এক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, যার যাত্রা শুরু হয়েছে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে। পাকিস্তান আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে বাঙ্গালী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবল বৈষম্য ছিল। সাধারন সৈনিক কিছুটা নিয়োগ করলেও অফিসার ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। সেই কয়েকজন অফিসার এবং সৈনিক/এন সি ও/ জে সি ওর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কিছু বেসামরিক ব্যক্তিদেরকেও সামরিক বাহিনীতে আত্মিকরণ করা হয়েছে । তবে বর্তমানে দুঃখ লাগে এই কারনে যে, মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর( যাদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি) অবদান কে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। আপনারা খবর নিয়ে দেখুন,সকল মুক্তিযোদ্ধারাই কোন না কোন সামরিক সদস্যর কমান্ডে যুদ্ধ করেছেন। ভাই আপনার হাতে একটি অস্ত্র ধরিয়ে দিলাম আর আপনি সাথে সাথে গুলি করে আপনার শত্রুকে হত্যা করবেন, এই মানসিকতা কিন্তু এত সহজে তৈরি হয়না। তাহলে কোন ফোর্সকেই কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া লাগতোনা, হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিলেই হত।
দুই
সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে অনেকেরই ধারনা তারা স্বল্প শিক্ষিত । এই ধারনাটা একেবারেই অমূলক । প্রথমত, সেনাবাহিনীতে মোটামুটি দুই ধরনের কমিশন্ড অফিসার রয়েছেন; লং কমিশন্ড(দীর্ঘ মেয়াদি) এবং শর্ট কমিশন্ড(স্বল্প মেয়াদি) অফিসার। লং কমিশন্ড অফিসাররা এইচ এস সি পরীক্ষার পরে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান করেন। দুই বছর সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে বি এস সি/ বি এ পড়াশোনা করেন এবং তৃতীয় বছর শেষে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। আবার উক্ত অফিসারদের মধ্যে যারা বিভিন্ন টেকনিক্যাল কোরে যান(যেমন ই এম ই, ইঞ্জিনিয়ার্স, সিগন্যালস ইত্যাদি) তাদেরকে পরবর্তীতে বুয়েট বা এম আই এস টি তে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে হয়। আর এয়ার ফোর্স,নেভীর অফিসারদের বুয়েট বা এম আই এস টিতে পড়া আবশ্যিক; যেহেতু, তাদের পেশাটাই টেকনিক্যাল। আর যারা শর্ট কমিশন্ড অফিসার তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহনের পর সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদেন এবং তারা সরাসরি লেঃ/ক্যাপ্টেন পদবীতে যোগ দেন।
আপনাদের একটি প্রশ্ন করি; একজন চিকিৎসক কি এম বি বি এস পাশ করার পর মেডিক্যাল রিলেটেড কোর্স করবেন নাকি তিনি বিজনেস বা ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়বেন ? আপনাদের উত্তর অবশ্যই হবে ‘মেডিক্যাল রিলেটেড’, তাহলে বলুন একজন সামরিক অফিসার কেন সামরিক বিষয়ে কোর্স না করে অন্যান্য বিষয়ে পন্ডিত হবেন ? আমাদের চাকুরীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা এবং কোর্স করতে হয় দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠানে। এবং আমাদের বিভিন্ন কোর্স আছে যা আন্তর্জাতিক মানের এবং সামরিক অফিসারদের পাশাপাশি অনেক বেসামরিক অফিসার যেমন পুলিশ অফিসার, সরকারী অফিসার তাতে অংশগ্রহণ করেন। সুতরাং আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে একজন সামরিক অফিসার মোটেই স্বল্প-শিক্ষিত নন ।
তিন
আমাদের আরেকটি ভুল ধারনা এই যে আমরা বিনামূল্যে খাচ্ছি, ফ্রি বাসায় থাকছি এবং বিনামূল্যে সরকারি গাড়ি ব্যাবহার করছি।
প্রথমেই খাওয়ার ব্যাপারে আসা যাক । সশস্ত্র বাহিনীতে একজন সৈনিক থেকে শুরু করে একজন জেনারেল সাহেব পর্যন্ত সবাই তার নিজের, স্ত্রীর এবং ১৮ বছরের নিচের সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট হারে রেশন(চাল,ডাল, আটা, তেল, চা,চিনি) পান । তবে এক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য হল সৈনিক থেকে জেসিও পর্যন্ত যারা ব্যারাকে থাকেন তারা নিজেদের রেশন বিনামূল্যে পান এবং তাদের পরিবারের রেশন ভর্তূকি মূল্যে ক্রয় করেন আর , অফিসাররা তাদের নিজের সহ পরিবারের সম্পূর্ন রেশনটাই ভর্তূকি মূল্যে ক্রয় করেন । আর যে সব সৈনিক /জেসিও ব্যারাকে থাকেন তারা তার নিজের খাবার(মাছ, মাংশ, শাকসব্জী) বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন আর যে সব সৈনিক /জেসিও তাদের পরিবার নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে থাকেন তাদের নিজের টাকায় বাজার করে খেতে হয়। অফিসাররা ব্যারাকে থাকেন না, অবিবাহিত অফিসাররা অফিসার্স মেসে থাকেন আর বিবাহিত অফিসাররা সরকারি বাসায় থাকেন। এবং তাদেরও সবকিছু বাজার করেই খেতে হয়। অবিবাহিত অফিসাররা মাস শেষে মেসে খাবারের বিল পরিশোধ করেন। উদাহরণ স্বরূপ আমার নিজের প্রতি মাসে গড়ে ৬-৭ হাজার টাকা মেস বিল পরিশোধ করতে হয়, যেখানে বাইরে ৬-৭ হাজার টাকায় একটা পরিবারের খাওয়ার খরচ হয়ে যায়।
একজন সরকারী অফিসার যদি সরকারি বাসস্থান না পান, সেক্ষেত্রে তিনি বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা পান। এটা বিবাহিত-অবিবাহিত সব অফিসারের জন্যই। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে শুধু বিবাহিত অফিসাররাই বাসা না পেলে বাড়ীভাড়া বাবদ ভাতা পান আর অবিবাহিত অফিসাররা যেহেতু মেসে থাকেন তারা কিছুই পাননা। মেসে কিন্তু এক রুমে দুই জন/তিন জন থাকতে হয়।
এবার আসি গাড়ীর ব্যাপারে । সোমবার ছাড়া সপ্তাহের যে কোন দিনে একজন অফিসার বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে যেমন, বাসা থেকে অফিস যাওয়া, বিভিন্ন সরকারী কাজে অন্যান্য সংস্থার অফিসে যাওয়া বা যে কোন সরকারী কাজে সরকারী গাড়ী(মিলিটারি জীপ) ব্যবহার করতে পারেন। আপনারা অনেক সময় বাইরে অফিসারদের পরিবারকে সরকারী গাড়ী ব্যবহার করতে দেখে ধারণা করেন এটা বোধহয় অন্যায্যভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আসল ঘটনা কিন্তু মোটেও সেটা নয়। একজন অফিসার( ২লেঃ থেকে লেঃ কর্ণেল পর্যন্ত) সপ্তাহে একদিন সরকারী গাড়ী নিজের ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারেন; তবে এজন্য তাকে ব্যাবহার অনুযায়ী (কিঃমিঃ হিসাবে) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হয়। তবে কর্ণেল এবং তদোর্দ্ধ পদবীর জন্য মিলিটারি জীপের পাশাপাশি একটি সেডান(এক্স করলা, জ্যারিস, মিতশুবিশি ল্যান্সার ইত্যাদি) ব্যাক্তিগত ব্যাবহারের জন্য পেয়ে থাকেন । বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ তাদের নিয়োগ অনুযায়ী জীপ(টয়োটা প্র্যাডো, নিশান)ইত্যাদি পেয়ে থাকেন(ব্রিগেডিয়ার এবং তদোর্দ্ধ পদবী)। তবে ব্যাক্তিগত কারনে গাড়ি ব্যবহার করলে তার জন্য অফিসারকে বিল পরিশোধ করতে হয়।
পাঠকগণ, আপনাদেরকে একটা কথা বলি, একজন মেজর পুলিশের একজন এস পির সমতুল্য পদবির। একজন এস পি কিন্তু সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সমমানের গাড়ি ব্যবহার করেন তার প্রশাসনিক এবং ব্যাক্তিগত কাজের জন্য। এটা তিনি তার পদাধিকারে লাভ করেন। এরপরও কি আপনারা একজন মেজর সাহেবের পরিবারকে বহনকারী গাড়ি দেখে উলটাপাল্টা ভাববেন? যেখানে সমমর্যাদা সম্পন্ন হয়েও একজন মেজর ব্যাবহার করছেন সামরিক নন-এসি ল্যান্ড রোভার জীপ( মূল্য-১৬০০০০০৳) আর একজন এস পি ব্যবহার করছেন পাজের, নিশান,হিল্যাক্স এর এসি জীপ সর্বোক্ষণের জন্য(মূল্য-৪০০০০০০-১০০০০০০০৳)।
চার
আপনাদের সশস্ত্র বাহিনীর পদবি এবং তাদের পদমর্যাদা সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তিনটি শ্রেনী রয়েছে, আর তা হল, সৈনিক, নন কমিশন্ড অফিসার(তৃতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা), জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার(দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা) এবং কমিশন্ড অফিসার(প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড কর্মকর্তা)। নিচে সশস্ত্র বাহিনীর পদ সমুহ দেয়া হল।
কমিশন্ড অফিসারদের পদবী সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী এই ক্রমে দেয়া হলঃ
১। ২ লেফটেন্যান্ট, পাইলট অফিসার, অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট
২। লেফটেন্যান্ট, ফ্লাইং অফিসার, সাব লেফটেন্যান্ট
৩।ক্যাপ্টেন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট, লেফটেন্যান্ট
৪। মেজর, স্কোয়াড্রন লিডার, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার
৫।লেফটেন্যান্ট কর্ণেল, উইং কমান্ডার, কমান্ডার
৬। কর্ণেল, গ্রুপ ক্যাপ্টেন, ক্যাপ্টেন
৭। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, এয়ার কমোডর, কমোডোর
৮। মেজর জেনারেল, এয়ার ভাইস মার্শাল, রিয়ার অ্যাডমিরাল
৯। লেফটেন্যান্ট জেনারেল, এয়ার মার্শাল, ভাইস অ্যাডমিরাল
১০। জেনারেল, এয়ার চিফ মার্শাল, অ্যাডমিরাল
১১।ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্যা এয়ার ফোর্স, অ্যাডমিরাল অব দ্যা ফ্লিট
এবার জানা যাক ‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স’ অনুযায়ী কার অবস্থান কোথায়।
‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স, বাংলাদেশ
১। প্রেসিডেন্ট
২। প্রধানমন্ত্রী
৩। স্পিকার
৪। প্রধান বিচারপতি, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট
৫। ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা , চিফ হুইপ
৬। মন্ত্রী সমমানের কিন্তু ক্যাবিনেটবিহীন, ঢাকা সিটি কর্পোঃ মেয়র
৭। বাংলাদেশে নিযুক্ত কমনওয়েলথ অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের রাষ্ট্রদূত
৮। প্রজাতন্ত্রীয় মন্ত্রী, হুইপ, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্ট জাজ(অ্যাপিলেট ডিভিশন)
৯। নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্ট জাজ (হাইকোর্ট ডিভিশন)
১০। উপমন্ত্রী
১১। বাংলাদেশে নিযুক্ত এনভয়বৃন্দ, উপমন্ত্রীর স্ট্যাটাসভুক্ত ব্যাক্তি
১২। ক্যাবিনেট সচিব, সরকারের প্রধান সচিব। সেনা,নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান
১৩। জাতীয় সংসদের সদস্যগণ
১৪। ভিজিটিং অ্যাম্বাস্যাডরবৃন্দ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত নহেন এমন হাই কমিশনার
১৫। এটর্নি জেনারেল, গভর্ণর(বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক)
১৬। সরকারী সচিববৃন্দ, সামরিক বাহিনীর মেজর জেনারেল এবং তার সমতুল্য পদবী, পুলিশের মহাপরিদর্শক(আই জি পি)
১৭। এন এস আই এর ডিজি, জাতীয় প্রফেসরস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিবৃন্দ
১৮। ঢাকা বাদে অন্যান্য সিটি কর্পোঃ এর মেয়রসমূহ(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়)
১৯। অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল,সরকারের অতিরিক্ত সচিববৃন্দ, প্রধান পরিচালক(দুর্নীতি দমন কমিশন), রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টরবৃন্দ, ইউনিভার্সিটি প্রফেসরবৃন্দ( সিলেকশন গ্রেড)
২০। বাংলাদেশ বিমানের এম ডি, পি এস সি সদস্যবৃন্দ, জাতীয় কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডি
২১। পুলিশে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ডিজি( আনসার ও ভিডিপি),ডিজি(ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স), সশস্ত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও তার সমতুল্য পদবী,সরকারের যুক্তসচিববৃন্দ, বিভাগীয় কমিশনার(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়), সার্ভেয়র জেনারেল
২২। সরকারের যুক্তসচিববৃন্দের সমতুল্য পদবি, বিভাগীয় কমিশনার(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকার বাইরে), পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়),কারা মহাপরিদর্শক, সশস্ত্র বাহিনীর কর্ণেল ও তার সমতুল্য পদবী
২৩। ঢাকা বাদে অন্যান্য সিটি কর্পোঃ এর মেয়রসমূহ(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকার বাইরে), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়)
২৪। নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন জেলায়), ডেপুটি কমিশনার অব ডিস্ট্রিক্ট(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন জেলায়), পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকার বাইরে), ডিস্ট্রিক্ট ও সেশন জাজ(তার নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে), সশস্ত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ও তার সমপদবী
২৫। সরকারের উপসচিব, প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার চেয়ারম্যান(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন পৌরসভায়), উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন উপজেলায়), সিভিল সার্জন (তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়),পুলিশের এস পি(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়), সশস্ত্রবাহিনীর মেজর ও তার সমতুল্য পদবী
আমি আশা করি এতক্ষণে আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর মেজর ও তদোর্ধ ব্যাক্তিবর্গের অবস্থান বুঝতে পেরেছেন। এই ‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স’ এ অনেক বেসামরিক নিয়োগ বা পদ আমি উহ্য রেখেছি আপনাদের সুবিধার্তে। আপনারা একটু খেয়াল করলে দেখবেন কিছু বেসামরিক কর্মকর্তা তার দায়িত্বপূর্ন এলাকায় বেশী অধিকার ভোগ করেন আবার তার দায়িত্বপূর্ন এলাকার বাইরে কিছু কম অধিকার ভোগ করেন ।
আপনারা হয়ত চিন্তা করছেন তাহলে ক্যাপ্টেন এবং তার নিম্নস্থ পদবীর অবস্থান কোথায়? ‘ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স’ এ তাদের অবস্থান দেয়া নেই, কিন্তু বিভিন্ন জরুরী মুহুর্তে যেহেতু , সামরিক এবং বেসামরিক অফিসারগণ কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেন তাই তাদের অবস্থান দেয়া হলঃ
১। পুলিশের এডিশনাল এসপি(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তার সমতুল্য পদবী, ম্যাজিস্ট্রেট(সিনিয়র)
২। পুলিশের সিনিয়র এ এস পি(তার নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায়), সশস্ত্র বাহিনীর লেফটেন্যান্ট ও তার সমতুল্য পদবী,ম্যাজিস্ট্রেট
৩। পুলিশের জুনিয়র এবং প্রবেশনারি এ এস পি,সশস্ত্র বাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ও তার সমতুল্য পদবী
বলাই বাহুল্য এই কর্মকর্তাগণ সবাই ১ম শ্রেনীর গেজেটেড কর্মকর্তা।
পরিশেষে বলতে চাই, সেনাবাহিনীতে যারা চাকরি করেন তারা আপনাদেরই ভাই, বোন বা আত্নীয়স্বজন। আপনারা বিভিন্ন সঙ্কটের মুহুর্তে আমাদের মিডিয়ার দায়িত্বহীন সংবাদ পরিবেশনে আপনারা অনেক কটু মন্তব্য করেন যা আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। যেমন কয়েকদিন পুর্বে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার কয়েকজন স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে মারায় আপনারা পত্রিকায় অনেক মন্তব্য করেছেন। একটা কথা জেনে রাখুন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যর বিচারের ভার সশস্ত্র বাহিনী নিতে পারে না, কারন তিনি আপনাদেরই মত একজন বেসামরিক ব্যাক্তি। তার জন্য সম্পূর্ন সশস্ত্র বাহিনীকে গালি গালাজ করাটা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত।
আমাদের সেনাসদস্যরা কখনো দুর্নীতি করেনা এট আমিবলবোনা। শুধু জেনে রাখুন আমাদের ট্রেনিং থেকে সারাটা জীবন কানের কাছে জীবনের বিভিন্ন মূল্যবোধ সম্পর্কে এত মন্ত্রপাঠ করা হয় যে বিবেক আমাদের সবসময় সক্রিয় থাকে। আমাদের চাকরি বড়ই ঠুনক। বড় অপরাধ করলে আমাদের চাকরি চলে যায়, অন্য ডিপার্টমেন্টের মত শুধু সাসপেন্ড করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। সেনাবাহিনীর অফিসারগণ বিশ্বস্ত বলেই সরকার তাদেরকে বিভিন্ন বেসামরিক পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনেক বদগুন আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলাম যা আজ আধুনিকতা ও পেশাদারিত্বের কারনে আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নিয়েছে এবং আরও নিবে। আমরা দেশ, সার্বভৌমত্ব ও জনগনের সেবক, এবং এ জন্য আমরা গর্বিত।
বিঃদ্রঃ আমার পোস্টের বানান নিয়ে প্লিজ কেউ মন্তব্য করবেন না। আমি আগেই বানান এবং ব্যাকরণগত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করছি। আপনারা আরও কোন তথ্য জানতে চাইলে মন্তব্যে লিখতে পারেন। আর প্লিজ তাল গাছটা আমার জাতীয় যুক্তি কেউ দেখাবেননা। গঠন মূলক যুক্তি গ্রহনীয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪০