somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(৬) আমি একটা গাছ

যে পাতায় আমার ছবি থাকার কথা,যে তাতার দুত সেটা নিয়ে যাচ্ছিল,ডাকাতদের হাতে পড়ে নিষ্ঠুর ভাবে খুন হলো,এ ভাবেই পাতাটা হারিয়ে গেল।আমার অনুরোধ তোমরা কেউ যেন জিজ্ঞাসা না করঃ ‘কি করছিলে,তুমি কি ক্লান্ত মজনুনকে ছায়া দিচ্ছিলে যখন সে রাখালের ছদ্মবেশে,তার তাবুতে যাচ্ছিল?নাকি রাতের অন্ধকারে তুমি হয়ে ছিলে কোন এক মনের হতাশার আশ্বাস’?জানি না,হয়তো আমি সান্তনার ছায়া দিচ্ছিলাম প্রেমের দুটো হতাশ মনকে যারা পৃথিবীকে ফেলে দিয়ে কোন এক দ্বীপে ফলমূল আর পাখীদের রাজ্যে ছুটে গেছে!এমন ও হতে পারে,আমি ছায়া দিচ্ছিলাম আলেকজান্দারকে হিন্দুস্থান বিজয়ের অভিযানে,যখন প্রচন্ড গরমে ঘনঘন নাকের রক্তক্ষরনে তার জীবন শেষ হলো।এমন ও হতে পারতো আমি একটা ইতিহাস যেখানে, বাবা তার ছেলেকে জীবনের উপদেশ দিচ্ছে।জানি না,কোন বইটায় কথা ছিল আমার গল্প হওয়ার?

যারা খুন করলো তাতার দূতকে,তারা শহর থেকে শহরে,পাহাড় পর্বত ছেড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল,আমার ছবি নিয়ে,বুঝে উঠতে পারেনি,কি করবে।দলে অবশ্য একজন ডাকাত যার জানা ছিল আমার সত্যিকারের দাম,জানতো সে গাছের একটা ছবির সৌন্দর্য-সাধারণ একটা গাছ দামের চেয়ে অনেক বেশী।কিন্ত সে জানতো না কোন গল্পে আমার ছবিটা যাওয়ার কথা,দামটা কেমন হবে বোঝা সম্ভব ছিল না তার,ক্লান্ত হয়ে গেল সে ছবিটা বয়ে বেড়াতে বেড়াতে।তবে ছিড়ে না ফেলে শেষে এক বোতল মদের জন্যে কারাভান দলের এক যাত্রীর কাছে আমাকে বিক্রি করে দিল।এই হতভাগা লোকটা জানি না কেন,কোন কোন সময় রাতে মোমাবাতির আলোতে আমার ছবির দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠতো।এ ভাবেই মনের দুঃখে মারা গেল লোকটা।

যাকগে,গল্পকথকের সুবাদে আমি এখন ইস্তাম্বুলে,বেশ সস্তায় কিনে,আমাকে নিয়ে অনেক গল্পই সাজায়,গল্পকথক।আমি নিজেকে বেশ সম্মানিত মনে করি তোমাদের মধ্যে নিজেকে দেখে।ওটোমান সুলতানেরা অনুপ্রানিত করেছে নানান ধরণের চারুশিল্পী,কালিগ্রাফী শিল্পীদের-কারও ছিল অনুভুতির প্রচন্ডতা,কারও হাতের সোনালী ছোঁয়াচ,কারও শ্যেন দৃষ্টির ছোঁয়া-আর আল্লাহর ওয়াস্তে তাই কেউ যেন না ভাবে,আমার ছবিটা তড়িঘড়ি করে একটা খসড়া কাগজে আঁকা।

আজকাল,জানি না আরও কি কি সব মিথ্যা ছড়াচ্ছে চারপাশে?যেমন গতকাল আমার মনিব একটা কুকুরের ছবি পেরেক দিয়ে লাগিয়ে তার অভিযানের গল্পগুলো শোনাচ্ছিল,
মাঝে শোনালো আবার ইরজুরুমের হুসরেত হোজার কাহিনী!তবে নুসরেত হোজার শিষ্যরা যেন না ভাবে এটা কোন ভাবে ঐ গল্প বলে সম্মানিত হোজাকে খাট করার উদ্দেশ্য ছিল তার।
খ্যাতনামা ধর্মের গুরু হোজা,তাকে নিয়ে কি কোন কিছু বলা সম্ভব কারও?আমরা কি বলেছি,সম্মানিত হোজার জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে কোন গুজব রটাবো?আল্লাহর ওয়াস্তে,এ ধরণের মিথ্যা বলা কি ঠিক হবে?ইরজুরুমের হুসরেতের সাথে ইরুজুরুমের নুসরেত নিয়ে হয়তো গোলমাল হয়ে যাচ্ছে,যাকগে আমি টেরা চোখের সিভাসের,নেদরেত হোজা আর গাছের গল্প বলি।

সুন্দর ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করা আর ছবি আঁকার বদনাম করতো,টেরা চোখা সিভার-নুসরেত হোজা,আর বলে বেড়াতো-কফি শয়তানকে সাহায্য করার রাস্তা,যারা কফি খায় তারা সবাই নিশ্চিত নরকে যাবে।শোন সিভাস থেকে আসা মানুষ-তুমি জান না হয়তো কি ভাবে আমার শাখাটা বেঁকে গেছে।তা হলে বলেই ফেলি,তবে দোহাই আল্লাহর এটা কাউকে বলো না,আবার।এক সকালে দেখি আল্লাহর বিশাল এক সৃষ্টি, মিনারের মত লম্বা,হাত দুটা সিংহের থাবার মত-আমার ডালে উঠে বসে আছে,পাতার মাঝে কোন এক জায়গায় হোজাও লুকিয়ে ছিল,আমার কথাগুলো কেউ যেন অন্যভাবে না নেয়,ওরা দুজনে দুজনের সাথে শারীরিক উত্তেজনায় পাগল গরম দুটো কুকুরের মত ব্যাবহার করছিল।ঐ বিশাল চেহারার মানুষটা জানলাম-শয়তানের আরেক রুপ,আমাদের বীর হোজার কানে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বলছিল।মনে হচ্ছিল কথাটা ‘কফি খাওয়া পাপ,কফি চরম খারাপ জিনিষ...’,আর এ ভাবেই যারা কফি সমন্ধে খারাপ কথা বলে,তাদের আমাদের ধর্মে বিশ্বাস নেই,বিশ্বাস শয়তানের কথায়।

এখন আমি চারুশিল্পীদের নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই,তোমাদের মধ্যে হতভাগা যারা চারুশিল্পী হতে চাও-আমার সর্তক বানী শুনে,অন্তত ক্ষান্ত দাও।এই শিল্পীরা রাজা,
মোল্লা,সম্ভ্রান্ত লোকজন,মেয়েদের ছবি এত চমৎকার ভাবে এঁকে দেয়-এত বাস্তব চেহারায়,যে রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখলেও যে কেউ তাদের সহজেই চিনতে পারবে।তাদের বৌ এরা সবাই রাস্তায় কত সহজে ঘুরে বেড়ায়,বাকীটা চিন্তা করে নাও।এমন না যে এটাতেই তাদের সন্তষ্টি,তারা ছবির বিশেষত্বকে বাস্তবতার এত কাছে নিয়ে গেছে,সেটা অবিশ্বাস্য।

ইউরোপের দুই শিল্পী,একজন নামকরা শিল্পী আরেকজন যার কাজ ছিল বই এর পাতার অলঙ্কার করা,পোট্রেটের ভাল,মন্দ নিয়ে আলোচনা করছিল।একসময় তারা হেঁটে যেতে যেতে একটা জঙ্গলে পৌঁছালো,তাদের মধ্যে অভিজ্ঞ যে তার মন্তব্য ছিল, ‘নতুন ভাবে ছবি আঁকার জন্যে যে ধরণের প্রতিভা দরকার,ছবিটা এমন হবে,জঙ্গলের একটা গাছের ছবি দেখে মানুষ অনুভব করতে পারবে সারা জঙ্গলের চেহারাটা,এমন কি খুঁজে নিতে পারবে তার পচ্ছন্দের গাছটা’।

আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ,আমার ছবিটার তেমন উদ্দেশ্য নিয়ে আঁকা হয়নি।
সে ভাবে আঁকলে আমার ভঁয় ইস্তাম্বুলের সব কুকুর আমাকে খুঁজে নিয়ে পেশাব করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়তো।




আমাকে বলা হয়-ব্ল্যাক


তুষারপাত আরম্ভ হলো শেষ রাতের দিকে,আর থামলো না সেই ভোর পর্যন্ত।আমি সেকুরের চিঠিটা সারারাত ধরে বার বার পড়লাম।ফাঁকা বাড়ীটার ফাঁকা ঘরটায় এপাশ ওপাশ হেঁটে যাচ্ছিলাম,কোন কোন সময় মোমদানীর কাছে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম,কি হতে পারতোঃ হাল্কা আলোয় দেখছিলাম প্রেমিকার রাগে দুঃখে লেখা চিঠিটা,যার মধ্যে লুকানো ম্যাজিসিয়ানের ভঙ্গীতে রহস্য,যেখানে কোথাও লুকানো আছে বাম থেকে ডানে তার নিতম্বের দোলার চমক।চোখটা বুজে খুঁজছিলাম,দমকা বাতাসের সুরে খোলা জানালা,
সামনে প্রেয়সীর মুখ,দুঃখে সাজানো চোখ দুটো,সরে যাচ্ছিল সাজানো চেরীর ঠোঁটের মেয়েটার চেহারা ধীরে ধীরে মনের খাতা থেকে।

মাঝরাতে বসে দেখছিলাম বিয়ের স্বপ্নঃ ভালবাসায় বিয়ে-সংসার হলো,বাড়ী খুঁজে নিলাম আমরা,দোতালা বাড়ী,তারপর সব কিছু কেমন জানি তছনছ হয়ে গেল সব,কাজ নেই আমার,কোন কথা শুনছে না সে,আর কোনভাবে,ও ভাবেই ওখানেই শেষ।

জানি না স্বপ্নটা কি আমার-না গাজ্জালীর লেখা বিবাহিত জীবনের ভয়াবহ ছবিটা থেকে নেয়া,গাজ্জালীর ‘ধর্মীয় আইনের পুনরদ্ধার’,যা আমার পড়া আরবে থাকার সময়,তারই একটা অংশ।অবশ্য বিয়ের গুনগান গেয়েও অনেক কিছুই লেখা আছে বইটাতে,তার গোটা দুয়েক মনে আছে আমারঃ প্রথমত,বাড়ীর কাজকর্ম সবকিছু গুছিয়ে করা,সেখানে দুজন নেই,দুজনাই একজন(আমার কল্পনার বাড়ীতে তেমন কোন গোছানো কিছু ছিল না)।দ্বিতীয়,যতটুকু সম্ভব একে অন্যের সাথে যুদ্ধে না নেমে,নিজেকে যন্ত্রনার রাজ্যে নিজেকে না ঠেলে দেয়াটাই ভাল।

এই স্বপ্ন থেকে মুক্তির চিন্তা-রাতের এই সময়টায়ও আমাকে টেনে নিয়ে গেল হস্তমৈথুনে।
শরীরের চাওয়ার এই সহজ উপায় খুঁজতে চলে গেলাম ঘরের এক কোনে,স্বভাবজাত ভাবে চেষ্টা করেও কোন স্খালন না করতে পারায় বুঝলাম,প্রেমে পড়েছি আবার বার বছর পরে।

এমনই বিচলিত আমি,হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম ঘরে,মোমবাতীর আলোর মত।সেকুরে নিজেকে জানালায় এসে যে ভাবে দেখা দিল,অথচ চিঠির কথাগুলোর ভঙ্গী সম্পূর্ন উল্টো কেন?তার বাবাই বা হঠাৎ আমাকে ডেকে পাঠালো,কেন?হেঁটে হেঁটে ঘরের চারপাশে ঘোরার মাঝে-আমার চারপাশের দরজা,জানালা সবকিছু শব্দ করে আমাকে প্রশ্নের উত্তরগুলো দিচ্ছিল।

আমার আঁকা ছবিটা দেখছিলাম,ভালবাসায় হারানো শিরিন-হসরেভের ছবিতে অভিভুত হয়ে তাকিয়ে আছে।ছবিটা আমাকে হতভম্ব করেনি,নিয়ে যায়নি কোন কৈশোরের স্মৃতিতে।সকালের ঘুম ভাঙ্গার পর কিছুটা আমার কিছুটা বোধগম্য হলো।ছবিটা ফেরত দিয়ে সেকুরে কি প্রেমের অভিজ্ঞ দাবা খেলোয়াড়ের মত আমাকে তার দিকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করছিল।মোমের আলোয় আমি সেকুরের চিঠির উত্তর দেয়া আরম্ভ করলাম।

ঘুম থেকে উঠে,হেঁটে হেঁটে বেশ কিছুদুর গেলাম,সাথে ছিল চিঠিটা,পেন,কালির দোয়াত,
ব্যাগে বরাবরই যা নেয়ার অভ্যাস আমার।বরফে ঢাকা ইস্তাম্বুলের রাস্তাগুলো তখন অনেক বড় হয়ে গেছে,লোকজন তেমন একটা নেই রাস্তায়।সবকিছু সহজ,সিথিল অনেকটা ছেলেবেলার ইস্তাম্বুল।বরফে ঢাকা ঘরের ছাঁদের কাকগুলো,বাগানে ছুটে বেড়ানো আমার ছেলেবেলাকে আবার নতুন করে ছুটে বেড়াচ্ছে,আমার চোখে।উত্তেজনা আমার মনে,এনিষ্টের কথামতঁ যাচ্ছি প্রাসাদের শিল্পীদের ছবির ষ্টুডিওতে,চুপিচাপি।ইহুদীদের এলাকায় যাওয়ার আগে রাস্তার এক ছেলেকে দিয়ে এসথারকে ডেকে পাঠালাম,সেকুরে জোহর নামাজের আগে কোথায় দেখা করবে লেখা ছিল আমার চিঠিতে।

হাগিয়া সোফিয়াতে প্রাসাদের পেছন দিকে শিল্পীদের ষ্টুডিও,ছাদ থেকে ঝোলা বরফের টুকরোগুলো ছাড়া তেমন কিছু আর বদলায়নি,হাগিয়া সোফিয়াতে,ছেলেবেলায় এনিষ্টের সাথে গেছি অনেক বার।

দেখতে শুনতে বেশ ভাল এক ছাত্র,বই বাঁধাই এর কাজে ব্যাস্ত,পাশে এক ওস্তাদ,যেন আঠার গন্ধে নেশাগ্রস্ত,আর ছোট বেলা থেকে রং মেশাতে মেশাতে বেশ কুঁজোও হয়ে গেছে,পাশে কজন ছাত্র না দেখে হাঁটু গেড়ে রং মেশাচ্ছিল।কোনায় এক বুড়ো শিল্পী মনোযোগ দিয়ে কোলে উটপাখীর ডিম নিয়ে ছবি আঁকছে,আরেক শিল্পী কাঠের ড্রয়ারে নানান ধরণের রং সাজাচ্ছিল,দুজনের কাজ মনোযোগ দিয়ে দেখছিল কজন ছাত্র।একটা ঘরে ওস্তাদ শিল্পী শিষ্যদের ভুলগুলো দেখে বকাবকি করছে,আরেক ঘরে এক ছাত্র সবকিছু ভুলে অবাক হয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

বরফে ঢাকা সিড়ি দিয়ে,দোতলার বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলাম,আমরা।নীচের আঙ্গিনায় শীতে কাঁপছিল দুই ছাত্র,যদিও কাপড়চোপড়ে জবুথবু,হয়তো দাঁড়িয়ে আছে কজন ছাত্রের সোনার পাতা চুরি করার শাস্তি দেখার অপেক্ষায়।মনে পড়ছিল কৈশোরের কথা যখন মার খেত ছাত্ররা ঠিকমত ওস্তাদের কথাবার্তা না শোনার কারণে,অনেক সময় অযথা অতিরিক্ত রং খরচ করার শাস্তিতে।

একটা ঘরে ঢুকলাম অন্যান্য ঘরের চেয়ে বেশ কিছুটা গরম,সদ্য শেখা শেষ করা দুজন নতুন শিল্পী,তাদের কাজে ব্যাস্ত,আর কেউ নেই।কেননা তখন ওস্তাদ ওসমানের অনুমতিতে নামকরা শিল্পীরা সবাই বাড়ী থেকে কাজ করছে,পুরোনো ঘরটা যা খ্যাতনামা ওস্তাদদের আলোর উপস্থিতিতে ভরাট থাকতো,একেবারেই ফাঁকা।সুলতানের শিল্পীদের ষ্টুডিওটা চেহারা বদলে এখন একটা সাধারণ ষ্টুডিও।

একপাশে,প্রধান চারুশিল্পী ওস্তাদ ওসমান-বছর পনের পর দেখা মানুষটাকে,স্মৃতির পুরোনো ওস্তাদের খোলস এখন,এক অশরীরি চেহারা।এখান থেকে চলে যাওয়ার পর যখন বাইরে ছবি আঁকার কাজে ব্যাস্ত থাকতাম,মহামান্য ওস্তাদের চেহারাটা মনের খাতায় ভেসে উঠতো,খ্যাতনামা চারুশিল্পী বিহজাদ ফিরে আসা নতুন রুপে।সাদা পোশাকে,সাদা দাঁড়িতে ওস্তাদ যেন অন্য কোন পৃথিবীর এক মানুষ।কুচকানো চামড়া হাতে চুমু খেয়ে পরিচয় দিলাম,এনিষ্টের সাহায্যে আমি একসময় সেখানে তার ছাত্র ছিলাম সেটা বলতে ভুলিনি-তবে এটাও বললাম সরকারী কাজকর্ম আমার বেশী পচ্ছন্দের,তাই ছবি আঁকা ছেড়ে সেই দিকেই ছিলাম,আমি।আমার কাজের জীবনের গল্প,এমন কি পাশার সাথে খাজাঞ্চী হিসাবে কাজের গল্প-শোনাচ্ছিলাম,ওস্তাদকে।কি ভাবে আলাপ হলো,সেরহাত পাশার সাথে কাজ করার সময় কালিগ্রাফী,চারুশিল্পীদের সাথে তাব্রিজে-আমার যোগাযোগ,বই প্রকাশ করা-গল্প হলো বাগদাদ,আলেপ্পো,ভান,তিফলীশে কাটানো কাজের সময়ের,এমন কি আমার যুদ্ধকালীন সময়ের কথাটাও বাদ পড়েনি।

‘আহ,তিফলীশ,আর দেখা হবে না,আর দেখা হবে না তোমার সাথে’,খ্যাতনামা ওস্তাদ জানালার বাইরের বরফ ঢাকা আলোর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘বাইরে কি বরফ পড়ছে’?

দেখে মনে হচ্ছিল,তার অবস্থাটা অনেকটা পারস্যের সেই ওস্তাদদের মত যারা নিখুঁত ছবি আঁকতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত অন্ধ হয়ে যায়।একটা পর্যায়ে তারা হয় অর্ধেক সন্নাসী,না হয় অর্ধেক পাগলের মত জীবন যাপন করে,তাদের নিয়ে নানা ধরণের গল্পগুজব আছে।
ওস্তাদ ওসমানের জিনের মত চোখ দেখে বুঝলাম,এনিষ্টেকে মনে প্রানে ঘৃনা করে ওস্তাদ,মনে হলো আমার প্রতিও প্রচন্ড অবিশ্বাস তার।তাকে বললাম,আরব দেশের মাটিতে কোন বরফ পড়ে না,ওখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না হাগিয়া সোফিয়ার বরফের দৃশ্যটা।
তিফলীশের স্মৃতিগুলো রোমন্থন করছিলামঃ
যখন দূর্গে বরফ পড়তো,ধোপারা ফুলের রং নিয়ে গান করতো-আর কি ভাবে বাচ্চারা বালিশে আইসক্রীম বানিয়ে লুকিয়ে রাখতো।

‘আচ্ছা,তোমার দেখা দেশগুলোর শিল্পীরা,কি বিষয় নিয়ে ছবি আঁকতো’?

নতুন এক চারুশিল্পী,যার চোখে মুখে তখনও স্বপ্ন ছড়ানো,বইএর পাতার চারপাশটা আঁকা ছেড়ে মুখটা তুলে এমন ভাবে তাকালো যেন বলছে, ‘দোহাই মিথ্যা বলো না,আর যাই হউক এটা যেন তোমার সত্যিকারের উত্তর হয়’।এই সব শিল্পীদের এখনও অনেক কিছুই অজানা,
তারা জানে না আশেপাশে মুদির দোকানটা কোথায়,বা একটা রুটির দাম কত-কিন্ত তাদের কৌতুহল পৌঁছে গেছে পারস্যের মুখরোচক গল্পে,যেখানে সব সময়ই যুদ্ধ,এক শাহজাদা খুন করছে আরেকজনকে,লুটপাট লেগে আছে শহরের পর শহরে,যুদ্ধ আর শান্তির টানাহেচড়া একপাশ থেকে আরেকপাশে,অথচ সেখানেই লেখা হয় সবচেয়ে সুন্দর কবিতা,
আঁকা হয় সবচেয়ে মনজুড়ানো ছবি।

‘শাহ তামাসপের রাজত্ব করা প্রায় বাহান্ন বছর,তবে তার রাজত্বের শেষ দুটা বছর,খুব একটা কারও অজানা না-কবিতা,বই,ছবি এর প্রতি তার এতই অনীহা ছিল,সব কালিগ্রাফী,চারুশিল্পী,বর্ডার ডিজাইন শিল্পীদের ভাতা বন্ধ করে দেয়া হলো,শাহের সময় কাটতো শুধু নামাজ রোজায়।শাহ তামাসপের পর ছেলে ইসমাইল সিংহাসনে আরোহন করলো,সে আবার একেবারেই আলাদা’।আমি বললাম, ‘শাহ তামাসপের জানাই ছিল তার ছেলের বিরোধী,বিপরীত মনোভাব,তাই শাহের ছেলে প্রায় কুড়ি বছর গৃহবন্দী ছিল।
ইসমাইল সিংহাসনে আসার সাথে সাথে তার ছোট ভাইকে হত্যা করলো,আর কজন ভাইকে হত্যা করার আগে অন্ধ করে দিতেও দ্বিধা করেনি।তার অত্যাচারের মাত্রা তার চারপাশের সকলের জন্যেই অসহনীয় ছিল-এই অত্যাচার পর্ব শেষ করার জন্যে,তার কাছের লোকজনই তাকে আফিম আর বিষ খাইয়ে সিংহাসন থেকে মারলো-আধাপাগল ভাই মোহাম্মদ খোদাবান্দেকে সিংহাসনে বসলো।আরম্ভ হলো একের এক সকলের বিদ্রোহ,এতে মোহাম্মদ খোদাবান্দে ক্ষেপে গিয়ে এমন ভাবেই বিদ্রোহ দমন করা আরম্ভ করলো-যা অবিশ্বাস্য,শুধু বিদ্রোহ দমন না,তার সাথে সাথে সারা এলাকা পুড়িয়ে তছনছ করা,সারা পারস্য শুধু ধূয়ায় আর ধূলাবালিতে ছেয়ে ছিল,ছিন্নভিন্ন হলো সারা দেশ।শাহের খাজাঞ্চীখান ফাঁকা,বুদ্ধির অভাবে অর্ধঅন্ধ শাহের মনে,শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতার প্রশ্নই আসেই না।কাজভিন,হেরাতের সব নামকরা বয়স্ক ওস্তাদেরা,ছাত্ররা শাহ তামাসপের ষ্টুডিওতে যাদের হাতের ছোঁয়ার-ছুটে যাওয়া ঘোড়া,আঁকা প্রজাপতি এমনই জীবন্ত ছিল যেন উড়ে যাবে বই এর পাতা থেকে অপেক্ষা করে থাকা পৃথিবীতে,কারও কাজ নেই সবাই কর্পদকশূন্য,বাড়ীঘর নেই,কি করবে-না করবে।কেউ কেউ চলে গেল উজবেকদের সাথে,কেউ চলে গেল ইন্ডিয়াতে।অনেকে আবার মানসম্মান বির্সজন দিয়ে অন্য ধরণের কাজ আরম্ভ করলো,কেউ কেউ ছোটখাট অজানা বড়লোকদের কাজে হাতের সমান ছোট বই এর কাজও আরম্ভ করলো।কেউ কেউ আরম্ভ করলো তাড়াহুড়া করে লেখা,সস্তার ছবি যা সিপাহী আর নীচুতলার লোকজনদের জন্য’।

‘কি ধরণের টাকা পেত তারা,ও ধরণের ছবিতে’?ওস্তাদ ওসমান প্রশ্ন করলো।

‘শুনেছি,বিখ্যাত চারুশিল্পী সাদিকি বেগ,মাত্র চল্লিশটা সোনার মোহরে অজানা কতগুলো জন্ত একজন উজবেক সিপাহীর জন্য এঁকে দিয়েছিল।জঘন্য,দূবৃত্ত এক পাশার ইরজুরুম থেকে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার সময়কার তাবুর কিছু অশ্লীল ছবির আলব্যাম ছিল আমার হাতে,গুনী শিল্পী সিয়াভুষের আঁকা বেশ কটা ছবিও ছিল সেখানে।কিছু ওস্তাদ যারা তাদের কাজ একেবারে ছেড়ে দিতে চায় নি,তারা আবার একটা একটা করে ছবি এঁকে বিক্রি করতো।ঐ ছবি দেখে বলা যায় না সেটা কোন এক গল্প বা লেখার একটা অংশ,ওটার আনন্দ ঐ ছবিতেই।হয়তো দেখে কেউ বলতে পারে এটা সুন্দর একটা ঘোড়া,আর সে হিসাবেই শিল্পীকে পয়সা দেওয়া।
যুদ্ধ আর যৌনসঙ্গমের ছবিও ছিল অনেক।যুদ্ধের ছবির দাম কমে তিনশ রুপার মোহরে চলে গেছে,তা ছাড়া ওগুলোর খদ্দেরেরও বেশ অভাব।সস্তায় আর সহজে বিক্রি করার জন্যে অনেক সময় শুধু কালি দিয়েও ছবি আঁকা হচ্ছিল’।

‘আমাদের এখানে এক চারুশিল্পী,প্রতিভায় যার কোন তুলনা নেই,সুন্দর কাজের জন্যে যার নাম হয়ে গেল এলেগান্ট(স্বর্গীয়)এফেন্দী,কোন এক কারণে আমাদের ছেড়ে পালিয়ে গেছে।প্রায় ছয় দিন হয়ে গেল,তাকে আর কোন জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,
একেবারেই গায়েব’,বললো ওস্তাদ ওসমান।

‘জানি না কি ভাবে এই সুন্দর কাজের পরিবেশ ছেড়ে পালাতে পারে কেউ,অবিশ্বাস্য’,
আমি বললাম।

‘কেলেবেক(প্রজাপতি),জেয়তিন(জলপাই),লেইলেক(বক) আর জারিফ(এলেগান্ট) চারজন আমার ছাত্র।আমাদের নিজের হাতে শিক্ষা দেয়া যাদের,এখন আর এখানে কেউ কাজ করে না,নতুন ওস্তাদ শিল্পীরাও এখন বাড়ী থেকে কাজ করছে’,বললো ওস্তাদ ওসমান।

‘এটা এজন্যেই করা হয়তো যাতে নতুন বইটা,যা সুলতানের সাম্রাজের ঐতিহ্য নিয়ে, বাড়ির আয়েসে বসেই করতে পারে।অন্য যে কোন সময় যে ভাবে সুলতান বিশেষ ষ্টুডিও তৈরী করে প্রাসাদে,এবার সেটা করেনি,বরং নতুন ফরমান জারী,ওস্তাদ শিল্পীরা সবাই যেন বাড়ী থেকে কাজ করে’,আমি চুপচাপ,কোন মন্তব্য করিনি।মনে হলো খোঁচাটা যেন ওস্তাদ এনিষ্টের জন্যেই বিশেষ ভাবে করা,তবু ভাবছিলাম ওস্তাদ ওসমানের অভিযোগের মাত্রাটা কি?

‘নুরী এফেন্দী’,একজন কুঁজো,ফ্যাকাসে চেহারার শিল্পীকে ওস্তাদ ওসমান বললো, ‘আমাদের মেহমান ব্ল্যাককে ষ্টুডিওর চারপাশটা ঘুরে দেখাও, “জরিপে”,করতে আসা মনে হয়’।
‘এই “জরিপ” হলো, সুলতানের পক্ষ থেকে মাসে দুবার সরকারী পর্যবেক্ষন,শিল্পীদের কাজকর্ম পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্যে।হাজিম,প্রধান খাজাঞ্চী-লোকমান,সাহিত্যের ঐতিহাসিক আর ওস্তাদ ওসমানের সাথে সুলতান নিজেই প্রতিটা পাতার ছবি,কালিগ্রাফী পর্যবেক্ষন করতো।কিন্ত সবকিছুই ছিল শুধু লোক দেখানো,ভেঙ্গে পড়া শরীরে লোকমান,এনিষ্টে এফেন্দী যার হাতে বই এর বেশির ভাগ কাজ,সবই করতো বাড়ী থেকে,আর ওস্তাদ ওসমানকে তো প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যেত না,চার ওস্তাদ ‘লেইলেক
(বক),কেলেবেক(প্রজাপতি),জেয়তিন(জলপাই),জারিফ(এলেগান্ট)’,সবাই বাড়ী থেকে কাজ করতো,সুলতানেরও আগ্রহ বেশ কিছুটা কমে গেছে তখন।যদিও নূরী এফেন্দী অনেকগুলো বছর ষ্টুডিওতে কাটিয়েও তেমন একটা পারদর্শিতা আয়ত্ব করেনি,তবে তার চারুবিদ্যার চেয়ে পর্যবেক্ষন ক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়,রীতিমত জানা ছিল কোন পাতার কাজ কে করছে,কোন ছবিটা কে আঁকছে।

আমি হাতে নিয়ে দেখছিলাম সাম্রাজ্যের ইতিহাস বই এর পাতাটা যেখানে ছবির ভাষায় বলা সুলতানের ছেলের খতঁনার গল্প।যখন পারস্যে ছিলাম,তখন খতঁনার ৫২ দিনের জাঁকজমক পূর্ন অনুষ্ঠানের কথা আমার কানেও পৌঁছাতে সময় নেয় নি,ইস্তাম্বুলের ধনী,গরীব দুঃখী,কেউ বাদ পড়েনি,সেই অনুষ্ঠানে।

প্রথম পাতার ছবিটা বেহেশতবাসী ইব্রাহিম পাশার প্রাসাদের,সুলতান,পৃথিবীতে
মানুষের আশ্রয়দাতা কুস্তিখানা থেকে বসে সবকিছু দেখছে,তার চোখেমুখে প্রশান্ত এক
দৃষ্টি যা তার মনের সন্তষ্টির কথা বলে দিচ্ছে।যদিও তার সন্তষ্টির ভাবটা একটু তাড়াহুড়া করেই আঁকা,তবে সম্মান সম্ভ্রবের প্রকাশ আছে ছবিটায়,যা উপলদ্ধি করতে কারও খুব একটা কষ্ট হবে না।দুই পাতার ছবিটায় একপাশে বসে সুলতান-বামদিকে,উজীর,
পাশা-দাড়িয়ে ছিল পারস্য,তাতার,ভেনিসের রাষ্টদূতেরা কারুকাজ করা স্তম্ভ আর জানালার পাশে।মনে হলো সুলতান ছাড়া অন্যান্যদের চোখও একটুঁ তাড়াহুড়া করে কিছুটা অবহেলার সাথেই আঁকা,আর চারপাশের পরিবেশ ছাড়া অন্যান্য কিছুর দিকে খুব একটা দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব হয়নি চারুশিল্পীর।অন্যান্য ছবিগুলোতেও দেখলাম একই ধরণে আঁকা,
যদিও পারিপার্শকতার বৈশিষ্ট রং এ বেশ সুন্দর ভাবে তুলে ধরা।বইটা শেষ হওয়ার পর পাঠক তুলে যখন দেখবে মনে হবে তার, সুলতান চোখটা আটকে আছে একই জায়গায়,
আর চারপাশের সবাইও সবসময় তাকিয়ে আছে যেন মেঝের দিকে।

আমার চোখের সামনে,কুস্তিখানায় শত শত লোকজন পোলাওর প্লেট নিয়ে খাওয়াদাওয়া করছে,কারও প্লেটে খরগোসের মাংস,আবার সাথে কারও পাখীর মাংস,কারও নেয়া গরুর মাংস।কাঁচের কারিগরেরা ফুল,গাছ নানান ছবি দিয়ে তৈরী করা গ্লাস সুলতানের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।মিষ্টির কারিগরেরা উটের পিঠে চিনির বস্তা,আর চিনির তৈরী পাখী নিয়ে যাচ্ছে,বুড়ো তালার কারিগর হাতে নতুন ধরণের তালা নিয়ে যেন অভিযোগ করছে।পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি কি ভাবে পাশা অবিশ্বাসীদের জাহাজে তুলে প্রমান করছে তার আল্লাহর বিশ্বাসের শক্তিটা।কেলেবেক(প্রজাপতি),লেইলেক(বক)আর জেয়তিন
(জলপাই)এর হাতে ম্যাজিশিয়ানদের ছবিটা আঁকা,একজন মুরগীর ডিমকে হেঁটে যাওয়ার শক্তি দিয়েছে,যেন মার্বেল পাথরে নেচে যাচ্ছে এক সুন্দরী।দাঁড়ি মোচ কাঁটা কসাই ভেড়ার মাংস কেটে কেটে ঝুলিয়ে রাখছে।দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছে যখন শেকল বাঁধা সিংহ সুলতানের সামনে খেলা দেখাচ্ছে,সুলতানও তার সাথে খেলা করলো ক্ষেপে না যাওয়া পর্যন্ত।দেখলাম সিংহ,যা ইসলাম ধর্মের প্রতীক ছুটে যাচ্ছে একটা শূওরের পেছনে যা অবিশ্বাসীদের প্রতীক।আমি জিজ্ঞাসা করলাম ছবির শিল্পী্র নাম।

‘কে আঁকলো ছবিটা তাতে কি যায় আসে,গুরুত্ব এটাই যে ছবিটার সৌন্দর্যের মাত্রা,
ছবিটার প্রকাশ ভঙ্গী কেমন,ছবির ছোঁয়ায় কি দেখা যায় সময়ের চেহারা,চরিত্র,
তাদের বলা শোনা,জীবনযাত্রা,ধর্মবিশ্বাস।ছবির শিল্পীর পরিচিতি সেখানে তেমন কিছু একটা না’।

হতে পারে নূরী এফেন্দীর আঁকা ছবি,হয়তো আমার যা জানা তার চেয়ে অনেক বেশী দক্ষতা নুরী এফেন্দীর,হতে পারে জানা তার এনিষ্টের প্রতিনিধি আমি,তদন্তের জন্যে,এমনও হতে পারে সে ওস্তাদ ওসমানের কথা আটকে আছে,তার মনেও।

‘এনিষ্টের হাতের অলঙ্কার করা মনে হয় পাতাগুলো,এখন কোন শিল্পী করছে অলঙ্কারের কাজ’?,আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
বাচ্চাদের হৈচৈ শোনা যাচ্ছিল,বাইরের আঙ্গিনা থেকে।নীচে একজন দলীয় প্রধান চারুশিল্পী, ছাত্রদের ভুলের জন্য শাস্তি দেয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে,হয়তো পকেটে রং এর পাউডার বা সোনার পাতা চুরি করে নেয়ার চেষ্টা করছিল,হয়তো সেই দুজন যাদের আমি আসার সময় দেখলাম,আর কয়েকজন নতুন শিল্পী দরজা দিয়ে উঁকি মারছিল তাদের কৌতুহলে।

‘নতুন শিল্পীরা কুস্তিখানার দৃশ্যটা গোলাপী রং এ আঁকার পর,ওস্তাদ ওসমানের কাজ বাকীটা’,নূরী এফেন্দী একটু সর্তকের সাথে বললো, ‘আমাদের এলেগান্ট এফেন্দী,আল্লাহর অনুগ্রহে যখন ফিরে আসবে,এই পাতা দুটো অলঙ্কারের কাজ করবে।
আমাদের ওস্তাদ,শিল্পী ওসমানের ইচ্ছা এলেগান্ট এফেন্টীকে দিয়ে কুস্তিখানার মেঝের রংটা একেক পাতায় একেক ভাবে করা,গোলাপী,ইন্ডিয়ান সবুজ,জাফরান হলুদ,যাতে যেই ছবিটা হাতে ধরুক না কেন যেন বুঝতে পারে-প্রথম ছবিটায় কুস্তিখানার ধূলোর চেহারা,তার পর বদলে যাবে আনন্দ উল্লাসে-একেক পাতায় উল্লাসের একেক রুপ।রং এ রংবাহারে ছড়িয়ে দেবে আনন্দের সুর’।

কয়েকজন চারুশিল্পী কেউ কাজের টেবিলে রেখে গেছে,একটা বই এর দৃশ্য-অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ষ্টাইলে আঁকা একটা নৌ যুদ্ধের ছবি,তবে আঙ্গিনার ছাত্রদের মারের দৃশ্যটা দেখার জন্যে সেও কাজ রেখে ছুটে গেছে,মজা দেখতে।জাহাজগুলো আঁকা অনেকটা একই ভাবে আর ছবির ধরণ দেখে সমুদ্র স্রোতে ভেসে যাওয়ার অনূভূতিটাও নাই,শিল্পীর দক্ষতার অভাবটাও বেশ বোঝা যাচ্ছিল।খুব দুঃখের সাথে এটাও দেখলাম,ছবিগুলো অন্য কোন বই থেকে ছিড়ে আনা,বোঝাই যাচ্ছিল ওস্তাদ ওসমানের খুব একটা নজর নেই চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে নিয়ে।

নিজের টেবিলে যাওয়ার পর নূরী এখেন্দী গর্বের সাথে দেখালো,আমাদের সুলতানের রাজকীয় প্রতীক যা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কাজ করা।নূর এফেন্দীর সোনার কাজের রাজকীয় প্রতীকটা একটা সাদা কাগজে করা,যাতে যার কাছে পাঠানো হবে তার পরিচয়টা যেন প্রকাশ না হয়।এটা জানি অনেক পাশাই এ রাজকীয় প্রতীক দেখে ভঁয়ে বিদ্রোহের চিন্তাই আর করে নি।

এর পর দেখার সূযোগ হলো কালিগ্রাফীর ওস্তাদ জামাল পাশার লেখা,এক পাশে রাখা,অনেকটা তাড়াহুড়া করেই সেটা ছেড়ে গেলাম,কোন বাদানুবাদের ইচ্ছা ছিল না, রং তুলি ছাড়া কালিগ্রাফীর সৌন্দয্য নিয়ে।

শিল্পী নাসর,তৈমুর লং এর ছেলের সময়ের নিজামীর বই এর ছবিটা ঠিক করতে যেয়ে বরং তার ক্ষতি করে ফেলছে,ছবিটা হুসরেভ এর নগ্ন শিরিনের গোসলে অবাক হয়ে দেখার দৃশ্যটা।

বিরানব্বই বছরের বুড়ো,অর্ধেক অন্ধ শিল্পী-পঞ্চাশ বছর আগে তাব্রিজে মাতাল,অন্ধ ওস্তাদ বিহজাদের হাতে চুমু খাওয়ার গল্প ছাড়া আর তেমন কিছু বলা,করার ছিল না,কাঁপা হাতে দেখালো পেনের বাক্সের অলঙ্কারের কাজ,যা সুলতানকে মাস তিনেক পরে অনুষ্ঠান পর্বে উপহার হিসাবে দেওয়ার পরিকল্পনা।

বেশ একটা নিস্তব্ধতা সারা ষ্টুডিওতে,যেখানে প্রায় আশিজন বিভিন্ন ধরণের শিল্পী কাজ করে যাচ্ছিল,আর ছাত্রদের মারের পরের নিস্তব্ধতা যা আমি নিজেও দেখেছি আমার ছাত্রবস্থায়।ছাত্রদের অসহায় কান্না আর চীৎকার হ্য়তো ওস্তাদ শিল্পীদের নিয়ে যায় তাদের নিজেদের সময়ে।বিরানব্বই এর শিল্পীর কথাও আমাকে নিয়ে গেল অন্য কোন সময়ে,
যুদ্ধ,দন্দ ছাড়া একটা অনুভুতি যেন সবকিছু শেষ হয়ে আসছে,পৃথিবী শেষ হওয়ার
আগের একটা নিস্তব্ধতা।

ছবি হলো মনের দৃষ্টি,আর দেখার সুর।

ওস্তাদ ওসমানের হাতে যখন চুমু খেলাম,শ্রদ্ধায় নত হয়ে গেল আমার মাথা,
একটা অনুভুতি ছেয়ে গেল মনেঃ এক মহাপুরুষের জন্যে সহানুভুতি আর অর্চনার সুর,একটা অপরাধী ভাব তার পাশে।এটা হয়তো এ কারণে যে এনিষ্টে-যার ইচ্ছা সেটা গোপনে বা প্রকাশে যে ভাবেই হউক,ছবিতে খোলামেলা নতুন ভাবে আঁকার পদ্ধতি
আনতে চায়।

হয়তো ওস্তাদ ওসমানের সাথে এই শেষবারের মত দেখা,আর তাকে খুশী করা,দূঃখ দেয়ার পর্বটা আমার বেশ অপচ্ছন্দ ছিল।তবু তাকে একটা প্রশ্ন করলামঃ

“মাননীয় ওস্তাদ,আমার প্রিয় ওস্তাদ একজন সাধারণ শিল্পী আর ওস্তাদ শিল্পীর পার্থক্যটা কোথায়’,ভাবলাম ওস্তাদ হয়তো এ ধরণের প্রশ্নে বেশ অভ্যস্ত,আমি কে ভুলে গিয়ে একটা উত্তর দিবে।

‘এক কথায় বলার মত এমন কিছু নেই যাতে সাধারণ এক শিল্পীর সাথে ওস্তাদ শিল্পীর পার্থক্য তুলে ধরা যায়’,উত্তর ছিল ওস্তাদ ওসমানের, ‘সবকিছুই বদলায় সময়ে,দক্ষতা আর মানসিকতা যা আমাদের ছবি আঁকার শিল্পটা একেবারেই নষ্ট করছে।একজন নতুন শিল্পীর দক্ষতা প্রমান করার জন্য তিনটা প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার’।
‘কি হবে সেই প্রশ্নগুলো’?
‘চীনের,পাশ্চাত্যের ছবি আঁকার প্রভাব মেশানোর কারণে,সে কি নিজের ছবি আঁকার নতুন পদ্ধতি তৈরী করার চেষ্টা করবে?একজন শিল্পী হিসাবে সে কি খুঁজবে নিজের বিশেষ পদ্ধতি,যা অন্যান্য যে কোন শিল্পী থেকে সম্পূর্ন আলাদা,এটা প্রমান করার জন্যে সে কি ছবিতে কোন সই করে প্রতিটা ছবিতে?এগুলো প্রমান করার জন্যে আমার জানতে হবে, “পদ্ধতি’, আর “সই”।
‘তারপর’,আমি বেশ সম্মানের সাথে জিজ্ঞাসা করলাম।
‘তারপর জানতে হবে,বাঁধাই করা ছাড়া হাতে হাতে ছবি নেয়া,অন্য কোন বই এ তার ছবি ব্যাবহার করা সমন্ধে মন্তব্য,শাহ বা সুলতান পৃষ্ঠপোষকের মৃত্যুর পর।এটা বিশেষ ভাবে জানা দরকার এটাতে অনেক সন্তষ্ট আবার অনেক বেশ ক্ষেপে উঠে।তাই আমি শিল্পীকে জিজ্ঞাসা করবো সময়ের কথা, “...”, -শিল্পীর সময় আর আল্লাহর দেয়া সময়।
বুঝতে পারছো,আমার প্রিয় শিষ্য’।
না,তবে আমি সেটা বলতে পারিনি,বরং জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তৃতীয় প্রশ্নটা কি’?
‘তৃতীয়টা হবে অন্ধত্ব’!বললো ওস্তাদ শিল্পী,ওর কোন ব্যাখা প্রয়োজন নেই ভেবে চুপচাপ তারপর।
‘অন্ধত্ব নিয়ে কি প্রশ্ন’,কিছুটা থতমত হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম।
‘অন্ধত্ব হলো নিস্তব্ধতা।তুমি যদি আমার প্রথম আর দ্বিতীয় উত্তরটা যোগ করে নাও,
তাহলে অন্ধত্ব বুঝতে তোমার কোন কষ্ট হবে না।এটা হলো একজন শিল্পীর তার শিল্প
থেকে যতদূরে সরে যাওয়া সম্ভব চলে যাওয়াঃ অনেকটা আল্লাহর শূন্যতা খোঁজার চেষ্টা’।
আর কিছু বললাম না আমি,ধীরে ধীরে বরফের সিড়িগুলো হেঁটে নীচে নেমে গেলাম।
আমার জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা ছিল বক(লেইলেক),প্রজাপতি(কেলেবেক) আর জলপাই(জেইতিন) এর কথা-যারা আমার সমসাময়িক।

তবে আমি ওস্তাদ শিল্পীদের বাসায় না গিয়ে এসথারের কাছে ইহুদী এলাকায় গেলাম যেখান থেকে বসফরাস নদীর সৌন্দর্যটা বেশ উপভোগ করা যায়।এসথার ইহুদীদের সংষ্কার হিসাবে গোলাপী একটা পোষাক পরে ছিল,তার বিশাল,উল্লাস ভঁরা শরীর,মুখটা থেমে থাকা নেই কখনও,ভুরুর দোলনে যেন সবসময় কথা বলে যাচ্ছে।ঠিক এভাবেই সে ক্রীতদাসী,গরীব লোকজনের কাছে ব্যাবসা করে।

আমার দেয়া চিঠিটার গন্ধ শুকে,মোহনীয় একটা দৃষ্টি দিয়ে সালওয়ারের পকেটে রেখে দিল,যেন সারা বাজারের লোকজন এ দিকেই নজর দিবে।এসথার আমাকে বললো,সেকুরে আমার কথা ভাবছে।বখশীশ দেয়ার পর তাকে বললাম, ‘দয়া করে এটা একটূ তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিও’।এসথার বললো,কাজকর্মে সেরে চিঠি পৌঁছে দিতে দিতে প্রায় দুপুর হয়ে যাবে।আমি এটাও বলে দিলাম,সে যেন সেকুরেকে বলে দেয় আমি খ্যাতনামা তিন শিল্পীর বাড়ী ঘুরে এসেছি।




আমাকে সবাই বলে,কেলেবেক(প্রজাপতি)

জোহরের নামাজের আজানটা এখনও হয়নি।দরজায় কেউ ধাক্কা মারছিল,দরজা খুলে দেখি,ব্ল্যাক এফেন্দী,ও আমাদের সাথে ছাত্রাবস্থায় অনেকদিন ছিল।আমাকে একে অন্যকে জড়াজড়ি করে গালে চুমু খেলাম।ভাবছিলাম সে কি তার এনিষ্টের কাছ থেকে কোন নতুন সংবাদ নিয়ে এসেছে কি না,যখন সে বললো সুলতানের প্রতিনিধি হিসাবে আমার কাজের প্রগতি দেখতে আসা তার।‘ঠিক আছে,কি প্রশ্ন আর কি উত্তর দিতে হবে আমাকে’,আমি বললাম।
‘ঠিক আছে তা হলে’,সে বললো।

নিয়ম আর সই

‘যতদিন শিল্প হয় শুধু টাকার জন্যে,তখন প্রতিভা ছাড়া শিল্পীরা,দৃষ্টির অর্ন্তনিহিত রুপ,শিল্পের সৌন্দর্য রক্ষা দিকে যাদের কোন দৃষ্টিই নেই,তারা ছুটে বেড়াবে চারপাশে।আমরা দেখে যাব ‘নিয়ম,সই’,এর যুদ্ধের নোংরামী’।এ ভাবেই আমি শুরু করলাম,কারণ না যে,আমি বিশ্বাস করি সত্যিকারের প্রতিভা আর দক্ষতা টাকাপয়সায় কোন ভাবে কলুষিত হয়।আর সত্যি কথা বলতে কি টাকাপয়সার প্রতি দখলটা তো আছেই সত্যিকারের প্রতিভার,আমার ক্ষেত্রে যেমন সেটা আমাকে আরও বেশী প্রেরনা দিয়েছে।এটা প্রকাশ্যে বললে,সস্তা দরের শিল্পীরা মন্তব্য করবে,তাদের ছবি আঁকা ভালবাসায় আর আমার ছবি আঁকা টাকার লোভে।আমি একটা ধানের শীষে বা চালের কনায় এঁকে দিতে পারি একটা গাছের ছবি,জানি এটা ঐ, ‘নিয়ম’, ‘সই আর
চরিত্র’,কথাটা আসা চীনের ওস্তাদদের কাছ থেকে,যারা ইউরোপীয়ান শিল্পীর প্রভাবে আঁকা ছবি যা ইহুদীদের হাতে আনা।


তিনটি উপমা-নিয়ম আর সই নিয়ে

আলিফ
অনেকদিন আগের কথা,হেরাতের পূর্বদিকে,পাহাড়ের এক দূর্গে এক ‘খান’’ ছিল যার প্রচন্ড দূর্বলতা ছিল ছবি,শিল্পীদের প্রতি।খানের হারেমে যদিও ছিল অনেক সুন্দরী মেয়ে,
তবে খান মনেপ্রানে ভালবাসতো শুধু একজন সুন্দরী তাতার মেয়েকে আর তার খানের প্রতি ভালবাসাটাও ছিল প্রচন্ড।রাতের পর রাত শরীরের খেলায় মত্ত থাকতো দুজন,ঘেমে যাওয়া,ক্লান্ত-শুধু একটাই ইচ্ছা ছিল তাদের,যেন এই ভালবাসায় যেন থাকে দুজন অনন্তকালের জন্য।বুঝতে পারলো,ইচ্ছা পূর্ন হওয়ার একটাই উপায়,বই খুলে দেখে খ্যাতনামা শিল্পীর ছবি আর কথা আনন্দে আর উচ্ছাসে উপভোগ করে যাওয়া।ঐ ত্রুটিহীন,আকাশ ছোঁয়া সৌন্দর্যের ছবিগুলো তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাদের মনে হতো,সময়টা থেমে গেছে,থেমে গেছে বয়সের চাকাটা।খানের প্রাসাদে একজন শিল্পী ছিল,যাকে বলা যায় ওস্তাদের ওস্তাদ,যে কোন বই এর ছবি যেত এমন নিপুণ ভাবে এঁকে যাওয়া তার,সত্যিই ছিল অবিশ্বাস্য।খান ঠিক করলো তাদের দুজনের ছবি দিয়ে একটা বই তৈরী করার।

ওস্তাদের বিশেষত্ব ছিল সহজেই তুলে ধরা যন্ত্রনার চেহারা তুলির আঁচড়ে,ছবির পাতায়,ফরহাদের শিরিনের বিরহের যন্ত্রনা,লাইলী মজনুর চোখের ভালবাসার সুর বা বাগানে হুসরেভ শিরিনের একাত্মতার দৃশ্য-শুধু ছোট্ট একটা বদল ছবিগুলোতে শিল্পী ঐ প্রেমিকদের তুলে ধরা খান আর তাতার প্রেমিকার ছবি দিয়ে।খানের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তার প্রেম হলো চিরন্তন,সেটার কোন শেষ নেই,তাই সে ওস্তাদ শিল্পীকে প্রচুর সোনা,টাকাপয়সা দিয়ে খুশী রাখতে কোন দ্বিধা করেনি কোন সময়।এই টাকাপয়সার লোভ শেষ পর্যন্ত শয়তান ওস্তাদ শিল্পীকে এমন ভাবে প্রলুদ্ধ করলো,সে ভাবলো ছবিগুলোতে তার নিজের বিশেষ ছোঁয়া হয়তো ছবিগুলোকে আরও জীবন্ত করে তুলবে।কিন্ত ছবিগুলো দেখে খানের মনে অজান্তেই এতঁ দ্বিধা আর অস্বস্তি-যে তাতার প্রেমিকার মনে ঈর্ষা আনার জন্যে হারেমের অন্যান্য সুন্দরীদের সাথে খান প্রায়ই যৌনসঙ্গমে ব্যাস্ত হয়ে গেল।

প্রাসাদের এ ধরণের রটনা তাতার সুন্দরীর কানে পৌঁছাতে বেশী সময় নেয়নি,দুঃখে অপমানে তাতার সুন্দরী ফাঁসী দিয়ে আত্মহত্যা করলো।খান নিজের ভুলটা বুঝে কারণটা খুঁজতে গিয়ে দেখে শয়তানের চক্রান্তে প্রলুদ্ধ হওয়া শিল্পীর ছবিগুলোই ওটার কারণ।আর দুঃখে রাগে সে আদেশ দিল সেই ওস্তাদ শিল্পীকে অন্ধ করে দিতে।


০০০০০০০০

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৪৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×