somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ তর্কে বহুদূর?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে আসিফের। অথচ সে কিছুই করেনি। কিছু করার মত অবস্থাতেও নেই। কারন তাকে এখন টারজানের ভূমিকায় অভিনয় করতে হচ্ছে। টারজান যেমন জঙ্গলে গাছের লম্বা লম্বা লতায় ঝুলে থাকে, আসিফও তেমনি লোকাল বাসে একহাতে ওপরের স্ট্যান্ড ধরে ঝুলে আছে। আক্ষরিক অর্থেই ঝুলে আছে। কারন তার পা ঠিক মেঝেতে নেই, কিসের উপর তাও পরিস্কার না। বাসে ভীষন ভীড়। তার উপরে আবার ভ্যাপসা গরম, ঘামের তীব্র কটু গন্ধ। সামনে-পেছনে-ডানে-বামে কোনদিকেই একচুল ফাঁকা জায়গা নেই। আসিফ নিশ্চিত এই ভীড়ের মধ্যে ওপর থেকে সুঁই ছেড়ে দিলে তা মেঝেতে পড়বে না, কোথাও না কোথাও ঠিকই আটকে যাবে।

ঢাকা শহরে অসংখ্য রুটে নাম জানা-অজানা-লোকাল-নামে সিটিং-কাজেও সিটিং-বাইরে টিকেট-ভেতরে টিকেট এমনি কতশত বাসের ছোটাছুটি। একেকটা বাস যেন একেকটা চলন্ত থিয়েটার। কতরকম নাটক যে এইসব বাসে বাসস্থ হয়- কে হিসাব রাখে? সিটের জন্য কাড়াকাড়ি, ভাংতি নিয়ে মারামারি, মহিলা সিটে বসা পুরুষদের ঝাড়াঝাড়ি। দাঁড়িয়ে থাকা তরুনীকে সিট ছেড়ে দেয়া যুবক, দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের দিকে কিছু অন্যমনষ্ক মানুষের কাছিয়ে আসা, হাজার যুদ্ধবিগ্রহ উপেক্ষা করে পেছনের দিকের সিটে বসা প্রেমিক যুগলের গুটুরগুটুর প্রেম। এত এত নাটক- একেবারে বিনামূল্যে। শুধু চোখ-কান একটু খোলা রাখা চাই।

টাকমাথার ভদ্রলোকটি আবারো আসিফের দিকে তাকালেন। এবং আসিফ আবারো ‘চোর চোর’ বোধ করল। ভদ্রলোকের নাকের নিচে বাটারফ্লাই গোঁফ। আসিফ ভেবেছিল এই গোঁফে হিটলার আর চার্লি চ্যাপলিন ছাড়া আর কাউকে মানায় না। এখন দেখছে তার অনুমান ভুল। এই ভদ্রলোককেও বেশ মানিয়ে গেছে। তার চেহারাতেও একটা হিটলার হিটলার ভাব আছে। ভদ্রলোক পেছনের মানিব্যাগের পকেটে হাত বোলালেন। যেন দেখলেন মানিব্যাগটা ঠিকমতো আছে কিনা। হিটলার ভদ্রলোক আসিফের ঠিক সামনেই ঝুলছেন। একহাতে ব্যাগ। অফিসফেরত চাকুরীজীবি হয়ত।

ঘটনাটা হল এই যে- একহাতে ঝুলতে ঝুলতে হাতের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আসিফের। টনটন করছিল হাতটা। এইভাবে কতক্ষন ঝোলা যায়। সেওতো মানুষ, এটাতো তার বাঁদুড়জন্ম না। তাই হাত বদল করে স্ট্যান্ড ধরার সময় হয়ত একটা হাত লেগে গিয়েছিল ভদ্রলোকের পেছনে, ঠিক যেখানে তার সবুজ আর মোটা মানিব্যাগটি উঁকি দিচ্ছিল। গুপ্তধনে অযাচিত স্পর্শ পেয়ে প্রায় সাথে সাথেই হিটলার স্পর্শকাতর হয়ে ওঠেন। আর সম্ভাব্য পকেটমারের চেহারা দেখতে তার মোটা এবং ভাঁজযুক্ত ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালেন। আর আসিফতো তাকিয়েই ছিল। ফলাফল- হাতেচোখে ধরা। ভদ্রলোক চোখের তপ্ত দৃষ্টি হেনে বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমার সাথে এসব চলবে না বাপু। তোমার দিকে আমার নজর থাকল।‘ এরপর থেকেই আসিফের নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে। সে ভীড়ের মাঝে এদিক সেদিক সরে যাবার চেষ্টা করে। পারে না। চারদিকে সব জীবন্ত স্ট্যাচু।

আসিফ নামবে শুক্রাবাদ। ছোটচাচার বাসায় যাবে। উদ্দেশ্য- বাবার কিছু কাগজপত্র দিয়ে আসা। নিতান্তই তুচ্ছ কাজ। তবে গৃহপালিত বেকারদের জন্য কোন কাজই তুচ্ছ না। সব কাজই গুরুত্বপূর্ন। ছোটচাচার বাসায় যাবার অনেকরকম যন্ত্রনা আছে। সবচে বড়টা হল- ছোটচাচীর বানানো চা নামক বস্তুটা পান করা। সেই চায়ের কথা মনে পড়তেই তার চোখ-মুখ আপনা আপনি কুঁচকে ওঠে। এই চা না খেলে কেউ আসলে বুঝতে পারবে না যে চা জিনিসটা এতটা বিস্বাদ হতে পারে। কতকটা কুসুম কুসুম গরম পানি যার ফোঁটায় ফোঁটায় চিনির রাজত্ব- ঘন সিরাপ জাতীয় আঁঠালো পদার্থ। চিনির সিরাপ হলেও জিনিসটার স্বাদ তিতা। চিনি দিয়ে ছোটচাচী কিভাবে একে তিতা করেন তা এক রহস্য। এই রহস্যটা জানতে খুব ইচ্ছে করে আসিফের।

ভদ্রলোক আবার আসিফের দিকে তাকালেন। তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট ঘৃনা। এই ঘৃনার উৎস কি কে জানে। ভালো যন্ত্রনায় পড়া গেল। আসিফ মনে মনে ভাবে। এদেশের মানুষের হচ্ছেটা কি? সবার বিশ্বাসের লেভেলটা দিনকে দিন নিচে নামছে। সবাই সন্দেহবাতিক হয়ে যাচ্ছে কেন। কারো দিকে তাকিয়ে হাসবেন? ভাববে নিশ্চয়ই কোন বদমতলব আছে। বাসে বসে কোথাও যাচ্ছেন? পাশের জন কিছুক্ষন পর পর পকেটে হাত দিয়ে দেখে নেবে মোবাইলটা ঠিকঠাক আছেতো? জাতি হিসেবে আমরা কি দিন দিন নিচু মনের হয়ে যাচ্ছি? জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে কি জাতির মনের ক্ষেত্রফলটাও কমে যাচ্ছে? হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আসিফ গেটের দিকে এগুতে চায়। সামনেই শুক্রাবাদ। নামতে হবে।

বাস থেকে নেমে আসিফের মনে হল চার বছরের সশ্রম কারাদন্ডের মেয়াদ শেষে সে মাত্র জেলখানা থেকে বের হয়েছে। বুক ভরে শহরের সীসা মেশানো বাতাসে ফুসফুস ভর্তি করতে করতে পকেটে হাত চলে যায় আসিফের। সবুজ স্বাস্থবান মানিব্যাগটা বের করে আনল। ভেতরের মশলা কেমন আছে কে জানে। টাকমাথা হিটলারের মুখটা মনে আসতেই মুখটা হাসি হাসি হয়ে যায় তার। আসিফ ঠোঁট গোল করে শিস দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে সামনে এগুতে থাকে। হাসি এবং শিস একসাথে যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×