গতকাল সন্ধ্যায় একবার বেরিয়েছিলাম চা খাওয়ার জন্য, উদ্দেশ্য এলাকার কিছু জুনিয়রের সাথে সাক্ষাৎ। কিন্তু চা এর দোকানের একটা সুবিধা হল, দুনিয়ার সব শ্রেনীর আবাল বৃদ্ধ বনিতাদের একসাথে পাওয়া যায়, আর তা যদি হয় মোড়ের দোকানে, তাহলে তো কথাই নেই। যাহোক, প্রায় ৮ বছরের আনাগোনা আর মেডিকেলে পড়ার সুবাদে মোটামুটি সবাই পরিচিত, অথবা নাম না জানলেও মুখ চেনা বলা যায়। চা খেতে খেতে এক জুনিয়রের সাথে কথা বলছিলাম, জুনিয়র এবার ADMISSION দিবে মেডিকেলে, ২য় বারের মত। পাশ থেকেই এক দাদু জিজ্ঞাসা করলেন...
=কি খবর ডাক্তার সাহেব, আপনারা দেখি আজকাল মারামারিও করেন...
-কেন দাদু? আপনাকে ডাক্তাররা কেউ মেরেছে নাকি?
= না না, আমাকে কেন মারবে। ভুল ডাক্তারি করবে, আবার সেইডা সংবাদে লিখছে বলে সাংবাদিকরে মাইর দিছে। ডাক্তার মা’র দিলো কেন? (দাদুর এলাকায় বিশেষ পরিচিত বলে উৎসুক বয়ষ্ক কয়েকজন তখন দাদুর দিকে সমর্থন দিয়ে উত্তরের প্রত্যাশায় আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যে, আমি নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি)
-দাদু, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
=কি আর বলবা, এমন ডাক্তার আমি বাপের জন্মে দেখি নাই, ওরা আবার পিটাপিটি করে।
-দাদু, আপনি নাকি ট্যাক্স ফাকি দিয়ে চুরি করে বাড়ি করতেছেন?
=কে বললো? আমি এসব করি না। (উত্তেজিত দেখায় দাদুকে)
-যদি পত্রিকায় দেখাতে পারি?
=তা হবে কেন, পত্রিকায় এসব লিখলে তো মান সম্মান শেষ।
-এইতো, এতক্ষনে লাইনে আইছেন। (দাদু চোখ বড় বড় করে আছেন )
=???(কিছু বলেন নি)
-আপনি যা করেননি, তা যদি পত্রিকায় আসে কেমন লাগবে আপনার?
=আমি যা করি না, তা আসবে কেন?
-হ্যাঁ, এই জন্যই, ডাক্তাররা সাংবাদিক পিটাচ্ছে। কিছু না জেনে না বুঝে ডাক্তারদের নামে উল্টাপাল্টা রিপোর্ট লিখছে সাংবাদিকরা। প্রতিবাদ করলে কাজ হচ্ছে না, তখনি পিটানি দিচ্ছে। আপনি তো রেগুলার পত্রিকা পড়েন। কোনদিন দেখেছেন এমন কোন রিপোর্ট যে, “মৃত্যুর দূয়ার থেকে ডাক্তার ফিরিয়ে এনেছে কাউকে”? দেখেছেন?
=না, দেখিনি।
-তার মানে কি, রোগিরা কোনদিন সুস্থ হয়না?
=(কিছু একটা বুঝেছেন মনে হল দাদু, মাথা ঝাকালেন উপর নিচে কয়েকবার)
-সাংবাদিকরা কি পাশ করে সাংবাদিক হয়, জানেন?
=জানি, ssc বা বড়জোর HSC. (দাদুর ধারনা দেখে চমকিত হলাম )
-আমরা ১০ বছর ধরে পড়েও যা ঠিকমত বলতে পারি না, আর ওরা না পড়েই বলে দেয় “ভুল চিকিতসায় রোগীর মৃত্যু” এটা কি ঠিক?
=মোটেই ঠিক না, মোটেই ঠিক না (দাদু এবার আরো উত্তেজিত হয়ে যান, এতক্ষনে খেয়াল করি নাই, ওখানে আরো কিছু লোকজন দাঁড়িয়ে গেছে।)
-এবার আপনি বলেন দাদু, ব্যাপারটা ঠিক আছে কি না। সবাই তো ডাক্তারের কাছে যায়, মা’র খায় খালি সাংবাদিক। কেন? এবার আপনিই বলেন।
=হ্যাঁ, দাদুভাই। তুমি ঠিকই বলেছো।
-আবার মনে করেন, কেউ আপনার বাসায় এসে, আপনার খেয়ে, আপনার পরে আপনারই গায় যদি হাত তোলে, তাকে কি আপনি ছেড়ে দিবেন? নাকি জামাই আদর করবেন?
= হুম দাদুভাই, জামাই আদর করব, তবে অন্যভাবে।
-আমরাও সেইটা একটু আপনার মত অন্যভাবে করি, কিন্তু দোষ হয় সব সাংবাদিকের।
=তোমার কথা তো সবই বুঝলাম দাদু, কিন্তু আগেও তো এমন হত, তখন তো ডাক্তাররা সাংবাদিক পিটাইতো না।
-আগে একটা কাঠি ভাঙতো, আওয়াজ কেউ শুনতে পেত না, এখন অনেকগুলো একসাথে ভাঙে, তাই একটু শব্দ হচ্ছে, এই আর কি।
কিছুক্ষন মাথা ঝাকালেন দাদু, তারপর আরেকদাদু কে ডেকে বললেন, আমার ডাক্তার দাদুভাই তো ঠিক বলেছে দোস্ত, আমরাই তো ভুল বুঝি। শালার মাথামোটা সাংবাদিক। এই জন্যই শুধু মা’র খায় সাংবাদিকরাই। আমার বৌমাও একই কথা আমাকে বলছিলো (উনার বৌমা ডাক্তার), কিন্তু বিশ্বাস করিনি, আজ দাদু তোমার কথা শুনে মনে হল, ঠিকই তো আছে। সবশেষে দাদুকে আরেকদিন এবিষয়ে কথা বলবো বলে কথা দিয়ে এলাম। রাস্তা পার হয়ে দেখি, দাদু আরো কয়েকজনকে নিয়ে বসছেন। নিশ্চয় কিছু বলবেন, নতুন কিছু অজানা সত্য, সত্যিকারের সত্য...হলুদ কলমের খোচায় বানোয়াট ভণ্ডামীভরা মিথ্যে না...
১০০% জনগনকে পুরোপুরি না পারলেও এভাবে অন্তত কিছু জনগোষ্ঠিকে আসল সত্যটা জানাতে পারি সহজেই, হোক না শুরু সেটা পাড়ার, মোড়ের বা গলির চা এর ছোট্ট দোকান থেকেই...
[কোন সাংবাদিককে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়, তবে এটা দেখে যদি কারো নিজের ইতিহাসে, বা আতে ঘা লাগে তার জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন, আমি নই, কারন চোরের মনই তো পুলিশ পুলিশ, নাকি?]