somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মিনিটের গল্প

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপেক্ষমাণ শেষ আলো

একদম শেষের ট্রেনটাতেও রমিত আসেনি। যতদূর দৃষ্টি যেতে পারে অনা তাকিয়ে ছিল ট্রেনটির একদম পেছনের দিকটায়। অনার চোখের সামনে শেষ ট্রেনের শেষ বগিটাও ছোট হতে হতে একদম মিলিয়ে গেল। একটা সময় আর দেখা গেল না।

কয়েকদিন আগেই তো রমিত অনাকে চিঠিটি লিখেছিল। অতি সাধারণ মানের একটা সাদা খামে চিঠিটি এসেছিল। খুবেই ছোট একটা চিঠি, চিরকুট ধরণের। সম্বোধন ছাড়াই ছোট করে কিছু লিখাও ছিল ওখানে।
“জানো, আমার চাকুরীর প্রথম ৩ মাসের টাকা একসাথে জমে আছে। তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না কত টাকা। অনেক অনেক টাকা। আমি আজ সবগুলো টাকা ব্যাংক থেকে তুলে এনেছি। অনেক অনেকবার গুনেছি। দেখবে, আমাদের ২ টো রুম আর খালি থাকবে না। আমরা অনেক অনেক জিনিস কিনে পুরো ঘরটাকে ভর্তি করে দেব। কি কি কিনতে হবে, তার বড় একটা লিস্ট করবে। একটা জিনিসও যেন বাদ না পড়ে। ১২ তারিখেই আমি আসবো”।

অনাও ৩০ টা পয়েন্ট দিয়ে একটা বড় লিস্ট তৈরি করেছে। মনের অজান্তে অনা শুধুমাত্র প্রথম পয়েন্টটা পূরণ করে নিয়েছে। ওখানে লিখেছে “ ১. অপেক্ষা ”। আর লিস্টের বাকি ২৯ টা পয়েন্ট এখনও ফাঁকা রেখে দিয়েছে।

ষ্টেশন মাস্টারের রুমটা বেশ দূরেই ছিল। অনা অনেকটা হেঁটে এসে উনার রুমে ঢুকল। ঢুকেই জিজ্ঞাসা করল, “আজকের শেষ ট্রেনটা কখন আসবে?”
ষ্টেশন মাস্টার অনার দিকে খুবেই বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে বলল, “দেখুন, আমি আজকে আপনাকে আগেও ২ বার বলেছি, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় এখানকার শেষ ট্রেনটি চলে গেছে। কাল সকালের আগে আর কোন ট্রেন আসবে না”।
অনা খুবেই লজ্জা পেল। মনে পড়ল, সত্যিই তো সে আগে আরও ২ বার জিজ্ঞাসা করেছে।
অনা চলে যাচ্ছিলাম। ষ্টেশন মাস্টার অনার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “দাঁড়ান”।
অনা কিছু চিন্তা না করে দাঁড়িয়ে পড়ল এবং ষ্টেশন মাস্টারের দিকে তাকাল।
ষ্টেশন মাস্টার বলল, “দেখুন, রমিতকে আমি সেই ছোট বেলা থেকে চিনি। যদিও আমাদের কিছুটা জুনিয়র ছিলেন। অসাধারণ একটা ভাল মানুষ উনি। আমি খুব সাবলীলভাবে বলতে পারি, আপনি তার অসম্ভব ভাগ্যবতী স্ত্রী। গত পরশু ষ্টেশনে এসে আপনি আমাকে বলেছেন, রমিত ১২ তারিখে সাড়ে ৩ টায় ট্রেনে এসে এ ষ্টেশনে পৌঁছাবে। কিন্তু আমি দেখছি, গত ৩ দিন ধরে প্রতিদিনেই আপনি ষ্টেশনে এসে বসে রয়েছেন। আজকে মাত্র ১১ তারিখ হয়েছে, এখনও ১২ তারিখ আসেনি। ১২ তারিখের আগে আপনি রমিতকে কিভাবে পাবেন, বলুন?।”

অনা কিছু বলল না। কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখল।

“আপনি চলে যান। ১২ তারিখে আসবেন। দেখবেন, এসেই সেদিন রমিতকে পেয়ে যাবেন”। এই বলে ষ্টেশন মাস্টার একটু হাসল।

অনা পেছন ফিরে চলে যাচ্ছিল।
ষ্টেশন মাস্টার আবারও স্থির দৃষ্টিতে অনার দিকে তাকিয়ে বলল, “বসুন, চা খাবেন?”
অনা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে টুপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।
ষ্টেশন মাস্টার কাকে যেন চা আনতে পাঠাল।

“কাল আমি ছুটি নিয়েছি। কাল অন্য একজন আমার দায়িত্বে থাকবে। আমি তাকে আপনার কথা বলে দেব। আপনি ষ্টেশনের দক্ষিণ দিকটায় বসবেন। দুপুরের দিকে ওদিকটায় বেশ ছায়া থাকে। ওরা আপনার জন্য ওখানে একটা চেয়ারের ব্যবস্থা করে রাখবে। চা খেতে চাইলে লাইন ম্যানকে ডাক দেবেন। আমি বলে রাখব। কিন্তু একটা অনুরোধ, সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে যাবেন। আর ১২ তারিখ আমি থাকব। আমি না হয় আপনার সাথে সেদিন রমিতের জন্য অপেক্ষা করবো।”। এই বলে ষ্টেশন মাস্টার অনার দিকে তাকিয়ে মমতাময় একটা হাসি দিল।

একটু আগেই অনা ষ্টেশন মাস্টারের রুম থেকে বের হয়ে গেছে। ষ্টেশন মাস্টার অনাকে তার রুমের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছে। বিকেলের এ সময়টা খুব দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসে। অনার শেষ ছায়া বিন্দুটি বিকেলে শেষ আলোর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ষ্টেশন মাস্টার পেছন থেকে অনার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ষ্টেশন মাস্টার ভাবল, মানুষের প্রত্যেকটা অপেক্ষা যদি এনার অপেক্ষার মত এমন নিষ্পাপ হত, পৃথিবীতে একটা মানুষও অসুখী থাকত না।

কিন্তু ষ্টেশন মাস্টার খেয়ালই করেনি, তার দু’চোখের দু’কোণে দু’ফোঁটা অশ্রু তার দু’চক্ষুকে হালকা আবরণ দিয়ে ঝাপসা করে দিয়েছে।

“শেষ”
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:২০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবি ব্লগ ........

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৪

২০১২-১৩ থেকে কয়েক বছর পছন্দ এদেশে ছিল ডিএসএলআর যুগ। মানে একটি ভালো মানের ক্যামেরা থাকা মানে ছিল সোস্যাইটি বা বন্ধ মহলে ছিল সম্মান, মর্যাদা, আর অহংকারের প্রতিক। সোস্যাল মিডিয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যাপিত জীবনঃ আমি আফগান হতে চাই।

লিখেছেন জাদিদ, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০২

আজকে একটা পোস্ট চোখে পড়ল আফগানদের নিয়ে। সেখানে আফগানদের প্রশংসা করা করা হয়েছে। আফগানদের নিয়ে প্রশংসায় আমার কোন আপত্তি নেই তবে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের একটা নির্দিষ্ট অংশ যে মনস্তত্বের কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁধারের মাঝেও আলো থাকে

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮


আমাদের মানব জীবনে আলো আঁধারের দ্বন্দ্ব চিরন্তন
ইতিহাস বারবার করেছে প্রমান অন্ধকার যত গভীরই হোক
তার ভিতরেই পরবর্তী আলোর বীজ লুকিয়ে করে অঙ্কুরণ।

আঁধারেও আলো থাকে শুধু একটি কবিত্বময় বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বইঘরে যাত্রা শুরু

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯

view this link

বইঘরে ইবুক প্রকাশিত হলো। বইঘর ইবুকের আরেকটি প্লাটফর্ম।

'চৈতন্য' থেকে প্রকাশিত আমার গল্পগ্রন্থ 'রোদ্দুর খুঁজে ফিরি' তে তেরটি গল্প আছে। গল্পগুলো থ্রিলার ও সামাজিক ঘরানার।

সংক্ষেপে বইটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে চেতে যান কেন?

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরো ভালোভাবে তুলে ধরা তো দূরের কথা, তৈরি করেছে একটা মুক্তিযুদ্ধবিমুখ প্রজন্ম। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, এ ব্যাপারে কোনো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×