সেবার কর্নফুলী ভ্রমনের সময় টিমটিমে কুপির আলোয় এক কাপ চা খেয়েছিলাম টং এর দোকানে। আজো নিরিবিলি চা খাওয়ার সময় নাকে ভেসে আসে কুপির ঘ্রাণ। কলিজার ভেতর কোথাও হাহাকার করে কুপির আধো আলো আধো ছায়ায়, চায়ের কাপে টুনটুন শব্দ তোলা এক কাপ চায়ের জন্য।
তারপর গিয়েছিলাম বান্দরবন। কাঠ ফাটা রোদে পুড়তে পুড়তে ভাবছিলাম, আহ! যদি একটু বৃষ্টি হত। দখিনের আকাশ কালো করে মেঘ নামল, একপাশে রোদ, একপাশে বৃষ্টি, মেঘ হাতে ছুয়ে দেখেছি। দেখেছি দূর আকাশের সর্পিল সাদা বিদ্যুত কিভাবে ধরণীতে নেমে আসে। এখনও বৃষ্টির শুব্দ শুনলে, যেন হারিয়ে যাই সেদিনের বরষায়।
বাঁশখালীর এক বিলে কাটানো একটা দুপুর যেন আমার সকল একলা শহুরে দুপুরের সঙ্গী। মাইলের পর মেইল সোনালী ধানক্ষেত, এর মাঝে নারিকেল গাছের ছায়ার তলে একটা ছোট্ট মাচা। সে মাচায় পা দুলিয়ে বসে নীল আকাশের পানে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মাথা ঝিমঝিম করে। দু একটা নেশাগ্রস্থ চিল শূন্যে ডানা মেলে ক্লান্ত দুপুরের আকাশে ভেসে থাকে স্থির!
এই সেদিন ঘুরে এলাম সমুদ্র পাড় থেকে, গভীর রাতের আকাশে ছিল রাশি রাশি তারা। শিল্পীর তুলিতে আঁকা সাদা মেঘগুলো একখণ্ড দু খণ্ড করে ভেসে ভেসে এসে পুরো আকাশ কালো করে দিল। শত সহস্র মাইল দূরে চমকানো বিজলির শব্দহীন আলো যখন মেঘে প্রতিফলিত হচ্ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল লুকিয়ে এই দৃশ্যের আলোকচিত্র তুলে রাখছে মহাকালের আলোকচিত্রি।
আজ বসে বসে জোয়ার ভাটার খেলা দেখছিলাম পতেঙ্গায়। সন্ধে হয়েছে মাত্র, ফিনফিনে হাওয়া।
একটি বিমান দু ডানা বাতাসে ভাসিয়ে এগিয়ে চলছিল ঐ গোলাপি দিগন্তে।
পাথরে জোয়ার আছড়ে পড়ার শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে জ্বলছিল নিভছিল বিমানের বাতিগুলো। সেই ছন্দময় আলো সমুদ্র জলে প্রতিফলিত হয়ে পিছু নিয়েছিল ঐ বলাকার।
আমি ভাবি, আর ভেবে যাই।
আমার মত অন্য একজন পথিক হয়ত,
এখানে,
ঠিক এমনি করে বসেই ভাববে একথাগুলো।
আমরাতো মহাকালের মুসাফিরমাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২৮