আগামী কয়েকদিন কেন বেশী বেশী জঙ্গি ধরা পড়বে ?
21 Jan, 2015
জাহিদ রাজন
আনোয়ার আল-আওলাকির কাহিনী নিয়ে বই লিখেছেন সাংবাদিক জেরেমি স্কাহিল। তার Blackwater: The Rise of the World’s Most Powerful Mercenary Army বই বেস্ট সেলার হিসেবে নাম করেছে। এছাড়া তার 'ডারটি ওয়ার' বইটাও ইন্টারেস্টিং। 'ডারটি ওয়ার' নামে একটা চমৎকার ডকুমেন্টারিও আছে যেখানে আফগানিস্থান, ইরাক এবং সোমালিয়ার ওয়ার অন টেররের কাহিনী আছে।
আমেরিকান স্পেশাল ফোরস'Joint Special Operations Command (JSOC) যে রাতের অন্ধকারে গিয়ে নিরপরাধ আফগান নারী শিশুদেরকে গিয়ে গুলি করে মেরেছে ডারটি ওয়ার ডকুমেন্টারিতে এটি সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।
এরপর নিহত পরিবারের সদস্যরা কিভাবে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে আমেরিকান সৈন্যদের মারতে চেয়েছে এ কাহিনী তিনি তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে তিনি কংগ্রেস এর হিয়ারিং এ অংশ নিয়েছেন। ফলাফল হয়ত খুবই সামান্য তবে তার যে সততা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা এর জন্য তাকে অসাধারণ বলে মানতেই হবে। একজন জারনালিস্ট এর মধ্যে যেরকম মরাল এথিকস থাকা দরকার তার এটা আছে বলে আমার মনে হয়েছে।
যাই হোক, তিনি ডারটি ওয়ার বই লেখার আগে আনোয়ার আল-আওলাকির পরিবারের সাথে একটা লম্বা সময় কাটিয়েছেন। রমজান মাসে ইফতার করেছেন। আওলাকির বাবা হতে শুরু করে তার পরিবারের মা, বোন, ভাতিজা, ভাগিনা সবার সাথে সময় কাটিয়েছেন, ইন্টারভিউ নিয়েছেন।
তিনি বেশ চমৎকার করে তুলে ধরেছেন আনোয়ার আল-আওলাকি কিভাবে আল-কায়েদা তে আসলেন।
৯/১১ এর পর আওলাকি বেশ কিছু খুতবা দেন, সংবাদ সম্মেলন করেন, টিভি চ্যানেলে যান। সেখানে তিনি সবজায়গায় বলতে চান যে আমেরিকা যদি পৃথিবীর অন্য কোথাও নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে এর জন্য আমেরিকায় সাধারণ সিভিলিয়ান হত্যা বৈধ হতে পারে না। সে সময় তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। এরপর সিআইএ তাকে নিজেদের স্পাই বানাতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। তাকে কয়েকবার ধরে নিয়ে যায় ইন্টারোগেট করে। তার নামে মামলা করে যে তিনি একদিন রাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একজন পতিতাকে প্রভোক করেছেন এইসব হাবিজাবি। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন যে সিআইএ তাকে ফলো করছে। তিনি ইয়েমেন চলে যান।
আমেরিকার সরকার ইয়েমেন এর আলী আব্দুল্লাহ সালেহকে অনুরোধ করে তাকে ৪/৫ বছর যেন আটকে রাখা হয়, যেন ইয়াং জেনারেশন তার নাম ভুলে যায়। বিনা অভিযোগে তাকে সতের/আঠার মাস আটকে রাখা হয়। এরপর ইয়েমেন এর মানুষ এবং ট্রাইবদের চাপে পরে ইয়েমেন সরকার তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
এর মধ্যে আমেরিকা ইয়েমেন এর দক্ষিণে মাজেলা আক্রমণ করে। এটাই হল আমেরিকার প্রথম আক্রমণ। পরদিন প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ টিভিতে ভাষণ দেন যে ইয়েমেন এর সেনাবাহিনী 'আল-কায়দা' ট্রেনিং ক্যাম্পে হামলা করেছে।
একজন ইয়েমেন এর কয়েকদিন পর ঘটনাস্থলে যান। তিনি গিয়ে দেখেন যে সেখানে নিহতরা সবাই নারী এবং শিশু। নারী শিশুদের দেহের বিভিন্ন অংশ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। সেখানে যে মিসাইল হামলা করা হয় তিনি এর গায়ে আমেরিকার সিল দেখতে পান। তিনি এসব প্রমাণাদি এমেনেস্টি ইন্টার ন্যাশনাল এর কাছে পাঠান। এমেনেস্টি তদন্ত করে নিশ্চিত করে যে এটি আমেরিকার তৈরি মিসাইল এবং সাথে এখানে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ফেলা হয়েছে। তিনি এই খবর মিডিয়ায় ছেপে দেন। ইয়েমেন এ উত্তেজনা শুরু হয়। আমেরিকা হামলা করবে এবং ইয়েমেন হামলার হিসেবে দায়িত্ব নিবে এই পরিকল্পনার কথা পরবর্তীতে উইকিলিক্স এর ফাঁস করা ক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট থেকেও প্রমাণ হয়।
আমেরিকার নির্দেশে একটা সিকউরিটি দল সে ইয়েমেন এর সাংবাদিকের বাসা রেড করে। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। হুমকি দেয়া হয় যে, তিনি যদি এই তদন্ত না থামান তাকে জেলে নেয়া হবে। এরপর তিনি এসে আবারও এ তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। তার বিচারের প্রসংগ আপাতত বাদ রাখছি।
মূলত দক্ষিণ মাজেলাতে কোন আলকায়েদা ছিল না। এখানে ইয়েমেন এর যে ট্রাইব থাকত সেটি কখনোই সরকারি শাসনে ছিল না। আলী আব্দুল্লাহ সালেহ এই জায়গা নিজের অধীনে আনতে চাইলেন। এটি করতে গিয়ে তিনি আমেরিকার সাথে প্লেন করে এ হামলা ডিজাইন করলেন এবং নিজে ওয়ার অন টেররে আমেরিকার বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে প্রমাণ দিতে চাইলেন যাতে তার একনায়কতন্ত্র আরও অনেক দিন টিকে থাকে। এ হামলার পর সেখানের লোকজনের মধ্যে এন্টি আমেরিকা সেন্টিমেন্ট তীব্র হয়। আলকায়েদার রিক্রুটমেন্ট বাড়তে থাকে। ফলে আলী আব্দুল্লাহ সালেহ আমেরিকার কাছে নিজের অপরিহার্যতা তুলে ধরতে সমর্থ হন।
আপাতত বাংলাদেশ প্রসংগে ফিরে আসি। নির্বাচন ইস্যুতে আমেরিকার অবস্থান হল আমেরিকা নির্বাচন চায়। আমেরিকা ভারতকেও বলেছে যে ভারত যেন এই ইস্যুতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। পুলিশ-বিজিবি দিয়ে ত বিএনপি জামায়ত নিয়ন্ত্রণ করা গেল কিন্তু আমেরিকা ভারতের কি হবে ? নতুন গল্প লাগবে। তাহলে উপায় হল যে কোন বই যেমন- এসো আরবি শিখি, আসহাবে রাসুলের জীবন কথা, কিংবা জিহাদি বই। জিহাদি বই রাখা ইটসেলফ কোন ক্রাইম না। আর দরকার লাগলে পুলিশ জিহাদি বই না থাকলে কিনে এনে দিয়ে দিবে। কিছু মাদ্রাসার দাঁড়ি-টুপি ওয়ালা ছেলেদেরকে ধরে আনা। ফলে একটা জঙ্গি গ্রাউন্ড তৈরি দেখে হবে। এরপর দরকার হলে মন্দিরে বা সংখ্যালঘুদেরদের উপর হামলা হবে। করবে আওয়ামীলীগ। এসব দেখে আমেরিকা আবার লাইনে আসলেও আসতে পারে।
আর এর লং টার্ম ইফেক্ট হল হাসিনা হবেন আমেরিকার ওয়ার অন টেররের লং টার্ম এলাই। আর এসব ছেলেপেলেকে পিটিয়ে আসলেই আলকায়েদাতে ভর্তি করে দিতে হবে। একবার করতে পারলে খেলা শুরু হবে, এই ভিশাস সাইকেল চলবে।
এটা হল হাসিনার মেকেয়াভেলিন পলিটিক্স ।