somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের নির্বাচন ও আমরা

২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি শুধু ২২ মার্চের ভোটাভুটি। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না ভোটের দিন কী ধরনের পরিবেশ বিরাজ করবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না। তবে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা পর্বে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের একটি বিকৃত ধরনের নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের আশঙ্কা


প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলো তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক মনোনয়ন-বাণিজ্য। আমাদের দেশে অতীতেও মনোনয়ন-বাণিজ্য ছিল, কিন্তু তা ছিল ওপরের স্তরে, মূলত সংসদ নির্বাচনে। লাখ লাখ, এমনকি কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ আমরা শুনেছি। অতীতে এ ধরনের অভিযোগ ছিল বড় বড় নেতার বিরুদ্ধে এবং এগুলো ছিল অনেকটা গুজবের মতো। কারণ, এ ব্যাপারে কেউ কখনো মুখ খোলেনি এবং কারও বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগও আনেনি। তবে এর ব্যাপকতা সম্পর্কে অনেকের মনেই কোনো সন্দেহ নেই। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মনোনয়ন-বাণিজ্যের কারণেই আমাদের জাতীয় সংসদ এখন ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত এবং রাজনীতি চরমভাবে কলুষিত।
এবারকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ কিন্তু গোপনে, রাখঢাক করে, আকারে-ইঙ্গিতে বা ফিসফিস করে তোলা হচ্ছে না। এগুলো এখন সরবে, সুস্পষ্টভাবে এবং নামধাম উল্লেখ করে উচ্চারিত । খবরের কাগজ খুললে প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের অভিযোগ চোখে পড়ে এবং ভুক্তভোগীরাই এসব অভিযোগ তুলছেন।
এটি স্পষ্ট যে আমাদের দেশে রাজনীতি এখন একটি লাভজনক ব্যবসা। মূলত, মনোনয়নের বিনিময়ে লেনদেনই আমাদের রাজনীতিকে এখন একটি ‘অনন্য’ বা ব্যতিক্রমী ব্যবসায়িক খাতে পরিণত করেছে। চাল-ডালের ব্যবসার মতো এতে কোনো পুঁজি লাগে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্য যে এবারকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ ধরনের ব্যবসায়ের পরিধি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তৃণমূল পর্যায়ে নতুন একদল ‘ব্যবসায়ীর’ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা যে এর চর্চা সংক্রামক ব্যাধির মতো ভবিষ্যতে রাজনীতির সব স্তরে আরও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
টাকা দিয়ে বা বস্তুগত কিছুর বিনিময়ে ভোট কেনাবেচার সংস্কৃতি আমাদের দেশে বহুদিন থেকেই চলে আসছে। তবে এবারকার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্যের বিস্তৃতি আমাদের নির্বাচনে টাকার খেলাকে আরও ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা এখন সত্যিকার অর্থেই ‘বেস্ট ডেমোক্রেসি মানি ক্যান বাই’ বা টাকা দিয়ে কেনা যায় এমন উত্তম গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়েছি। অর্থাৎ, আমাদের রাজনীতি এখন কলুষতার দিক থেকে ষোলোকলায় পূর্ণ হলো।
এবারকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত দিক হলো পেশিশক্তির প্রয়োগ ও সহিংসতার প্রত্যাবর্তন। অতীতেও আমাদের নির্বাচনে হানাহানি ও সহিংসতার সমস্যা ছিল। নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ক্ষেত্র ছাড়া এসব সহিংসতা সাধারণত ঘটেছে নির্বাচনের দিনে এবং জয়-পরাজয়ের উত্তাপে। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তাতে কোনো উল্লেখযোগ্য সহিংসতা বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কটি নির্বাচনেই সহিংসতা একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এটি বেসামাল পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার কারণে অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে (বাংলাদেশ প্রতিদিন,১২ মার্চ ২০১৬)। অনেক আগে থেকেই এগুলো শুরু হয়েছে এবং অনেকের আশঙ্কা যে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, যা আমাদের সামাজিক সম্প্রীতিকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অন্য একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দিক হলো বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনে রয়েছে চেয়ারম্যান পদে দলভিত্তিক নির্বাচনের একটি অর্বাচীন সিদ্ধান্ত। কোনো ধরনের ভাবনাচিন্তা না করে,মনোনয়ন দেওয়ার পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ না করেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার হচ্ছে। যেমন, ক্ষমতাসীনদের দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাংসদদের কোনো ধরনের ভূমিকা না থাকার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তাঁরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, দলীয় নেতাদের সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাংসদ (যিনি মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য) এককভাবে মনোনয়ন দেন, জেলা পর্যায়ের নেতারা যা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন দেওয়ার বাঁধাধরা কোনো পদ্ধতি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই দলের পরীক্ষিত, এমনকি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিরা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে মনোনয়ন পেয়েছেন ক্ষমতাধরদের অনুগত ও তাঁদের ঘনিষ্ঠজনেরা।
প্রসঙ্গত, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন-প্রক্রিয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সুস্পষ্ট করা আছে, যদিও আমাদের বিদ্যমান যথেচ্ছাচারিতার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো উপেক্ষাই করে আসছে।
এটি সুস্পষ্ট যে ক্রমবর্ধমান মনোনয়ন-বাণিজ্য এবং মামলা-হামলা ও সহিংসতা আমাদের একটি বিকৃত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের বিকৃত নির্বাচন আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে পারে না। আর যখন নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন নির্বাচন আর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পন্থা হিসেবে থাকে না এবং নাগরিকেরা এর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে, যার পরিণতি অশুভ হতে বাধ্য। এ এফ এম শাহ আলম বনাম মুজিবুর রহমান মামলার রায়ে [৪১ ডিএলআর(এডি)(১৯৮৯)৷ বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী আমাদের সুস্পষ্টভাবে হুঁশিয়ার করেছেন যে বিকৃত বা ভোটারবিহীন নির্বাচন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×