somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ছিন্ন খঞ্জনার মত যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়": সেদিন ইন্দ্রের সভায় ...(৫)

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.......................................
বাসায় এসে দেখি- বাসা খালি। এত ক্লান্তি লাগছে যেটা বলার বাইরে। পুরো বাসা ফাঁকা। ভালোই হয়েছে। ভীষণ জোরে তারছিঁড়া হার্ডরক গান লাগালাম। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করলাম। কি যে বলতে চাই , কি যে আমার কষ্ট- নিজেকেও পরিষ্কার করে বলতে পারলাম না..... পাছে বলতে গিয়ে আরো বেশি কষ্ট পাই!
........................................
আবার সেই ছাদ,
আবার সেই চাঁদ,
আবার সেই রাত।
আবার আমরা দু'জন।

-তুমি গান জানো?
-হুঁ, জানি, তবে শুনতে বোধহয় ভালো লাগবে না। তুমি জানো?
-জানি, তবে বাংলা না।
-ও।
-আচ্ছা...... তোমার প্রিন্স চার্মিং কেমন? আমাকে বল তো।
-মিস জিটা জোনস তোমাকে তার প্রিন্স চার্মিংয়ের কথা শুনিয়েছে, না মিস্টার ল্যাকস?
-হুঁ, বলেছিল একদিন......
-আমি বলব না।
-বল না প্লিজ......
-বলা যাবে না....
ও ঘুরে আমার দিকে মুখ করে দাঁড়াল,
-আচ্ছা, তোমরা মেয়েরা এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে চাও না কেন?
-উমম....ওকে, আমি বলব।
-বল।
-আমার দেখা কোন পুরুষের মত না, একদম আলাদা।
-কেমন?
-খুব ভালো..... অনেকটা..... অনেকটা.... রূপকথার ডালিমকুমারের মত.... সোনার কাঠি, রূপার কাঠি থাকবে যার হাতে..... কিংবা স্লিপিং বিউটির প্রিন্সের মত, যে আসার পর শতবছরের ঘুমও ভেঙে যায়....
-আচ্ছা, দেখতে কেমন হবে?
-উমম.... সুন্দর.....
-শুধু সুন্দর?
-নাহ, চেহারায় স্পার্ক থাকতে হবে যেন চেহারায় মনটা ফুটে ওঠে, হাসিখুশি , এইতো.... আররর... আর একটা ব্যাপার, এত বেশি সুন্দর হবে না যে অন্য মেয়েদের আকাঙ্খার পাত্র হবে, সেটা আমার ভালো লাগবে না.....
এইখানে এসে ও শব্দ করে হেসে ফেলল।
আমি কিছু বললাম না।
ও বলল,
-হুমম... তুমি পাবে।
-কি পাব?
-একদিন তোমার প্রিন্স চার্মিং ঠিকই তোমার কাছে চলে আসবে।
-তুমি কি এই কথা ক্যাথিকেও বলেছ?
-না...
-তুমি আসলে এমন একজন কে চাও যার জন্য তোমার কোন কিছু করতেই দ্বিধা থাকবে না, এমনকি বিয়েও.. রাইট?
-হাঁ। রাইট। ওহ, বাই দ্য ওয়ে, তোমার বেহুলার সন্ধান মিলল?
- পেয়েছি আবার পাইনি।
-সেটা আবার কেমন?
-বেহুলা ঠিকই পেয়েছি, দ্যাটস ওকে উইথ ইট। তবে আমি তার যোগ্য না, লখিন্দর হবার যোগ্য আমি না, এটা বুঝতে পেরেছি। সে আরো বেটার ডিজার্ভ করে।
-কার কথা বলছ?
-তোমার কথা বলছিলাম।
-হল না, আমি তো বিয়েই করব না, তার আবার কষ্ট করে প্রাণ বাঁচানো! হুঁহ!
-প্রাণ না বাঁচাও, আমার শিকড় বাকড়ের সন্ধানটা তো দিতে পেরেছ। এটাই বা কম কিসে?
-তাকালাম ওর দিকে,
-আমি কবে শিকড়ের সন্ধান দিলাম?
-শিকড়টা আমার মনের মধ্যে -এটা তুমি আমাকে বুঝিয়েছ। আমি যে একজন বেহুলা টাইপ মেয়ে চাই- সেটা বুঝিয়েছ।
-তো তার মানে শেষ পর্যন্ত তুমি এদেশ থেকে কি নিয়ে যাচ্ছ?
-এটা- বলে ও থুথু ফেলল।
-আর এটা- বলে হাস্যকরভাবে চোখ টিপল।
হাঃ হাঃ হাঃ
হেসে উঠলাম একসাথে।
...........................................
রাত দু'টো হবে বোধহয়। ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল- তমাল।
-হ্যালো, ওর গলাটা খুব সতেজ শোনাচ্ছে।
-বল।
-ভেবে দেখলাম.............
-কি?
-ভেবে দেখলাম, মিস্টার লখা বেহুলা ম্যাডামকে ছেড়ে একা কোথাও যেতে চাচ্ছে না!
-কি?
-হাঃ হাঃ হাঃ
-তার মানে তুমি যাচ্ছ না?
-না, কি করে যাই বল.... অ্যাই, আমি তোমাদের ছাদে, বাতাসে আমার চুল উড়ছে, চেহারায় স্পার্ক দেখা যাচ্ছে আর আমার হাতে কি জানো? একটা সোনার কাঠি আর একটা রূপার কাঠি............ বিলিভ ইট, জাস্ট লাইক ইওর প্রিন্স চার্মিং......... হাঃ হাঃ হাঃ
-তুমি এত রাতে আমাদের ছাদে! বল কি!
-ইয়েস ম্যাডাম। তুমিও চলে আসো.......
-আমি আসছি.... রীতিমতো লাফিয়ে উঠলাম।
কোনমতে ফোনটা রেখেই অন্ধকারে হাত বাড়ালাম, সুইচটা কই? এত ভালো লাগছে যে কি বলব!
হাতড়ে হাতড়ে সুইচ খুঁজছি.... তাড়াতাড়ি যেতে হবে....
কিন্তু সুইচ আর পাচ্ছি না..... আর পাচ্ছি না......

ঘুমটা ভেঙে গেল। বারান্দার ইজি চেয়ারে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। চাঁদটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। রাত কত হবে? সবকিছু এত অন্ধকার কেন? হাত দিয়ে দেখি চোখের কোণে শুকনো অশ্রুর ধারা। অবাক হলাম।
শেষ কবে কেঁদেছি?
বাবা মায়ের ডিভোর্স হবার আগে। ভীষণ কেঁদেছিলাম, এত বেশি যে বাবা মারা যাবার পরও কাঁদতে পারিনি। এখন অবশ্য বড় হয়েছি, সহজভাবে নিতে শিখেছি, বুঝতে শিখেছি; তাই আর কাঁদি না। কেঁদে কি হবে, দু'জন মানুষ ঘর বেঁধেছিল টেকাতে পারেনি- এইতো।

ছোটবেলায় যেখানে সেখানে শুয়ে পড়লে মা কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিত। টের পেলেও ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতাম। কোলে উঠতে মজা লাগত। বারান্দায় ঘুমাচ্ছি, অথচ দেখার কেউ নেই- ভেবে হঠাৎ মায়ের উপর খুব অভিমান হল। তারপর হঠাৎ সশব্দে হেসে উঠলাম, মা তো বাসায়ই নেই- ট্যুরে গেছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বাবাকে মনে পড়ল,'বাবা, দেখছ নাকি? আমার খুব মনটা খারাপ, কি করি বল তো? শুনছ নাকি ... বাবা.... তারার দেশটা কেমন, বল তো? এখানে আমার বড় কষ্ট, ওখানে তো আকাশ ভরা তারা, ওদেশটা কেমন, বাবা? ওখানেও কি খুব একা মানুষেরা থাকে? নাকি সবাই খুব সুখী? কেমন? খুব কি ভালো?
.................................................
(টু বি কনটিনিউড).....
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৩২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×