রমাদান শুরু হওয়ার পর থেকে তারাবিহ সালাতের রাকাত সংখ্যা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে । ০৮/২০ কোনটা হবে ? হানফি বা মাযহাবী আবার আহলে হাদিস বা সালাফী ? কিন্তু তারাবিহ নিয়ে আমার ভিন্ন চিন্তা রয়েছে ।
আমি শুরুতেই তারাবিহ শব্দটার সাথে একমত নই । কেননা কুরআন ও হাদিসের পরিভাষা এটি নয় । হাদিসের পরিভাষা হল কিয়ামুল লাইল । তাই তারাবিহ নয়, বরং কিয়ামুল লাইল বলাটাই সুন্নহ সম্মত ।
রাসুলুল্লাহ স: রমাদান ও রমাদানের বাইরে কিয়ামুুল লাইল করতেন । তিনি অধিকাংশ সময় ০৮ রাকাত আদায় করতেন । অবশ্য রমাদানে তার আমল সম্পর্কে আলাদা কোন বর্ননা পাওয়া যায় না । কিন্তু সাহাবীদের পক্ষ থেকে ২০ রাকাতের দলিল পাওয়া যায় । একদিকে রাসুলের ০৮ রাকাত অন্যদিকে সাহাবিদের ২০ রাকাতের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যে, কিয়ামুল লাইলে রাকাত সংখ্যা গুরুত্ব পুর্ন নয় । এবং তা শরীয়া প্রণেতা দ্বারা নির্ধারিতও নয় । আর তার পিছনের মৌলিক কারন হচ্ছে, কিয়ামুল লাইল হচ্ছে নফল ইবাদাত , এটি ফরজ নয় । সুতারং ঐচ্ছিক বিষয়ের দাবিই হচ্ছে তার বিষয়ে বান্দাকে স্বাধীনতা দেয়া ।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, রাসুল সা: কেন অধিকাংশ সময় ০৮ সালাত আদায় করতেন? কেন তিনি ০৬/১০/১২/১৪ বা তারও বেশি আদায় করতেন না ? এর মৌলিক কারন বুঝতে হলে আমাদেরকে রাসুল সা: এর অভ্যাস দেখতে হবে । আল্লাহর রাসুল সা: স্বাধারনত সালাতুল ইশা আদায় করেই ঘুমিয়ে যেতেন । এবং রাতের অর্ধেক বা দুই তৃতীয়ংশ শেষ হলে কিয়ামুল লাইল করতেন । ফলে তার কিয়ামুল লাইল এর সময়ের পরিমান হত বেশ দ্বীর্ঘ । আমরা অনুমান করলে তা প্রায় ২-৩ ঘন্টা । তিনি এই লম্বা সময়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে সময়কে ভাগ করেছেন । কিছু সময় তেলাওয়াত , কিছু সময় রুকু , সিজদা এবং তাশাহুদে কাটান । ফলে শারিরিক ও মানসিক ভাবে তিনি থাকেন শক্তিশালি । এবং তা আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার পথে বেশ সহায়ক ।
সুতরাং রাসুলের সা: নিয়মিত অভ্যাস থেকে আমরা যে মৌলিক সুন্নত বুঝতে পারি তা হল, কিয়ামুল লাইলের সংখ্যা বিবেচ্য বিষয় নয় ; বরং বিবেচ্য বিষয় হল কত সময় ধরে কিয়াম করা হচ্ছে । টাইম ইজ ইমপর্টেন্টে । এখন আপনি যদি ২/৩ ঘন্টার বেশি সময় ধরে সালাত আদায় করেন তাহরে ০৮ রাকাতের বেশি আদায় করুন । আবার যদি ০১ ঘন্টা বা তার চেয়ে কম সময় কিয়াম করেন তাহলে ০৮ রাকাতের কম আদায় করুন । তাই কিয়ামুল লাইলের রাকাত নির্ভর করছে আপনার সময় দানের উপর ।
আমাদের কে একথা ভাল করে বুঝতে হবে যে , সালাত আদায় মানে কেবল হুটহাট ওঠা বসার নাম নয় । কিংবা না বুঝে তেলাওয়াত করে যাওয়ার বিষয় নয় । বরং তা হচ্ছে মহান মালিকের সাথে তার বান্দার এক গভীর ভালবাসার মিলন । এক ধরনের ভাবের বিনিময় । সুতরাং তারাহুড়া করে সালাত আদায় করার নাম কিয়ামুল লাইল হতে পারে না । তাছাড়া একথা সত্য যে, নফল সালাতের উদ্দেশ্য ফরজের মত নয় । এখানে দায়িত্ব পালন থেকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির চিন্তা বেশি । তাই স্বাধারনত নফল সালাতে সময় ও মনযোগ বেশি দেয়ার দাবি করা হয় । এখন আপনি যদি তাড়াহুড়া করে তা আদায় করেন তাইলে সম্পর্ক কিভাবে উন্নয়ন সম্ভব ? আবার কেউ কেউ কিয়ামুল লাইল থেকে তারাবিহ নামে আলাদা সালাতের আবিষ্কার করেন । বস্তুত এমন টা করার সুযোগ নেই । আবার অনেকেতো কিয়ামুল লাইল বা তারাবিহ কে আবশ্যকীয় মনে করেন । কিন্তু তা হাদিসের ভাষায় প্রমাণিত নয় ।
সুতরাং আপনার যদি ২০ রাকাত সালাত আদায় করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও শক্তি না থাকে তাইলে কম আদায় করুন । যদিও তা ০৮ রাকাতের কম হয় । তাড়াহুড়া করে ৪০ রাকাত পড়ার চেয়েও ধির স্থির ভাবে ০২ রাকাত আদায় করা অনেক উত্তম এবং তাই সুন্নত ।
আসুন আমরা ইসলামের মৌলিক চেতনা কে সঠিক ভাবে আকড়ে ধরি । এবং কিয়ামুল লাইল আদায় করে জীবনের সকল গুনাহ কে মাফ করায়ে নেই ।আমিন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩১