somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যাচিউরিটি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এখন ম্যাচিউরড। কথাটা মিথ্যা না। অনেকাংশেই সত্য। ছোটবেলার মত ইমম্যাচিউরড না। তবে ছোটবেলায় অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতাম; রঙ্গিন স্বপ্ন। কত রঙের স্বপ্নে দু'চোখ ভারী হত- তার হিসাব কে রাখতো? লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন, সবুজ স্বপ্ন, বেগুনী স্বপ্ন, কলাপাতা রঙের স্বপ্ন- আরো কত বর্নের বর্নিল সব স্বপ্ন। অনেকগুলো রঙের নামও জানতাম না। পরে নাম জেনেছি। কিন্তু ততদিনে স্বপ্নরা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। চলে গেছে হয়ত আতলান্তিকের বুকে জেগে থাকা কোন এক পাথুরে দ্বীপে। তারা আর কখনোই আমার কাছে ফিরবেনা। ফিরবেনা কারন ম্যাচিউরিটি। ম্যাচিউরড কেউ এসব স্বপ্ন দেখে না।

এখনতো আর গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয় না। গেলেও নিশ্চয়ই বৃষ্টির দিনে কাঁচা রাস্তার মাটিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানির বুদবুদ ওঠাকে 'ব্যাঙ গর্তের ভেতর থেকে নিঃশ্বাস নিচ্ছে'- ভাবব না। কাঁদা দিয়ে গর্তটা বুজে দিয়ে বুদুবুদ ওঠা থামাবো না। আর থামালেও একটা ব্যাঙ মারার আনন্দে অভিভূত হব না। কারন এখন আমি এখন ম্যাচিউরড। এখন জানি মাটির ছোট ছোট গর্ত পানি দিয়ে ভরাট হবার সময় ভেতরের বাতাস বের হয়ে আসে বুদবুদ হয়ে। ব্যাঙ-ট্যাঙ কিছু না। ওওহো। গ্রামের সেই রাস্তাটাও পিচ দিয়ে মোড়ানো হয়ে গেছে। সেখানেতো ব্যাঙরা বৃষ্টির দিনে নিঃশ্বাস নেয় না আর।

যদিও এখন আর আমার দাঁত পড়ে না। ওঠেও না। তবুও এখনো সুতা দিয়ে হেঁচকা টানে তুলে আসা দাঁতটা নিশ্চয়ই পুকুরে ফেলে কবিতার মত আবৃত্তি করব না- 'মাছ ভাই, মাছ ভাই, আমার দাঁত তুমি নাও। তোমার দাঁত আমায় দাও।" যতসব ছেলেমানুষী ইমম্যাচিউরিটি। চিকন চিকন দাঁতের প্রত্যাশায় এমন পাগলামী করা আমার মত বড়মানুষের পক্ষে কি সম্ভব?

মনে পড়ে মফস্বলের স্কুলটাতে কেজিতে পড়ার সময়কার এক দিনের কথা। সেদিন প্রচন্ড ঝড় হচ্ছিল বাইরে। আধাপাকা স্কুল ঘরটার বারান্দা থেকেই আটআনার চালতার আচার কিনে খাচ্ছিলাম। ক্লাসেরই এক ছেলে পাশে এসে বসল। বলল,'আচ্ছা তোদের বাসায় কে কে আছেরে?'
বললাম আম্মু, আমি, নানা, নানু আর রতন। রতন আমাদের বাসায় থাকত। রতনকে কাজের ছেলে বলতাম না।
'তোদের বাসা কি পাকা দালান নাকি?'
'না। পাকা দেয়াল। উপরে টিনের চাল।' তার চোখে হাসি খেলে গেল। যদিও তখন বুঝিনি।
তারপর সে যা যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে- প্রচন্ড ঝড়ে আমাদের বাড়ির চাল উড়ে যাবে। আরো কি সব হাবিজাবি। নানা, নানু, আম্মু আর রতন মারা যাবে। এইসব হেনতেন। আমি মাথা নেড়ে তীব্র প্রতিবাদ করলাম। এমন কখনো হবে না। 'দেখিস তুই।' বলে উঠে চলে গেল। হাতের চালতা হাতেই থাকল। আমি ভাবতে বসলাম। ব্যাপারটা অসম্ভব না। বাইরে তখন খুব ঝড়। আমি চোখের সামনে দেখলাম আমার পরিবারের সদস্যরা একে একে মারা যাচ্ছে। চিৎকার করতে করতে। চিৎকারের তীক্ষ্ণতায় আমার চোখে জল এসে গেল। টিফিনের পরের পিরিয়ডে ম্যাডাম ক্লাসে এসে দেখেন চোখের পানিতে ক্লাসের মেঝে ডুবে আছে। দমকে দমকে কাঁদছি আমি। কান্না থামানোর জন্য ঐ ছেলেকে (ছেলে ছেলে করছি কারন তার নাম আজ আর মনে নেই) খুব করে বকলেন। আর সেও স্বীকার করল- সে মিথ্যা মিথ্যা ভয় দেখিয়েছে। কিন্তু বাসায় গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরার আগপর্যন্ত আমি নিশ্চিন্ত হই নি।
এখন পারলে আসুক ছেলেটা। ভয় লাগাক দেখি আমাকে।

বিটিভিই ছিল আমার একমাত্র আর চরম বিনোদনক্ষেত্র। প্রতি রবিবার বসে থাকতাম টিপু সুলতান দেখার জন্য। আর পরের ছয়দিন একটা লাঠি কোমরে গুঁজে হাঁটটাম। শুক্রবারের আলিফ লায়লা। আহা আলিফ লায়লা। এখনো কান পাতলেই শুনি আলিইফ লায়লাআআআ.....। রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প হলে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম। আর সিন্দাবাদের কাহিনী হলে টিপুর লাঠির পাশে কোমরে আরেকটি লাঠির যোগ। এক কাঁধে ম্যাকগাইভার আরেক কাঁধে রোবকপ নিয়ে রাজ্যের হারামীপনা করে বেড়াতাম। তখন টিভিতে এক লোক বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়াত আর গান গাইত। বড় হয়ে তার নাম জেনেছিলাম। কুদ্দুস বয়াতী। তার গানের 'আন্ডাবাচ্চা' শব্দটা শুনে মজা পেতাম। এখন আমি ম্যাচিউরড। টেলিভিশন দেখি না। সারাদিন মজিলা ফায়ারফক্সে ঘাড় গুঁজে রাখি।

বড় বড় ট্রাকগুলা চোখের সামনে সাঁই সাঁই করে ছুটে যেত। দেখতাম আর পুলকিত হতাম। পুলকিত হতাম আর ভাবতাম। ভাবতাম- বড় হলেও আমিও এমন একটা ট্রাক চালাবো। ট্রাক নিয়ে ছুটব অচেনা পথ ধরে। তখন আমিই হব রাস্তার রাজা। সব গাড়িই আমাকে পথ ছেড়ে দেবে। আর আমি সামনে এগুব। এগুতেই থাকব। রাতে কোথাও গাড়ি থামিয়ে তাতেই ঘুম। সকালে জেগে আবার সাঁই সাঁই। এখন চিন্তা করে জিভ কামড়াই। ট্রাক ড্রাইভারকে কেউ মেয়ে দিবে না।

এখন আমি ম্যাচিউরড।

এখন আর ব্যাঙ মারিনা, ভয় পাইনা অকারন, ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার কথা কল্পনাও করি না। বাস্তবতার রক্ত বইছে আমার শিরা-উপশিরা-অনুশিরায়। তবুও আমি একটি হলেও ব্যাঙ মারতে চাই। খুব খুব চাই। আমি আবার ইমম্যাচিউরড হতে চাই। সত্যি খুব চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৩২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×