somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফলিত বিজ্ঞান বনাম মৌলিক বিজ্ঞান।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতির অধ্যায় দিয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে প্রথম পরিচয়। প্রথম দেখাতেই প্রেমের মতই, নবম শ্রেণীর প্রথম থেকেই পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার শুরু। গতি, জড়তা, আলো, শব্দ, তরল পদার্থ, তরঙ্গ, তড়িৎ শক্তির অঙ্কগুলো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো লাগায় নতুন মাত্রা যোগ করে। একসময় মনে মনে সিদ্ধান্তও নিলাম ব্যাচেলর ডিগ্রী পদার্থ বিজ্ঞানেই করবো। রাবি, ঢাবি তে পদার্থ বিজ্ঞানের জন্য মেধা তালিকায় স্থান ও নিশ্চিত করলাম কিন্তু ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে ও পথ মাড়াতে পারলাম না। ফলশ্রুতিতে দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকলো। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশলে পড়াকালীন পদার্থ বিজ্ঞানের ২টা কোর্সেও আহামরি কিছু করতে পারিনি।

ফলিত বিজ্ঞানের জয়জয়কারের এই যুগে মৌলিক বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের প্রজন্মের বিমাতা সুলভ আচরণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর বিরূপ প্রভাব ইতিমধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মত বিষয়গুলো প্রথমদিকের শিক্ষার্থীদের এখন আর আকৃষ্ট করতে পারছে না। এর প্রধান কারণ ফলিত বিষয় থেকে স্নাতক শেষ করেই চাকুরীর নিশ্চয়তা আর অন্যদিকে মৌলিক বিষয়ে স্নাতক শেষে চাকুরীর অনিশ্চয়তা। এটা সত্য মৌলিক বিষয়ে স্নাতক পরবর্তী স্নাতকোত্তর না করে চাকুরীর চিন্তা করাটাও এক প্রকার পাপ। স্নাতকোত্তর শেষে বেশিরভাগ গ্রাজুয়েট শিক্ষকতা কে পেশা হিসাবে বেছে নিতে বাধ্য হয় উপযুক্ত চাকুরী/গবেষণার সুযোগের অভাবে। শিক্ষকতা,বি সি এস নির্ভর হয়ে পড়ে অধিকাংশই, ক্যারিয়ার শুরু হয় অনেক দেরিতে। আর এগুলোই মৌলিক বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের প্রজন্মের আগ্রহ সৃষ্টির প্রধান অন্তরায়।

মৌলিক বিষয়ে স্নাতক করে উচ্চ শিক্ষায়/গবেষনায় নিজেকে নিয়জিত করার হার ও দিনকে দিন কমছে। শিক্ষাজীবন শেষে দ্রুত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তাড়নায় অপেক্ষাকৃত মেধাবীরা পছন্দের তালিকায় রাখছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইলেকট্রিকাল, স্থাপত্য সহ অন্যান্য ফলিত বিষয় গুলিকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে মেধা তালিকায় স্থান করতে না পারলে দ্বারস্থ হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বিষয়ে ভর্তি হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে।

আমি নিজের কথায় বলি, পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থাকা শর্তেও কেনো স্নাতকের বিষয় হিসাবে নিতে পারিনি?? এর একটায় কারণ চাকুরীর অনিশ্চয়তা। আমার গার্ডিয়ান, শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রাধান্য দিয়েছেন পেশাজীবনকেই, আর এর ফলেই মৃত্যু হয়েছে আমার ভালোবাসার, আমার স্বপ্নের। আর এটাও সত্য আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে গবেষণা থেকে দ্রুত ফলদায়ক চাকুরীকে গার্ডিয়ানরা প্রাধান্য দিবেন এটাই বাস্তব।

পৃথিবীকে বিজ্ঞানের বিপ্লব শুধু এবং কেবল মাত্র মৌলিক বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার দিয়েই সম্বব। ফলিত বিজ্ঞানের উন্নয়নও যেখানে মৌলিক বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল সেখানে অবশ্যয় এদিকে সকলের সুদৃষ্টি দিতে হবে। মৌলিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দিতে হবে, সৃষ্টি করতে হবে চাকুরী বাজারের, চালু করতে হবে গবেষণাগার, গবেষণায় বাড়াতে হবে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ। সরকারের উচিত হবে মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা।

আজকের প্রথম আলোর নিবন্ধ দেখে আমার ফ্ল্যাশ ব্যাকটা হলো। সত্যিই উপযুক্ত প্রণোদনা পেলে অজস্র সেলিম শাহরিয়ার তৈরি হবে আমাদের দেশ থেকে। টুপি খোলা অভিবাদন অধ্যাপক সেলিম শাহরিয়ারকে তাঁর দুনিয়া কাঁপানো মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×