somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ব্যাতিক্রমী সংসদ সদস্য এম এ মান্নান

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সে দিন ছিলো শুক্রবার। বেলা বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোয়ালাবাজার এলাকার আশারকান্দি নয়াবন্দর পয়েন্ট। ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি মাঝারী মানের যাত্রীবাহী বাস এসে থামলো। বাসের দরজা খুলতে দেখা গেলো এম পি মান্নান। একটি বিবর্ণ কালো রংয়ের ব্যাগ হাতে বাস থেকে নেমে আসলেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। ব্যাগে রয়েছে প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়। এসেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির খোঁজে ছুটে গেলেন একে একে বেশ কয়েকটি মুদি দোকানে। নিজে দাম-দর করে কিনে নিলেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ড্রাইভার টনিক মিয়া ও পিএস জুয়েল আহমদ চলেন তাঁর সাথে সাথে মুদি দোকানে। সব সময়ই সাদামাঠা চলাফেরা করেন তিনি। বাসায় ভোরে ঘুম থেকে ওঠে রুটি আর সবজি খেয়ে কলাবাগান থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় বাস কাউন্টারে এসে টিকেট কেটে উঠে পড়েন গাড়িতে। তারপর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নয়াবন্দর পয়েন্টে এসে নামেন। নয়াবন্দর পয়েন্ট হতে মেট্রো গ- ১৭-৭৫৮১ তার নিজের লক্কর-ঝক্কর গাড়িটি দক্ষিণ গোয়ালাবাজার রোড ধরে ঢাকা ভমবমী,ছয়হারা,সৈয়দপুর,সাহারপাড়াসহ গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে এগিয়ে চলল। গাড়িতে নেই কোন উন্নতমানের আসন, গান শোনার ব্যবস্থা, এসি বা বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা। পথ যেতে যেতে শতশত মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন তিনি। মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে এলাকাবাসীর সমস্যা শুনে দ্রুত সমাধানের পথ বাতলে দেন। ওমরপুর গ্রামের জামে মসজিদে শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে আরও আধ ঘন্টা সময় মানুষের সমস্যার কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। তারপর শুরু হয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের দেখভাল । তাকে বহনকারী গাড়িটি পিচঢালা পথ মাড়িয়ে গ্রামের মেঠোপথ ধরে ছুটে চলে জনপদের হতদরিদ্র মানুষের কাছে। গাড়ি থেকে নামা মাত্রই তাকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় মানুষ, তাদের নতুন নতুন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তাঁর কাছে । এরই মাঝে বেজে ওঠে তার মুঠোফোন। আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষানিকক্ষণ কথা বলে আবারও কাজে মনোযোগী হন। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলে তার গণসংযোগ। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের পৈতৃকভিটায় পৌঁছে দেখা গেলো অফিস ভর্তি লোকজন। আবারও চলে সাধারন মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শোনা। তাদের সাথে কথা বলার সময় দেখা গেলো যে সুনামগঞ্জ - ৩ আসনের এমন কোন মেঠোপথ নেই যেখানে তার পায়ের চিহ্ন পড়েনি। কোন গ্রামের কোন হাওর,রাস্তাঘাট সবই তার চিরচেনা। পৌষের কনকনে ঠান্ডায় তার গায়ে ছিলো মাঝারি মানের সোয়েটার, গলায় মাফলার, মাথায় কডক্যাপ। এগুলো গায়ে দিয়ে তিনি চষে বেড়ান জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত জনপদ। ছুটে চলেন এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ আর প্রান্তিক কৃষকদের কাছে।
মহাজোট সরকারের দুই বছরে তিনি একটি রাতও সার্কিট হাউজে কাটাননি। একজন সংসদ সদস্যদের প্রাপ্য বেতন-ভাতার সুযোগ সুবিধার বাইরে ভোগ করেনি কোন বিশেষ সুযোগ। সপ্তাহের ৩ দিন ঢাকায় আর ৪ দিন এলাকায় এভাবে কেটে গেছে ২ বছর। একমাত্র ছেলে ব্যাংকার সাদাত মান্নান সস্ত্রীক যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। মেয়ে ডাঃ সারাহ্ মান্নান স্ব-পরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। স্ত্রী জুলেখা মান্নান ঢাকায় হলিক্রস কলেজে শিক্ষকতা করেন। তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় প্রথমে রয়েছে তাজা ছোটমাছ আর সবজি। গ্রামের লোকজন তাকে সচিবসাব, ডিসিসাব আর সমবয়সীরা ডাকেন মান্নান। ষাটোর্ধ্ব সংসদ সদস্য মান্নান শৈশবে ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের পি এ এফ স্কুল (সারগোদা) ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ও লেভেল পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ,১৯৯১ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর,১৯৯২ সালে ফ্রি ইউনির্ভাসিটি অব ব্রাসেলস ও বেলজিয়াম থেকে সার্টিফিকেট ইন ম্যানেজমেন্ট ডিপ্লোমা পাশ করেন। ১৯৭৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, জেলা-প্রশাসক,যুগ্মসচিব,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডিজি, জেনেভা দূতাবাসের ইকোনোমিক মিনিস্টার,নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব,বিসিক এর চেয়ারম্যানসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৩ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। প্রগতিশীল মনের এ মানুষটির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুুুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস।
গণমানুষের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি সদাপ্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়ন করা তার এই মূহুর্তের ভাবনা। আমৃত্যু মানুষের কাছে একজন অতি সাধারণ জনপ্রতিনিধি হয়ে বেঁচে থাকতে চান তিনি। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মেহনতি মানুষ এখনও বিশ্বাস করে তার মতো সৎ,দক্ষ,র্নিলোভ জনপ্রতিনিধি কে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব দিলে মহাজোট সরকারের সাফল্য ও সফলতা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে। একের পর এক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে মান্নান ছুটে চলেছেন গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ থেকে সচিবালয় পর্যন্ত। তাঁর সাথে রয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মীবাহিনী ও এলাকার মানুষ।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×