আলাস্কার তুষারাচ্ছন্ন গহীন জঙ্গল,যায়গাটা এত দুর্গম যে সেখানে পৌছাবার একমাত্র উপায় বুশপ্লেন।এই গহীন জঙ্গলেই নিজের রুগার মিনি-১৫ রাইফেলের স্কোপে চোখ রেখে অপেক্ষা করছে এক শিকারী।প্রানভয়ে ছুটে পালানো শিকারের হৃদপিণ্ড বরাবর রাইফেল তাক করে ট্রিগার টিপে দিল সে,অব্যার্থ নিশানা।বুলেট একদম শিকারের হৃদপিণ্ড ভেদ করে বেরিয়ে গেছে।শিকারি আস্তে আস্তে হেটে মাটিতে পড়ে থাকা শিকারের কাছে এসে দাড়ালো,শিকারের সাধারন নিয়ম মেনেই নিজের রিভলবার দিয়ে আরও দুবার গুলি করে নিশ্চিত করলো শিকারের মৃত্যু,যদিও তার প্রয়োজন ছিলো না কারন প্রথম গুলির ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যাবার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে আর গত দুই মাসের নরক যন্ত্রনার তুলনায় এই মৃত্যু তো কোন পুরষ্কারের চেয়ে কম না।
রবার্ট হ্যানসেন
রবার্ট ক্রিশ্চিয়ান হ্যানসেন একজন আমেরিকান সিরিয়াল কিলার।১৯৭১ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত ১৭-৩০ জন অল্পবয়স্কা নারীর অপহরন,ধর্ষন ও হত্যার দায়ে যাকে ৪৬১ বছরের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে।পেশায় বেকারি মালিক হবার কারনে মার্কিন মিডিয়ায় তাকে বুচার বেকার নাম দেয়া হয়।অল্পবয়স্ক মেয়েদের ভুলিয়ে বা অপহরন করে আটকে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে ধর্ষন শেষে তাদের ছেড়ে দিত আলাস্কার গহীন জঙ্গলে,প্রানভয়ে এসব মেয়েরা পালাতে শুরু করলে দূর থেকে হান্টিং রাইফেল দিয়ে হরিন বা ভাল্লুক শিকারের স্টাইলে হত্যা করা ছিলো তার সিগনেচার স্টাইল।আর ভৌগলিক দুর্গমতার জন্যই তার অপকর্ম গুলোও সহজে মানুষের নজরে আসতো না,ধরা পরার আগে আলস্কার বিখ্যাত শিকারী,ধার্মিক,সফল বেকারী ব্যাবসায়ী এবং স্ত্রী পুত্র,কন্যা নিয়ে সুখী জীবন যাপন করা রবার্টকে সন্দেহ করার কোন কারনও কারো কাছে ছিলো না,এমনকি উপস্থিত বুদ্ধির জোড়ে রবার্টের হাত থেকে বেচে যাওয়া ১৭ বছর বয়সী সিন্ডি পলসন পুলিশের কাছে তার নামে অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা বিশ্বাস করতে অস্বীকৃতি জানায়।কিন্তু সিন্ডির ঘটনার আগে পরে পুলিশ কমপক্ষে পাচটি লাশ উদ্ধার করে যেগুলোর কিলিং প্যাটার্ন একই হওয়ার পুলিশ সিরিয়াল কিলিং কেস হিসেবে তদন্ত শুরু করে।তবে জাত শিকারী রবার্টকে আইনের আওতায় আনা সহজ হয় নি আলাস্কান স্টেট ট্রুপারের সদস্য নাছোড়বান্দা ডিটেক্টিভ গ্লেন ফ্লথ এর ঐকান্তিক চেষ্টা ও সিরিয়াল কিলিং ইনভেস্টিগেশন জগতের আইন্সটাইন,জন এডওয়ার্ড ডগলাস এর সহযোগীতায় ১৯৮৩ সালে তাকে আটক করা সম্ভব হয়।
রবার্টের শিকার হতভাগ্য নারীরা
টুইস্টেড মাইন্ড অফ রবার্ট হ্যানসেন
সিরিয়াল কিলারদের কতগুলো কমন বৈশিষ্ট হচ্ছে যৌন ফ্যান্টাসি থেকে উৎপন্ন সহিংসতা,শারীরিক অক্ষমতা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতা এমনকি সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষনায় সিরিয়াল কিলারদের বিশেষ ধরনের জেনেটিক মিউটেশন কারনে সৃষ্ট ডিসঅর্ডার কথাও উঠে এসেছে।রবার্ট হ্যানসেন এর ভেতর এর সবগুলোরই সন্নিবেশ ঘটেছে,অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেয়া রবার্ট শৈশব,কৈশরে হাল্কা শারীরিক গঠন ও তোতলামীর কারনে স্কুলে বুলিয়িং এর শিকার ছিলো যা তার মনোজগতে প্রভাব ফেলে।এছাড়াও যৌবনে বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের কাছ থেকে বারবার প্রেমে প্রত্যাক্ষাত হওয়ায় তাদের উপর প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছাও তার মনের ভিতরে যেকে বসে তার।আর ধার্মিক হবার কারনে পতিতাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা পোষন করতো রবার্ট তার হত্যাকান্ডের শিকার সর্বশেষ কমপক্ষে দশজন নারীই ছিলো পতিতা। এছাড়াও সে বাইপোলার ডিসওর্ডার নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত এছাড়াও স্কিজোফ্রেনিয়া নামক রোগের লক্ষনও তার ভেতর ছিলো।রবার্ট হ্যানসেন এর বুচার বেকার এ রুপান্তরিত হবার প্রক্রিয়াটা টিপিক্যাল সিরিয়াল কিলারদের সুত্র মতেই হয়েছে,রবার্ট হ্যানসেন আমেরিকান নৌবাহিনীর মেরিন কর্পস এর সৈন্য ছিলো সেখান থেকে ডিসওর্ডারলী কন্ডাক্ট এর জন্য তাকে বের করে দেয়া হয়,এছাড়াও ছিচকে চুরি,আর্সন(যার জন্য সে জেল খেটেছে),সুন্দরী মেয়েদের স্টক করে ধর্ষন,তবে তার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া হত্যাকান্ড গুলো শুরু হয়েছে তার বিয়ে সন্তান লাভ ব্যাবসায়ী হিসেবে সফলতা তথা সমাজে জেন্টেলম্যান হিসেবে পরিচিতি আসার পর।
রবার্ট হ্যানসেনএর জীবনী নিয়ে হলিউড পরিচালক স্কট ওয়াকার নির্মান করেছেন ফ্রোজেন গ্রাউন্ড মুভিটি যা ২০১৩ সালে মুক্তি পেয়েছে।মুভিতে গোয়েন্দা গ্লেন ফ্লথ এর চরিত্রে নিকোলাস কেজ আর রবার্ট হ্যানসেন এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমার অত্যন্ত প্রীয় অভিনেতা জন কুসাক,তার শিকার দৃশ্য গুলো দেখলে শিউরে উঠবেন সেটা একদম গ্যারান্টিড।মুভিটা ক্রাইম থ্রীলার জনরার অন্যতম সেরা মুভি।আগ্রহীরা মুভিটা দেখে ফেলতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০০