*সম অধিকারের ব্যপারে কথা আসলে প্রথমেই আসে পৈতৃক সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যার সমান ভাগের প্রসঙ্গে।
*দ্বিতীয়ত উল্লেখ করা যেতে পারে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারী ও পুরুষের সিট বণ্টন নিয়ে।
~শুরুটা করি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দিয়েই-
সম অধিকার মানে কি সেটা আগে বুঝতে হবে। সম অধিকারে যেমন উভয়ে সমান সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে তেমনি উভয়কেই সমান দায়িত্ব পালন করতে হবে।
একটা লোক যার উচ্চতা ৬ ফুট তার জন্য একটা জামা বানাতে যদি ৬ গজ কাপড় দরকার হয় আরেকটা লোক যার উচ্চতা ৪ ফুট তার জন্য তো অবশ্যই ৬ গজের কম (ধরি ৪ গজ) কাপড় দরকার হবে। এখন আপনার কাছে যদি ১০ গজ কাপড় থাকে আর আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় উভয়কেই সমানভাবে বণ্টন করে দিতে আপনি কি দুইজনকে ৫ গজ করে ভাগ করে দিবেন না একজন কে ৬ গজ আরেকজন কে ৪ গজ ভাগ করে দিবেন?
সম অধিকারে সমান সুযোগ সুবিধাটা মূখ্য নয়, মূখ্য হলো প্রয়োজন পূর্ণ হওয়া। এক্ষেত্রে যদি বণ্টনে ১৯/২০ হয় সেটা দোষের হবেনা, দেখতে হবে ইন্ডিভিজুয়ালি তাদের প্রয়োজন পূর্ণ হয়েছে কিনা।
~যেহেতু প্রকৃতিগতভাগে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা দুর্বল হয়ে গড়ে উঠে। তাই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে একটা সিটে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এমন সম অধিকার যদি আমরা মেনে নেই তাহলে এর সাথে প্যারালালি অন্যান্য বিষয়গুলোও আমাদেরকে মানতে হবে। যেহেতু অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা সেটা মানতে নারাজ তাই এক্ষেত্রে মেয়েরা সেই সুবিধা পাচ্ছেনা।
~পাবলিক ট্রান্সপোর্টে লেখা থাকে মহিলা শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৯ টি (কোথাও ৪টা কোথাওবা ৬ টা লেখা থাকে।) শারীরিকভাবে শিশু ও প্রতিবন্ধীরা দুর্বল, বাসে লং টাইম দাঁড়িয়ে বা গিজগিজে পরিবেশে তারা যাতায়াত করতে পারবেনা তাই তাদের জন্য সিটের ব্যবস্থা রাখা দরকার এবং সেটা রাখা যুক্তিযুক্ত ও। কিন্তু শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সাথে যে মহিলা শব্দটাও জুরে দেওয়া থাকে, আচ্ছা তাহলে কি মহিলারাও শিশু ও প্রতিবন্ধীদের মতো অক্ষম শ্রেণীর বা দুর্বল প্রাণী!!!
~যেহেতু সম অধিকার তাই অনেকে যুক্তি উপস্থান করে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ছেলেদের জন্য অর্ধেক সিট বরাদ্ধ থাকবে বাকি অর্ধেক মেয়েদের জন্য। আমরা সবাইতো দেখি যে ঢাকা শহরে সিটিং সার্ভিসের কথিত অস্তিত্ব থাকলে বাস্তবে সেটা দেখা যায়না, এর কারণ বাসের তুলনায় যাত্রীদের সংখ্যাধিক্য। ৫০ সিটের একটা বাসে ২৫ জন বসে আরো ১৫ জন পুরুষ দাঁড়িয়ে যাবে কিন্তু বাকী ২৫ সিটের মধ্যে মাত্র ৫ জন মহিলা বসবে অবশিষ্ট ২০ টা সিট খালি নিয়ে বাস তার গন্তব্যে যাবে (ইম্যাজিন করুন) আর সেটা দাঁড়িয়ে থাকা ১৫ জন পুরুষ মেনে নিবে!!! বাস মালিক মেনে নেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠেনা! কোনো পুরুষই সেটা মেনে নিবেনা, কোনো কর্তৃপক্ষ সেটা মেনে নিবেনা, মানবেন আপনাদের মতো এসি গাড়িতে যাতায়াত করা কিছু সুধি!
ফার্মগেট বাসের জন্য কখনো ২/৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারপর বাদুরের মতো আরো ২/৩ ঘণ্টা ঝুলে জ্যামে থেকে বাসায় গেছেন কখনো?......
এই যে আপনারা প্রতি নিয়ত প্রেস ব্রিফিং করেন, কিছু ফলোয়ার সম্বলিত ফেবুতে পোস্ট করেন, সম-অধিকারের বুলি আওড়ান, এতো কিছুর পরও মানুষ সেগুলো মেনে নিচ্ছেনা কেন? কেন প্রতিনিয়ত বাসে নারীরা এবিউজের স্বীকার হচ্ছে? এসি কারে চড়ে বাসে ঝুলে যাওয়া মানুষের অনুভূতি কখনো ফিল করতে পারবেন না!!!
যদি সম অধিকারের কথা আসেই তাহলে এই ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যে আগে আসবে সে আগে বসবে ভিত্তিতে সিট বরাদ্ধ থাকবে। শুধুমাত্র বাচ্চা, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আর রোগিদের জন্য প্রত্যেক বাসে ৫ টা করে সিট বরাদ্ধ রাখলেই যথেষ্ট।
~পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীদের জন্য সিট বরাদ্ধের কথা এজন্য আসে যে, নারীরা প্রতিনিয়ত পাবলিক বাসে হেনস্থার স্বীকার হচ্ছে। একটা কথা বলি, গায়ে নিবেন না মাথায় সেটা আপনার ব্যপার, তাই বলে কিন্তু বাস্তবতা চ্যাঞ্জ হবেনা। ফ্রি মিক্সিং এর ব্যবস্থা করে দিবেন অথচ কোনো পক্ষ থেকে যৌন হয়রানির অভিযোগ শুনবেন না তা কিন্তু হয়না। মহিলাদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা বাস সার্ভিস চালু করুন, এছাড়া নারীদেরকে যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করাটা অসম্ভব ও বলা যায়!
~বাকিটা আরেকদিন-