somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফলোআপ: রুমানা এখন

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ফলোআপ: রুমানা এখন


কানাডায় ‘ডটার ডে’তে পুরস্কার নিচ্ছেন রুমানা মনজুর (ডান থেকে দ্বিতীয়)
বছর খানেক আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুমানা মনজুর কথা বলছিলেন কানাডার ভ্যাঙ্কুভার পোস্ট-এর এক সাংবাদিকের সঙ্গে। একমাত্র মেয়ে আনুশে প্রতি রাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে গল্প শুনত। এখন আর রুমানা চোখে দেখেন না, বই পড়ে মেয়েকে গল্পও শোনাতে পারেন না। পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটার গল্প শোনার সামান্য আবদারটুকু মেটাতেও তিনি অপারগ। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন রুমানা, ভেতরটা যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছিল। এই সেদিনও কাঁদছিলেন তিনি টেলিফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময়। তবে আশার কথা হলো, দৃষ্টিশক্তি হারানো রুমানা সন্তানের কাছে আর পরাজিত কোনো নারীর চেহারা নিয়ে দাঁড়াতে চান না। তিনি প্রমাণ করে দিতে চান, আর সব মায়ের মতো আনুশের মাও সন্তানের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিতে জানেন।

সম্প্রতি রুমানা তাঁর এই স্বপ্নের কথা, আকুতির কথা জানিয়েছেন এক অনুষ্ঠানে। কানাডার অঙ্গরাজ্য অ্যালবের্টা এডমন্টনে ১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো উদ্যাপিত হলো ‘ডটারস ডে’। আর এতে অন্যতম ডটার অব দ্য ইয়ার মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের রুমানা মনজুর। এই দিনের উদ্দেশ্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অর্জনকে সম্মান জানানো, পাশাপাশি নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা রোধের উদ্যোগ নেওয়া। প্রথম বছরই দিনটির উদ্যাপন অনেকের নজর কেড়েছে। এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ছাড়াও উপস্থিত হয়েছিলেন অ্যালবের্টার প্রধানমন্ত্রী অ্যালিসন রেডফোর্ড। উদ্যাপনের উদ্যোক্তা কানাডার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সিটিজেনস ফর এ সিভিল সোসাইটি ও ইন্দো-কানাডিয়ান উইমেন’স অ্যাসোসিয়েশন। ইন্টারনেটের এই যুগে খবরটি হয়তো অনেকেই পেয়েছেন। কানাডার বেশ কিছু সংবাদপত্রে ডটার অব দ্য ইয়ার রুমানার সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে ছবিসহ। তাঁর হাতে সাদাছড়ি, চোখ দুটো বন্ধ। কিন্তু ছবিতে তাঁকে দেখাচ্ছে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সাক্ষাৎকারে রুমানা জানান, তিনি চান না তাঁর সন্তান তাঁকে নির্যাতনের শিকার নারী হিসেবে চিনুক। ‘আমি এখনো আমার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। একটাই চাওয়া, আনুশে বলতে পারুক, আমার মা সবকিছু করতে পারে।’ বলেন রুমানা।

সংগ্রামমুখর এই বন্ধুর পথে কতটা এগিয়েছেন রুমানা, জানতে চাইলে ১২ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথম আলোকে জানান, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় তিনি তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন করে সবকিছু শিখতে হচ্ছে তাঁকে। ক্লান্ত হন, কষ্টে ন্যুব্জ হন। তবু হাল ছাড়েন না। জীবনের ৩৪টি বছর যিনি একভাবে চলেছেন, তাঁর পক্ষে নতুন করে সবকিছু রপ্ত করা কষ্টসাধ্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। এক সেমিস্টার শেষ করে রুমানা পরবর্তী সেমিস্টার বাদ দিচ্ছেন; তারপর আবারও শুরু করছেন। সময় একটু বেশি লাগলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্রেইল শিখছেন, কম্পিউটার শিখছেন। নতুন জীবনে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সন্তান হিসেবে রুমানার এখন বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের ছেড়ে এখন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি ডরমিটরিতে থাকছেন। তবে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে আনুশে। স্কুলে যাচ্ছে সে, বন্ধুবান্ধব হয়েছে। মা এখন তাকে ছেলেবেলায় শোনা গল্প মনে করে শোনান, আনুশেও বই পড়ার চেষ্টা করে, বই পড়ে মাকে আনন্দ দিতে চায়।

কথার ফাঁকে ঘুরেফিরে আবারও রুমানার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার প্রসঙ্গ আসে। তিনি জানান, প্রতিদিনই অলৌকিক কিছু ঘটার প্রত্যাশায় থাকেন। আশা, হয়তো সৃষ্টিকর্তা তাঁর দৃষ্টিশক্তি আবারও ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা কী বলছেন?

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রুমানার চোখের ভেতরকার যে কাঠামো, তা একেবারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। সেরে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি যে বেঁচে আছেন, তাতেই কানাডার চিকিৎসকেরা বিস্মিত!
কথার শেষ পর্যায়ে রুমানা প্রথম আলোর পাঠকসহ দেশবাসীর কাছে দোয়া আর সমর্থন চেয়েছেন। দেশের মানুষ তাঁকে ভালোবেসেছে। এই ভালোবাসা আর সমর্থনটুকু তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে। এই শক্তি নিয়েই তিনি জয় করতে চান পর্বতসমান বাধা-বিপত্তি।

প্রথম আলো থেকে কপি পেষ্ট। লিংক-http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-09-19/news/290599
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×