somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলার,জেফ্রি ডাহমার

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মে ২৭,১৯৯১।মিলওয়াকি ওয়িসকনসিন্স,সান্ড্রা স্মিথ নামের এক ভদ্রমহিলা পুলিশে ফোন করে জানালেন তার বাসার সামনের রাস্তায় এক এশিয়ান কিশোর নগ্ন হয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করছে।মিনিট দশেক পরে যখন পুলিশ এসে পৌছালো তখন কিশোরের পাশে বেশ ভিড় জমে গেছ পাশের দোকানে কাজ করা এক মেয়ে তো কিশোরের গায়ে একটা কম্বলও চাপিয়ে দিয়েছে,আর কিশোরের ভাব ভঙ্গীতে মনে হচ্ছে সে একদম বেহেড মাতাল।পুলিশ তাকে হাসপাতাল নাকি জেল কোথায় নেবে এই নিয়ে দেনোমনো করছে তখনই ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো এক যুবক, দাবি করলো এই কিশোরের বয়স ১৯ এবং সে তার সমকামী বয়ফ্রেন্ড যে কিনা প্রচুর মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গেছে।একদম গরীব আফ্রিকান আমেরিকানদের এই এলাকায় এরকম সুদর্শন ঝাড়া ছয়ফুট লম্বা শ্বেতাঙ্গ তরুনের কথা পুলিশ কোন যুক্তিতে অবিশ্বাস করবে।তাই ঐ পুলিশ দুজনই কিশোরকে ধরাধরি করে যুবকের ফ্লাটে পৌছে দিল।ঐ পুলিশরা যেটা জানে না সেটা হচ্ছে কিশোরের আসল বয়স মাত্র ১৪ বছর এবং তার মাথায় লবোটমি নামক একধরনের অস্ত্রপচার করে মস্তিষ্কে এ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে ঐ যুবক যার ফলে সে কথা বলার এবং স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছে আর পুলিশের গাড়ি ঐ ফ্লাটের সীমানা ছাড়ার আগেই কিশোরকে হত্যা করা হবে।


জেফ্রি ডাহমার
জেফ্রি ডাহমার একজন আমেরিকান সিরিয়াল কিলার,যে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্য ন্ত ১৭জন সমকামী পুরুষ এবং কিশোরকে হত্যা করেছে।সমকামী এই সিরিয়াল কিলারকে হত্যা,ধর্ষন শিশু নির্যাতন ও ক্যানিবালিজম এর দায়ে ৯০০ বছরের জেল হয়েছে।সর্বশেষ প্রায় দশ জন ভিক্টিমকে রান্না করে খেয়ে ফেলার কারনে মার্কিন মিডিয়ায় তাকে মিলওয়াকি ক্যানিবাল নাম দেয়া হয়।


জেফ্রির হতভাগ্য শিকাররা
টুইস্টেড মাইন্ড অফ জেফ্রি ডাহমার
টুইস্টেড মাইন্ড শব্দটা দিয়ে এমন চিন্তাধারা কে বোঝায় যার কোন কুল কিনারা পাওয়া সম্ভব না,আর এই শব্দের সবচেয়ে সার্থক উদাহরন বোধহয় জেফ্রি।জেফ্রি পুরো মানব সমাজের কাছেই একটা বিরাট রহস্য।জেফ্রির মনোজগৎ একটা ব্লাক হোলের মত যার শুরু আছে শেষ নেই ঢোকা যায় কিন্তু বের হবার রাস্তা নেই জেফ্রি কে জেরা করা পুলিশ সদস্যরা তাকে বর্ননা করেছে “As close to raw evil as the world had ever known”


জেফ্রির শিকার ১৪বছর বয়সী লাওস বংশোদ্ভূত কোনেরাক সিন্থাসমফোন
সিরিয়াল কিলারদের কতগুলো কমন বৈশিষ্ট থাকে যার ভেতর অন্যতম প্রধান হচ্ছে কষ্টকর ছোটবেলা,কিন্তু জেফ্রির মত আনন্দময় শৈশব আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা হয়তো কল্পনাও করতে পারে না।উচ্চশিক্ষিত সুদর্শন বাবা,মা এর সন্তান জেফ্রির ছোটবেলা আর দশটা সাধারন বাচ্চার মতই কেটেছে তবে মৃত পশুপাখির প্রতি তার একধরনের অসুস্থ কৌতুহল ছিলো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা আরো বাড়তে থাকে সেটা তার বাবা লিওনেল ডাহমারের নযর এড়ায় নি,তাই নিযের অত্যন্ত ব্যাস্ত কর্মজীবন থেকে সময় বের করেও তিনি জেফ্রিকে সময় দিতেন,পৃথিবীতে সম্ভবত জেফ্রির বাবাই একমাত্র মানুষ যাকে জেফ্রি মানুষ হিসেবে গন্য করতো


হাইস্কুল গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে জেফ্রি এবং তার বাবা
শারিরিক অক্ষমতা সিরিয়াল কিলারদের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট,কিন্তু জেফ্রির কোন শারিরিক অক্ষমতা ছিলো না,পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র জেফ্রির আইকিউ লেভেল ১৪৫ অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে জেফ্রি একজন জিনিয়াস।
জেফ্রি ডাহমার সমকামী ছিলো।ওয়িসকনসিন্স এর গে বার এবং গে বাথসেন্টারগুলোতে তাকে নিয়মিতই দেখা যেত,সুদর্শন জেফ্রির সমকামী সঙ্গী পেতে তেমন কোন অসুবিধা হতো না,তবে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক তার মন ভরাতে পারতো না,সঙ্গীর উপর সম্পুর্ন কর্তৃত্ব(কমপ্লিট ডমিনেন্স/রেপ ফ্যান্টাসি)এর মাদ্ধমেই সে তৃপ্তি পেত তাই জেফ্রি তাদের ড্রাগস দিয়ে অচেতন করে নিত নিজের বিকৃত ইচ্ছা পুরন করার আগে।তবে ড্রাগস ব্যাবহারের করার ফলে কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে যার যেরে জেফ্রিকে মিলওয়াকি এলাকার গে বার এবং গে বাথসেন্টার গুলো থেকে বহিষ্কার করা হয়।তবে শাস্তি জেফ্রি কে থামাতে পারে নি বরং তার বিকৃত লালসা এবার তাকে শিশুদের দিকেও নিয়ে যায়,সর্বশেষ ধরা পরার সময়ও জেফ্রি চাইল্ড মলেস্টেশনের কেসে প্যারোলে ছিলো।এমনকি জেফ্রি মার্কিন সেনাবাহীনিতে থাকা অবস্থায়ও তার ইউনিটের বেশ কয়েকজন সৈন্যকে ধর্ষন করেছে।
নরমাংস খাওয়ায় জেফ্রি কে মার্কিন মিডিয়ায় মিলওয়াকি ক্যানিবাল নাম দেয়া হয়ছিলো।জিজ্ঞাসাবাদের সময় জেফ্রি জানিয়েছে নরমাংস খাওয়ার মাদ্ধমে সে আসলে তার শিকারদের তার নিজের অংশ করে নিত,এটা তার এক ধরনের রিচুয়াল ছিলো।এছাড়াও মানুষ খুন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় জেফ্রি সেক্স জম্বি বানানোর চেষ্টা চালায়,এটা সে করতো তার শিকারদের অচেতন করার পর খুলি ফুটো করে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবে হাইড্রক্লোরিক এ্যাসিড এবং গরম পানি ঢেলে,বলা বাহুল্য এই চেষ্টা সফল হয় নি এই প্রসেসের মদ্ধে দিয়ে যাওয়া মানুষগুলো প্রায় তাৎক্ষনিকই মারা যেত।
জেফ্রির আগে পরে দুনিয়ায় অনেক মানুষরূপী দানব এসেছে,তবে জেফ্রির মত মানব জীবনকে এত তুচ্ছ বোধহয় স্বয়ং ইবলিশ শয়তানও ভাবে নি।আগেই বলেছি জেফ্রির মনোজগৎ ব্যাক্ষা করা সম্ভব না আর তার এই টুইস্টেড মাইন্ডের সর্বশেষ ছাপ সে রেখে যায় নিজের মৃত্যুর মাদ্ধমে ক্রিস্টোফার স্কার্ভার নামে এক কয়েদী একটা ডাম্বেল বার দিয়ে পিটিয়ে জেফ্রিকে হত্যা করে,ছয় ফুট এক ইঞ্চি লম্বা স্বাস্থ্যবান,এক্স আর্মিম্যান জেফ্রির শরীরে একটাও ডিফেন্সিভ স্ট্রাগলের দাগ ছিলো না।



জেফ্রি কে নিয়ে হলিউডের পরিচালক মার্ক মেয়ার্স নির্মান করেছে মাই ফ্রেন্ড ডাহমার চলচিত্রটি যেটা ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছে এই মুভির গল্প লিখেছেন জেফ্রির সবচেয়ে কাছের বাল্যবন্ধু কার্টুনিস্ট জন ব্যাকডার্ফ।মুভিটা আমার ভালো লাগে নি।জেফ্রিডাহমার সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ না থাকলে কেউ এই মুভি দেখে আনন্দ পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×