somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিম ওয়ার্ক ও কিছু কথা।

২৪ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং কোর্সটা নিতে হয়েছিল। প্রথম ক্লাস শুরু হওয়ার আগে প্রফেসর থেকে ই-মেইল পেলাম আগামীকাল বিকেলে কোর্সের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে মাঠে জমা হতে হবে। একটু থতমত খেলাম। সফটওয়ার ইন্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রথম ক্লাসের আগেই মাঠে কেন?

সময় মত উপস্থিত হলাম। শরতের নরোম বিকেল। সবুজ ঘাসের কার্পেটে বসে যে যার মত গল্প করছি। স্যার এলেন মনোবিদ্যা বিভাগের একজন প্রফেসর আর কিছু সিনিয়র স্টুডেন্টকে সাথে নিয়ে।

সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং কোর্সে মনোবিদ্যার টিচার কেন? মনোবিদরা আমাদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।

আমাদের দিয়ে রশি টানাটানি খেলালেন। বিশাল এক রশির মধ্যে অনেক গুলো বিতিকিচ্ছিরি গিট দিয়ে দিলেন, ছোট ছোট গ্রুপ করে দিলেন, দেখতে চাইলেন কোন গ্রুপ আগে জট ছড়াতে পারেন। আমরা যখন জট ছড়াতে ব্যস্ত তখন মনোবিদরা খেয়াল করছিলেন আমাদের মাঝে কে বেশী একটিভ। কে কথা বেশী বলছে। কে কথা বলছে কম কিনতু চিন্তা করে সমাধানটা ঠিকই বের করে দিচ্ছে ইত্যাদি।

এর পর দেয়া হলো ছোটখাটো গ্রুপ ম্যাথ করতে। এমনকি কে কি কালারের কাপড় পড়েছি, কোন স্টাইলের কাপড় পড়েছি সে গুলোর ভিত্তিতে গ্রুপ করে দৌড়াতে বলা হলো। নেতা বলেছেন জাতীয় খেলাও খেলতে হলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বলা হলো ক্লাস রুমে যেতে। আসলে উনারা দেখতে চেয়েছিলেন দিনের আলোতে আমাদের একটিভিটির পাশাপাশি রাতের আধাঁরে, ক্লাস রুমে আমরা কে কেমন।

প্রায় চার ঘন্টার টানা মজার সব অভিজ্ঞতা শেষে আমাদের গ্রুপগুলো ঘোষণা করা হলো।
এখানে বলে রাখা দরকার যে, সফটওয়ার ইন্জিনিয়ারিং কোর্সটা করতে হয় গ্রুপ ভিত্তিক। প্রতি গ্রুপে পাঁচ জন। আমরা এটা জানতাম বলে বাংলাদেশী ছেলে-মেয়েরা নিজেরা কয়েকটা গ্রুপ করে নিয়েছিলাম। কিন্তু এ প্রোগ্রাম শেষেতো আমাদের মাথায় বাড়ী। আমাদের বানানো গ্রুপের সদস্যরা কেউ আমাদের গ্রুপে নেই। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

পরে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি প্রত্যেক গ্রুপ তাদের মেম্বারদের নিয়ে খুশি। আমাদের গ্রুপে ছিলাম আমি, একজন কানাডিয়ান, দুইজন চাইনিজ আরে একজন ইন্দোনেশিয়ান। কেউ ভালো প্রোগ্রামিং জানেতো, কেউ টেস্টিং এ ভালো। এ নিয়ে কারো আবার কোন অহং নেই। যে ইংলিশে খারাপ সেই মিনিটস লিখছে, যে ভালো সে পরে তা এডিট করে দিচ্ছে। যেন সবাই ভাই ভাই, একটি পরিবার। আমি অবাক হই মনোবিদদের নির্বাচনের যোগ্যতা দেখে। সব গ্রুপেই ভালো খারাপের মিশেল। গ্রেট কম্বিনেশন।

সবাই প্রোগ্রাম লিখছি, কেউ টেস্টিং করছি, কেউ প্রশাসনিক দিকটা দেখছি, দুইজন কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ রাখছে, সপ্তাহে দু'বার মিটিং করছি, সকলের সময়ের সাথে মিলিয়ে, সকলের মতামত নিয়ে মিটিং হচ্ছে, মিটিং এ গঠনমূলক সমালোচনা হচ্ছে। মিটিং শেষে আবার অনলাইনে গ্রুপ মেম্বারদের ১ হতে পাঁচের মধ্যে রেটিং করতে হচ্ছে। এতে প্রফ বুঝতে পারছে কে একটিভ কে একটিভ না। কে পরমত সহিস্নু, কে রগচটা ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই কোর্সটা করতে গিয়েই বুঝতে পেরেছি টিম ওয়ার্ক কাকে বলে। এখানে চাকুরী করতে হলে আপনাকে ভাল টিম ওয়ার্কার হতে হবে।

অবাক বিস্ময়ে ভাবি, আমরা মুসলমানরা আর বাংলাদেশীরাই বুঝি শুধু টিম ওয়ার্কে বড়ই দূর্বল। একা একা আমরা বিশ্বজয় করতে পারি। কিন্তু দু'জনে মিলে একটা মোমবাতিও জ্বালাতে পারিনা। মতের সেক্রিফাইস করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। কথায় আছে, দুই আলেম এক কম্বলের নিচে ঘুমাতে পারেনা। আমরা এক নেতা কিংবা এক নেত্রী নির্ভর। সংসদীয় ব্যব্স্থা হলেও সবার অংশগ্রহন নাই। একজনের কথাই চূড়ান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসিই হলেন একনায়ক। অন্যরা কেউ না। আমরা সাফল্যকে ভাগ করে নিতে পারিনা। নিজেই সফল হতে চাই। তাই কখনো সফল হতেও পারিনা।

আমাদের দেশে টিম ওয়ার্কারের চেয়ে স্বৈরাচার, স্বৈরতন্ত্র খুব বেশী পরিচিত। আমাদের ক্রিকেট টিমেরও একই দশা।

আমরা যেন সবাই রাজা। সবাই নেতা।
মনে মনে বলি "চির উন্নত মম শির"। কাউরে আমি থোরাই কেয়ার করি। কিন্তু এটা বুঝিনা যে, অপরকে কে শ্রদ্ধা করলে সেও আমাকে শ্রদ্ধা করবে। কেউ একজন বলেছিলেন, শ্রদ্ধা হলো সেভিংস একাউন্টের মত। টাকা জমা করলেই শুধু টাকা তোলা যায়। তেমনি শ্রদ্ধা পাওয়ার আগে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হয়। অপরের যোগ্যতা, মেধার স্বীকৃতির মাধ্যমেই নিজের বড়ত্বের প্রমাণ মেলে। এপ্রিসিয়েশনের বড় অভাব আমাদের মাঝে। শুধু নিজেকে জাহির করা আর অপরকে বিনাশ করাতেই খুঁজে ফিরি আনন্দ। সহমত, সহাবস্থান এগুলো যেন শুধুই অভিধানেই আছে, বিদায় নিয়েছে আমাদের জীবন থেকে।

কবে যে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে শিখবো? সকলে মিলে দেশ গড়তে শিখবো?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ১০:৪১
১৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×