ইনবক্স অণুকাব্য : ১৫ : হাসান মনজু
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নন্দিনী,বিশাল ঝাঁকরা গাছের মাথায় ভোরের আলো নামছে চুঁইয়ে।ঝিঁঝিঁর কলরোল,পাখির কিচিরমিচির ধ্রুপদের মত একটা পরিবেশে ভোর হলো।কাপ্তাই লেকের ভরভরন্ত নিথর জলে প্রথম সুর্যের সোনালী আভা, অপূর্ব অপার্থিব দৃশ্য।দূর থেকে একটা গান ভেসে আসছে,ভৈরবী সুর,
অন্তরে তুমি আছো চিরদিন
অগো অন্তর্যামী
বাহিরে বৃথাই যত খুঁজি তাই
পাইনা তোমারে আমি
মন্দির রচি বিগ্রহ গড়ি
দেখে তুমি হাসো স্বামী
তুমি বহুরূপী তুমি রূপহীন
তব লীলা হেরী অন্তবিহীন।
দূর পাহাড়ের মাথায় দিগন্ত,বিশাল প্রান্তর আর এই ভৈরবী সুমধুর সুরে স্বাভাবিক জগত থেকে যেন অন্য এক অপার্থিব জগত বেরিয়ে এলো। সুর এবং বাণী ঠিক এই সময়ে ঠিক এই পরিবেশের জন্য বুঝি রচিত হয়েছিলো।মন কেমন করা সুর।নন্দিনী,জীবনের সব ভোর যদি এভাবেই হতো।
অর্ক,দু' দিন ধরে ঘুম ভাংছে দুঃসংবাদে
প্যারিসে আই এস রা ১২৯ জন নিরীহ মানুষ হত্যা করলো কোন অপরাধে?
এই নগ্ন,কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে তথ্য মাধ্যমে বিবৃতি প্রচার করেছে আই এস।
তারা নিজেদের ক্রুসেডর( ধর্মযোদ্ধা) বললেও নিরীহ মানুষ হত্যার বিধান ইসলাম কিংবা অন্য কোনো ধর্মে নেই।তারা সৈনিক তো নয়ই, ধার্মিকও নয়।তারা বোকা,কাপুরুষ,বর্বর খুনী।এই হত্যাকান্ড এমন এক সময়ে হলো যখন সিরিয়ার হাজার হাজার মুসলিম শরনার্থী স্রোতের মত ইউরোপে ঢুকছে।ভয়াবহ এক দুঃসময়ের মুখোমুখী আমাদের বিশ্ব।সবার উচিৎ প্রবলতম ভাষা এবং ধিক্কারে আই এস কে প্রত্যাকখ্যান করা।যে কোনো রকম যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা।
=নন্দিনী,আমি কানা গলির অন্ধ পথিক,বিশ্ব রাজনীতির মহা প্রান্তরে বড্ড অপাঙক্তেয়, বেমানান।
-তুমি প্রতিবাদ মিছিলে এসো
দ্রোহের পোষ্টার হাতে
আমি থাকবো দাঁড়িয়ে
তপ্ত রাজপথে
=তুমি অপ্রদিতির মত এসো
ধুলির ধরনীতে
শুদ্ধ হবো হাত রেখে
তোমার বিদ্রোহী হাতে
-তুমি ভালবাসার মিছিলে এসো
লাল গোলাপ হাতে
থাকবো তোমার অপেক্ষায়
নতুন এক সোনালী সুপ্রভাতে
এত যুদ্ধ মৃত্যু রক্ত হিংসা হানাহানি আর ভাললাগেনা।একটা ঘূর্নিঝড় চাই বুঝলে।ঘূর্ণীঝড়ে ভাঙ্গুক এই অচলায়তন।সাম্যবাদ,যুক্তিবাদ,শুভবোধ,মুক্তিবাদ সব গিলে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে অসহিষ্ণু এক দুঃসময় কুপমন্ডুকতা,ধর্মান্ধতা,জাতি,ধর্ম,গোত্রে বৈরীতা।মানবতার মধ্যেই নিহীত সব ধর্ম,সব সত্য।ধর্ম বৈচিত্র্যের ধারক।যে জাতি ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে সম্মানের সাথে উদযাপন করতে পারবে তারাই পরিপূর্ণ হবে শান্তি,সৌহার্দ্য,স্থিতিশীলতা আর উন্নয়নে।
=উফ্ এত ভারী ভারী কথা,মাথা ব্যথা করছে, কিছু কাব্য হোক
=মাফ চাই,
কাব্য টাব্য আজ কিছুই নাই
আমার উপরও কারফিউ জারী
হাঁটা চলা উঠা বসায় কঠোর নজরদারী
দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ছোটটির উপর
ভাবনা,চিন্তা,কথাবর্তায়, টেলিফোনে নিষেধাজ্ঞা সকাল সন্ধ্যা,দুপুর
-বন্ধ ঘর থেকে বেরুনো
সামনের রাস্তাটাও পেরোনো
=নিষেধাজ্ঞাটা কার ?
=আবার কার, বাবার
আমিও ক্রমশই বিদ্রোহী হয়ে উঠছি
স্মারকলিপি দিয়েছি
=ও আমার আগুন
তুমি আবার উঠো জ্বলে
প্রতিদিন উঠবো জেগে
তোমায় দেখবো বলে
-হয়েছে আর উদ্ভুদ্ধকরণ কাব্য ঝারতে হবেনা
সাঁড়াশি অভিযাণ দমন পীড়ন এসব তো কিছু তোমাকে পোহাতে হয়না
=আমি নিজেই তো এক
ঝাড়া হাত পা অনিকেত
-তুমি রাগ করেছো,সত্যি বলছি তোমার কাব্য না শুনলে ঘুম হয়না
=ঠিক আছে,একটা ওষুধ কোম্পানীর সাথে কথা বলি
কেন কেন চাকরীর কোনো ব্যবস্থা হলো ?
-টিউব লাইট,কেন আবার,কবিতা গুলো ট্রাঙ্কুলাইজার আর ঘুমের ওষুধ হিসেবে পেটেন্ট করবো।
-আর টিউব লাইট?
=ওটা তুমি,দেরীতে বোঝো বলে
ঘুমের ওষুধ নাও,
তুমি আমার চৈত্র ক্ষরায়
সন্ধ্যে বেলার হাওয়া
অনেক পুড়ে যাওয়ার পরে
একটু বেঁচে যাওয়া
তুমি আমার বর্ষা শেষে
নীল আকাশের আশা
রুদ্র মেঘের শাসন শেষে
রোদের ভালবাসা
চলবে~~~~~~~~~~~