ইনবক্স অণুকাব্য : ১৪ : হাসান মনজু
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অর্ক,আমি এখন যে নির্জন বাড়িতে থাকি, তার সামনের রাস্তাটা আঁকাবাঁকা হয়ে মোড়ের কাছে বাঁক নিয়ে ঘন সবুজ গাছের আড়ালে হারিয়ে গেছে।রাস্তাটা সারাদিন খালিই পড়ে থাকে।হাঁটার মানুষ নেই।দেখলেই কেমন বুকটা খাঁ খাঁ করে।সব সময় মনে হয় এই রাস্তাটা ধরে কোথাও যেন যাওয়ার ছিলো। কিন্তু যাওয়া হলোনা।আরো অনেক দূরে যাওয়ার কথা ছিলো
=দিগন্তে মিলানো খালি রাস্তা, ষ্টেশানের খালি প্লাটফর্ম,সমান্তরাল সুদুরে হারিয়ে যাওয়া রেল লাইন দেখলে সবারই মন কেমন করে।আজ এতো দূর দৃষ্টি কেন ?
-বুঝলাম না ?
=না,মানে বসে আছো এখানে,দৃষ্টি যেন অনেক দূরে হারানো।কি ভাবছো?
-অর্ক,তুমি বংশ প্রথা বিশ্বাস করো ?
=মোটেই না,এটা একটা অন্ধবিশ্বাস ,কুসংস্কার।তবে আমাদের সাবকন্টিনেন্টে যুগযুগ ধরে সমাজের রন্দ্রেরন্দ্রে এমন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে মুছে ফেলতে সময় লাগছে।
-কিন্তু অবাক লাগে যখন দেখি, নুতন প্রজন্মের মধ্যেও এই ধারনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
=শোন, আমাদের সমাজে ছেলে সন্তানের প্রতি এখনো অবিশ্বাস্য রকমের এক মোহ কাজ করে সমাজের ভ্রান্ত ধারনা,পূত্র সন্তান মানে, মাকে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে এক রকমের বৈধতা দেওয়ার মত।অন্ধবিশ্বাস,পূত্র সন্তান হওয়া মানে ঐ মা ঐ বংশের অংশ হওয়া।বংশের বাতি জ্বালানো কথাটা সর্বৈব এক অন্ধ কুসংস্কার।
হঠাৎ এত ভারী বিষয় ?
-বলবো অন্যদিন।
=এতো বড় লাল টিপ,যেন চাঁদের কপালে সূর্যোদয়,আজ এত অপূর্ব সাজ কার জন্য ?
-শুধু তোমার জন্যে
=ঐ অরণ্যে পলাশ হয়েছে লাল
ফুলে ফুলে আজ ঢেকে গেছে যত
বন মহুয়ার ডাল
এরকম কি? ঠিক মনে পড়ছেনা
-মনে নেই, কতদিন শুনিনি,হয়েছে, এবার তোমার কাব্য শুনি।
=ঝুলিতে তেমন নুতন কিছু নেই, সব তোমাকে শুনানো,আজ তোমার অপরূপ রূপের প্রশংসাই করি।
-ধ্যাৎ,কিযে বলনা তুমি, একদম নয়।তাহলে চলে যাব কিন্তু।
=এমনি বলছো,পৃথিবীতে মেয়েদের মধুর শব্দ মা ডাক শোনা আর মধুর বাক্য রূপের স্তুতি।
সত্যি আজ তোমার সাজ মনকাড়া,ঝিমধরা
-আরকিছু ?
= পাগলকরা,হীরের নাকচাবি,কানে ঝাড়লন্ঠন,হাতে মিছিরির ছিলেকাটা,আর আমার প্রিয় নীল শাড়ীর আঁচলে যেন শরতের নীল আকাশ অর্ঘ্য হয়ে লুটিয়ে পড়েছে।
আহা,মালার কি আদিখ্যেতা
সাড়াক্ষণ গলায় জড়িয়ে...
-ধ্যেৎ আজ বলছো কি সব যা তা
=সত্যি গলার মালাটিরও
কি ভাগ্য হায়
হৃদয়ের কাছে লুটোপুটি
নিত্য আদর পায়
হিংসেয় জ্বলে যাই
-জন্মদিনে দিলো ওটা ছোট খালা
সোনায় মোড়ানো মুক্তোর মালা
এত হিংসে,আচ্ছা নাহয়
তুমি মুক্তো হও
আমি হব সোনা
মুড়িয়ে রাখবো বুকের কাছে
সুধবো যতো দেনা
=আমায় তুমি মুড়িয়ে টুড়িয়ে রেখোনা প্রিয়ে,
থাকবো হৃদয় ছুঁয়ে
গন্তব্য পর্বত চুড়ো উপত্যকা বেয়ে
আহা,কি ভাগ্য
-অসভ্য
=অসভ্য কেন ?
-অর্ক, কথাবার্তা আজ এত দুঃসাহসী
=দুঃসাহসী আমি নই, তুমি
-মানে ?
=তুমি আজ যেন শরীরী মানুষ নও,
প্রেমের কবিতা
প্রভু,মানুষ মারার কল পেতেছো বিশ্বজুড়ে
সাপের মত আঁকবাঁকা.....
-কি কি বললে ?
=আচ্ছা বাবা,নদীর মত, স্ফীত শীর্ণ কাছে দূরে
-আজ কথার কোনো ছিরিছাঁদ নেই যেনো
=বাহ্ ছিঁচকেদের ডাকাত হতে
ইচ্ছে হবেনা একদিনও ?
হোকনা আজ সঙ্গোপনে
কথার ডাকতি
- এতোদিন তবে গোপন রেখেছো
দস্যু প্রবৃত্তি
চলবে~~~~~~~~~~~~