somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের নামাজে তাকবীর কয়টি???

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান:
(ক) দু’ঈদের নমাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর ওয়াজিব হওয়ার বিধান সম্পূর্ণ হাদীস সম্মত। মারফু এবং মাওকুফ উভয় প্রকারের হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে সহীহ-শুদ্ধ হাদীস গ্রন্থাদিতে বহু হাদীস পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি হাদীস নিম্নে পেশ করছি।
১নং হাদীস:
ﺃﻥ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ ﺍﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺣﺪﺛﻪ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺑﻌﺾ ﺍﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺻﻠﻲ ﺑﻨﺎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻮﻡ ﻋﻴﺪ ﻓﻜﺒﺮ ﺍﺭﺑﻌﺎً ﻭﺍﺭﺑﻌﺎً ﺛﻢ ﺍﻗﺒﻞ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺑﻮﺟﻬﻪ ﺣﻴﻦ ﺍﻧﺼﺮﻑ ﻓﻘﺎﻝ ﻻ ﺗﻨﺴﻮﺍ ﻛﺘﻜﺒﻴﺮ ﺍﻟﺠﻨﺎﺋﺰ ﻭﺍﺷﺎﺭ ﺑﺎﺻﺎﺑﻌﻪ ﻭﻗﺒﺾ ﺍﺑﻬﺎﻣﻪ ـ ﻓﻬﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺍﻻﺳﻨﺎﺩ ـ
নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ তাহাবী শরীফের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, আবু আব্দুর রহমান বলেন, আমাকে কতিপয় সাহাবা রাযি. বলেছেন যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে ঈদের নামায পড়ে ছিলেন। তাতে তিনি চার চার তাকবীর বলেন। অত:পর নামায শেষে হুযুর (সা.) আমাদের কে লক্ষ্য করে বললেন, ভুলে যেও না, ঈদের নামাযের তাকবীর জানাযার নামাযের তাকবীরের অনুরূপ। সাথে সাথে হুযুর (সা.) বৃদ্ধাঙ্গুলী মুষ্ঠিবদ্ধ করে অবশিষ্ট চার আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন (তাহাবী শরীফ, ২/৪০০পৃ । বর্ণিত হাদীসের সনদকে ইমাম তাহাবী রহ. হাসান বলেছেন। আর হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীসের মত (তাদরীবুর রাবী, ১/৯৬ পৃ । বর্ণিত হাদীসে দু’ রাকাতে চার চার তাকবীর বলা হয়েছে। এদ্বারা বুঝা যায় মোট আট তাকবীর। যথা: প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা সহ চার তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর। অর্থাৎ দুটি আসল ৬টি অতিরিক্ত বলা যেতে পারে।
২নং হাদীস:
ﺃﻥ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﺳﺄﻝ ﺃﺑﺎ ﻣﻮﺳﻲ ﺍﻻﺷﻌﺮﻱ ﻭﺣﺬﻳﻔﺔ ﺑﻦ ﺍﻟﻴﻤﺎﻥ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻜﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻻﺿﺤﻲ ﻭﺍﻟﻔﻄﺮ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﻣﻮﺳﻲ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺒﺮ ﺍﺭﺑﻌﺎ ﺗﻜﺒﻴﺮﺓ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺠﻨﺎﺋﺰ ﻓﻘﺎﻝ ﺣﺬﻳﻔﺔ ﺻﺪﻕ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﻣﻮﺳﻲ ﻛﺬﻟﻚ ﻛﻨﺖ ﺍﻛﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺼﺮﺓ ـ
বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ আবু দাউদ শরীফের এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সাঈদ ইবনে আস রাযি. একদা আবু মূসা আশয়ারী ও হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে কিভাবে তাকবীর বলতেন? জবাবে আবু মূসা রাযি. বললেন জানাযার নামাযের মত প্রতি রাকাতে চার চার তাকবীর বলতেন। হুযায়ফা রাযি. সমর্থন করে বললেন আবু মূসা সত্য বলেছে। আবু মূসা রাযি. বললেন আমিও বসরা দেশে এভাবেই তাকবীর বলতাম (আবু দাউদ, ১/১৬৩ পৃ:; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ৪/২১৩ পৃ ।
উভয় হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাযের তাকবীর প্রতি রাকাতে চার চার করে সর্ব মোট আট বলেছেন। অর্থাৎ দু’টি আসল ৬টি অতিরিক্ত। প্রশ্ন হতে পারে, হাদীসে তো তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীরের কথা উল্লেখ নেই? তার জবাবে বলতে চাই যে, হুযুর (সা.) ঈদের তাকবীরকে জানাযার তাকবীরের সাথে তুলনা করেছেন। তা থেকে বুঝা যায় যে, যেমন জানাযার ৪ তাকবীরের মধ্যে প্রথম তাকবীরে তাহরীমা অপর ৩টি অতিরিক্ত তদ্রুপ ঈদের নামারের চার চার তাকবীরের মধ্যে ও একটি আসল অপর ৩টি অতিরিক্ত। এটা কোন মনগড়া ব্যাখ্যা নয় বরং বহু মাওকুফ হাদীস দ্বারা প্রমানিত সত্য। একথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, হাদীসে মাওকুফ যদি ইজতেহাদী বিষয় না হয় এবং কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীসে মারফুর সাথে সাংঘর্ষিক না হয় তখন হাদীসে মারফুর মত শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ যোগ্য হবে (জফরুল আমানী, ১/১৯০ পৃ ।
২নং হাদীসের সনদের তাহকীক: বার তাকবীর সমার্থকগণ আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীসের সনদকে যয়ীফ বলতে চায়। কারণ উক্ত সনদে একজন রাবী হলেন আবু আয়শা তিনি মাজহুল। তাদের এই দাবী সঠিক নয়, কারণ আবু আয়শা হতে দু’ জন বর্ণনাকারী পাওয়া যায় একজন মাকহুল দ্বিতীয়জন খালিদ ইবনে মা’দান (তাহযীবুত তাহযীব, ১২/১৪৬ পৃ । আর রিজাল শান্ত্রের উসূল হল, যে রাবীর দু’জন ছেকাহ ছাত্র থাকবে সে কখনে মাজহুল থাকে না (মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ, ৯০ পৃ:; তাদরীবুর বাবী, ১/২২০ পৃ । হাফেজ আসকালানী রহ. আবু আয়শা কে মাকবুল বলেছেন, অতএব তার হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে (তাকরীবুত তাহযীব, ১/৪২৬ পৃ ।
সাহাবাদের আমল
এ ছিল ৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামাযের সমর্থনে মারফু হাদীসের আলোচনা। এবার দেখা যাক, ৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামাযের প্রসঙ্গে হাদীসে মাওকুফ বা সাহাবায়ে কেরামের আমল কি ছিল?
ﺃﻥ ﺇﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿـ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺗﺴﻌﺎ ﺍﺭﺑﻊ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻘﺮﺃﺓ ﺛﻢ ﻳﻜﺒﺮ ﻓﻴﺮﻛﻊ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻳﻘﺮﺃ ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻍ ﻛﺒﺮ ﺍﺭﺑﻌﺎً ﺛﻢ ﺭﻛﻊ ـ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে ঈদের নামাযের নিয়ম প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের নামাযে ৯টি তাকবীর বলতেন। ৪টি কেরাতের পূর্বে। অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা সহ ৪টি। অত:পর কেরাত পড়ে তাকবীর বলে রুকু করতেন। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর ৪টি তাকবীর বলতেন এবং চতুর্থ তাকবীরের সাথে রুকু করতেন (তিরমিজী শরীফ, ১/১২০ পৃ:; ই’লাউস সুনান, ৮/১০৬ পৃ:; তাহাবী শরীফ, রায়াহ, ২/৪০১ পৃ: মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৪/২১৬পৃ. নাসবুর রায়াহ, ২/২২২ পৃ.)।
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাযম জাহেরী (রহ.) এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন যে, এটি অতীব সঠিক এবং এটিই ইমাম আবু হানিফা রহ. এর অভিমত (আল-মুহাল্লা, ৫/৮৩ পৃ ।
অনুরূপ হাফেজে হাদীস আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহ. বলেন যে, এ হাদিসটি হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক সহীহ সনদে বর্ননা করেছেন (আদদিরায়াহ, ১/ ১৭৩ পৃ ।
ছয় তাকবীরের সাথে ঈদের নামাযের এই নিয়মটি হযরত ইবনে মাসউদ ব্যতীত হযরত ওমর, হুযায়ফ, আবু মূসা আশয়ারী, আনাস, জাবির, আবু মাসউদ আনসারী, ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রাযি.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম থেকেও বর্ণিত আছে (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৪/২১৪-২১৯ পৃ:; তাহাবী শরীফ, ২/৪০০ পৃ ।
সার কথা উপরের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা গেল যে, ঈদের নামায তাকবীরাতে জাওয়ায়েদে ছিত্তা অর্থাৎ অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করা নির্ভরযোগ্য ও সহীহ হাদীস সম্মত এবং অনেক সাহাবায়ে কেরামের স্বতঃসিদ্ধ আমলও তা। সুতরাং ঈদের নামাযের প্রচলিত নিয়ম অর্থাৎ ছয় তাকবীরে আদায় করাকে হাদীসের পরিপন্থী বা বিদআত বলার কোন অবকাশ নেই।
পূর্বেও বলা হয়েছে যে,সাহাবাদের আমল সহীহ হাদীসের বিপরীত না হলে তা নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদ হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. ও হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. এর মত হাদীস বিশেষজ্ঞ সাহাবীদের আমল হলে তা দলীল হওয়াতে মোটেই দ্বিধা সংশয় না হওয়া চাই। বলা যেতে পারে যে, এখানে হাদীস সাহাবাদের আমল ১২ তাকবীরের পরিপন্থী? তার উত্তরে বলবো যে,সেই হাদীস গুলো দূর্বল প্রকৃতির। আর দূর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা হাফেজ ইবনে হাযম যাহেরী বলেন, ১২ তাকবীরের হাদীসগুলো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় (আল মুহাল্লা, ৫/৮৪)।
অনুরূপ হাফিজে হাদীস ইমাম তাহাবী রহ. তাহাবী শরীফের ২/৩৯৯ পৃষ্ঠায় বলেন যে, বিরুদ্ধপক্ষের হাদীস অর্থাৎ ১২ তাকবীরের হাদীস গুলো যয়ীফ হওয়ার কারণে অপ্রমাণযোগ্য। একথার বাস্তব প্রমাণ হিসেবে নিুম্নে ১২ তাকবীরের সমর্থনকারীদের উপস্থাপিত কিছু হাদীসের তাহকীক পেশ করছি। যে হাদীসগুলি তারা সরলমনা মুসলমানদের কে ধোকা দেওয়ার অপমানসে লিফলেট আকারে প্রকাশ করে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করছে।
(খ) লিফলেটে প্রচারিত ১২ তাকবীরের হাদীসের তাহকীক:
১নং হাদীস: ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺳﻤﻌﺖ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﻴﻴﻨﺔ ﻳﻘﻮﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﻄﺎﺀ ﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﺭﺑﺎﺡ ﻳﻘﻮﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﺷﻬﺪ ﻋﻠﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻧﻪ ﻛﺒﺮ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻻﻭﻟﻲ ﺳﺒﻌﺎ ﺳﻮﻱ ﺗﻜﺒﻴﺮﺓ ﺍﻻﺣﺮﺍﻡ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﺧﻤﺴﺎ ﺳﻮﻱ ﺗﻜﺒﻴﺮﺓ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ـ
হাদীসটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে এ হাদীসের সনদ অধিক ছহীহ এবং রাবীগণ অধিক নির্ভরযোগ্য এবং অধিক প্রতিষ্ঠিত শব্দে বর্ণিত কেননা এ হাদীস সামিতু (আমি নিজে শুনেছি) শব্দ দ্বারা এসেছে। (কিতাবুল উম্ম ১ম খন্ড ২৩৬ পৃ
তাহকীক: অত্যন্ত দু:খ জনক বিষয় হল এখানে কিতাবুল উম্ম এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ উল্লিখিত সনদের কোন হাদীস কিতাবুল উমে নেই। শুধু তাই নয় ছহীহ হাদীসের যত কিতাব রয়েছে কোন একটি কিতাবে এমন সনদে বর্ণিত হাদীস দেখাতে পারবেন না। কিতাবুল উমের উদ্বৃতি দিয়ে মাওলানা সাহেব সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিতাবুল উমে ঈদের তাকবীর সংক্রান্ত যে সকল হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তার কোন একটি হাদীস আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত নয়।
দ্বিতীয়ত: সনদের দিকে দেখলেও বুঝে আসে যে, সনদটি সম্পূর্ণ বানানো। কারণ সুফিয়ান বিন উয়াইনা আতা বিন আবি রাবাহ এর ছাত্র নন। রিজাল শাস্ত্রের কোন কিতাবে ছাত্র হিসেবে উল্লেখ করেননি। আর ছাত্র হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। কারণ সুফিয়ান বিন উয়াইনার জন্ম ১০৭ আর আতা বিন আবি রাবাহ এর মৃত্যু ১১৪ হিজরী। অতএব এত অল্প সময়ে মক্কার এক উস্তাদের কুফি এক ব্যক্তি ছাত্র হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
২নং হাদীস: ﻋﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺍﻻﻭﻟﻲ ﺳﺒﻌﺎً ﻗﺒﻞ
ﺍﻟﻘﺮﺃﺓ ﻭﻓﻲ ﺍﻻﺧﺮﺓ ﺧﻤﺴﺎً ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻘﺮﺃﺓ ـ
ঈদের নামাযের তাকবীরে জাওয়ায়েদ ১২টি হওয়ার পক্ষে বর্ণিত হাদীসকেই মূল হাদীস হিসেবে পেশ করা হয়। তবে হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দূর্বল বা যয়ীফ। কারণ সনদে এক রাবী হলেন কাসীর বিন আব্দুল্লাহ তার সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ﻫﻮ ﺭﻛﻦ ﻣﻦ ﺍﺭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻜﺬﺏ অর্থাৎ কাসীর বিন আব্দুল্লাহ মিথ্যুকদের অন্যতম। ইবনে হিব্বান বলেন ﻳﺮﻭﻱ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﻧﺴﺨﺔ ﻣﻮﺿﻮﻋﺔ ﻻ ﻳﺤﻞ ﺫﻛﺮﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺘﺐ অর্থাৎ কাসীর বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা এবং তার পিতা তার দাদা থেকে যে সনদ বর্ননা করে এটি একটি মওজু তথা বানাওয়াট সনদ। এমন সনদ কোন হাদীসের কিতাবে উল্লেখ করা অনুচিৎ (তোহফাতুল আহওয়াজী, ৩/৬৫ পৃ:; তাওযীহুল আফকার, ১/১৬৯ ইমাম বুখারী রহ. বালেন, ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ অর্থাৎ কাসীর বিন আব্দুল্লাহ এর হাদীস অপ্রমাণযোগ্য। ইমাম নাসায়ী বলেন ﻣﺘﺮﻭﻙ অর্থাৎ পরিত্যক্ত (তাহযীবুত তাহযীব, ৮/৪১৭; আল-কামেল ফিজ-জোয়াফা, ৭/২০০ পৃ ।
উল্লিখিত হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম তিরমিজী বলেন, আমি হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারীর রহ. কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এটাই ঈদের তাকবীর সম্পর্কে সর্বোচ্চ সহীহ হাদীস (তোহফাতুল আহওয়াযী, ৩/৬৬ পৃ ।
উপরের আলোচনাকে মিলালে সর্ব সাধারণের আর বুঝতে বাকী থাকবে না যে, একজন মিথ্যুক রাবীর হাদীস যদি সর্বোচ্চ হয়। তাহলে ১২ তাকবীর সংক্রান্ত বাকী হাদীসগুলির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
৩, ৯ ও ১১ নং হাদীস: ৩নং হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা রাযি. ৯নং হাদীসে হযরত আলী রাযি. ও ১১নং হাদীসে হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. এর আমল বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা ইতঃপূর্বে বার বার বলেছি, হাদীসে মাওকুফ তথা সাহাবাদের আমল দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল হাদীসে মারফু সহীহর খেলাফ না হওয়া। আর বর্ণিত হাদীসগুলো ৬ তাকবীরের হাদীসে মারফু সহীহর খেলাফ। অতএব এমন হাদীসে মাওকুফ আমলযোগ্য নয়। এখানে এমন প্রশ্ন করা অবান্তর যে, বার তাকবীরের পক্ষেও তো হাদীস পাওয়া যায়। কারণ পূর্বের আলোচনা প্রমাণ করেছে যে, ১২ তাকবীরের সমস্ত হাদীস যয়ীফ হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য।
৪ নং হাদীস ঃ ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻓﻜﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻻﻭﻟﻲ ﺳﺒﻌﺎً ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﺧﻤﺴﺎً ﻳﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﻣﻊ ﻛﻞ ﺗﻜﺒﻴﺮ
ـ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺹ ৩/৪১২
এখানেও মাওলানা সাহেব ওমর রাযি. এর আমল বয়ান করার ক্ষেত্রে বায়হাকী শরীফের উদ্বৃতি দিয়ে অসত্যের আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ এমন হাদীস বায়হাকী শরীফে নেই (বায়হাকী শরীফ, ৫/৬৬-৭০ পৃ. দ্রষ্টব্য)
আর তাহাবী শরীফের একটি লম্বা হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওমর রাযি. এর যুগে ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর ৬টি হওয়ার উপর ইজমা সংগঠিত হয়েছে (তাহাবী শরীফ, ১/২৮৬ পৃ.)।
৪নং হাদীসের জবাবে ঐ আলোচনা ও প্রযোজ্য হবে যা ৩নং হাদীসে বলা হয়েছে।
৫ ও ৮ নং হাদীস ঃ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺑﻮ ﺳﻌﻴﺪ ﻣﻮﻟﻲ ﺑﻨﻲ ﻫﺎﺷﻢ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺑﻦ ﻟﻬﻴﻌﺔ ﻋﻦ ﻋﻘﻴﻞ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺷﻬﺎﺏ ﻋﻦ ﻋﺮﻭﺓ ﻋﻦ
ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ .…… ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ .
হাদীসটি যয়ীফ, কারণ হাদীসটির সনদে একজন রাবী হলেন আব্দুল্লাহ বিন লাহীয়া। আর আব্দুল্লাহ বিন লাহীয়া সম্পর্কে অধিকাংশ মুহাদ্দিসীন বলেছেন তিনি যয়ীফ। ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন ﻻ ﻳﺤﺘﺞ ﺑﻪ অর্থাৎ ইবনে লাহীয়ার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে না (তিরমিজী, ২য় খন্ড, কিতাবুল ইলাল, ২৩৫ পৃ.)।
ইমাম নাসায়ী বলেন, তিনি যয়ীফ (মিজানুল ইতিদাল, ৪/১৬৬ পৃ.)। আল্লামা শাওকানী বলেন, ইবনে লাহীয়া যয়ীফ (নাইলুল আওতার, ৩/৩১২ পৃ.)।
ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন বলেন, ইবনে লাহীয়া ـ ﺿﻌﻴﻒ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ـ হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। তার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যাবে না। আলী ইবনে মাদীনি বলেন, আমি ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে বলতে শুনেছি আমাকে বিশির ইবনে ছারী বলেছেন- ﻟﻮ ﺭﺃﻳﺖ ﺍﺑﻦ ﻟﻬﻴﻌﺔ ﻟﻢ ﺗﺤﻤﻞ ﻋﻨﻪ ﺣﺮﻓﺎً অর্থাৎ তুমি যদি ইবনে লাহীয়াকে দেখতে তার থেকে একটি হরফও গ্রহণ করতে না। ইয়াহইয়া বিন মায়ীনকে বলা হল যে, ইবনে লাহীয়ার কিতাব পুড়ে গিয়েছিল। ইয়াহইয়া জবাবে বলেন, সে কিতাব পোড়ার আগের থেকে যয়ীফ। ইমাম সা’দী বলেন, ইবনে লাহীয়ার হাদীস শিক্ষা করা, তার হাদীস থেকে দলীল পেশ করা, তার হাদীস হিসেবে গণনা করা কোনটাই ঠিক না (আল-কামেল ফিয-যোয়াফা ৫/২৩৭-২৩৯ পৃ.)।
৬ নং হাদীস ঃ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺴﺪﺩ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﻟﻤﻌﺘﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﻄﺎﺋﻔﻲ ﻳﺤﺪﺙ ﻋﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺷﻌﻴﺐ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﺳﺒﻊ ………….
ﺍﺑﻮ ﺩﺍﺅﺩ . ১/১৬৩
বর্ণিত হাদীসে এক রাবী পাওয়া যায়, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফী তিনি বিতর্কিত রাবী। ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন একবার বলেছেন ﺻﻮﻳﻠﺢ আবার বলেছেন যয়ীফ। ইমাম বুখারী রহ. বলেন, ﻓﻴﻪ ﻧﻈﺮ অর্থাৎ তার ব্যাপারে সমস্যা আছে। ইমাম নাসায়ী বলেন সে মজবুত রাবী নয়। আলী ইবনে মাদীনি ও ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনের ন্যায় মত ব্যক্ত করেছেন (মিজানুল ই’তিদাল, ৪/১৩৪ পৃ.; তাহযীবুত তাহযীব, ৫/২৯৮ পৃ.; একমালু তাহযীবিল কামাল, ৮/৩৬; আল কামেল ফিয যোয়াফা, ৫/২৭৫ পৃ.)।
৭নং হাদীস ঃ
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺳﺮﻳﺢ ﺑﻦ ﻳﻮﻧﺲ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﺒﻮﺏ ﺑﻦ ﻣﺤﺮﺯ ﺑﻴﺎﻉ ﺍﻟﻘﻮﺍﺭﻳﺮ ﻋﻦ ﺍﺑﺮﺍﻳﻬﻢ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻓﺮﻭﺥ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ ﺻﻠﻴﺖ ﺧﻠﻒ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻓﻜﺒﺮ ﺳﺒﻌﺎ ﻭ ﺧﻤﺴﺎً .
মুসনাদে আহমদের বর্ণিত হাদীসের টিকায় বলা হয়েছে, হাদীসটি নিতান্ত যয়ীফ, কারণ এর সনদে মাহবুব ইবনে মুহরিজ একজন রাবী রয়েছে যিনি যয়ীফ। তদরুপ আর এক রাবী হলেন ইব্রাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ফররুখ তিনি মাজহুল। মাহবুব ইবনে মুহরিজ সম্পর্কে ইমাম দারা কুতনী বলেন, তিনি যয়ীফ (মিজানুল ই’তিদাল, ৬/২৮ পৃ ।
১০ নং হাদীস ঃ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺍﺣﻤﺪ ﺍﻟﺪﻗﺎﻕ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺨﺰﺍﺭ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺳﻌﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻤﻴﺪ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻓﺮﺝ ﺑﻦ ﻓﻀﺎﻟﺔ ﻋﻦ ﻳﺤﻲ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﻋﻦ ﻧﺎﻓﻊ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻓﻲ
ﺍﻟﺮﻛﻌﺔ ﺍﻻﻭﻟﻲ ﺳﺒﻊ ﺗﻜﺒﻴﺮﺍﺕ ﻭﻓﻲ ﺍﻷﺧﺮﺓ ﺧﻤﺲ ﺗﻜﺒﻴﺮﺍﺕ ـ
সুনানে দারা কুতনীর টিকায় বলা হয়েছে হাদীসটি যয়ীফ। কারণ ফরজ ইবনে ফুজালা ﺫﺍﻫﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ অর্থাৎ যয়ীফ। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. বলেন ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ইমাম নাসায়ী বলেন যয়ীফ। ইবনে যারীন বলেছেন তিনি যয়ীফ। এছাড়া আরও অনেকে যয়ীফ বলেছেন (দারা কুতনী, ২/৩৮৮ পৃ; তাকরীবুত তাহযীব ২/৮ পৃ. তাহযীবুত তাহযীব, ৮/২৬০ পৃ.)।
১২ নং হাদীস ঃ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﻦ ﻋﻤﺎﺭ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﺑﻦ ﻋﻤﺎﺭ ﺑﻦ ﺳﻌﺪ ﻣﺆﺫﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺍﺑﻲ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺟﺪﻩ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺳﺒﻌﺎً ﻓﻲ ﺍﻻﻭﻟﻲ ﻭﺧﻤﺴﺎ ﻓﻲ
ﺍﻻﺧﺮﺓ ـ
ইবনে মাজা শরীফের টিকায় বলা হয়েছে হাদীসটির সনদ যয়ীফ কারণ সনদে একজন রাবী হলেন আব্দুর রহমান বিন সামাদ তিনি যয়ীফ। ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন তাকে যয়ীফ বলেছেন (সুনানে ইবনে মাজা, ২/১০২ পৃ.; তাহযীবুত তাহযীব, ৬/১৮৩ পৃ.; তাহযীবুল কামাল, ৬/১৪৫ পৃ.; খুলাসাতু তাহযীবিল কামাল, ২/১৬৩ পৃ.)।
১৩ নং হাদীসঃ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻳﺤﻲ ﻋﻦ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﻳﻜﺒﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻭﺍﻻﺿﺤﻲ
ﻭﺍﻻﺳﺘﺴﻘﺎﺀ ﺳﺒﻌﺎ ﻓﻲ ﺍﻻﻭﻟﻲ ………… ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
হাদীসটি নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যায় যে, মুহাদ্দিস মুহাম্মদ রহ. প্রথমে হযরত আলী রাযি. এর আমল বর্ণনা করেছেন এরপর রাসূলুল্লাহ (স.) সহ আরো কিছু সাহাবাদের আমল বর্ণনা করেছেন। অথচ মুহাদ্দিস মুহাম্মদ রহ. আলী রাযি. সহ হাদীসে বর্ণিত সাহাবাদের কাউকেও দেখেননি। ফলে সনদের মধ্যে এনকেতা পাওয়া গেছে। আর সনদে এনকেতা পাওয়া গেলে হাদীস মুনকাতে হয়। মুনকাতে হাদীস যয়ীফ এবং অপ্রমাণযোগ্য হয়।
৬ তাকবীরের হাদীসের গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আরোপিত শর্তের জবাবঃ
১. লিফলেটে বলা হয়েছে, যে সকল হাদীসের সনদে হাদীস শাস্ত্রের ইমাদের কোন একজন আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন এমন কোন হাদীস দয়া করে পাঠাবেন না। এর জবাবে বলবো উপরের আলোচনার দ্বারা সর্ব সাধারণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা ১২ তাকবীরের পক্ষে যতগুলি হাদীস পেশ করেছে প্রত্যেকটি হাদীসের সনদে ইমামুল হাদীসগণ শুধু আপত্তি করেছেন তাই নয় বরং প্রত্যেকটি হাদীস যয়ীফ ও অপ্রমাণযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে। অতএব ৬ তাকবীরের হাদীসের জন্য এমন শর্ত আরোপ করার যৌক্তিকতা কি?
২. কোন সাহাবীর আমল ছয় তাকবীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে না বলা হয়েছে। অথচ তারা ১২ তাকবীরের পক্ষে ১৩টি হাদীস পেশ করেছে তার মধ্যে ৬টি হাদীস সাহাবাদের আমল সম্বলিত।
৩. তাকবীরাতে ঈদাইন অর্থাৎ ঈদের নামাযের অতিরিক্ত ৬ তাকবীর প্রমাণিত হওয়ার জন্য হাদীসে সরাসরি ৬ শব্দটি উল্লেখ থাকতে হবে এমন কথা বলা, আমি মনে করি নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ। কারণ অনেক হাদীসে দেখা যায় শরীয়তের কোন একটি বিধান বর্ণনা করতে গিয়ে একটি সংখ্যা বলা হয়েছে অথচ ঐ বিধানের ক্ষেত্রে ঐ সংখ্যাই নির্ধারণ করা হয় না। যেমন বিতিরের নামাযের রাকাতের ব্যাপারে হাদীসে ১৩, ১৫, ১৭ পর্যন্ত সংখ্যা পাওয়া যায় অথচ বিতিরের নামাজ ১৩, ১৫, বা ১৭ রাকাত এমন কেহ বলেননি (তিরমিজী শরীফ ১/১০৩ পৃ.) ।
অতএব বুঝা গেল ঈদের তাকবীর ৬টি প্রমাণ হওয়ার জন্য ৬ শব্দ হাদীসে সরাসরি উল্লেখ পেতে চাওয়া অবান্তর। ৮ বা ৯ সংখ্যা দ্বারাও ৬ তাকবীর প্রমাণ হতে পারে। ৮ থেকে যে ২ বিয়োগ হলে ৬ হয় এ অংক যারা বুঝে না তাদের সাথে কিসের আলোচনা।
ইবনে মাসউদ রাযি. এর হাদীসের উপর আপত্তির জবাব:
লিফলেটে বলা হয়েছ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযি.) এর হাদীস কে যদি দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাহলে সুরা নাস ও ফালাককে কুরআন শরীফ থেকে বাদ দিতে হবে, কারণ এ দুটি সুরাকে ইবনে মাসউদ রাযি. কুরআনের অংশ মনে করেন না। এক্ষেত্রে তাফসীরে ইবনে কাসীর ও তাফসীরে রুহুল মাআনী সহ কয়েকটি তাফসীরের কিতাবের উদ্বৃতি পেশ করা হয়েছে। প্রথমত: আমরা পূর্বেই বলেছি সাহাবাদের উক্তি যদি হাদীসে মারফুর বিপরীত না হয় তখন দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হবে। অতএব এক্ষেত্রে যেহেতু ইবনে মাসউদ রাযি. এর উক্তি ইজমায়ে সাহাবার বিপরীত অতএব সূরা নাস ও ফালাক কুরআনের অংশ হওয়ার ব্যাপারে ইবনে মাসউদ (রাযি.) এর মত দলীল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়ত: মাওলানা সাহেব স্বার্থ হাসীলের জন্য শুধু ﻻ ﺗﻘﺮﺑﻮﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ই দেখেছেন ﻭﺃﻧﺘﻢ ﺳﻜﺮﻱ আর দেখেননি। অর্থাৎ তিনি শুধু তাফসীরে ইবনে কাসীর ও তাফসীরে রুহুল মাআনীতে এটাই দেখেছেন যে, ইবনে মাসউদ (রাযি.) সূরা নাস ও ফালাককে কুরআনের অংশ মনে করেন না। তিনি ইহা আর দেখলেন না যে, তার পরে বলা হয়েছে ইবনে মাসউদ রাযি. এর নিকট সহীহ সনদে প্রথমে সূরা নাস ও ফালাক না পৌঁছার কারণে এমন উক্তি ব্যক্ত করেছেন। অতএব যখন সহীহ সনদে জানতে পারলেন যে, সুরা নাস ও ফালাক ও কুরআনের অংশ তখন প্রথম উক্তি থেকে ফিরে এসে জমহুরে সাহাবাদের মত গ্রহণ করেছেন। অতএব এখন আর কোন সংশয় বাকী রইল না (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৪/৭৪৪ পৃ:; তাফসীরে রুহুল মাআনী, ১৫/৬৫৩ পৃ ।
হানাফী ইমাম ও অন্যান্য আলিমদের আমলের জবাব:
* লিফলেটে বলা হয়েছে ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. বার তাকবীরের সাথে আমল করেছেন। এর জবাবে আমরা বলবো মাওলানা সাহেব এক্ষেত্রেও সর্ব সাধারণ কে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। তার কারণ তিনি এক্ষেত্রে বাদায়িউস সানায়ে, রদ্দুল মুখতার, দুররুল মুখতার ও শামীর হাওয়ালা দিয়েছেন। এখন আমরা মাওলানা সাহেবের কাছে প্রশ্ন করতে চাই, আপনি যেই রদ্দুল মুখতার, দুররুল মুখতার ও শামীর উদ্বৃতি দিয়েছেন সেখানে কি এ কথা উল্লেখ নেই যে, ﻭﺑﻪ ﺍﺧﺬ ﺍﺋﻤﺘﻨﺎ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ অর্থাৎ ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর ৬টি, এটা ইমাম আবু হানিফা, আবু ইউসূফ ও মুহাম্মদ রহ. এর যৌথ মত। এর পরে বলা হয়েছে ﻓﻔﻌﻼ ﺫﻟﻚ ﺍﻣﺘﺜﺎﻻ ﻟﻪ ﻻ ﻣﺬﻫﺒﺎً অর্থাৎ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর ১২ তাকবীরের উপর আমল মাযহাব হিসেবে নয়, কেবল নির্দেশ পালনার্থে। এর পর বলা হয়েছে ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻳﻮﺳﻒ ﺃﻧﻪ ﺭﺟﻊ ﺇﻟﻲ ﺫﻟﻚ অর্থাৎ ইমাম আবু ইউসূফ উক্ত আমল থেকে ফিরে এসে ৬ তাকবীরের আমল গ্রহণ করেছেন (রদ্দুল মুখতার, দুররুল মুখতার ও শামী ৩/৫৩-৫৪ পৃ।
* অতএব এক্ষেত্রে ইমাম আবু ইউসূফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর আমল দ্বারা দলীল পেশ করার কোন অবকাশ নেই। কারণ এটা তাদের চিরাচরিত আমল বা মত ছিল না। তারা আজীবন ৬ তাকবীরের সাথেই আমল করেছেন এবং উক্তি পেশ করেছেন।
* হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা ও আত্তালিকুল মুমাজ্জাদ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী ও আব্দুল হাই লক্ষেèৗভী রহ. ১২ তাকবীরে পক্ষে মত পোষণ করেছেন। এর জবাবে বলতে চাই যে ক্ষেত্রে লাখো হানাফী আলেম ৬ তাকবীরের সাথে রায় ব্যক্ত করেছেন, সেক্ষেত্রে দু’এক জন হানাফী আলিম ১২ তাকবীরের সাথে রায় পেশ করলেই কি লাখো হানাফী ওলামা কেরামের রায় কে পরিত্যাগ করতে হবে? দু’এক মাসআলায় এরকম দু’এক জনের মতবিরোধ থাকতেই পারে। আসল কথা হলো সহীহ দলীল প্রমাণে যেটাই প্রমাণিত হবে সেটাই সকলে গ্রহণ করতে বাধ্য। ৬ তাকবীরের হাদীস যেহেতু অধিকতর সহীহ প্রমাণিত হল তাই সকল হানাফী ওলামা কেরাম সেটা গ্রহণ করেছেন।
* ইমাম নববী ও আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. এর উক্তি দ্বারা দলীল পেশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বলবো তারা যখন ভিন্ন মাযহাব অবলম্বী তাই তারা ১২ তাকবীরের পক্ষে উক্তি ব্যক্ত করতেই পারেন কারণ তাদের মাযহাবে এই আমল চালু আছে। অতএব তাদের উক্তি ৬ তাকবীরের বিরুদ্ধে দলীল হওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
সার কথা: সুদীর্ঘ আলোচনার দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামায আদায় করা সম্পূর্ণ হাদীস মোতাবেক ও সহীহ। এটাকে হাদীস পরিপন্থী বা বিদআত বলার কোন অবকাশ নেই।
আল্লাহ সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন॥ (সমাপ্ত)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×