somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বিশেষজ্ঞ রওশন আলি, একটি রহিম আফরোজ ব্যাটারী, কিছু তেল এবং একজন আম জনতার গল্প

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত শুক্রবার থেকে বড়ই আজাবের মধ্যে ছিলাম। জ্বর একবার ১০৩ তো ১০৪ ওঠানামা করে আর সাথে প্রচন্ড রকমের ঘাড় ও মাথাব্যথা। আমি সাধারন ভাইরাল ফিভার মনে করে সেইরকম ট্রিটমেন্ট নিচ্ছিলাম। কিন্তু তিন দিনেও জ্বর তো কমলই না, উল্টো প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া শুরু হল। আমরা প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার বোন মেডিসিনের উপরে অনেকদিন ধরে প্র‍্যাকটিস করে, সে বলল ইমিডিয়েটলি ইউরিন ও ব্লাড টেস্ট করাতে, আর সাথে মেডিসিন স্পেশালিস্ট কে দেখাতে, কারন সে সন্দেহ করছিল এটা হয় ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র‍্যাক ইনফেকশন) অথবা হেমোরেজিক ডেঙ্গু।

আমার তখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। ১০৪ ডিগ্রী জ্বর, বমি আর ব্যথা। সুমি পপুলার ডায়াগন্সটিক সেন্টারের উত্তরা শাখায় মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডক্টর রওশন আলীর কাছে সিরিয়াল নিল, সিরিয়াল নম্বর পেলাম ২৬। আমি, সুমি, রানা, নিলাভ আর পল্লব ওয়েটিং রুমে বসে তীর্থের কাকের মত সেকেন্ড গুনছি যে কখন আমাদের ডাক পড়ে। আমি কোনরকমে বমি আটকাচ্ছি বসে থেকে। একসময় ডাক পড়ল - যাক বাবা, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম আমি, আর অন্তত বসে থাকা লাগবে না।

আমি আর ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম। মধ্যবয়স্ক চশমা পরা একজন মানুষ বসে আছেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন নাম কি?
আমি: হাসিন হায়দার
ডাক্তার: বয়স কত
আমি: ৩২
ডাক্তার: ঠিক আছে বলেন আপনার সমস্যা কি

আমি বলা শুরু করলাম, ২৫ সেকেন্ডও মনে হয় যায়নি এরপরে, হঠাৎ ওনার মোবাইল বেজে উঠল। ডাক্তার মোবাইল এর নম্বর দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন "স্যরি, একটু রিসিভ করে নেই"। আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম "অবশ্যই"

এবার শুরু হল ডাক্তার সাহেবের বিশাল গল্প। তার বন্ধু তাঁকে ফোন করেছেন কোন পেট্রোল পাম্প থেকে পেট্রোল নেয়া গাড়ির জন্য সাশ্রয়ী সেটা জানার জন্য। ডাক্তার সাহেব বিজ্ঞের মত এক এক পেট্রোল পাম্পের অকটেনের সম্বন্ধে মন্তব্য করতে লাগলেন "আরে না, নিকুঞ্জের পাম্প থেকে নিও না, ওরা তেলে কি দেয় কে জানে, আমার গাড়ি বেশি চলে না....হ্যাঁ হ্যাঁ, টঙ্গীর টাও ভাল..."

আমি বসে ঠকঠক করে কাঁপছি ঠিক ওনার পাশে, ওনার আর তেল গবেষনা শেষ হয় না। প্রায় নয় দশ মিনিট তিনি তেল নিয়ে আলোচনা করলেন, অবশেষে তেলের প্রসঙ্গ শেষ হল। আমি ভাবলাম, এবার বুঝি আমার কথা শুনবেন। কিন্তু ডাক্তার সাহেবকে বলতে শুনলাম "বন্ধু তুমি যখন ফোন করলা তখন তোমার কাছ থেকে একটা পরামর্শ নেই। বলত আমার রহিম আফরোজের ব্যাটারী ঠিক এক বছর পরপর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেন। আগের বার ওয়ারেন্টি ছিল তাই ওরা বদলায় দিছে, এবার তো নাই, কি হবে?"

আলোচনা চলতেই আছে। আমি ভাবলাম বের হয়ে যাই নাকি। কিন্তু বের হলে আমারই লস, আমার তো চিকিৎসা টা দরকার।" কিন্তু ডাক্তার সাহেবের ব্যাটারি নিয়ে আলোচনা আর শেষ হয় না। কোন ব্র‍্যান্ড কিনলে দাম কম হবে, কার মামার খালা শ্বশুরের কাছে গেলে ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে ইত্যাদি বিতং চলতে থাকল। আমি শুধু ছটফট করি পাশে বসে।

অবশেষে প্রায় পনের বিশ মিনিট পরে আলোচনা শেষ হল। ওনার অ্যাসিসট্যান্ট এসে মনে করা দিল নামাজ পড়ার সময় হয়েছে। উনি ২০ সেকেন্ডে আমার কথা শুনলেন। কয়েকটা টেস্ট লিখলেন আর হসপিটালের নাম লিখে বললেন এখানে ভর্তি হন, আমি পরশু দিন গিয়ে দেখব।

আমি একবার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, ডাক্তার সাহেব, আমার প্রবেলম টা আপনি ঠিক মত শুনেছেন তো? উনি বললেন হ্যা শুনেছি। বলে আমার কাছ থেকে ফি টা নিয়ে ঝড়ে বেগে নামাজ পড়তে বের হয়ে গেলেন।

আমি মনে মনে বললাম "শালা চামারের বাচ্চা"।

পরে আমরা আরো আধঘন্টা ওয়েট করে আরেকজন মেডিসিন স্পেশালিস্ট কে দেখিয়ে হসপিটালাইজড হলাম সেই রাত্রেই। আল্লাহকে ধন্যবাদ যে এটা ডেঙ্গু ছিল না, ছিল ইউটিআই। মোটামুটি সহজেই বেঁচে গেলাম এযাত্রা। তিনদিন হসপিটালে থাকার পর আজকে দুপুর ২ টায় ছাড়া পেলাম।

জনাব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোহাম্মাদ রওশন আলী সাহেব, আপনি যদি কখনো এই ব্লগ পড়ে থাকেন
আর আমাকে চিনবার খায়েশ হয়, তাহলে আপনার সুবিধার্থে জানিয়ে রাখলাম যে আমি পেশেন্ট নম্বর ২৬, সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ বিকাল ৪:৪৫ এ আপনার সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল :)
২৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×