somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ছিন্ন খঞ্জনার মত যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়": সেদিন ইন্দ্রের সভায় ...(৪)

২৩ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.......................................
এদিকে ঘোরাঘুরি থেমে নেই। আজ আশুলিয়া তো কাল ফ্যান্টাসি কিংডম...... পরদিন হয়ত সাভার। এর মধ্যে ওর সাথে ময়নামতি থেকে ঘুরে এসেছি।
মা বাধা দেবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভালো করেই জানত পারবে না।
...............................
ধানমন্ডি লেকের পাড়ে পা ছড়িয়ে বসে আমরা। ওর টিকেট হয়ে গেছে, ফ্লাইটের তিন দিন বাকি।
কাঠফাটা রোদ উঠেছে। একটা একটা করে পাথর লেকের পানিতে ছুঁড়ে মারছি, কতদূর পাঠাতে পারি দেখছি।
ও বলল,
-শোন
-হুঁ......
-থাক, কিছু না।
-আমার মুড ভালো আছে, বলে ফেল।
-থাক পরে বলব নাহয়...
-কি তোমার যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলবে?
-না....
- তোমার সেই সাদা বান্ধবীর ব্যাপারে কিছু বলতে চাও... কি যেন নাম... ক্যাথি না কি যেন...
-ক্যাথরিন? না....
-ক্যাথরিন জিটা জোনস? আমি কাঠ কাঠ শব্দে হেসে উঠলাম।
-তুমি কি ক্যাথিকে পছন্দ কর না?
-জিজ্ঞেস করতে চাও জেলাস কি না? তা বলতে হয় কিছুটা জেলাসই হয়তবা....
-সেটা কেন?
-জানি তবে বলতে চাচ্ছি না....
এবারের পাথরটা কাছেই পড়ল....
ও বলল,'আচ্ছা...'
-কি?
-কিছু না....

দু'জনে পাথর ছোঁড়া প্রতিযোগিতা করলাম কিছুক্ষণ। কোন কথা নাই, কেবল পানিতে পাথরের শব্দ। ক্লান্ত হয়ে অবশেষে থামলাম।

-তমাল।
-হুঁ।
-তুমি কি ক্যাথিকে পছন্দ কর?
-তুমি এতক্ষণ ওকে নিয়ে ভাবছিলে?
-আমার প্রশ্নের জবাব দাও।
-পছন্দ করি, তবে বন্ধু হিসেবে। মানে she is okay as a friend.
-ও তোমাকে অনেক পছন্দ করে, না?
-হুঁ, ও একটু অবাক হল,'তুমি জানলে কি করে?'
-আমি হাসলাম,'বোঝা যায়, বুঝলে, বোঝা যায়.....'
-ওখানে ও আমার ফার্স্ট ফ্রেন্ড। অবশ্য তুমি আমার হোল লাইফের ফার্স্ট ফ্রেন্ড। ও হাসল।
-তোমার কি খালি মেয়ে ফ্রেন্ডই জোটে, জনাব রমণীমোহন? চোখ টিপলাম আমি।
বুঝল না ও।
-কি?...রমণী... নাহ, ফ্রেন্ডই জোটে না, আবার মেয়ে ফ্রেন্ড... ও ঠোঁট উল্টাল।

দু'জনই চু্প।
-আর তোমার সেই শিকড়-বাকড় পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত? বলে আমি পিচিক করে থুতু ফেললাম (এই প্রসঙ্গটা আসলেই আমি থুতু ফেলার কাজটা করি, ওর প্রতিক্রিয়া দেখি)।
-হুউউম... sort of.... পুরো না...
-কোথায় পেলে?
ও আমার দিকে তাকাল একটা মুহূর্ত। আমি আবার পাথর ছোঁড়ায় মনোযোগ দিলাম।
-আমার মনের মধ্যে পেলাম, in my heart- ও বুকে হাত দিয়ে বলল- যেমনটা তুমি বলেছিলে.....
-ওওওও আচ্ছা! তা শিকড় ধরে কে টান দিল যে ফিরে যাচ্ছ ওখানে?
-উঁহু, শিকড় তো হৃদয়ে, ওখান থেকে কে টানবে?
-তুমি আজকাল ভালো বাংলা বলা শিখেছ- 'হৃদয়'! আর মাস কয়েক থাকলে শিক্ষা পুরো হবে, বাছা! আমি চোখ টিপলাম।
-কিন্তু সেটা তো হবে না। তিনদিন পর ফ্লাই করতে হবে।

আমি মনোযোগ দিয়ে পাথর বাছতে বাছতে বললাম,
-ফিরে না গেলে হয় না?
ও চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,
-আচ্ছা, তুমি তোমার আর আমার রিলেশনটাকে কিভাবে এক্সপ্লেইন কর?
-তুমি কিভাবে কর? পাল্টা প্রশ্ন করলাম আমি।
-জানি না- ফ্রেন্ডশীপ?
-আমাকে জিজ্ঞেস কর না, তুমি নিজেই বল।
-কি জানি, মোর দ্যান ফ্রেন্ডশিপ, লেস দ্যান লাভ.... কিন্তু.... আচ্ছা, তোমার অপিনিয়ন কি?
-সেইম... বললাম আমি।

দু'জনই চুপ।

-আমি এখানেই থেকে গেলে তুমি খুশি হও?
-হুঁ।
-কেন?
-সিম্পল, আমার আর কোন বন্ধু নাই।
-এটা ছোঁড়া বন্ধ কর।
-না।
তুমি কি জানো, তুমি ... মানে কি বলব... তুমি অন্য মেয়েদের মত না.. আই মিন স্ট্রং, শার্প অ্যান্ড বোল্ড...আর....
-মানে বলতে চাচ্ছো আমি মেয়েলি না পুরুষালি?
-না, না, ঠিক তা না... তবে তোমার মধ্যে কিছুটা ম্যান ভাব আছে।
-হুমমম.. সেটা আমি জানি।
-আচ্ছা তোমাকে কোন ছেলে কখনো প্রপোজ করেছে?
-না।
-কেন করে নাই জানো?
-হ্যাঁ জানি। আমি সুন্দরী না, রোদে পোড়া কালো, ঢং টং করতে পারি না মোটেও.... তার উপর আবার ছেলেদের মত শিস বাজানো, চোখ টেপা- এইসব তো আছেই...
-তুমি জানোই না... তুমি কি জানো যে, প্লাটিনাম-ডায়মন্ড কম বিক্রি হয়? তার মানে কি সেগুলো কম দামি? যাদের এগুলো কেনার সামর্থ্য নেই, তারা গোল্ড কেনে। তোমার আশপাশের ছেলেরা তোমার কাছে আসার মত সাহসী না।
-আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছ?
-না.....
-হুঁ, শুনলাম, বুঝলাম, তবে মানতে পারলাম না। অবশ্য মিথ্যা হলেও তোমার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগছে না -বললাম আমি।
-মিথ্যা না। ইটস টাইম ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড ইওরসেলফ।
-আই ডু আন্ডারস্ট্যান্ড মাইসেলফ....
-নো, ইউ ডোন্ট...

আবার অনেক্ষণ চুপচাপ।
হঠাৎ ও বলল,
-তুমি একবার বলেছিলে তোমার ম্যারেড লাইফে আস্থা নেই।
-হুঁ, বলেছিলাম।
-তারমানে কাউকে পছন্দ করলেও তাকে তুমি বিয়ে করবে না?
-সেটা সময়ই বলে দেবে। বিয়ে করব -এমনটা ভাবি না আমি।
-তার মানে তুমি লিভ টুগেদার পছন্দ কর?
-নাহ....
-তাহলে?
-জানি না...
এখন তোমার জানা উচিৎ।
-কেন?
-ধর, তোমার আমার মধ্যে যদি প্রেম থাকত আর আমি বলতাম আমাকে বিয়ে করতে, তুমি কি করতে তখন?
-কথা এদিকে আসবে তা আমি ভাবি নি। বিয়ের উপর আমার আস্থা নেই। বাবা মাকে সুখী হতে দেখিনি। বিবাহিত মানুষকে কখনো সুখী দেখিনি। তাই বলে লিভ টুগেদার পছন্দ করি তা নয়। ওটা হল ওপেন চুরি, দু'জনই পিছনে দু'টো দরজা খোলা রাখে। এদিক থেকে যারা বিয়ে করে তারা ভালো, বন্ধনকে তারা ভয় পায় না। কিন্তু সুখি হয় কে?
কেউ না।

খেয়াল হল ও উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে।
-জানি না। কি করতাম জানি না। বলতে পারব না। তবে বোধহয় না আমি বিয়ে করতে চাইতাম।

অনেকক্ষণ নিরবতা...........

হঠাৎ বললাম,
-আচ্ছা আমি যদি তোমার জন্য জন্য বেহুলা হই?
-হয়ো না.......
-কেন?
-জোর করে হয়ো না, পরে অনুতাপ করবে....সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বলল ও।
লেকের পানিতে শেষ পাথরটা ছুঁড়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম,
-চল, যাই।
-চল।
(টু বি কনটিনিউড...)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×