somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বদলে গেছে আমার প্রিয় ঈদ

১০ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ যখন ঈদ আসে আমি কেন জানি তেমন উপভোগ করতে পারি না। শুধু মনে পরে অতীতের ঈদগুলোর কথা। কাল রাতে ভাবতে বসলাম কি পরিবর্তন ঘটেছে ঈদের আনন্দ উদযাপনে? অনেক ভেবে যা পেলাম তা শুধুই কি সময়ের দোষ? নাকি বয়সের? হয়তো বা পরিবর্তনের!

১। রমজানেঃ আগে রমজানের পুরোটা কাটতো মহা খুশীতে, কারণ তখন সারা রমজান স্কুল বন্ধ, অফুরন্ত ছুটি। আর এখন চাঁদরাত পর্যন্ত অফিসের ব্যাস্ততা। প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যামে বসে এই ভাবা যে ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছতে পারব কি না?

২। ঈদের কেনাকাটাঃ আগে সারাক্ষণ ব্যাকুল থাকতাম কবে গার্ডিয়ানরা মার্কেটে শপিং করতে নিয়ে যাবে? কি জামা কিনব? সেই নতুন কেনা জামা যেন কেউ না দেখে ফেলে। আর এখন সারা রমজান এই টেনশনে কাটে কবে বেতন বোনাস দিবে? কার কার জন্য কি কি কিনব? বাজেটে হবে কিনা? না হলে কার কার কাছ থেকে টাকা ধার করব? কে কোনটা পছন্দ করবে?

৩। ঈদের চাঁদঃ ২৯ রোজার সকাল থেকে অস্থির থাকতাম আজ চাঁদ উঠবে কি? মাগরিবের আযান দেয়ার সাথে সাথে দৌড়ে ছাদে চলে যেতাম চাঁদ খুজতে। চাঁদ উঠলে দৌড়ে এসে বিটিভি ছাড়তাম ফুল ভলিউমে, নজরুলের ঐতিহাসিক ঈদের গান শোনার জন্য। আর এখন ২৯ রোযা সকাল থেকে কাটে কেণাকাটা, বাজার-সদাই নানা ব্যাস্ততায়। মাগরিবের আযানের পরে টেলিভিশন ছেড়ে সবকয়টা চ্যানেলের স্ক্রলে ছোখ রাখি, ঈদের চাঁদের খবরের জন্য।

৪। চাঁদরাতঃ চাঁদরাতের মজাই ছিল অন্যরকম। আসলের চেয়ে সুদের মিষ্টি বেশী বলেই হয়তো চাঁদরাতে এতো ভালোলাগা মিশে থাকতো। চাঁদরাতে চাঁদ উঠার পর পাড়ার ছেলেরা পটকা ফূটাতো, দল বেঁধে আড্ডা দেয়া, ফুল ভলিউমে গাণ বাজানো, মেহেদী-সোন্দা-কাঁচা হলুদ বাটা নিয়ে মায়েদের ব্যস্ততার মাঝে ঘুরঘুর করা...... আহা সেই দিনগুলি কই? এখন চাঁদরাতে মোবাইলে এসএমএস করা, ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া, ব্লগে ঢু মারা এইসব করে কেটে যায় চাঁদরাত।

৫। ঈদের সকালঃ আগে খুব ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠতাম, এই লোভে যে ঈদের দিনটা খুব বড় হবে। ঘুম থেকে উঠে এই সাতসকালে গোসল করাটা একটু অন্যরকম লাগতো আমার কাছে; কেননা সেই বয়সে এতো ভোর বেলা ঈদের দিন ছাড়া অন্য কোনোদিন গোসল করা হত না। আমাদের এলাকায় সকাল ৮টার আগে কোন মসজিদে ঈদের জামাত হত না। আমার মনে হত আরও সকালে কেন ঈদের নামাজ হয় না। আর এখন? চাঁদরাতে মধ্যরাত পার করে ঘুমুতে যাওয়ার কল্যাণে কাঁক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠা হয় না। আগের রাতেই খবর দেখে জেনে নেই বেলা ৯টা/১০টায় কোথায় কোথায় ঈদের জামাত হবে!

৬। ঈদের খাবারঃ আগে সকালে নামাজ পরে এসেই প্রথমে হামলে পড়তাম সেমাই নিয়ে, তারপর অস্থির থাকতাম কখন খাবো কোরমা-পোলাও। সারাদিন যত আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যেতাম সবখানেই খাবার ব্যাপারে কোনই আপত্তি থাকতো না। কিভাবে যেন সব খাবার-দাবার হজম হয়ে যেত। আর এখন একবাটি
সেমাই খাবার পর দ্বিতীয় বাটি খেতে পারি না। পাকস্থলী সাপোর্ট করে না; কোথায় যেন গণ্ডগোল। পোলাও-কোরমা’র স্বাদই শুধু পাই, সেই তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া হয় না। ও হ্যাঁ, সব খাওয়াদাওয়া কিন্তু চলে ইনো, এন্টাসিড, অমিপ্রাজলের সাপোর্টে।

৭। ঈদের সালামীঃ আগে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই মনে মনে হিসেব কষতাম কার কার বাসায় যাবো কে কত ঈদি দিবে। সেই ঈদি দিয়ে কি কি করব তারও একটা হিসাব হয়ে যেত ছোট্ট বেলার পাগল মনে। পাগলের সুখ মনে মনে ... ... .. .। আর এখন ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে ব্যাংকার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি নতুন নোটের খোঁজে, নোটপ্যাডে খসড়া হিসেব করি কাকে কত ঈদ সেলামী দিতে হবে।

৮। ঈদ বিনোদনঃ আগে ঈদে দুপুরের মধ্যে সব আত্মীয়ের বাসায় বেড়ানো শেষ করে বিকেলটা বরাদ্দ রাখতাম ঈদের মেলা অথবা শিশুপার্কে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। সেলামীর টাকা দিয়ে কি কি কিনব, কি খাবো এই চিন্তায় থাকতাম বিভোর। আর এখন ঈদের প্রধান বিনোদন হল ঘুমিয়ে কাটানো, ব্লগ/ফেবুতে ঘোরাঘুরি করা আর টেলিভিশনের রিমোট চেপে চ্যানেলে চ্যানেলে ঘুরে বেড়ানো।

৯। ঈদ টেলিভিশন অনুষ্ঠানমালাঃ আগে সবার ঈদ মানে ছিল চাঁদরাতে আগের ঈদের আনন্দ মেলা দেখা, ঈদের রাতে আমজাদ হোসেন/হুমায়ুন আহমেদের রচনায় ঈদের বিশেষ নাটক, আর ঈদের বিশেষ ম্যাগাজিন আনন্দমেলা। ও তরুণদের প্রিয় আরেকটি অনুষ্ঠান ছিল ঈদের বিশেষ ব্যান্ডশো; যা ছিল নামকরা ৮/১০টি ব্যান্ডের একটি করে ধারণকৃত গানের সংকলন। আর এখন ঈদে ৫-৮ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠামালা প্রচার করছে সরকারী-বেসরকারি প্রায় ২০টি টিভি চ্যানেল। কি দেখব? কোনটা দেখব? কখন দেখব? ভাবতে ভাবতে সময় পার। বিজ্ঞাপনের অত্যাচারের কথা নাই বা বললাম।

১০। ঈদে বেড়াতে যাওয়াঃ আগে ঈদে বেড়াতে যেতাম কোন এক আত্মীয়/বন্ধু’র গ্রামের বাড়ীতে। এর বেশি হলে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া। আর এখন সারা দেশের অসংখ্য পর্যটন স্পটের সাথে যুক্ত হয়েছে কলকাতা, দারজিলিং, নেপাল, ভুটান, ব্যাংকক, পাতায়া, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া। ঈদ হলিডে প্যাকেজ নিয়ে হাজির অসংখ্য ট্যুরিজম কোম্পানি।

এইসব বদলে যাওয়া নিয়ে কাটে আজকের ঈদ। সময় বদলেছে, নাকি আমি বদলে গেছি তা জানি না। শুধু জানি বদলে গেছে আমার প্রিয় ঈদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৩
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টরন্টোর চিঠি - "অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!"

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭


গত বছর গ্রীষ্মের শুরুতে টরন্টোয় বসবাসরত আমার জন্মস্থান জেলা-শহর থেকে আগত অভিবাসীদের একটি পিকনিকে গিয়েছিলাম। ৫০–৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সকলে ছিলেন নারী। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্টারের কাচ্চি বিরিয়ানী

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩১



শেষ কবে স্টারের কাচ্চি খেয়েছিলাম আমার মনে নেই। আগে একটা সময় ছিল যখন কাচ্চির নাম নিলে যে নামগুলো সবার প্রথমে সামনে আসতো তার ভেতরে এই স্টারের নাম থাকতো। এখনকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ হৃদয়ের একুল ওকুল

লিখেছেন ইসিয়াক, ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৪১

এত এত বছর পর রাজনের আবার খোঁজ পাওয়া যাবে এ বিষয়টা  তমার কাছে সত্যি অবিশ্বাস্য লাগছিল।আশা তো কবেই ছেড়ে দিয়েছিল।পঞ্চাশ বছর। দীর্ঘ সময় । দীপক যখন ম্যাসেঞ্জারে মেসেজে খবরটা জানালো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিনিক চা

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৭ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:২৯



একটা গান আছে- পিনিক পিনিক লাগে।
ফালতু গান। পচা গান। পিনিক নামে একটা বাংলা সিনেমাও হয়েছে। আসলে 'পিনিক' শব্দটির আভিধানিক কোনো অর্থ নেই। সাধারণত নেশাদ্রব্য সেবন করার ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নটীদের আড্ডাখানা ছিল সংসদ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪


বাজারে যত নটী আছে হাসিনা সবগুলোকে একছাদের নিচে দক্ষতার সংগে জমায়েত করতে পেরেছিল। সেই নটীদের ছিলনা কোন যোগ্যতা কিংবা না ছিল কোন রাজনৈতিক ব্যকগ্রাউন্ড; তারপরও নটীরা সংসদে যেতে পেরেছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×