somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতি সহজ ভাষায় বিবর্তনের ব্যাখ্যা (ডারউইনকে গালি দেবার আগে জানুন তার থিওরী)

২০ শে আগস্ট, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Fact- 01
প্রতিটি প্রানি বংশ বৃদ্ধি করে গুনিতক হারে। ম্যালথাস যাকে বলেছেন জ্যামিতিক হারে। জীব বিজ্ঞানে এটিকে জনন-অপব্যয়িতা বলা হয়।

ব্যাখ্যা-
আপনার একুরিয়ামে যে গোল্ড ফিস আছে সেটা একবারে এক হাজারের বেশি ডিম পাড়ে। বলা বাহুল্য সবচেয়ে অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশেও একটা গোল্ড ফিসের এক হাজার বাচ্চা বেচে থাকতে পারবে না।
একটা মাছি একবারে ডিম পাড়ে ১২০-১৫০ টি ডিম।
একটা ঝিনুক পাড়ে একশ মিলিয়ন ডিম।
ফিশন পদ্ধতিতে একটি ব্যাক্টেরিয়া ভেঙ্গে দুইটা পরিনত হয় মাত্র বিশ মিনিটে। ছয় ঘন্টায় একটা ব্যাক্টেরিয়া থেকে ২,৬২,১৪৩ টা হয়ে যাবে। চব্বিশ ঘন্টার ভিতর এই সংখ্যা হবে 4.72 E+21 ।

fact ০১ এর সাথে একমত না হবার কোন যৌক্তিক কারন নাই। যদি একমত হন এরপর দ্বিতীয় fact এ চলে আসি।

fact-০২
বার্ষিক সামান্য হ্রাস বৃদ্ধি এবং মাঝে মাঝে বড় রকমের হেরফের ছাড়া একটি নির্দিষ্ট স্থানে জীবের মোট সংখ্যা কম বেশি একই থাকে কারন একটি সুস্থিত পরিবেশে সম্পদ( খাদ্য, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, পরিবেশ ইত্যাদি) সীমিত থাকে।

ব্যাখ্যা-
একটি সীমানা দ্বারা রক্ষিত বনের ভিতর গাছের সংখ্যা সারা বছর একই থাকবে। একটি কৃত্রিম বনে আপনি চাইলেই ইচ্ছে মত ঘন করে গাছ লাগাতে পারবেন না। যদি চেষ্টা করেও থাকেন, সীমিত সংখ্যক গাছই টিকে থাকবে। বাকিরা বড়ই হতে পারবে না।

একইভাবে প্রানীর ক্ষেত্রেও বলা যায়, সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব বাড়তে পারে না। ধরা যাক, একটা এলাকায় দুইটা বাঘ থাকে, আপনি আরো দুইটা এনে ছেড়ে দিলেন।বাঘ বেড়ে যাওয়ায়, হরিনের উপর চাপ পড়বে। বেশি সংখ্যক হরিন মারা গেলে, হরিনের সংখ্যা যাবে কমে। ফলাফল। বাঘের যখন বাচ্চা হবে কিছু সংখ্যক বাঘের বাচ্চার অনাহারে মারা পড়তে হবে। দুই বা তিন জেনারেশন বাঘের ভিতরই সংখ্যাটা আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

এই দুইটা তথ্যে যদি আপনার আপত্তি না থাকে, তবে আমি প্রথম অনুসিদ্ধান্তে চলে আসি।

অনুসিদ্ধান্ত-১
একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যতগুলো প্রানী বেচে থাকতে পারে তার থেকে অনেক বেশি জীব জন্মায় এবং যেহেতু বসাতুতন্ত্রের অমোঘ নিয়মে জীবের সংখ্যার বড়সড় হেরফের হয় না, সেহেতু বেচে থাকার জন্য বা টিকে থাকার জন্য প্রতিটি জীবের মধ্যে তীব্র সংগ্রাম চলে। ফলে প্রতিটি প্রজন্মের(জেনারেশনের)ভিতর মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ টিকে থাকে।

ব্যাখ্যা-
একটা গোল্ড ফিসের কয়টা বাচ্চা বেচে থাকে বলে আপনার ধারনা?
টিকে থাকার এই সংগ্রামকেই ডারউইন বলেছেন জীবন সংগ্রাম। প্রতিটা জীব তার নিজের প্রজাতির সাথে বা অন্য প্রজাতির সাথে টিকে থাকার জন্য নিত্যই সংগ্রাম করে চলেছে।

fact ০৩
যৌন জননে জন্ম নেয়া যেকোন দুইটি জীব কখনোই এক নয়। জ়িব জগতে তাই একই জীবের ভিতর হাজার হাজার ভ্যারাইটি দেখা যায়।
ব্যাখ্যা-
বেচারা ডারউইন বা ওয়ালেস জিন কি জিনিস সেটা জানত না। তাই কষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছে। এখন আমরা সবাই জানি মিয়োসিস বিভাজনের সময়েই জিনে মিউটেশন ঘটে যায়। সুতরাং কখনোই একই জীবের দুইটা সন্তান বা বংশধর পরিপূর্নভাবে এক হবে না। ব্যাক্টেরিয়া থেকে মানুষ –সব জীবের ক্ষেত্রেই এটা সত্য।
fact-০৪
fact তিনে উল্লেখিত ভ্যারাইটি গুলো অনেকটাই বংশানুসৃত হয়।
ব্যাখ্যা-
এটার ব্যাখ্যা করার আসলে প্রয়োজন নাই। বাপ-মা থেকে যে জিন পাওয়া যায় , বংশধর সেই রকমই হবে।
অনুসিদ্ধান্ত-০২
যেহেতু একই জীবের প্রজাতির অনেকগুলা ভ্যারাইটি তৈরী হয়(fact-০৩-০৪) এবং যেহেতু জীবের সমস্ত বংশধর টিকে থাকতে পারে না( অনুসিদ্ধান্ত-০১ অনুযায়ী) সেহেতু বলা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারাইটিগুলোর ভিতর যেটি যোগ্য শুধুমাত্র সেটিই টিকে থাকবে।

ব্যাখ্যা-
এটিই বিখ্যাত প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব- “ survival of the fittest”

ধরা যাক, আপনি চিকন আর লম্বা লাউয়ের একটা জাত তৈরী করতে চান। আপনি বাজার থেকে কয়েকজাতের লাউয়ের চারা কিনে নিয়ে আসলেন। আপনার বিশাল বাগানে লাগালেন শখানেক গাছ। ফল হবার পর দেখলেন আপনি যেটা চাচ্ছেন- লম্বা আর চিকন লাউ- সেইটা ধরেছে মাত্র দুইটা বা তিনটা গাছে। আপনি সেই গাছ দুই- তিনটা থেকে- যেই লাউটাকে মনে হল পারফেক্ট- শুধু সেই লাউটার বিচি জমিয়ে রাখলেন। পরের বছর একশ চারাই লাগালেন সেই লাউয়ের জমানো বিচি থেকে। এবারের লাউ ধরল। সব কয়টাই চিকন আর লম্বা। আপনি সেগুলো থেকে যেটা পারফেক্ট বা আপনার ইচ্ছার সাথে সবচে বেশি মিলল শুধু সেই লাউটা রাখলেন।
এভাবেই প্রতি বছর লাউয়ের ভিতর সবচে চিকন আর লম্বা লাউটারই শুধু চাষ করতে লাগলেন। বছর দশেকের ভিতর দেখা যাবে আপনার বাগানের লাউ সম্পূর্ন নতুন জাত। এত চিকন আর লম্বা আর কারোই লাউ নয়।

এই পদ্ধতিকে বলা হয় কৃত্রিম নির্বাচন। আপনি প্রতিটা জেনারেশনে সবচে চিকন আর লম্বা লাউ বেছে নিয়েছেন। আস্তে আস্তে আপনি মোটা বেটে লাউ থেকে কাংখিত চিকন আর লম্বা লাউয়ে চলে গিয়েছেন।

ধরা যাক ঢাকার মশার কথা। এক সময় এখানে যে মশা ছিল তা কয়েলের কারনেই মারা যেত। সহজ হিসাব করি। ধরা যাক, ঢাকায় মাত্র একশ মশা বেচে থাকার মত মানুষ আছে। জেনারেশন০১ এর মশারা অবশ্যই একশর বেশি ডিম পাড়ছে। কিন্তু মূককীট থাকতেই বা আরেকটু বড় হয়ে অনেক মশা মরে গেছে। শেষ পর্যন্ত একশ মশাই জেনারেশন ০২ এ আসতে পেরেছে। জেনারেশন ০১ যে মশা ছিল সেগুলো কয়েলের সামান্য ধুয়াতেই মারা যেত। কিন্তু জেনারশন ০২ এ শুরুতে হয়ত ১২৫ টা মশা ছিল। এর ভিতর ৫ টা প্রাকৃতিক মিউটেশনের কারনেই হয়ত একটু বেশি সহ্য ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে। ১২৫ টা থেকে যখন ১০০ টা টিকে থাকছে তখন দেখা গেল অই পাচটাই টিকে গেছে। বাকি ১২০ টার ৯৫ টা বেচে গেছে। এই পাচটা ডিম পাড়ল। ৯৫ টাও পাড়ল। এইবার ০৫ টা থেকে জেনারেশন ০৩ এ ১৫ টা টিকে গেল আর সাধারন আসল ৮৫ টা। এইভাবে আস্তে আস্তে হয়ত আশি-নব্বই জেনারেশন পর দেখা যাবে, মশাগুলার সবকয়টার সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে। এরা অন্য জেলার মশা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। লম্বা সময় ধরে পরোক্ষভাবে সহ্যক্ষমতা বেশি এই রকম মশা নির্বাচন করে করে আমরা মশার নতুন একটা ভ্যারাইটি তৈরী করে ফেলতে পারছি। সময় পেলে নতুন একটা প্রজাতি বের হয়ে আসতেও পারে।

পঞ্চাশ বছরে যদি মশার এই হাল হয়, হাজার বছরে কি হতে পারে তার ধারনা করুন। যেভাবে সাধারন মশা থেকে উন্নত(!) মশায় রূপান্তর ঘটল, হাজার বছর ধরে প্রকৃতি একটু একটু করে সরল জীব থেকে জটিল জীবের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
মোটামুটিভাবে এইটাই ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব। ( আমি যতটুকু বুঝছি আর কি। আমি ইঞ্জিনীয়ার মানুষ। জীব বিজ্ঞানে দুর্বল। এখানে কোন অসঙ্গতি থাকলে তার জন্য আমি দায়ী- ডারউইন না। )

সূত্র-
Origin of species http://www.gutenberg.org/etext/2009
প্রজাতির উৎপত্তি- ম. আখতারুজ্জামান ( অতি কুৎসিত অনুবাদ)

এ. আর. ওয়ালেস এর তিনটা অনুসিদ্ধান্তের আদলে লেখা। তিন নম্বরটা জরূরী মনে না হওয়ায় এবং জোস কমে যাওয়ায় লিখলাম না।( আমি বড় অলস মানুষ। )

৩৬টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×