somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সানাউল্লার হাইকোর্ট

১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রীষ্মের মধ্যদুপুর ।

সারাদিনের গণগণে সূর্যের তাপটা এখন একটু থিতিয়ে পড়ছে । টিনশেড বাড়ীর ভেতরটা কিন্তু গরম খেয়ে বেশ ভালই তেতে উঠেছে ।

এই গরমের মধ্যেই শ্বাসের সাথে সাথে ঈষৎ স্থূল পেটের উঠানামা চলছে সানাউল্লার । সেইসাথে ওর পেটের উপর রাখা আসিয়ার হাতও । আসিয়া সানাউল্লার বিবাহিতা স্ত্রী । সানাউল্লাহর ঘর্মাক্ত পেটের ওপর থেকে হাত সরায় আসিয়া ,দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে ,খাবার তৈরী আছে অনেকক্ষণ । লোকটার বেঘোরে ঘুম দেখে মায়া হয় আসিয়ার । ডেকে তুলতে মন চায়না আসিয়ার । নিজেই উঠে বসে বিছানায় । গোসল সেরে তৈরি হয়ে নেবে । তারপর ডেকে তুলবে সানাউল্লাকে । দু’জনে মিলে টুকটাকা আলাপ করতে করতে ভাত খেয়ে নিবে এই বিছানায় বসেই । খাবে গরম ভাত,রুইমাছ,ডাল আর আলুভর্তা । সানাউল্লার পছন্দমতন রুইমাছ ভাজা ভাজা করে ভূনা রান্না করা হয়েছে,আর অতিরিক্ত ঝাল দিয়ে আলুভর্তা ।

হঠাৎ তীক্ষ্ম একটা যান্ত্রিক শব্দ । সানাউল্লার মোবাইল ফোন বাজছে ।



ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসে সদ্য ঘুম থেকে জাগা সানাউল্লা । মোবাইল টা রিসিভ করে কানে লাগায় , একবার আসিয়াকে দেখে । কথা বলা শেষ করে আবার কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে সানাউল্লা । আসিয়া চলে যায় গোসলে । মনে মনে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে থাকে সানাউল্লা, চাকরি দিয়ে কি ওকে কিনে নিয়েছে নাকি ? আর এই বেগম সাহেব মানে ম্যাডাম হচ্ছে একটা বদমায়েশ, বজ্জাতের হাড্ডি । আগের ম্যাডামও খারাপ ছিল,কিন্তু এবারের মতন এত দজ্জাল, বজ্জাত তো ছিল না । প্রায় সপ্তাহ তিনেক পরে গোটা একটা দিন পাওয়া গেল ছুটি হিসেবে কাটানোর জন্য ।

চোখ মুখ কুঁচকে হাঁটুর উপর হাত রেখে বসে থাকে সানাউল্লা । যাবো না আমি, দেখি কী করে? আবার,নিজেকে বুঝায় না গেলে এ চাকরী থাকবে না? একটা চাকরী পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা ?



কিন্তু কিছুতেই বোধ মানছে না সানাউল্লার মন । ভেবে রেখেছিল দুপুরে ভালমন্দ খেয়ে, বিকেলে আসিয়াকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, বউটাকে নিয়ে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না । সারাদিন-রাত পরের পরিবার, বাচ্চা-কাচ্চাদের নিয়ে এদিক সেদিক করে সে । চোখ গেল খাটের কোণায় । গত ঈদের শাড়িটা ভাঁজ করে রেখেছে আসিয়া । নাহ,যাবে না,আজকে- মতস্থির করে ফেলে সানাউল্লা, ঐ বেটি যখন তখন এভাবে হুকুম করবে, তা মেনে নিয়ে বসে থাকবে সানাউল্লা? হাইকোর্ট দেখিয়ে দেবে ওই বেটিকে ...



ঠিক এই মুহুর্তে আবার ফোন শব্দ করে বেজে উঠল । ম্যাডাম ।

কন্ঠস্বর যথাসম্ভব নরম করে বলে সানাউল্লা



– জ্বি,ম্যাডাম, আমি এক্ষুণি বের হচ্ছি, দুপুরেরে খানাটা খাইয়া নিয়াই ।

-কি ম্যাডাম? বেশি জরুরি? আইচ্ছা ম্যাডাম । আমি এক্ষুণি আইতেছি ।



তারপর গোসল সেরে আসা আসিয়ার হতভম্ব দৃষ্টির সামনে দিয়ে একটা সাদা শার্ট গায়ে চড়িয়ে দুদ্দাড় ক দরজা খুলে বেরিয়ে যায় সানাউল্লা,বেরিয়েই আবার ফেরত আসে, মোবাইল টা ফেলে গেছিল । আবার, আসিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চেয়ে বলে না । এবার,একেবারে বের হয়ে যায় সানাউল্লা।



ঘরের মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে আসিয়া । চুল বেয়ে পানি পড়ছে টপটপ । চোখের কোণেও হালকা দুয়েক ফোটা ।

গ্যারেজের সামনে দাঁড়িয় সস্তার একটা সিগারেট টানতে টানতে গাড়ির হেডলাইট বরাবর হালকা একটা লাথি কষায় সানাউল্লা । কোনো একদিন পুরোটা ভেঙ্গে ফেলবে, সুযোগমত । পেটের ভিতরটা খিদেয় মোচড় দিয়ে ওঠে । আহ, রুইমাছ আর আলুভর্তা !

থুঃ করে নিকোটিনের গন্ধ মেশানো একদলা থুতু ছোঁড়ে । গিয়ে পড়ে গাড়ীর সামনের গ্লাসে । পরক্ষণেই সাথের গামছা দিয়ে মুছে দেয় । চাকরি চলে গেলে খাবি কী বোকা?বউকে খাওয়াবি কী-নিজেকেই শাসন করে। এভাবে না,অন্যভাবে ঘায়েল করা লাগবে বজ্জাতিদের... হঠাৎ বিরক্ত মুখে সিঁড়ি দিয়ে তাকায় । কেউ তো নামছে না এখনো ... “আমাকে দুপুরের খাওন খাইতে না দিয়া,তেনারা নটাঙ্কি করতেছে ...”-অশ্রাব্য একটা গালি দিয়ে মেজাজ টা হালকা করে সানাউল্লা ।



চাকরীর শুরুতে হিসাবটা ছিল এমন । সাহেবকে দিনে দুইবার অফিসে নিয়ে আসা-যাওয়া,আর বাচ্চাদের একবার নিয়ে আসা। অথচ দিনে দিনে সেখানে যোগ হতে থাকে তালিকা । বেগম সাহেব প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও যায় । তারউপর, সকাল-বিকাল-রাত কত ধরণের তলব তো আছেই ... রেগেমেগে এবার বেশ জোরেই একটা লাথি চালায় , টায়ারে ।

আধঘন্টার উপর গাড়ি চালিয়েছে সানাউল্লা । গন্তব্য সাহেবের দূরসম্পর্কের আত্নীয়ের বাড়ি , শহর থেকে যেতে সময় লাগবে । জ্যাম থাকলে তো দিন শেষ । আসিয়াটা কী করছে কে জানে?



থিতিয়ে পড়া মেজাজ আবার একটু একটু করে চড়তে শুরু করে । সাহেবের ছেলেটা,ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে-আঙ্কেল এটা কী,আঙ্কেল ওটা কী... বকবক করেই যাচ্ছে । বেটা তুই কী বড় হয়ে গাড়ি চালাবি?চুপ থাক... মনে মনে বললেও মুখে হাসি রেখেই কথার জবাব দিয়ে যাচ্ছে সানাউল্লা ।

মেইনরোডে উঠে পড়েছে গাড়ি । যান চলাচল স্বাভাবিক । জ্যাম নেই । মৃদু বাতাস । এই বাতাসেই কিনা ,ম্যাডামের মনে হঠাৎ যেন ফূর্তি হল, সানাউল্লাকে বলা হল ,একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে কিছুক্ষণ পর যেন পারলে থামায় । বাচ্চারাও খুশিতে হইহই করে ওঠে । সময় দেখে সানাউল্লা । তিনটার মত প্রায় বাজে ঘড়িতে । দিন গড়াতে আরো প্রায় চার ঘন্টা । হিসেব টা কষে মনে মনে ।

মিনিট দশেক পর । গিয়ার টা একেবারে শার্পলি চেইঞ্জ করে ,এতদিন গাড়ি চালিয়ে গাড়ির মেজাজ-মর্জি ভালই জানা আছে সানাউল্লার । ঘড় ঘড় করে, কিছুক্ষণ পর থেমে যায় গাড়ি । ব্যতিব্যস্ত হয়ে নেমে আসে সানাউল্লা । নিছক একটু এদিক সেদিক ঘাঁটাঘাঁটি করে জানিয়ে দেয়- গাড়ি যাবে না, মেরামত করা লাগবে । ম্যাডাম স্বভাব মোতাবেক একটু ঝাড়ি লাগায় সানাউল্লাকে । সেগুলো হজম করেই সানাউল্লা জানায়, এখন গ্যারেজে নেয়া ছাড়া উপায় নেই । কোনমতে চালিয়ে,ঠেলে ধাক্কা দিয়ে গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া যাবে, ততক্ষণ ম্যাডাম আর বাচ্চারা সামনের কোনো রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে পারে । বলাবাহুল্য, ম্যাডামের আর করার কিছুই থাকে না, গাড়ি সারানোর জন্য সানাউল্লাকে পাঁচহাজারের মত টাকা দিয়ে রেস্টুরেন্টেই আশ্রয় নেয় ।





******



“এই গাড়ি তুমি চালাও? কি সুন্দর”

“আরে আরে, কর কি ? কর কি? আরাম কইরা বস, এইডা এখন তোমার আর আমার গাড়ি, সারা বিকাল বেলা আমি আর তুমি মিলা ঘুরমু...”-বলে বউয়ের দিকে চেয়ে চোখ টিপ মারে সানাউল্লা ।

আসিয়া হাসে, কি যেন ভাবে । -“সাহেব জানতে পারে যদি?”

“ হেদেরকে হাইকোর্ট দেখাইয়া দিছি আইজকা"-হর্ণ মেরে গাড়ি চালিয়ে যায় সানাউল্লা ।

(সমাপ্ত )
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৪৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×