছন্দ না। আমিতো ছেয়েছিলাম- হৃদয়ের উপর হাতুড়ি চালানো কোন নকশীকাঁথার মতো উজ্জ্বল বনজ মুখশ্রীর কাউকে। যার কথার মুগ্ধতা আমায় আবেশবিভোর করে রাখবে অনন্তকাল। যার অজস্র শব্দভাষনের ফুলঝুড়িতে ক্ষণে ক্ষণে দুলে উঠবে আমার এই অশান্ত অস্থির হৃদয়টাও। আমার ফ্রিজ মনই তার কথার মায়ায় গলে যাবে অবলীলাক্রমে। আমার এই জলপাই রঙা বুকটা কেপে উঠবে তার অযাচিত বেক্ষাপ্পা কথার সুরেই।এমন কাউকে পেলে নির্ঘাত আমি পানিতে পড়ে যাবো, অন্তত এমনটাই ধারণা ছিলো আমার। যে আমায় পাগলের মতো মিস করবে। ঠিক যেন আমার প্রতিটি হৃদস্পন্দই হয়েই থাকবে সে। তার এই- "ভালোলাগে ভালোলাগে" শব্দটা জপতে জপতে আমার কানেরপোকা বেরকরে আনবে বারংবার। তার ওই মুখরিত কথামালা আমার হৃদপিন্ড ভয়ানক ভাবেই আন্দোলিত করবে সর্বদা। তার কাশফুল ছোঁয়া নরম হাতের গরম স্পর্শতা আমায় ব্যাকুল করে রাখবে অনেক অনেক সময় ধরেই। তার তটিনীমতন দেহপল্লবীর বাকেই খুঁজবো আমার আমিকে। অথবা সে আমায় অবাক করে দিয়ে, আঙ্গুলের গোড়াতে দেহের ভর চাপিয়ে হুট করে আমার ঠোঁটে চুমু একে যাবে।
৩)
কিন্তু শতবছরের প্রাচীন শিক্ষাঃ মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। গান পাগল একলা একা মানুষ এই আমি। কোন এক শরতের মাঝামাঝি সময়ে ঠিক কোন গানটা শোনা উচিৎ বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমি। বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কার সহযোগীতা নেওয়া উচিত আমার। উদাসীনতার প্রতি ছিলো আমার চরম আগ্রহ। যে উদাসিতায় মাঝে মাঝে আমার আমিকেও হারিয়ে ফেলি অবলীলায়। এই উদাসীনতায় বুঝতে পারিনি কারো নিষ্পাপ চাতক চাহনিও। বুঝতে পারিনি সেই চাহনিযুক্ত না বলা কথার মর্মাথ্য। হ্যা, শুধু আমি বোকা বলেই কারো কারো পরিষ্কার বিধ্বংসী ইঙ্গিতগুলোও কখনো হয়তো বুঝিনি। ইচ্ছে ছিলো ধীরে ধীরে আমি সাহসী হয়ে উঠবো, আর সাহস বেড়ে গেলেও এই নশ্বর জীবিনের কি এমন পরিবর্তন হতো তা আমার আল্লাহই জানে। তবে তেমন সাহসী আদতেই আমি ছিলামনা কখনো। মাঝে মাঝে এও খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোন সাদামাটা উর্বশীর জন্যও কি আমি যোগ্য ছিলাম না...?? হয়তো আজকের সেরা বাজে চিন্তা আমার এটা, হয়তো এই বছরেরই সবথেকে বাজে চিন্তা, হয়তো এটা আমার জীবনেরও সবছেয়ে বাজে চিন্তা। নিজের প্রতি অনাগ্রহী হতে হতে এখন অন্যদের প্রতিও আমি আর আগ্রহী হতে পারছিনা। তাইতো অনেকের মতে আমি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে আছি। হুম, হয়তো তাইইই। কখনো কারো হাতধরে পথ চলার আগ্রহটা আমার এই বেহাল মনে জাগ্রত হয়নি তা বলাটা হয়তো খুব মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু সেই অধরা সাহসের অভাবই তার একমাত্র কারণ হয়তো। নিজের সাথে অনেকবার প্রমিজ করেছিলাম আমি, যে সামনের শরতেই আমি নিজের মতো করে সব গুছিয়ে পূর্ণ হবো। এই অসভ্য আমি আজও প্রমিজ রাখতে পারিনি। এমনই নিষ্ঠুর রকমেরই অসভ্য আমি। আর এসবের জন্য কখনো মায়া কান্নাও কাদিনি আমি। অনন্তকালবদি অনুচারিত হয়ে ক্ষণে ক্ষণে এসকল ভাবনায় তলিয়েও যাইনি কখনো। হয়তো তলিয়ে যাবোও না এই আমিটা। কথাটা লিখিতভাবে আপনার শোবারঘরের আয়নায়ও টাঙ্গিয়ে রাখতে পারেন।
চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:২১