- যে দশ দিনের দিবসগুলো রমযানের শেষ দশ দিনের চেয়েও উত্তম।
- যে দশ দিনের নামে সুরা ফজরে (৮৯ -২) আল্লাহ শপথ করেছেন।
- যে দশ দিন ছাড়া ইসলামের ইসলামের একটি রুকন বা স্তম্ভ হ্জ্ব পালন করা অসম্ভব। এ দশ দিন হজ্বের মাসগুলোরও শেষ দশদিন। আল্লাহ বলেন, "হজ্জের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত।" (২ : ১৯৭) আর হজ্বের মাসসমূহ হলো শাওয়াল, যুলক্বিদা ও যুলহিজ্জার প্রথম দশ দিন ।
- যে দশ দিনের নবম দিন হজ্বের প্রধান দিন।
- যে দশ দিনের দশম দিন, মুসলমানদের বার্ষিক দু'টি মাত্র প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদাইনের একটি, ঈদুল আযহার দিন।
- যে দশ দিনের দশম দিনে আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর সন্তুস্টির জন্য তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানী করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
- যে দশ দিনের দশম দিন আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় দিন। কুরবানীর দিন। " আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় দিন হলো কুরবানীর দিন তারপর হলো যুলহিজ্জার ১১ তারিখ। " আল হাদীস।
- যে দশ দিন সে চল্লিশ দিনের শেষ দশ দিন, যে দিনগুলোতে আল্লাহ তাআ'লা মূসা আলাইহিস সালাম কে শরীয়ত প্রাপ্তির প্রস্তুতির জন্য বিশেষ ই'তিকাফের আদেশ দিয়েছিলেন। "আর আমি মূসাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ত্রিশ রাত্রির এবং সেগুলোকে পূর্ন করেছি আরো দশ দ্বারা। বস্তুতঃ এভাবে চল্লিশ রাতের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেছে।" (৭ : ১৪২ )
- যে দশ দিন সে সব দিন সমূহের অন্যতম যে দিন গুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। "এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ্র নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।" (২২ : ২৭ ও ২৮)
- যে দশ দিনে মুসলমানরা অনেক গুলো ইবাদতে মশগুল হয়। লাখো লাখো লোক ছুটে যায় কা'বার পাণে। মিলিত হয় আরাফাতে, মুজদালিফায়, মিনায়। খোদার ঘরের তাওয়াফে হয় ব্যস্ত। বছরের যে কোন সময়ের তুলনায় এ সময়টাতেই সবচেয়ে বেশী রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রেমিক জড়ো হয় মদীনায়। দুনিয়া জুড়ে নবম দিবসে মুসলমানরা পালন করে সিয়াম। নবম ও দশম দিবসের প্রতি ফরয নামাযের শেষে উচ্চকন্ঠে পরম প্রভুর নামে পাঠ করে তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর।
- যে দশ দিন চারটি পবিত্র সম্মানিত মাসের অন্তর্গত। যে সময়ে আল্লাহ আমাদেরকে নিজেদের উপর যুলম না করতে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। "নিশ্চয় আল্লাহ্র বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।" ( ৯ : ৩৬)
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গেছেন বছরের কোন দশটি দিন আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় এবং কেন? হ্যাঁ, আমি যুলহিজ্জার ( আমাদের দেশে যিলহাজ্জ নামে পরিচিত) প্রথম দশ দিনের কথাই বলছি। "হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইবাদাত ও ভাল কাজের ক্ষেত্রে যুল হিজ্জার প্রথম দশ দিনের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় আর কোন দিন নেই ।" (অর্থাৎ এ দিন গুলোতে করা যে কোন ইবাদত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়)। বুখারী।
প্রশ্ন জাগতে পারে, এ দশদিনে আমরা কি কি ইবাদত করতে পারি। উত্তর খুবই সহজ।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছোট-বড় যে কোন ভাল কাজই করা যেতে পারে। তবে এ সময়ের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো হজ্জ করা। কিন্তু সবার পক্ষেতো আর হজ্জ করা সম্ভব না। যারা হজ্জে যেতে পারবোনা তারা বিশেষ ভাবে নিচের কাজগুলো করতে পারি।
১। রোযা রাখা : ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন রোযা রাখা সুন্নাত। "রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুলহিজ্জার ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন রোযা রাখতেন।" (আবূ দাউদ)। প্রতিদিন রাখতে না পারলেও ৯ তারিখে রাখতে ভুলবেন না যেন। "রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরাফাতের দিনের রোযা দু'বছরের গুনাহর কাফফারা স্বরূপ। বিগত বছর ও আগত বছর।" (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ, নাসাঈ)। মনে রাখবেন, যারা হজ্ব করতে গিয়েছে তাদের জন্য এ দিনে রোযা রাখা হারাম। (আহমাদ, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ, নাসাঈ)। আর ঈদুল আযহার দিন ও তার পরবর্তী তিনদিন রোযা রাখা হারাম।
২। তাকবীর বলা : ৯ তারিখ ফযর হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পরে উচ্চস্বরে নিন্মোক্ত তাকবীর বলা। "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।" এ ছাড়া যুলহিজ্জার ১ তারিখ হতে ১৩ তারিখ পর্যন্ত অবসর সময়ে পথে-ঘাটে, হাটে বাজারে সবখানে বেশি বেশি তাকবীর পড়া উচিত। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, এ দিন গুলোতে শুধু জোরে জোরে তাকবীর পড়ার জন্য বাজারে যেতেন আর লোকেরা তার সাথে জমায়েত হয়ে তাকবীর বলতো। "রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের উৎসবসমূহকে তাকবীর দ্বারা অলংকৃত কর"।(তাবারানী)। তাই ঈদের দিন বেশি করে তাকবীর বলা উচিত।
৩। তাহাজ্জুদ পড়া : ফরজ নামাযর পরে আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় নামায হলো তাহাজ্জুদ। আল্লাহর কাছে প্রিয় ইবাদাতের সেরা সময়ে সেরা নামাযটা যে না পড়লেই নয়! প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়ুন। এ যেন সোনায় সোহাগা!
৪। কুরবানী করা : আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে ১০, ১১, ১২ কিংবা ১৩ তারিখে পশু কুরবানী করুন। আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে, যুলহিজ্জার প্রথম থেকে কুরবানী না করা পর্যন্ত এ দশ দিন নখ কাটা, চুল কাটা থেকে বিরত থাকুন। (ইবনে মাজাহ) পশু কুরবানী শেষে এবং যুলহিজ্জার চাঁদ দেখা যাওয়ার আগে কাজগুলো করুন।
৫। বেশী বেশী করে ইসতেগফার করুন।
৬। বেশী বেশী কুরআন তেলোয়াত করুন। কুরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন।
৭। নিজের যে সকল বদ অভ্যাস আছে তার একটি তালিকা করে প্রতিদিন একটি বদ অভ্যাস ছেড়ে দেবার চেষ্টা করুন।
৮। হারামমুক্ত জীবন গড়ুন।
৯। আল্লাহ নির্দেশিত ফরয কাজগুলো সম্পন্ন করুন। সুন্নাতের প্রতি অধিক যত্নবান হোন।
১০। আল্লাহর প্রিয় সময়ে তাঁর প্রিয় হবার চেষ্টা করুন।
আল্লাহ আমাদেরকে যুলহিজ্জার প্রথম দশদিনের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দিন।আমীন।