কখন হবে স্কুল ছুটি তোর হিসেবের মধ্যে ছিল । ছুটি শেষে আমি বাড়ি ফিরে যদি তোকে
না পাই হাঙ্গামা লাগিয়ে দিবো- এটা তোর প্রতিদিনের আশঙ্কা।
তাই বাড়ি ফিরেই তোকে দেখতে পেতাম গেটে দাড়িয়ে। গামছা নয়, কোন টিস্যু নয়। মুখ মুছে দিতিস পড়নের কাপড়ের আঁচলে। বিরক্ত হতাম। গ্রামের নারীতো তুই। বাড়ির বাইরে যেতে মানা।শহুরে মায়েদের মত স্কুলে যেয়ে ছেলের অপেক্ষায় থাকতে পারতিস না। কিন্তু ‘মা’ যে। তোর মন মানতো না। একবার ঘরে ঢুকিস আরেকবার গেটে এসে দাড়িয়ে থাকতি।
আমি কখন বাড়ি ফিরবো।
সেবার শরীর জুড়ে হাম হলো। হাম হলে বড় জোর সাতদিন থাকে। ভালো হয়ে যায় আপনা আপনি। কিন্তু তুই কি করলী। বাতেনের বাড়িতে যেয়ে নিমের পাতা পেরে আনলি, বাড়ি হতে চার মাইল দুরের বাজার হতে তেতো করলা কিনে আনলি। আমি খাবো। নিমের পাতায় গোসল করবো। হাম ভালো হবে। কুসংস্কার বিশ্বাস করতিস না। কিন্তু ছেলের চেহারার দিকে তাকিয়ে রিয়াজ মুন্সীকে ডেকে এনে পানি পড়া খাইয়ে দিলি। গলায় দিলি লাল সুতো। ছেলের হাম তবু দ্রুত ভালো হোক।
তুই যে মা।
এসএসসি পরিক্ষায় এ প্লাস পেলাম না। মারাত্মক খারাপ করলাম রেজাল্ট। মেঝো আপার সে কি গাল। বাবার মুখ বেজার।
স্যারদের বকুনি। কিন্তু তুই ওই রেজাল্টেই খুশি। অনেকদিন ভালো খাবার খাওয়া হয়নি। দুকুনির মার কাছ থেকে ডিম আনলি। গরুর দুধ আনলি। সে দুধে পানি না দিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করলি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলি। আমি খেলাম। আমার চোখে পানি নেই। তোর চোখে তখন পানি। ছেলে এসএসসি পাশ করেছে। বড় হচ্ছে। ভালো জামা কাপড় দরকার। কতই না তোর মাথায় চিন্তা ।
আর্থিক অবস্থা ভালো হচ্ছে আমাদের একটু একটু করে। চলে গেলাম এক শহর থেকে আরেক শহরে। থাকতে চেয়েছিলাম নিজের শহরেই। কিন্তু তুই থাকতে দিলিনা। যতটাকা লাগে লাগুক। ছেলে বড় কলেজে পড়ুক।
যেদিন বাড়ি থেকে বেড় হলাম তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম। কি দরকার ছিলো বাইরের কলেজে পড়ার... নিজ শহরেইতো কত ভালো কলেজ ছিলো। তুই মুখ বুজে বিদায় দিলি। পরে শুনেছিলাম। তিন দিন তুই পানি ছাড়া কিছুই খাস নি। সারাক্ষণ কেঁদেছিস।
এমন সব পর্ব দিয়েই কেটে গেছে ১২ টি বছর। জমে আছে অনেক স্মৃতি। চাকরী করি রাজধানীতে। বড় সখ হয় বেতনের টাকায় বড় একটা ইলিশ কিনে তোকে পাশে বসিয়ে খাওয়াই। সে সুযোগ আমার হয়না। রোজ রাতে খেতে বসি। বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। মা রে একটু আয় । আমার সাথে খেতে বস...
ইলিশের কোন স্বাদ পাইনা। চোখ বন্ধ করে কোন রকম খিধা মেটাই রোজ। তোর হাতের গরুর মাংশ রান্না আজো জিহ্বায় লেগে আছে। ৫ জন সদস্যর পরিবারের এক কেজি মাংশের ২০ টুকরোর অর্ধেকের বেশী আসতো আমার প্লেটে...
না আমি আজ আর লিখতে পারছিনা... প্রচন্ড মাথা ব্যথা । অফিসেই ছিলাম সারাদিন কম বেশী। বিরক্ত লাগছে সবকিছুকে , মানুষজনকেও... অনেক কিছুই মেকি—অনেক কিছুই ফাঁকি ।