somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ চিঠি-কলম

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পঃ চিঠি-কলম

সাদা কাগজ খুলে, গল্পের প্লট মাথায় নিয়ে বসে আছি।
কলম খুজতে যেয়ে দেখি, কলম নাই।
ব্যাগে হাতড়ালাম, প্রত্যেকটা পকেট চেক করলাম, শার্ট-প্যান্টের পকেট চেক করলাম, বই-খাতার ভিতর খুজলাম, কোণা-কানায় খুজলাম। অথচ কোথাও একটা কলম নাই।
গল্পের প্লট মাথায় বাড়ি দিচ্ছে বের হতে চায়। আর আমি কলমহীন হয়ে বসে আছি।
কী অদ্ভুত ব্যাপার!
এমনটা কেন ঘটলো আমার সাথে বুঝতেছি না। আমার ঘরে এক গাদা কলম কিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। ব্যাগে দুই তিনটা কলম থাকেই। আমার প্যান্টের পকেটে সব সময় রাখি একটা। ডায়েরীর ভিতর রাখি একটা। অথচ কোথাও একটা কলম নেই।
এই যন্ত্রণা কারো ভালো লাগে?
প্রয়োজনের সময় জিনিস না পেলে, মাথা গরম হয়ে যায় আমার। তখন উল্টোপাল্টা কাজের কমান্ড দেয় আমার গরম মাথা। হেড অফিসের কমান্ড না মেনে উপায়ও থাকে না।

এরকমটা যে নতুন, তা কিন্তু না। সমস্যাটা অনেক দিনের। এই যে গতমাসের ঠিক এই দিনে।
এরকম রাতের বেলা।
মানে সময় তখন দুইটার মতো।
হঠাৎ ইচ্ছে হলো, কাল ওকে একটা চিঠি দিবো। ও ঘুম থেকে উঠে চিঠি পেয়ে চমকে যাবে।
দারুণ না? বলুন?
মানুষকে চমকাতে কার না ভালো লাগে! তবে এখানে ওর চমকানোর ভিতর থাকবে ভালোবাসার দৃষ্টি। আর আমার চাই সেটাই। সারারাত জেগে চিঠি লিখে, সকালে ওর ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষার পর ঘুম ঘুম চোখে যখন ওর দৃষ্টিতে আমার জন্যে চমকানো ভালোবাসা দেখি, তখনের যে অনুভূতি, সেটাকে স্বর্গীয় অনুভূতি বলে। ওটা বোঝাতে একটা শব্দই কেবল মাথায় ঘুরছে আমার। 'লা জাওয়াব' অনুভূতি। এই 'লা জাওয়াব' অনুভূতি চাই আমার। সেটা পেতে হলে কী করতে হবে আমাকে? চিঠি লিখতে হবে।
চিঠি লিখতে কি কি দরকার? কাগজ আর কলম। ঠিক না?
আমার ব্যাগের চেইন খুলে প্যাডটা বের করলাম। একটা ওষুধ কোম্পানির প্যাড।
ভিতরে সাদা কাগজ।
খুব মসৃণ।
সেদিন একটা ওষুধের দোকান থেকে কিনেছি। এর পিছনের কারণ হলো, চিঠি লেখা। শুধু ওকে চিঠি লিখবো বলে প্যাড কেনা।
এক কথা আমি দুইবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কেন লিখছি? আশ্চর্য!

যাই হোক।
সেই রাতের ঘটনাটা বলি। সেই রাতের বেলাতেও আমি চিঠি লিখতে চেয়ার টেনে টেবিলে বসেছি, অথচ কলম নেই টেবিলে।
খোঁজো এবার কলম!
চেয়ার ছেড়ে উঠে এদিক সেদিক খুজলাম। হাতড়ে বেড়ালাম কতো জায়গায়। তন্নতন্ন করে ঘেটে ফেললাম সব। অথচ কলম নেই কোথাও। অদ্ভুত না?
আমার মেজাজ গরম হতে শুরু করেছে। রাগ উঠে গেছে। মাথায় ছিদ্র থাকলে আগের দিনের কয়লার ইঞ্জিনের ট্রেনের মতো ধোঁয়া উড়তে দেখা যেতো। সেই ধোঁয়া ওঠা মাথা গরম ঠান্ডা করতে চেয়ার তুলে আছাড় দিলাম।
চেয়ার আছাড় দেয়ার শব্দটা বোঝাই কীভাবে?
ধাম!
চেয়ারের একটা পায়া মনে হয় ভেঙে গেলো।
পাশের রুম থেকে আম্মা ঘুম ভেঙ্গে দৌড়ে আসলেন। আমার রাগ উঠে গেলে আম্মা ছাড়া কেউ থামাতে পারে না। আম্মা আমাকে ধরে জোর করে পানি খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন। কী পানি যে খাওয়ালো! আল্লাই জানে! সাথে সাথে ঘুম চলে আসলো।

ঘুম ঘুম ঘুম!
ঘুমের দুনিয়াতে আমি নিশ্চুম!

পরদিন সকাল বেলা উঠে দেখি কলম।
আমার ঘরের যেখানে যেখানে থাকার কথা ছিল, ঠিক সেখানেই আছে।
টেবিলের উপর,
কলম দানিতে,
ডায়েরীর ভিতর,
শার্টের পকেটে।
সব জায়গাতেই কলম আছে। অথচ রাতের বেলা আমি কলম খুজেছি হন্যে হয়ে। পাই নি।
অদ্ভুত না?

আজকেও সেই ঘটনার প্রথমাংশ ঘটা শুরু করেছে। এবং আমার হেড অফিস ভাংচুরের কমান্ড দিচ্ছে। কিন্তু আমি শান্ত থাকতে হবে।
শান্ত!

শান্ত হও রে মন!
পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে,
কী হবে তখন!

হেহ হেহ! কবি হয়ে গেছি দেখি। কবিতার দারুণ ইফেক্ট আছে তো! রাগ কনভার্ট করতে মনে মনে কয়েক লাইন ছন্দ মিলালাম। রাগ নেমে গেলো! মানে রাগের অনুভূতিটা নেই আর। মনের উপর কবিতার তো দারুণ প্রভাব! আর হবে না কেন? রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল, জসীমউদ্দীন, জীবনান্দদের মতো গ্রেটরা কবিতা লিখে গেছেন। এর ভিতর শান্তি শান্তি ভাব না থাকলে, তারা লিখবেন কেন?
ভালো একটা জিনিস পাওয়া গেলো। মন অশান্ত হলেই এখন থেকে ছন্দ মিলাবো।

লিখতে যেয়ে কতো উল্টাপাল্টা কথা যে লেখা হচ্ছে! সাদা কাগজ হাতের কাছে পেলেই মনের 'যা ইচ্ছে তা' লেখা শুরু করি।
কলম পাই না বলে, পেনসিল দিয়ে লিখি।
এর একটা ভালো দিক আছে। সময় কেটে যায়। আমার মতো একা মানুষের সময় কাটানো জীবনের বড় ইস্যু। এই যে! রাত দুইটায় টেবিলে বসেছিলাম, আর এখন ফজরের আজান দিচ্ছে। সময় কীভাবে কাটলো টেরই পেলাম না!

আজান শেষ হবার পরের মূহুর্তেই আমার চোখে পড়লো বস্তুটা।
কালো মসৃণ বডি।
চিকন।
প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী।
খাপের ভিতর তীক্ষ্ণ ধাতব নিব আছে।
আমার সব থেকে প্রিয় কলমটা কলমদানীতেই আছে। কিন্তু কাল রাতে আমি চোখের সামনের জিনিসটাই দেখি নি। কী আশ্চর্য!

এখন যে যে জায়গাতে কলম থাকার কথা, ঠিক সেসব জায়গাতেই আমি কলমের দেখা পাবো। আমি জানি।

কিন্তু কেনো এই বিভ্রম?
এই মতিভ্রম?

কারণটা আমি জানি।

দেরী হয়ে যাচ্ছে বেশ! কলমটা যখন পেয়েছি, ডায়েরীতে গল্পটা লেখা শুরু করি।

আমি।
আমি তো লেখক না। তারপরেও গল্প লিখতে বসেছি। খুব অগোছালো হবে, জানি। কিন্তু তবুও আমাকে লিখতে হবে।

উপন্যাস বা গল্পের কোন নায়ক নই আমি। নই কোন সিনেমা-নাটকের হিরো।
আমি শুধুই আমার গল্পের নায়ক। তাই রাজপুত্রের মতো চেহারা আমার নেই। নেই ওরকম টকটকে ফর্সা গায়ের রং। তাই হতেও পারি নি কারো স্বপ্নের নায়ক।

ছোটবেলা থেকেই কালো আমি। খুব কালো। স্কুলে বন্ধুরা ডাকতো 'আফ্রিকান' বলে। রাগ হতো খুব। কিন্তু বলতাম না কিছুই। আসলেই তো আমি কালো। একসাথে দাড়ালে আফ্রিকানদের থেকে হয়তো আমাকে আলাদা করাও যাবে না।

আমি কখন প্রেম করি নি। আমার দিকে মেয়েরা তাকাতোই না।
নাহ! ভুল বলা হলো।
তাকাতো, তবে অদ্ভুত ঘৃণার দৃষ্টিতে। যেন কালো হওয়া পাপ। আর সেই পাপের মহাপাপী আমি।
বাবা-মার ভালোবাসা ছাড়া আমি কিছুই পাই নি প্রথম জীবনে।

তবে আমার জীবনেও প্রেম আসলো। বিয়ের পর।
বাবা-মায়ের পছন্দেই বিয়ে করলাম আমার দুর সম্পর্কের এক কাজিনকে।
ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয়, সেটা আমাকে প্রথম সেখালো কবিতাই।
কবিতা, আমার স্ত্রী।
ভেবেছিলাম, আমাদের গায়ের রং হয়তো আমাদের আপন হতে দেবে না। আমাদেরকে বেমানান লাগবে একসাথে। আমার বিপরীতে ফর্সা এক তরুণী। ভাবতেই আমার অস্বস্তি লাগতো।

কিন্তু ওর লাগে নি। ও কোন অস্বস্তি করে নি। এই যুগেও সে আমার মনটা দেখে ভালোবেসেছিলো।
আমার সহজ, সরল মন।
যেখানে কোন প্যাচ নেই। শুধু ছিলো প্রথম কোন মেয়ের সহচর্যে এসে তার প্রতি শুদ্ধতম ভালোবাসা।

ও বুঝেছিলো সেটা।
প্রথমদিনেই।

বিয়ের দ্বিতীয়দিনেই তাই বারান্দায় দাড়িয়ে আমার কাধে হাত রেখে বলেছিলো, 'শোন। আমি কিন্তু কখনো প্রেম করি নি। তাই এখন আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো। কেউ বাধা দিবে না। আরেকটা কথা! আমাদেরকে নিয়ে কখনো অস্বস্তিতে ভুগো না। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তোমার মনটা দেখে। তাই তোমার সবটাই এখন আমার কাছে সুন্দর। তোমার চোখে আমি দ্বিধা দেখেছি, তাই বললাম।'

অদ্ভুত না? বিয়ের পরদিনেই সে আমার মন বুঝে ফেললো! একদিনেই প্রেমে পড়ে গেলো!
তখন আমার মনে হলো, সৃষ্টিকর্তা আমার অপূর্ণ জীবনে পূর্ণতা এনে দিছেন।
এই আমার কবিতা, আমার ভালোবাসা।

বিয়ের পর যতোদিন যেতে লাগলো, আমাদের প্রেম ততো জমতে লাগলো। খুনসুটিগুলো বাড়তে লাগলো।
ওর গান শোনার খুব ইচ্ছে। কিন্তু আমি গান গাইতে পারি না। কিন্তু আবদারের কারণে লজ্জা ছেড়ে রাত-বিরাতে আমাকে হেঁড়ে গলায় গান ধরতে হতো। কষ্টের গান হলে চলবে না। রোমান্টিক গান হতে হবে। চলতে থাকলো সঙ্গীত চর্চা।
কিন্তু খালি গলায় গান গাইতে আর কতোদিন ভালো লাগে, বলুন? আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ বয়সে গিটার শেখা শুরু করলাম। সারপ্রাইজ দেবো ওকে।

একটা পূর্ণিমার দিন ঠিক করলাম। জমানো টাকা দিয়ে গিটার কিনে স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখে বাসায় ঢুকলাম। বললাম, চা বানাও তো। বানিয়ে ছাদে নিয়ে যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। একসাথে জোস্না দেখবো আর দুইজনে চা খাবো।
ও মহাউৎসাহ নিয়ে চা বানিয়ে ছাদে গেলো।

মিনিট দশেক পর, আমি গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলতে তুলতে ছাদে উঠলাম।
গান ধরলাম,
'সোনা দিয়া বান্ধাইয়াছি ঘর,
ও মন রে...
ঘুণে করলো জরজর,
হায় মন রে...'

পূর্ণিমার আলো দেখেছেন না? কেমন একটা স্বর্গীয় ভাব থাকে না? সেই আলো ওর মুখটায় পড়ে এতো অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো! আমার বুকে হাহাকার করে উঠলো, কখনো যদি এই সুন্দরকে আমার হারাতে হয়, আমি পাগল হয়ে যাবো।

ওয় পূর্ণিমার আলোতে ও দৌড়ে এসে আমার বুকে মাথা রাখলো।

এই ছিল আমাদের ভালোবাসা। আমার কবিতা।

একদিন আমাকে আফসোস করে বললো, 'জানো? কেউ কখনো আমাকে চিঠি লেখে নি। তোমাকে যদি কখনো দুরে যেতে হয়, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবে। ঠিক আছে? আমরা চিঠিতে যোগাযোগ করবো।'
কী পাগলামি টাইপ কথাবার্তা! চিঠি লেখার যুগ কী আছে এখনো? আর আমার তো ওকে ছেড়ে দুরে যাবার কোনরকম ইচ্ছাই নেই। অথচ আমার ইচ্ছে করছে ওকে চিঠি লিখতে। ইচ্ছেটা পুরণ করতে। কিন্তু কী উপায়?

পরদিন আমি ওষুধের দোকানে যেয়ে একটা প্যাড কিনলাম।
ভিতরে সাদা কাগজ।
খুব মসৃণ।
রাতের বেলাতেই একটা চিঠি লিখে টেবিলে রাখবো। সকাল বেলা উঠে চমকে যাবে ও। দারুণ না? মানুষকে চমকাতে কার না ভাল লাগে!
তবে এখানে ওর চমকানোর ভিতর থাকবে ভালোবাসার দৃষ্টি।
আর আমার চাই সেটাই।

সারারাত জেগে চিঠি লিখে, সকালে ওর ঘুম থেকে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষার পর ঘুম ঘুম চোখে যখন ওর চোখে আমার জন্যে চমকানো ভালোবাসা আর এক বিন্দু ভালোবাসার অশ্রু দেখলাম, তখন যে স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরী হলো, তার তুলনা নেই। এই অনুভূতির নাম 'লা জাওয়াব অনুভূতি।' এর জন্যে যেকোন পাগলামী করা যায়।

ঐদিন রাতের বেলা আমাকে একটা কলম গিফট দিলো ও।
কালো চিকন বডি।
প্লাস্টিকের তৈরী।
মসৃণ শরীর।
খাপটার ভিতরে চোখা নিব।
বললো, 'এই কলমটা দিয়ে তুমি আমাকে চিঠি লিখবে, ঠিক আছে?'

আমার কবিতা, কতো অদ্ভুতই না আমরা আর ভালোবাসা।

মাইন্ড রিডার আছে না? ও ঠিক ওরকম মন বুঝতো আমার।
একদিন,
বাসায় ফিরেছি আটটার দিকে। ফ্রেশ হয়ে দুইজন ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছি। তখন আমার মনে হলো, আজ রাতে যদি আমরা ফুচকা খেতে পারতাম!
চা শেষ হতে না হতেই ও বললো, 'এই... চলো না একটু বাইরে থেকে ফুচকা খেয়ে আসি? ফুচকা খেয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে তাই ফিরবো নি?'

এরকম অনেকবার ঘটেছে। আমার কিছু একটা মনে চাচ্ছে, কিন্তু মুখে বলি নি। অথচ ও ঠিক ওটা ধরে ফেলতো।
অদ্ভুত না?
আমাকে পুরোটা বুঝতো সে, আমার কবিতা।

বিয়ের তিন বছর পর।
ঠিক তিন বছর।
আমাদের এনিভার্সারির দিন বের হলাম আমরা।
ও নীল একটা শাড়ি পরেছে। গলায় নীল হার। কানে নীলার দুল।
ওর সেই সৌন্দর্য প্রকাশের ক্ষমতা আমাকে তিনি দেন নি।

দুজনে গেলাম প্রথমে ডাক্তারের চেম্বারে। আলট্রাসোনোগ্রাফি করাবো ওর। আমাদের পিচ্চিটা এখনি চলে এসেছে ওর ভিতরে। কবে পৃথিবীর আলোতে আসবে সে, সেটা জানতেই যাওয়া।
ডাক্তার জানালো, দুই থেকে আড়াই মাসের ভিতরেই আসছে সে।
সুখের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সেই সুখ নিয়ে এরপর গেলাম রেস্টুরেন্টে। খাওয়া দাওয়া তেমন হলো না। ও খুব সতর্ক। ভালোবাসার সর্বোচ্চ প্রতিদান হয়তো মেয়েরাই দিতে পারে। না দেখা এক ভালোবাসার জন্যে ও পছন্দের সব খাবার ছেড়ে দিয়েছে।
কতো অসাধারণ মায়ার টান!

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে টুকটাক কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে মাঝরাত হয়ে গেলো।
সারাদিনের ক্লান্ততায় আমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়েছি।
ও গেছে ফ্রেশ হতে।

চোখটা মাত্র বন্ধ করেছি। এর ভিতরেই কানে এলো ওর চিৎকার....
'হাসাআআআআআআন......'
বুকে ছুরির মতো বিধলো। আমি স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম।

রক্ত বের হচ্ছে। মেঝে ভেসে যাচ্ছে। ও মেঝেতে আধশোয়া।
পা পিছলে পড়ে গেছে।

আমি পাগলের মতো মাকে ডাকলাম। বাবাকে ডাকলাম।
কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল নিয়ে এম্বুলেনস ডাকলাম।
হাসপাতালে ছুটলাম ওকে নিয়ে। কোন মতে ধরে রেখেছি নিজেকে। ওটিতে নেয়া হলো ওকে।
আমরা..
আমি অস্থির পায়চারি করছি। গলার কাছে আটকে রেখেছি কান্না। হাত জোড় করে মিনতি করছি শুধু।

খোদা, ওর যেন কিছু না হয়। প্লিজ খোদা। তুমি খারাপ কিছু দিয়ো না আমাকে। ও যেন ঠিক থাকে। ওকে আমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়ো না। দয়া করো। হে খোদা!

রাত দুইটার দিকে,
ওটি থেকে ডাক্তার বেরিয়ে বললো, 'সরি...। আই কান্ট।'

আমার গলা থেকে কান্না নেমে যেতে শুরু করলো।
আমার মুঠো করা হাত খুলে গেলো।
প্রার্থনা থেমে গেলো।
কান্নার আওয়াজ ঠিকভাবে শুনছি না। শোনার অনুভূতি চলে যাচ্ছিলো।
অবশ হয়ে আসছিলো হাত পা।
মনে হচ্ছিলো, আমার রক্তচলাচল থেমে গেছে। মৃত্যু আমার এক আঙুল সামনে, এখনি গ্রাস করবে।

ওভাবে...
কোনভাবে হাত দিয়ে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়েছিলাম মিনিট দশেক। তারপর আমার মনে নেই কিছু।

মনে পড়লো সব, কাল বিকালে। জানি না, এর মাঝে কতো সময় কেটেছে!
তবে কাল সন্ধায় ফুফু এসেছিলো দেখতে আমাকে। তার আফসোস আর মায়ের কান্না দেখে বুঝলাম পাঁচ বছর স্মৃতিহারা আমি। প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে পাগল। অনেক নাকি চিকিৎসা করিয়েছে। কাজ হয় নি।

আমি চুপচাপ শুয়ে ছিলাম। স্মৃতি ফিরে আসার কথা জানাতে ইচ্ছে করলো না।

স্মৃতি ফিরে এসে কী লাভ হলো?
শুধু যন্ত্রণা বাড়ালো।

ওরা যাওয়ার পর কাল সারারাত আমার ঘর চেক করলাম। মাঝের পাঁচটা বছর অন্য স্মৃতিতে ছিলাম আমি। কিন্তু সেখানেও ছিল ও। নিয়মিত আমি চিঠি লিখেছি ও কে। তবে ডায়েরী পড়ে দেখলাম, আমি রাতে চিঠি লিখতে গেলে, আমি কলম খুজে পেতাম না কখনো। সকাল হলে নাকি পেতাম।

ঘটনা যে সত্য, তা আজ রাতেও টের পেয়েছি।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?
আসলেই কী পাগল আমি?

আমার ভাবনা সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
ওলট-পালট!
কেন আমার জীবনে শুদ্ধতম ভালোবাসা আসলো?
কেন হারিয়েই বা গেলো?
কেন খোদা ওকে কেড়ে নিলো?
এতোই খারাপ আমি?

আমার মস্তিষ্কের নিউরণে প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি হচ্ছে। কাল বিকেলের পর থেকেই এটা আমার সঙ্গী। আমার মানসিক ধ্বংসস্তুপ থেকে মুক্তি চাই আমি।
একমাত্র মুক্তি দিতে পারে কবিতা। শান্তি এনে দিতে পারে ও। ওকে পেলেই শান্তি আসবে আবার।
আমার কবিতা।

চিরকুটঃ এখন ভোর সাতটা। পাগল ঘুম পাড়াতে ঘুমের ওষুধ দরকার। ঘুমানো দরকার একটু।
লম্বা ঘুম।
টেবিলের ওপর রাখা ঘুমের ট্যাবলেট থেকে কয়েকটা খেয়ে নিলাম। আবার ওর সাথে থাকবো আমি।

এটা আমার পাগলামী, কাপুরুষতা নাকি ভালোবাসা?
জানার ইচ্ছে নেই আমার।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×