বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। গত বছর জুলাইয়ে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অর্থের অবৈধ লেনদেন ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে। বড় অংকের জরিমানা দিয়ে শেষ রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে এইচএসবিসি। তবে এ ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশে এর কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ায় সংকটে পড়ে যায় ব্যাংকটি।
অনেক গ্রাহকই আতঙ্কে তাদের হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন। অবশেষে হোচট খেয়ে বাংলাদেশে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পায়তারা করছে এইচএসবিসি। ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক দূর চুড়ান্ত করেছে আন্তজার্তিক এ ব্যাংকটি।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এইচএসবিসি রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম আরেকটি বিদেশি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা চলছে।
তবে জানতে চাইলে ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এটি নিছক গুজব। এমন কোন সিদ্ধান্ত আপাতত নেই এইচএসবিসির।
সূত্র মতে, গত বছরের ১৭ জুলাই সন্ত্রাসে অর্থায়নের অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের সাথে এইচএসবিসির সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে যুক্তরাষ্ট্রে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে প্রথম শাখা খোলে এইচএসবিসি। সর্বশেষ তথ্য মতে, এখন বাংলাদেশে মোট ১৩ টি শাখা রয়েছে। এছাড়া প্রায় অর্ধশত বুথ রয়েছে। এর বাইরে বেশ কিছু গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোতে সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে বিদেশি এই ব্যাংক।
এইচএসবিসির অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র দাবি করেছে, সংকটের কারণে তারা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে তাদের বাজার নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছে না। তবে এখান থেকে গুটিয়ে নিয়ে ব্যাংকটি ভিন্নরকম অজুহাত সামনে নিয়ে আসছে। তারা বলতে চাইছে, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সঙ্কটে পড়বে। এ নিয়ে তারা একটি গবেষণা করেছে। এসব বিবেচনা করে তারা মূলতঃ এদেশ থেকে চলে যেতে চাইছে।
অন্যদিকে ব্যাংকটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, মূলত সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগের পরই তারা সঙ্কটে পড়ে যায়। এবং ঘটনার প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। গ্রাহকরা ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় ভালো ব্যবসাও করতে পারছে না। এর ফলে ব্যবসা বন্ধ না করে প্রতিষ্ঠানটির সামনে আর কোন বিকল্প থাকছে না।
সূত্র মতে, এই ব্যাংকের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংক মেক্সিকোর মাদক ব্যবসার অবৈধ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবাজারে ঢুকিয়ে দেওয়ার সুযোগ পায়। ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত মার্কিন সিনেটের একটি উপকমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে এমন একটি প্রতিবেদন দেয়। এরপর শুনানি শেষে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়। যার পথ ধরে সড়ে দাড়ান এর তৎকালীন প্রধান নির্বাহী। মানিলন্ডারিং বিরোধী আইন পালনে শৈথিল্য দেখানোর অভিযোগে ইউরোপের বৃহত্তম ব্যাংক এইচএসবিসিকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার জরিমানা করে মেক্সিকো।
অন্যদিকে, অর্থ পাচারের আরেকটি অভিযোগে বিট্রিশ এইচএসবিসি ব্যাংক পিএলসি ১৮০ কোটি ডলার জরিমানা করে যুক্তরাষ্ট্র।
সিনেটের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবের আল রাজি ব্যাংক, বাংলাদেশের দুটি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন পরিচালনার পথ করে দিয়েছে এইচএসবিসি। এইচএসবিসির যুক্তরাষ্ট্র শাখা (এইচবিইউএস) এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এইচএসবিসির ২৪টি শাখায় বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের হিসাব আছে। ২০০০ সালে ওই ব্যাংকটির জন্য এই হিসাব খোলার অনুমতি চাওয়ার পরপরই অর্থের অবৈধ ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন ওঠে।
সূত্র জানায়, এনিয়ে মার্কিন সিনেটে ব্যাপক নিন্দা শুরুর পর ২৬ জুলাই মেক্সিকো ব্যাংকির বিরুদ্ধে জরিমানা করে।
বাংলাদেশের অনেক আমদানি-রফতানিকারক সরাসরি বহুজাতিক এ ব্যাংকটির সঙ্গে জড়িত।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ২০ মার্চ, ২০১৩।
এসএআর/এমএমকে
এখানে দেখুন