somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্বিতীয়া

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বনফুলের এই গল্পটি যতবার পড়ি মজা পাই ।এখানে নিদারুণ হাস্যরসের পাশাপাশি স্বামি-স্ত্রীকে এক করুণ বাস্তবের মুখোমুখি এনে দিয়েছেন,সেটা বেশ মর্মান্তিক। গল্পের নাম "অদ্বিতীয়া"

===============
বেশ ছিলাম ।

আপিসে সাহেব এবং গৃহে মা-ষষ্ঠী আমার প্রতি সদয় ছিলেন । সাহেব আমার মাহিনা এবং মা-ষষ্ঠী আমার সংসার বাড়াইতেছিলেন । আমার পিতৃমাতৃকুলে আর কেহ ছিল না । উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু টাকাও জুটিয়ে গিয়াছিল । খাসা ছিলাম ।

প্রভাবতী অর্থাৎ আমার গৃহিণী গড়ে বছরে দেড়টি করিয়া সন্তান প্রসব করিয়া চারি বৎসরেই ছয়টি পুত্রকন্যার মালিক করিয়া তুলিয়াছিলেন- মাঝে দুইবার যমজ হয় ।

এবম্বিধ প্রজাবৃদ্ধি সত্ত্বেও কোন অভাব ছিল না । হঠাৎ কিন্তু বেকুব বনিয়া গেলাম ।

পঞ্চম বর্ষেও গৃহিণী তার স্বাভাবিক গর্ভভার বহন করিতেছিলেন । এবার কিন্তু ব্যাপারটা স্বাভাবিক হইলেও সহজ ছিল না বোঝা গেল । কারণ তিনি মারাই গেলেন । তিনি তাঁহার পিত্রালয় শান্তিপুরে ছিলেন । যদিও আমার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ী উভয়েই অনেককাল স্বর্গীয় হইয়াছেন,কিন্তু আমার শ্যালক বিনোদ ডাক্তার বলিয়া প্রভা প্রতিবারই সেখানে যাইত । বিনোদ লিখিতেছে – “হঠাৎ ‘এক্লেস্পসিয়া’ হইয়া দিদি তিন চার ঘন্টার মধ্যে মারা গেলেন । আপনাকে খবর দেয়ার সময় ছিল না । ‘কিডনি’ খারাপ ছিল । সেজদি ছেলেদের লইয়া সম্বলপুরে চলিয়া গিয়াছেন। তাঁহার চিঠি বোধহয় পাইয়াছেন”

পাইলাম তো । তিনি লিখিতেছেন –“কি করিবে বল ভাই । সবই অদৃষ্ট । তোমার ছেলেমেয়েরা এখন আমার কাছে কিছুদিন থাকুক । আমি তো বাঁজা মানুষ । আমার কোন অসুবিধা হইবে না । ছেলেরা ভালই আছে । কোন ভাবনা করিও না। ইতি... ”

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া ছুটির দরখাস্ত করিলাম। কপালগুণে আমার সাহেবও বদলী হইয়া গিয়াছিলেন । ছুটি সুতরাং মঞ্জুর হইল না ।

দুইমাস পরে ।

সম্বলপুরবাসী শ্যালিকার আর একখানি পত্র পাইলাম । তিনি অন্যান্য নানা কথার পর লিখিতেছেন –
“প্রভা সতীলক্ষ্মী ভাগ্যবতী ছিল । সে গেছে,বেশ গেছে । জাজ্বল্যমান স্বামী ছেলেপুলে সব রেখে গেছে । কিন্তু তোমার তো তা বলে সংসারটা ছারখার করাটা ভাল দেখায় না । উচিতও নয় । আমার কথা শোনো । আবার বিয়ে কর তুমি ... এখানে একটি বেশ ডাগর-ডোগর মেয়ে আছে । যদি তোমার ইচ্ছে হয় বল- সম্বন্ধ করি।আমার তো মেয়েটাকে বেশ পছন্দ। তোমার নিশ্চয়ই পছন্দ হবে”

সাতদিন ভাবিয়া –অর্থাৎ এক টিন চা ও এক টিন সিগারেট নিঃশেষ করিয়া আমি এই চিরন্তন সমস্যার যে মীমাংসা করিলাম তাহা মোটেই অসাধারণ নয় ।সেজদিকে যে পত্র দিলাম তাহা অংশত এইরূপ-

“বিয়ে করতে আর ইচ্ছে হয়না। প্রভার কথা সর্বদাই মনে পড়ে । কিন্তু দেখ সেজদি, আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের উপর নির্ভর করে তো সংসার বসে নেই । সে আপনার চালে ঠিক চলছে এবং চলবে । সুতরাং ভাবপ্রবণ হওয়াটা শোভন হলেও সুযুক্তিকর নয় – এটা ঠিকই । তাছাড়া দেখ আমরা “মা ফলেষু কদাচন” দেশের লোক । আর তোমরাও যখন বলছ – তখন আর একবার সংসারটা বজায় রাখবার চেষ্টা করাই উচিত হবে বোধহয় । দ্বিতীয় পক্ষের বিয়েতে আবার পছন্দ-অপছন্দ! তোমার পছন্দ হয়েছে তো?”

ক্রমশ বিবাহের দিন ধার্য হইল । সম্বলপুরেই বিবাহ । সেজদি বুদ্ধিমতী । লিখিয়াছেন- “ছেলেদের লাহোরে বড়দির কাছে পাঠিয়ে দিলাম । বাপের বিয়ে দেখতে নেই”। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ।

যথাকালে সাহেবের হাতেপায়ে ধরিয়া হপ্তাখানেকের ছুটি লইয়া সোজা রওনা হইয়া পড়িলাম। একাই । এ বিয়ের কথা কাউকে বলিতে আছে? কি ভাবিয়া গোঁফটা কামাইয়া ফেলিলাম । একে এই কালো মোটা চেহারা –তাহার উপর কাঁচাপাকা একঝুড়ি গোঁফ বিবাহ করিতে যাইতে নিজেরই কেমন বাধ-বাধ ঠেকিতে লাগিল ।

বিবাহ বাসর । এই অবগুন্ঠিতা চেলি-পরা মেয়েটিই আবার আমার সঙ্গিনী হইতে চলিয়াছে ।

প্রভাকেও একদিন এইভাবেই পাইয়াছিলাম – সে কোথায় চলিয়া গেল। আজ আবার আর একজন আসিয়াছে । ইহার ‘কিডনি ’ কেমন কে জানে? নানারূপ এলোমেলো কথা মনে আসিতে লাগিল । প্রভার মুখ বারবার মনে পড়ে । ছেলেগুলো না জানি এখন কি করিতেছে ? ... মৃত্যুর পরও আত্মা কি সত্যি থাকে?... এমেয়েটি বেশ বড়সড় দেখিতেছি- কিন্তু ভারি জড়সড় হইয়া আছে- একেবারে মাথা নীচু করিয়া। আচ্ছা ,প্রভার আত্মা যদি... গৃহ্নামি,গৃহ্নামি

যন্ত্রচালিতবৎ বিবাহঅনুষ্ঠান চলিতে লাগিল । শুভদৃষ্টির সময় মেয়েটি কিছুতেই ঘোমটা খুলিল না। সেজদি বলিলেন- ভারি লাজুক । বাসরঘরেও শুনিলাম- ভারি লাজুক । আপাদমস্থক মুড়িয়া পাশ ফিরিয়া শুইল । আমিও ঘুমাইলাম । সেজদি লোক জমিতে দেন নাই । তাছাড়া দ্বিতীয় পক্ষের বিবাহ ,কে আর আমোদ করিতে চায় । মেয়েটির আপন বলিতে কেহ ছিল না । পরের বাড়িতে মানুষ । সেজদির বাড়িতেই বিবাহ – বলিতে গেলে সেজদিই কন্যাকর্তা । সুতরাং বিবাহউৎসব জমে নাই ।

জমিল ফুলশয্যার রাত্রে ।

বক্ষে অনেক আশা ও আশঙ্কা লইয়া ঘরে ঢুকিয়া দেখি আমার ছয় সন্তান ও আর এক নবজাত শিশু লইয়া স্বয়ং প্রভা খাটে বসিয়া । স্বপ্ন দেখিতেছি নাকি?

প্রভা কহিল – “ছি ছি,সেজদিরই জিত হইল”
“মানে আবার কি! এবার ছেলে হওয়ার সময় ভারি কষ্ট হয়েছিল । অপরাধের মধ্যে সেজদিকে বলেছিলাম আমি ম’লে ওঁর ভারি কষ্ট হবে । সেজদি বললে ‘হাতী হবে’। তিনমাস যেতে না যেতে ফের বিয়ে করবে ।আমি বললাম ‘কক্ষণো নয় ’ তারপর বাজি রেখে সেজদি আর বিনোদ মিলে এই ষড়যন্ত্র! আমি শান্তিপুরেই ছিলাম । আজ এই সন্ধ্যেবেলা এসেছি । এসে দেখি সেজদিরই জিত । পাড়ার মানকে ছোড়াকে কনে সাজিয়ে সেজদি বাজি জিতেছে । একশটি টাকা দাও এখন । ছি ছি –কেমন তোমরা! অমন গোঁফটা কি ব’লে কামালে?”

আমার অবস্থা অবর্ণনীয় ।
পরদিন প্রভাতে সেজদির পাওনা চুকাইয়া দিয়াছি । এখন গোঁফটা উঠিলে বাঁচি ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×