somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ছিন্ন খঞ্জনার মত যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়": সেদিন ইন্দ্রের সভায় ...(৩)

২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় জুতা নিয়ে ঢুকতে আমার খুব ভালো লাগে। ভালো লাগার কারণ হল আমার শূচীবাইগ্রস্ত মা এ-কাজটা একদম সহ্য করতে পারে না। আগে চেঁচাত, এখন চেঁচায়ও না।
কাজের মেয়েটা পরিষ্কার করে ফেলে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এই মহিলা কি করে একটা আস্ত গোসল-না-করা-বাচ্চাকে পেটে ধরেছিল!
আজ মা বাসায় আছে, বিরক্ত করার সুবর্ণ সুযোগ! আমি জুতা নিয়ে ডাইনিং পর্যন্ত চলে এলাম। মা-ও যথারীতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, আগুনে দৃষ্টি। টেবিল থেকে নিয়ে একগ্লাস পানি খেলাম। মা গ্লাসটার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন-'ইউ ফিলদি অ্যানিমল!' চেয়ারে বসে চেয়ারটা অপবিত্র করে দেবার পরবর্তী পরিকল্পনা আমার মাথায় উঁকি দিয়ে গেল।
-ঐ তমাল ছেলেটা ফোন করেছিল।
-কি বললে?
-বললাম বাড়িতে নেই।
আমি সাদা মেঝে নোংরা করে হেঁটে যেতে যেতে শুনলাম,'বাপের মত হয়েছে।'
মনে মনে বললাম,'হবই তো।'

মায়ের কথা ভাবতেই অবাক লাগে। কি করে বাবা এমন একটা মানুষের সাথে প্রেম করেছিল! অবশ্য সুন্দরী হলে সমস্যা ততটা না। মা এখনো সুন্দরী। একবার ডিভোর্সের পরও আমার মনে হয় মা'র জন্য ধর্ণা দেবার লোকের অভাব হয় না এখনো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু থমকে গেলাম, রোদে পোড়া মুখ, কামিজ আর ট্রাউজার্সে মাটি লেগে আছে-নিচে বসেছিলাম, পা ধুলি-ধূসরিত, চুল উসকো খুসকো................ দীর্ঘশ্বাস পড়ল- 'আসলেও বাবার মত!'

বিকেলে তমালের ফোন, খেতে যাবে গুলশানে। গাড়িতে উঠেই আমি জানালা খুলে দিলাম।
-গ্লাস নামিও না, ধুলো ঢুকবে।
-ঢুকুক। দম বন্ধ হয়ে আসে গাড়ির ভিতর।
-এসি ছেড়ে দেব।
-লখা মিয়া, এসিতে আমার সমস্যা হয়, আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে।
তমাল ক্ষুণ্ণ হয়ে বলল, লখা মিয়া আবার কে?
-তুমি। লখিন্দর থেকে লখা। হাঃহাঃহাঃ.... কিংবা একটু ইংলিশ সিস্টেমে ল্যাকস...... হাঃ হাঃ হাঃ
ও একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
..............................
বড়লোকি রেস্টোরেন্টে ঢুকলে আমি কেমন জানি মিইয়ে যাই। উঁচু উঁচু দেয়াল, পরিষ্কার চেয়ার টেবিল আর ঝকঝকে ওয়েটারদের চকচকে হাসি...... কেমন যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলি, এসির হাওয়ায় ঠান্ডা হয়ে যাই.............. বেরিয়ে এসে মুক্ত মুক্ত লাগে।
-তমাল, তুমি হঠাৎ আজকে এই রেস্টোরেন্টে এলে কেন? কিছু বলতে চাচ্ছিলে?
-হুমম... তুমি অনেক ইন্টেলিজেন্ট।
-চল কড়াই-গোস্ততে যাই। যাবে? গিয়ে তুমি কি বলতে চাও বলবে। খরচ আমার।
-'খরচ আমার' 'খরচ আমার' করবে না। চল।
-ওকে, লখা।
...............................
আমার ভ্যাকেশান শেষ হয়ে গেছে অনেকদিন। ভাবছি নেক্সট সেমিস্টারে শুরু থেকে ক্লাস করব। ভ্যাকেশান গেল, সেমিস্টারও গেল....
-তোমার শিকড় খুঁজে পেলে?
-ইটস নট আ জোক....
-ওহ, ভুলেই গিয়েছিলাম। বেহুলার খবর কি? তার খোঁজ পেলে?
-উফ..............
...................................
ছোটবেলায় পরীক্ষায় একবার ফেল করে খুব ফাঁদে পড়েছিলাম। মার টার খেয়ে, বকা শুনে চুপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।
বাবাও চুপ, মা-ও চুপ, আমিও চুপ। আমি ভাবতে লাগলাম, হয়ত আমি এখনই ঘুম থেকে উঠে দেখব পুরোটাই একটা দুঃস্বপ্ন, আসলে পরীক্ষাই হয়নি-কিছুই হয়নি। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে বারান্দায় বসে আকাশ দেখতে দেখতে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তমালের চলে যাবার প্রস্তুতিটাও হয়ত তেমন কোন দুঃস্বপ্নের অংশ।

আমার কোন বন্ধু নেই। মানে আছে, আবার নেই। অফিসিয়ালি আছে। যাদের সাথে আড্ডা দেই, গ্রুপ ওয়ার্ক করি। অথচ যাদের সাথে খুব সতর্ক হয়ে চলতে হয়। সত্য কথা হল মেয়েদের সাথে আমার সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। আমি শাড়ি-চুড়ি-হিন্দী সিরিয়াল আর ছেলেদের নিয়ে ফ্যাসিনেশানে ভুগি না। ছেলেদের সাথে খুব সতর্ক হয়ে মিশতে হয়, এদের হালকা কথার আড়ালে জেলাসিটা যে মারাত্মক সেটা মাঝে মাঝে টের পাই। নিজেদের ওরা করে হিংসা আর মেয়েদের দেখে নিচু করে।

তমাল চলে গেলে কি হবে আমি ভেবে পাই না। ছয়টা মাত্র মাস অথচ মনে হয় কতদিনের বন্ধুত্ব! আমার একমাত্র বন্ধু ও। বন্ধুর চেয়েও বেশি কখনো কখনো। ওকে আমি পছন্দ করি কিনা কখনো কখনো ভাবতে চেষ্টা করি-নইলে ওর চলে যাবার আশঙ্কা আমাকে এত বিচলিত করবে কেন? আবার বিষয়টা এমনও হতে পারে-যেহেতু আমি নিঃসঙ্গ এবং বন্ধুহীন, সেহেতু ওকে আমার প্রয়োজন। ছয় মাসে আমি ওর উপর মানসিকভাবে অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছিল আমাদের মধ্যে, সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত কে জানে...............

(টু বি কনটিনিউড)...............
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:২৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×