মানুষের বিশ্বাস একটা জটিল ধাঁধা। কোনদিক দিয়ে কে কিভাবে কাউকে বিশ্বাস করে ফেলে বলা বা জানা মুশকিল।
একটা সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে টানাপড়েন তৈরী হবার জন্য এই “বিশ্বাস” এ আঘাত টাই যথেষ্ঠ। আর আঘাতটা যদি ঠিকঠাক মত হয়, তাহলে কোন কথাই নেই... কোন কিছুই থাকবে না, কিছুই না, থাকবে শুধু দেখাদেখি বা চোখাচোখি বা মোবাইলের ডায়াল নম্বরের লিষ্টে একটা নাম, আর ভরা মেসেজ বক্স... সাথে কিছু আবেগ...
ক্যাম্পাস থেকে বাসায় আসার দিন দেখি একব্যাচমেট (ছেলে, এবং কাপলের একজন) বিরস মুখে ডক্টরস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে চা গিলছে। একা পেয়ে জিগাইলাম “কিরে, তোর অর্ধাঙ্গীনী কই?” কিছু বললো না, শুধু একটা ছোট্ট দীর্ধশ্বাস ফেলে বলে “আচ্ছা দোস্ত, আমি কি সবসময় মুখে মাস্ক আর চোখ কাপড় দিয়ে বেধে রাখবো?” এহেন প্রশ্ন শুনে নির্বাক হতে হতে চোখে মুখে একটু জিজ্ঞাসু ভাব ফুটানোর চেষ্টা করলাম। আবার শুরু করলো “এক জুনিয়রের সাথে চা খেতে খেতে কথা বলছিলাম দেখে সে আমার সাথে কথা তো বলেই না, ফোনও রিসিভ করে না, আবার মেসেজ দিছে “গুড লাক” লিখে, জুনিয়রের সাথে কথা বলা মানেই কি আমি জুনিয়রের সাথে .....(!?!?!)..... করছি?”
বিশ্বাসের অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে খবর আছে...
আবার একজনের কাছে শুনলাম, “আমি তো আমার ওনাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাই, যা বলি তাই করে, আর তাই না করলে কি বিশ্বাস থাকে, তুইই বল।”
কইলাম “জানিনা দোস্ত, মাফ কর ”
অনেকে বলেন, একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে অনেক সময় লাগে, কিন্তু ভাঙতে একটুও সময় লাগে না, এক মিনিটই যথেষ্ঠ। আমি এ মতবাদের ঘোর বিরোধী। যে বিশ্বাসের ভীত মজবুত, সে বিশ্বাস এতো সহজে ভাঙে না, অথবা কখনোই ভাঙে না...আর ঠুনকো লোক দেখানো বিশ্বাস প্রচার হয় বেশি, কিন্তু বাতাসেই ভেঙে যায়, অনেক খালি কলসির ঐ প্রবাদটার মত...
আরেকটা ব্যাপার হল, একটা সম্পর্কের মাঝে সাধারনত তৃতীয় কারো প্রবেশ না হলে এমন ভাঙ্গাভাঙ্গির কারবার সহজে হয় না, সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে ফেলাই সবচেয়ে ভালো। তাতে তৃতীয় কারো নাক গলানোর সুযোগ কম থাকে। কারন “আমার চেয়ে আমার সম্পর্ক ভাল আর কেউ জানে না, সে ভালো হোক বা খারাপ।”
বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে মনে করে, বাসায় ফিরে বালিশে নাক মুখ ডুবিয়ে যদি কান্না বন্ধ করতে বা তার স্মৃতিগুলো ভোলার চেষ্টা করেও না পারা যায়, ছাদে একা একা বসে থাকতে থাকতে একসাথে কাটানো সময়গুলো বড্ড বেশি তাড়া করে, মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে কারো ফোন পাওয়ার অপেক্ষা করা যায়, তবে অবশ্যই বোঝা উচিৎ, বিশ্বাস ভাঙেনি, একটু ঝড় উঠিয়ে জানান দিয়ে গেলো “প্রিয় মানুষটাকে আরেকটু শক্ত করে ধরো।”
সে সময়টা আসলে একটু শক্ত করেই ধরা উচিৎ...প্রিয় মানুষের হাত টা একটু শক্ত করে তো ধরাই যায়... যায় না???